কবি তারাপদ লাহিড়ীর কবিতা
*
*
*
*
বর্ণ পরিচয়
কবি তারাপদ লাহিড়ী
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত কাব্যসংকলন “ব্রাত্য পদাবলী” থেকে।

জল পড়ে পাতা নড়ে
লাফে লাফে দাম চড়ে
চাল ডাল তেল চিনি কয়লার

কাক ডাকে কা কা
টাকা-দরে মেলে না
পোয়াটাক্ সাদাজল গয়লার॥

খোকা হাসে হি হি
গায়ে নাই জামাটি
বস্ত্রের দর রোজ চড়ছে

ঘুঘু ডাকে ঘু ঘু
দাওয়া নাই, ট্যাঁক ঢুঁ ঢুঁ
রোগা মেয়ে বিছানায় মরছে॥

ভোর হল দোর খোল
খক্ খক্ একি হোল!
গলা দিয়ে রাঙা কাশ পড়লো

ভুলো ডাকে ভৌ ভৌ
জণ্ডিসে ভোগে বউ
স্বাধীনতা?
( হ্যাঁ তা-সে ) ---
তিরিশ বছর পার করলো॥

.    *************************  

.                                                                              
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
তর্কাতর্কী
কবি তারাপদ লাহিড়ী
এই কবিতাটি "কোঁদল" নামে
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “ব্রাত্য পদাবলী”
সংকলনে
প্রকাশিত হয়েছিলো যার প্রথম কলি ছিলো “তুই বুলি না মুই বুলি”।

তুই থুলি না মুই থুলি
টোটন এবং টুলটুলি
দুজন থাকে দুইখানে
হঠাৎ দেখা ময়দানে॥

কথায় কথায় কোঁদল বাধে
কা’র ঠাকুমা কেমন রাঁধে
বৌদিদি কা’র ক’বার মাসে
মেট্রোতে যায় ডিল্যুক্স
Bus এ॥

চললো কোঁদল গড়গড়িয়ে
সড়সড়িয়ে হড়হড়িয়ে---
চলতে-চলতে ঠেকলো শেষে
জটিল সে এক তর্কে এসে॥

কোন পাড়াটা কুলীন ভারী
দুই স্যাঙাতে দ্বন্দ্ব তারই
বললো টোটোন---“শোন্ লো টুলি
রাখ্ গে দেমাক শিকেয় তুলি

মোদের পাড়ায় --- বলছি ঠিক্
আজও জ্বলে ইলেক্ট্রিক
রাতদিনে ঘন্টা দুই
ফ্যানের তলায় আজও শুই॥”

“মোদের পাড়ায় সবার বাড়ী
বিজলী-তারে শুকায় শাড়ী
বিজলী খুঁটি উপড়ে ফেলে
পিদীম্ জ্বালায় রেড়ির তেলে॥  

কাল যেখানে আসবি তোরা
পৌঁছে গেছি সেখায় মোরা
বড়’র ধরম --- এগিয়ে চলা
বুঝলি হাঁদু! এবার পালা॥”

.    *************************  

.                                                                              
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
কাশীপুরের বাসীকথা
কবি তারাপদ লাহিড়ী
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত কাব্যসংকলন “ব্রাত্য পদাবলী” থেকে।

ঘরছাড়া সব বাঙাল
ভাতকাপড়ের কাঙাল
জুটলো এসে বঙ্গদেশে দণ্ডকবন ছেড়ে।
খবর শুনে টেকো মাথার গান্ধীটুপি নেড়ে
মহামাতা বচন দিলেন, “মোদ্দা কথা এই---
পিপীলিকার পাখনা ওঠে মরবার জন্যেই।
পাথর ভরা ভুঁই দিয়েছি চষতে---
টিন দিয়েছি ছাপড়া বেঁধে বসতে,
হাল কিনতে তঙ্কা দিলাম, আরও দিলাম মোষ---
হাভাতে সব বাঙালগুলো তাও মানে না পোষ!
সাফ কথাটাই বলছি তবে,
জলদি ফিরে আসতে হবে ;
দান খয়রাত দু’চার ফোঁটা না হয় দেবো আরও।
নইলে কানে দিলাম তুলো --- ফোঁপাও যত পারো।”

“ঠাঁই হবে না, ঠাঁই হবে না, যেতেই হবে ফিরে” ---
ছুটলো হুকুম গঙ্গা-অজয়-ইছামতীর তীরে।
কু লিসপাণি পুলিস এলো---এলো মোটর ট্রাক্
গুরুম গুরুম শব্দে হঠাৎ কানের পাটা ফাঁক।
“কি হয়েছে?--- কিছু না তো---
ন্যাংটো মানুষ গোটাকতো
অকাল মরণ প্রাপ্ত হলো---এমনি তরো রোজ
মরছে কতো পোকামাকড় কে রাখে তার খোঁজ?
স্বাধীনতার পূণ্যাহ যে---শুনছো না তার বাদ্য?
নরমুণ্ড দু’চার গোটা বার্ষিকী বরাদ্দ।”
.           *************************         

.                                                                              
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
ভাইয়ে ভাইয়ে বিষম বাদে
কবি তারাপদ লাহিড়ী
কবি সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত কাব্যসংকলন “গণসংগীত সংগ্রহ” থেকে।
এই গানটিতে সুর দিয়েছিলেন ক্রান্তি শিল্পী সংঘ।

ভাইয়ে ভাইয়ে বিষম বাদে
.                ভেভোনা একতা বল।
একই দেশে বসত করি
একই ঘাটে হয় গোসল।
রাত পোহালো দেখাদেখি
.                না দেখিলে হই চঞ্চল
তুমি হিন্দু আমি মুসলমান
.                এ কেবল ডাকনামের ছল।
আইলে আইলে ভুঁই চষি ভাই
একসাথে উঠাই ফসল।
তোমার আমার হাতে গলায়
একই বেড়ি এক শিকল।
এবার একসাথে ভাই হানবো আঘাত
.                আনবো জিনে মুক্তিফল।

.           *************************  

.                                                                              
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
সুতো চিংড়ি
কবি ঋত্বিক ঘটক
কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছেন কবি সোমনাথ গুহ।
তাঁর ইমেল -
somenath.guha26@gmail.com

ইংরি পিংড়ি
বুদ্ধিটা নিংরি
ব্যাঞ্জন বানায়েছি
নাম সুতো চিংড়ি
প্রণালী টা বলছি,
টুকে নাও জলদি
এক গোটা ইছা মাছে,
মাখো নুন হলদি
উনুনে তে চড়ায়ে
ভেজে নাও কড়াইয়ে
মাছ টা রে বেঁধে নাও,
সুতো দিয়ে জড়ায়ে
শাক পাতা জুটায়ে
হাতে সুতো গুটায়ে
তরকারি সহ মাছ
জলে নাও ফুটায়ে
হয়ে গেলো ঝোল তো?
তারপরে আলত সুতো দিয়ে টান ধরে
মাছটারে তোলত
ফেলিস নে মাছটায়!
উনুনের আঁচটায় শেকে নিয়ে রেখে দিবি হেঁশেলের কাছটায়
এ নিয়মে তারপর পাঁচদিন পরপর
ওই এক মাছ দিয়ে রোজ রোজ ঝোল কর
কায়দাটা মন্দ?
আমিষ তো বন্ধ!
মজা করে খাওয়া যাবে মৎস্যর গন্ধ!
চূড়ান্ত প্রতিকার মৎস সমস্যার
কি বলিস? মিলবে না রাষ্ট্র পুরস্কার!

.           *************************  

.                                                                              
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর