জানুয়ারী ১৯৭২      
তারাপদ রায়

বেনাপোলে আনন্দিত আম
ফিরে আসা টুনটুনি পাখিকে
.                      এসো
ঘরে ফিরছে ছেঁড়া চাদর, খা
যেন কোনো অপার গোধূলি
একসঙ্গে হাজার হাজার হাট
যে যার বাড়ি ফিরছে যত
কিন্তু কোনো হাট নয়, তুচ্ছ
অশ্রু রক্তাক্ত, আগুন ও মৃত্যু
সবচেয়ে বিলাসী উড়োজাহা
বাড়ি ফিরছে সর্বস্বান্ত মানু
ট্রাকের পর ট্রাক, ট্রাকের প
মানুষের পর মানুষ,
হরিদাসপুর থেকে নাভারণ------
রাস্তার বুক ভেঙে এখনো ফু
হযতো হাওয়ায় কান পাত
এক শো দিন আগের সেই
এখনো পাওয়া যাবে |
ধুলো উড়ছে, ধুলোর উপর
সেই পথ ধরে ঝিকরগাছার
কুয়াশার ভিতর দিয়ে ধলে
কালীঘাটের বাজারে দামদর
বাড়ি ফিরছে আমার বাবা-
বাড়ি ফিরছে ছানু, দাশু, টু
আর পবন দাসের কোলে দ
নিষ্পাপ সবুজের সমারোহে
সেই অমল নিশানের সঙ্গে

ঝিকরগাছার পুলের ধারে বুড়ো গাছের পোড়া ডালে
বহুদিন পরে ফিরে এসেছে শালিখের ঝাঁক,
অনাবাদী ধানখেতের আল ধরে পিছনে তাকাতে তাকাতে
পুরনো পাড়ার দিকে চলেছে নিহত মনিবের নিঃসঙ্গ কুকুর
তার তলপেটে এখনো রাইফেলের আগুনের ঘা |
কিন্তু সেই যে লক্ষ্মী গরু ছিলো গোয়ালে
সারাদিন আহ্লাদী বাছুরকে চাটছে তো চাটছেই,
সেই যে লেজ-ফোলা বেড়াল
.               চোখ বুজে শুয়ে থাকতো রান্নাঘরে সিঁড়িতে,

আর সেই জালালিয়া পায়রা
বহুদিনের পুরনো দালানবাড়ির ফাঁকে ফাঁকে,
আর সেই সাতজন্মের গৃহদেবতা শিবঠাকুর,
গুলির শব্দ তাদের কোথাও তাড়িয়ে নিয়ে গেছে,
কোন মেঘালয়, কোন্ লবনহ্রদ থেকে কবে ফিরবে তারা

তবু ফিরে চলেছে ভাঙা কুপি হাতে মুশকিলআসান ফকির,
পঙ্গু পুরোহিত ময়লা চাদরে বাঁধা শালগ্রাম শিলা,
ফিরে চলেছে রমেশ হলের ছেঁড়া বই,
বিন্দুবাসিনীর হারানো ছেলে |
মরা কৃষ্ণচূড়ার নীচে আমাদের বিন্দুবাসিনী,
যেন আর কিছুতেই বিশ্বাস হয় না তুমি আছো,
কিন্তু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,
রমেশ হলের সামনে আর বকুলগাছের তলা দিয়ে
হেঁটে যাচ্ছেন শেখ মুজিব, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,
বিন্দুবাসিনী মাঠে তার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েছে
হাজার হাজার বন্দুক |
বন্দুক তুমি কার ?
বন্দুক তুমি মুক্তির |  বন্দুক
সেই যে নিরীহ শিক্ষক দুপুরবে
যাকে মায়ের চোখের সামনে,
কুপিয়ে কুপিয়ে কাটা হলো,
সেই যে ফুলের মতো মেয়ে ই
চিকন খালের মতো তরতর
যাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল
সেই যে বোকা ব্রাহ্মণ বাড়িতে
পূজোর ঘরে ঠাকুরের সামনে
মুখ থুবরে পড়ে গেলো আর
সেই যে বুড়ো হাজী পানাপুকু
চিরদিনের মতো লুকিয়ে গেলে

বন্দুক তুমি মুক্তির, বন্দুক তু
তুমি সেই অসহায়ের শেষ স
প্রতিটি দীর্ঘনিশ্বাসের সঙ্গে তু
কালী হাতীর মাঠে, মধুপুরের
বন্দুক, ঘরে ফিরে চলেছে আ
এককোটি মাইকেল মধুসূদনে
.                 ফিরে চলেছেন
এককোটি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রে
.                   ফিরে চলেছে
ফিরে চলেছে শাজাদপুর শাড়ি
পদ্মার ইলিশের পিছু পিছু সু
গয়নার নৌকার সঙ্গে কাঁচা রা
এক হাতে চোখের জল মুছে,
আর এক হাতে শক্ত করে শি
এবড়ো-খেবড়ো যুদ্ধের রাস্তায়
.                        সর্বস্বা

.              ******************     
.                                                                               
সুচিতে...   


মিলনসাগর
কবি তারাপদ রায়ের কবিতা
*
একটা বাড়ির মধ্যে,
একটা গাড়ির মধ্যে,
একটা টেবিল ঘিরে,
একটা মাইক জুড়ে,
.                দলেদলে কবি,
যে রকম পঙ্গপাল, দেয়ালির অন্ধ শ্যামাপোকা |
তবুও কবির কাছে কবি
একজন নিরীহ কবির কাছে
.                একজন মারকুটে কবি,
একজন বক্ বক্ কবির কাছে
.                একজন চুপচাপ কবি
একজন মাতাল কবির কাছে
.                একজন গঙ্গাজল কবি
কি রকম ব্যবহার আশা করে,
কি রকম ব্যবহার, আলেকজান্দার ?

.            ******************     
.                                                                                        
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
ভেনেজুয়েলার প্রতিনিধি, বৃদ্ধ ভদ্রলোক সস্নেহে বললেন,
‘সব শুনে মনে হচ্ছে,
চাঁদ ভারতের গঙ্গা কিংবা সিন্ধুর তীরের কোনো প্রাচীন শহর |’
আমি চমকে সবিনয়ে উত্তর দিলাম,
‘মাননীয় মহোদয়, সিন্ধু নয়, সিন্ধু আমাদের নদী নয় |’
অবাক বিস্ময়ে  ভেনেজুয়েলার ভদ্রলোক, আগে অধ্যাপক ছিলেন,
নিউ ইয়র্কের সেই হৃদয়হীন অট্টালিকার করিডোরে
একবার আধুনিক পৃথিবীর চিহ্নিত ও অচিহ্নিত,
অতর্কিত-বিতর্কিত সীমানাবলীর দিকে তাকালেন,
‘সিন্ধু, সিন্ধু, ইয়েস, ইন্ডাস্, ইন্ডাস সরি !”
কিন্তু সত্যি দুঃখিত হওয়ার কোনো কারণ ছিলো না
পাশে আধা-কালো সত্যেন্দ্র দত্ত পড়া ভদ্রলোক, বাংলাদেশি নাকি পাকিস্থানি
স্পষ্ট পাঠশালার উচ্চারণে বললেন,
.             ‘ওই সিন্ধুর টিপ, সিংহল দ্বীপ |’
চাঁদের পিঠের সেই রূপকথার খরগোসের মতো
তাড়তাড়ি আমি শশব্যস্ত হয়ে বললাম,
*
কি রকম ব্যবহার      
তারাপদ রায়
চাঁদের বিষয়ে      
তারাপদ রায়

.                    ******************     
.                                                                                                
সুচিতে...   


মিলনসাগর