কবি তিলোত্তমা মজুমদারের কবিতা
*
রাত্রি হোক বনে
কবি তিলোত্তমা মজুমদার

চলো নির্জনে দাঁড়াই
একটি কথাও না বলে
হাত ধরে থাকি পরস্পর
চলো নির্জনে দাঁড়াই
কাঠি দিয়ে আঁকিবুকি বালিতে বালিতে
ছোট-ছোট নুড়ি ফেলি জলে
ভেজা পা দুটি আমার কোলে তুলে দাও
আমি ঘাসের কণায় ঢেকে দিই
ঢেকে দিই আমার ঈর্ষাও
খোলা রাখি যন্ত্রণার চাপা কান্না মুখ
তোমার আঙুল স্পর্ষ দেবে
চলো নির্জনে দাঁড়াই
ছেলেবেলা কেটেছে যেখানে
তার থেকে উপকূল বেশী দেরী নয়
সাইকেলে মিনিট তিরিশ
তুমি বায়ু কেটে যাবে
আমি সারা দেহে সমুদ্রের তট
আমারও শৈশবের কথা লেখা আছে বনে
নির্জনতা ভেঙে দিতে
দু’একটি শুকনো পাতার নীচে-পড়া
তোমার শৈশব দেখা হলে
আমার শৈশব তারপর
সমুদ্রগমন শেষে বনান্তরে গতি
ইস্কুলের যেখানে-যেখানে টিফিনের কৌটো খোলা
সেখানে সেখানে শুলে পাশাপাশি
চোখ মুদে আসে

.             *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সন্ন্যাসী
কবি তিলোত্তমা মজুমদার

অস্তে যাবার আগে চাঁদ
আমার জানালার কাছে দাঁড়ায়
মাধুকরী করে
আমি ওকে ফলমুল দিই
পিঠেপায়েস রাখি ওর জন্য
আর তার আগে
ঘুম পাড়িয়ে দিই আমার স্বামীকে
চোখে চুমু দিয়ে বন্ধ করে দিই এমন
যাতে ভোর অবধি ঘুমোয়

ওর চোখের পাতা
শ্বাসপতনের শব্দ গাঢ় হতেই
আমি চুল খুলে দিই
আমার খোলা চুল
জানালা দিয়ে বেরিয়ে যায় বাইরে
আমাদের বাড়ির পেছনের পুকুরে
ডুব দিয়ে আসে
স্নান না করে সন্ন্যাসীকে ভিক্ষা দিতে নেই
কে সন্ন্যাসী ? কে ?
ও যখন গৈরিক বেশে দাঁড়ায়
আমি পবিত্র হয়ে কাছে আসি

.      *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সমস্ত কথার ভার
কবি তিলোত্তমা মজুমদার

আমার সমস্ত জুড়ে রাতদিন একমাত্র ঘুম
শুষে নিচ্ছে অনিদ্রার বিশ্বাসঘাতক অন্ধকার
শুষে নিল যন্ত্রণার বস্তু বিষাক্ত শরীরে
আশ্চর্য বালিশে দুটি ঠোঁট তার ঘষে ঘষে!
এই সকল উত্থান কখন সম্ভব হল,---
ওই দুই দাহ্য করে কখন জড়ালো অ্যাত!
মায়ার বিস্ময় রেশ কবে থেকে মত্ত হল
.        শরীরের প্রত্যেক কণায়---
প্রথমে আমি তো কই টের পাইনি সরু সরু
.                        ধমনীর খেলা
রণশব্দ ওই, তুলতে লেগেছে,
.        ভুলে থাকা আসক্তি বাড়িয়ে!

সেই একমাত্র মুখ আলাদা আলাদা করে ডানচোখ কামচোখ
হ্যাঁ, আমাকেই দেখে যাচ্ছে
চোখ জ্বেলে, বন্ধ করে চোখ।
সেই একমাত্র ঘুম আলাদা করেছে ঠোঁট জিহ্বা---আর
কী আকুল ইচ্ছা তার---
.                সেইসব রেখে গেল
আমার শিউরে ওঠা সুগোপন শক্ত প্রতিমায়।
আমি দেখলা---ভিজে যাচ্ছি
বললাম---দেখো, দেখো, কেঁপে যাচ্ছি আশিরনখর
সে তখন দাঁত দিয়ে খুঁটে তুলে নিল
প্রস্তাবিত রোগজর্জরতা আর
সমস্ত পোষাক খুলে ডেকে গেল---
.                আয়রে পাগল, ও পাগল, আয়!

আমিও দিয়ে দিলাম আমার কামিজ
মেঘ হয়ে ওই সব বৃষ্টি দিচ্ছে
দিয়ে যাচ্ছে প্রার্থিত আড়াল---যার নীচে
আমারই, পরিপূর্ণ কাছাকাছি আসা
.                আরও আরও কাছাকাছি করলাম
.                টান টান সরলরেখায়।
পরস্পরের পিঠ কামড়ে চিবিয়ে ছাতু করে দিতে দিতে
উপলব্ধি করলাম---নিরাময় কাকে বলে
কাকে বলে মিথ্যে বয়ঃক্রম। সমস্ত কথার পর একসঙ্গে
বিজে যেতে যেতে আস্বাদ করছি পরস্পর ওষ্টপুট
নাভিকে নাভিতে ঘষে মুছে দিচ্ছি প্রোচনা
.                ক্ষয়ের মৃত্যুর

.              *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর