কবি তারকনাথ সরকার-এর কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
সার্ধ শতবর্ষে
কবি তারকনাথ সরকার

.      প্রাণের ঠাকুর, কবিগুরু - হে রবীন্দ্রনাথ,
.      স্বর্ণক্ষরে প্রজ্জ্বল আজি ২৫শে-র প্রভাত |
.  গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি তোমার অক্ষয় মন্ত্র-বাণী,
ক্ষুদ্র এজীবনে সম্ভার সমগ্র স্পর্শ,  অসম্ভব তা জানি  |
.      জন্মে ছিলে দেবেন্দ্রগৃহে, সারদার কোলে,
.      বাঙালী থাকতো অন্ধকারে, তুমি না এলে |
.      ধর্মনিরপেক্ষ, মানবদরদী, প্রতিবাদী তুমি,
‘স্যার’ উপাধি ত্যাগ-দৃষ্টান্ত, তাইতো আজও নমি |
.  শন্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী, দিয়েছিলে উপহার,
.  মানবজাতি চিরঋণী, তোমার করুণা অপার |

.                 ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
নেতাজী
কবি তারকনাথ সরকার

হে, বীর সুভাষচন্দ, তুমি নেতাজী
জানকী পুত্র, শত কোটি প্রণাম তোমাকে আজি |
জন্ম তোমার কটকে, প্রভাবতীর কোলে
পুনরায় জন্মাবে না এমন দেশভক্ত ছেলে |
প্রতিবাদ তুমি করেছিলে ওটেনের বিরুদ্ধে
আজাদহিন্দ বাহিনী গড়ে ছিলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে |
দেশ বরেণ্য জননেতা, মেয়র কিছু দিন
ধান্দাবাজে দেশ ছেয়েছে, আসবে না সুদিন |
দেশনায়ক তুমি ওগো, ত্রিপুরা কংগ্রেসে জয়
প্রমাণ করেছিলে-- এদেশ ধান্দাবাজদের নয় |
তৈরী তুমি করেছিলে, বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার বাহিনী
পাঠান সেজে পালানো, সেতো রোমহর্ষক কাহিনী |
বিলেত ফেরত আই,সি,এস., জীবনে চাকরী করোনি
দেশবন্ধুর ছাত্র তুমি, ভারতমাতা আজও তোমার ঋণী |
জাপানে ডাক দিলে, “দিল্লী চলো” সকলে
জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যোগ দলে-দলে |
রেঙ্গুনে সদর দপ্তর, হল যে প্রতিষ্ঠা
ইম্ফলের পতন, তোমারই কর্ম-নিষ্ঠা |
জানি তুমি চেয়েছিলে আবার আসতে ফিরে
সুবিধাবাদী নেতারা, তা দিল না চিরতরে |
হে বীর, নেতাজী-তোমার হয়নি মূল্যায়ণ
আজও হয়নি পূর্ণ স্বাধীনতা, তাই তোমারে করি স্মরণ |

.                 ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
শান্তির প্রতিক্ষা
কবি তারকনাথ সরকার

.       বিশ্ব জুড়ে চলছে, চরম অশান্তি,
.    তারই মাঝে চাইছি, একটুখানি শান্তি,
.       এ যেন এক, মস্ত বড় ভ্রান্তি  |
.     রাজ্য জুড়ে চলছে, খুন-চুরি-রাহাজানি,
.       আমরা সকলে এ বিলক্ষণ জানি,
.          তবু কেন এই কানাকানি ?
.       চলছে যুদ্ধ ইরাক-আফগানে,
.    খুঁজে তুমি পাবে নাকো, যার কোন মানে,
দেখবে শুধু নিরীহ লোক, মড়ছে কেবল জানে |
.           ঘরের মধ্যের কাশ্মীর বা অসমে,
.        মৃত্যুর হানাহানি দেখে, হতভম্ব যমে,
.    বিভীষিকার যবনিকা, নিরীহের বুকে নামে |
.              কেন এই চরম দ্বেষ, বিদ্বেষ,
.                নেই কি এর কোন শেষ ?
.    অস্ত্রের অপব্যবহার, হবে নাকো নিঃশেষ ?
.    শান্তির জন্য দেওয়া হয় নোবেল পুস্কার,
.         তবু কেন শান্তিকে, এই তিরস্কার !
.    না করে আলিঙ্গন, বন্ধ কর অশান্তির দ্বার |

.                    ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
মানবতা
কবি তারকনাথ সরকার

.      মানুষ পূর্বে ছিল বনচারী উলঙ্গ পশু
.        ফল-মূল খেত, যত্রতত্র করত শুশু |
.   পশু হতে পার্থক্য যা ছিল--মনুষত্ব তার নাম
জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক-মাপা যায় না, দিয়ে কোন দাম |
.           পশু হতে বড় আমি -- কত গর্ববোধ !
.   মনুষত্ব হীন সমাজে -- তোমরা সকলে নির্বোধ |
.   হত দরিদ্রের শেষ সম্বলও -- ধনীর লালসার স্তুপ,
.      সমাজ যে দিকে ছুটছে -- সে তো অন্ধকূপ |
.       সকলেই ব্যস্ত ব্যক্তিসুখ আর সংকীর্ণ স্বার্থে
.   চর্তুদিকে অন্ধকার, মানবতাহীন সমাজ কোন অর্থে ?
মানুষে মানুষে বিভেদ-হানাহানি, তাচ্ছিল্য আর অবহেলা
.   তোমার তো বয়স হয়েছে -- এই তো শেষ বেলা |
.         তবু কেন উঁচু-নীচু, শত্রু-মিত্রের ভেদাভেদ
.     আসো হাত ধরি -- ঘৃণা, অবিশ্বাস হোক ছেদ |
.       নিঃস্বার্থ সেবা, পরোপকার, স্নেহ আর ভালোবাসা
.       মনুষত্বের বিকাশ হোক, এই মোর আশা |

.                    ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
ঈশ্বরচন্দ্র
কবি তারকনাথ সরকার

.        বীরসিংহের বিদ্যাসাগর , করুণা অপার,
.         দয়ার সাগর তুমি, তুলনা নেই তার |
.         বিদ্যার্জনে করেছিলে কঠোর তপস্যা,
.   সর্বদা আগুয়ান-- ঘোচাতে সামাজিক সমস্যা |
.              প্রতিকূলে ছিল অদম্য জেদ,
বিধবা-বাল্য বিবাহ রদ, নারী শিক্ষায় ছিল নাকো ছেদ |
.              বর্ণপরিচয়, কথামালা বা নীতিবোধ,
             তোমার ঋণ কভু হবে নাকো শোধ |

.                      ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
নারী দিবস
কবি তারকনাথ সরকার

আমি আলো, বাবা মা-র ঘর আলো করে এসেছিলাম বলে
.            আদর করে নাম রেখেছিলেন ‘আলো’
.            কিন্তু আমার সুন্দর আলোকময় এই জীবনে
এমন অন্ধকার নেমে আসবে, স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি |
.       আমার বিয়ে হয়েছিল বিশু ঘোষের সাথে, ৮ই মার্চ,
ঐ দিনটি আবার নারী দিবস, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন |
.                         কত স্বপ্ন দেখেছিলাম,
আমারা থাকতাম নদীয়া জেলার শিমুরিয়া গ্রামের উত্তর চান্দুরিয়াতে
.     ঐ যে হরসুন্দরী স্কুল, উপেন্দ্র বিদ্যাভবন আছে না, তার পাশে |
.                  আমার বড় ছেলে বটু, আর বড় মেয়ে বাট্টি |
মেয়ে হওয়ার পরই আমাকে আমার স্বামী বাপের বাড়ী রেখে চলে যান,
.                          আর কখনও নিতে আসেননি,
.               শুনেছি অন্য এক মহিলাকে নাকি বিয়ে করেছেন |
আচ্ছা আমাকে ডিভোর্স না করে কিভাবে আমার স্বামী অন্য মহিলাকে বিয়ে করেন ?
.                আমার বাবা, মা, ঠাকুমা সকলেই মারা গেছেন  |
.             সেই কারণেই কাকা শঙ্কর ঘোষের কাছে রেখে যান  |
.               শঙ্কর ঘোষ অত্যন্ত দুঃচরিত্রের বদমেজাজী মানুষ,
.              ১০-১২ বছর ধরে চোলাই দেশী মদের ব্যবসা করেন,
.                       বাড়ীর নিচে মাটি খুঁড়ে মদ রেখে দেন,
.          প্রতিবেশীরা সকলে জানলেও ভয়ে কেউ টু শব্দ করতে পারে না |
.                         সন্ধ্যে ৭টার পর কাকার আসল রূপ ফুটে,
.                     নানা রকম অসামাজিক কাজকর্মে মেতে ওঠেন |         
.              আমার ছেলে বটুকে কাকা মদ খাওয়ায়, ও নানা রকম কুশিক্ষা দেয়,
আমি প্রতিবাদ করে ছিলাম বলে, আমাকে মেরে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে |     
.       আমার মেয়ে বাট্টিকে কোন অজানা লোকের বাড়ীতে কাজে লাগিয়েছে,
.                           তার সন্ধান আজো আমি পাইনি |
.            চাকদহ থানায় জানালেও ওসি সাহেব টাকা খেয়ে চুপ করে বসে আছে
.        আমার মেয়ে ও ছেলের নামে যে সমস্ত  এম. আই. এস করা আছে
.                      তা সবই কাকা শংকর ঘোষ নিয়ে নিয়েছে |
.                এমন কি আমার যে আটকাঠা জমি রোডের পাশে আছে
.                  তাও নেওয়ার জন্য নানারকম অত্যাচার করে চলেছে |
.      আজ আমি কবিতাদি-র বাড়ীতে কাজ করি এবং ওখানেই রাতে থাকি |
.                আমার জীবনে শুধুই কালো অন্ধকার, অন্ধকারে ছেয়ে গেছে |

.                                      ******************     
.                                                                                                 
সুচিতে...    




মিলনসাগর
*
সর্বহারা
কবি তারকনাথ সরকার

আমি আজ সর্বহারা, পথে পথে রিক্সা চালাই
জীবনের হাল ভেঙেছে, ছিড়েছে যে তার
মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ছেড়ে-ছুড়ে পালাই |

বাড়ী ছিল মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত কুটিরামপুর গ্রামে
আমার চোদ্দ বছরের ছেলে রাজা, আর ওর মা পিয়ালী
অভাবের সংসারে, কোন ঘাটতি ছিল না প্রেমে |

কিন্তু সাত দিনের জ্বরে, শেষ করে দিল প্রাণ
আমার একমাত্র রাজার চনমনে জান, ওর মা যে হল পাগলি
ডাক্তার বাবুর একটি ভুল ইনজেকশান |

আজ আমি সর্বহারা রিক্সাওয়ালা
এই ভাঙা বাড়ীর বারান্দায় রাতে থাকি, এ্যাঁ খাদ্য !
অ’খাদ্য বলতে এক বোতল বাংলা, আর চা কয়েক পেয়ালা |

কানে একটু কম শুনি, এখন তো মৃত্যুর দিন গুনি,
অভিযোগ ? হ্যাঁ সেতো. -- মন্ত্রী আর সরকারী দপ্তরের দরজায় ঘুরে ঘুরে
জমেছে -- এই দেখো কাগজের বস্তা, এখানেতো মৃত্যুই বড় সস্তা |

এই কুড়ি বছরে কম হয়নি হয়রানি, আদালতের চক্করে
দোকান, জমি, বাড়ী, ভিটে-মাটি-হয়েছে যে চাটি
পড়েছে যে মহাজন আর ঐ সব উকিলের খপ্পরে |

আর ঐ ব্যাটা ডাক্তার, আমার ছেলেটাকে জলজ্যান্ত
দুঃখে বুক ফেটে যায়, কিন্তু ভাবতো ডাক্তার--“যদি ছেলেটা তোমার হতো ?”
ছাড়বো না, কাঠগড়ায় তুলবোই !! যতই হই না কেন সর্বশান্ত |

কবে শোকে শোকে মরে গিয়েছে, পিয়ালী
শূন্যতার হাহাকারে ক্রন্দন বাজে বুকের মাঝে,
নিঃসঙ্গ আজ আমি, মনে হয় যেন এ জগৎ হেয়ালী |

মানুষ হয়েও আজ আমি মানুষ নই,
আদালত, আইন, প্রশাসন সবই বিত্তবানের সাথে,
পশুরও অধম আমি, কষ্ট আর হতাশারই বোঝা বই |

.  ******************     
.                                                                                                 
সুচিতে...    




মিলনসাগর
*
বীর - সন্ন্যাসী
কবি তারকনাথ সরকার

তুমি বীর
উন্নত করেছো মূহ্যমান জাতির শির,
তুমি সন্ন্যাসী বীর |
তুমি মহাপুরুষ বিবেকানন্দ,
জাগিয়েছো ভারতের ঐতিহ্যের ছন্দ,
অশিক্ষা আর কুসংস্কারে যাছিল আবদ্ধ, বন্ধ |
তুমি সেই বিলে - দূর্দান্ত
দুঃসাহসে ছিলো নাকো তোমার কোন অস্ত
প্রাণের প্রকাশে হতে না কভু ক্লান্ত |
ছিলে তুমি পাশ্চাত্বের নাস্তিক,
রামকৃষ্ণের প্রভাবে কিভাবে হলে আস্তিক ?
আজও বিরল তোমার মত বেদান্ত দর্শনের তাত্বিক |
বলেছিলে তুমি, মানুষের মধ্যেই আছেন ভগবান,
সেবধর্ম মূলমন্ত্র -এটাই তিনি চান,
রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড় মঠ, সেই হেতুই বানান |
চিকাগো-বক্তৃতার প্রভাব ছিল সারা বিশ্বজুড়ে,
হিন্দু ধর্মের আলোর ছটায়, অন্ধকার গেল দূরে,
পাশ্চাত্ব মত প্রাচ্যের দিকে মুহূর্তে গেল ঘুরে |
বিশ্বনাথ ও ভূবনেশ্বরীর দত্ত আর্য
ছিলে অসীম শক্তির উত্স,
আজও উজ্জিবিত করে তোমার অবয়ব স্পর্শ |

.  ******************     
.                                                                                                 
সুচিতে...    




মিলনসাগর
*
জাদুর ঝুড়ি
কবি তারকনাথ সরকার

চাঁদের কোণায় থাকে এক চরকা কাটা বুড়ি,
বয়স তাঁর সাতশ হাজার কুড়ি, খায় সে চালভাজা মুড়ি,
তাঁর কাছে আছে এক আশ্চর্য জাদুর ঝুড়ি,
যা চাইবে পাবে, হবে ইচ্ছে পুরি |
কচিকাঁচার তাইতো এতো হুড়োহুড়ি |
দিতে পারেন তবে, অদ্ ভুত এক শর্তে,
বারো বছর অন্তর, আসেন একবার মর্তে,
লুকিয়ে থাকেন হিমালয়ে, অজানা গভীর গর্তে,
হাজির হবেন যখন তখন ইচ্ছা পূরণ করতে |
দিতে হবে তবে, কঠিন এক পরীক্ষা
প্রয়োজন তাই কঠোর তপস্যা, জ্ঞান ভিক্ষা,
ভক্তি, শ্রদ্ধা আর তিতিক্ষা |
সকল বিষয়ে একশোতে ১০০ যদি তুমি পাও,
ইচ্ছে পূরণ জাদুর ঝুড়ি, তবে নিয়ে যাও |

.      ******************     
.                                                                                                 
সুচিতে...    




মিলনসাগর