কবি উমা দেবীর কবিতা
*
আমি দেখেছিলাম তোমার চোখে ধূসর নীহারিকা
কবি উমা দেবী
শনিবারের চিঠি, কার্তিক ১৩৫২ (অক্টোবর ১৯৪৫) সংখ্যা থেকে নেওয়া

কেন                

আমি দেখেছিলাম তোমার চোখে ধূসর নীহারিকা
একের পরে অন্য তারায় নূতন অভ্যুদয় . . .
কি বিচিত্র সম্ভাবনায় রঙিন আকিঞ্চনে
সন্ধ্যায়বেলায় লক্ষ মেঘে অস্তরাগের শিখা।

মনের গোপন কক্ষে তোমার শিল্পী আঁকে ছবি
অসাবধানে উপচে পড়ে এদিক ওদিক রঙ . . .
চোখের কোণে ঠোঁটের কোণে হঠাৎ গাওয়া গানে
দক্ষিণা বায় যেমন করে ছন্দ হারায় কবি---

তেমনি তোমায় দেখেছিলেম দেখেছিলেম আমি
দেখেছিলেম বুঝেছিলেম কিছু, . . .
আড়াল হ’লে জ্বলত মনে মণি- মানিক দামী,
চোখের পাতে মেঘের মত স্বপ্ন হত নীচু . . .

এমনি করেই যেত না হয় যেত আমার দিন
আধেক পাওয়া আধেক চাওয়া আলোক-ছায়া হেন,
হঠাৎ কেন স্পষ্ট হ’ল রৌদ্র-ছায়ালীন
তুমি বললে কেন ? . . .

আমি ভেবেছিলেম অনেক কখা আপন মনে মনে
রুদ্ধ ক’রে রেখেছিলেম গোপন কামনায়,
অন্ধকারে অন্তরালে বিজন গৃহমাঝে
চৈতি রাতে জোছনা-ঘেরা ফুলের বনে বনে . . .

সকালবেলা সূর্য্য হাসে মেঘের রাঙা কোলে
হীরার কুচি ছড়ায় যেন ভাঙা জলের ঢেউ---
তটের বুকে আলগা সুরে কত যে গান ওঠে
অবোধ জনে যেমন বকে নেশার মত হ’লে . . .

তেমনি আমি বলেছিলেম বলেছিলেম কত
বকেছিলেম প্রলাপ মৃদু সুরে,
উত্স যেন খুলেছিলেম মহোত্সব রত
একলা কাছে পেয়েছিলেম যেজন ছিল দূরে,

না হয় যেত এমনি বেলা এমনি যেত চ’লে
ঘুমের মাঝে অর্থহারা স্বপ্নরোগী হেন---
কেন তুমি আসলে কাছে চোখের জলে জলে
সব শুনলে কেন ?

আমি পেয়েছিলেম বাহুর ঘেরে সোহাগ সুনিবিড়
বুকের ’পরে মাথা যখন থুয়েছিলেম সুখে . . .
রাতের সাথে চোখের পাতা এল যখন নেমে,
চেয়েছিলেম তোমার কাছে একটি ছোট নীড়।

ঘুমিয়ে থাকে বিদ্যুতেরা ঝড়ের মেঘে মেঘে
হঠাৎ যেন চমকে উঠে ছোবল মারে নভে,
ভীরু শাখার পাখির বাসা কাঁপতে থাকে শুধু
কাঁপে যখন বুকের তলা ঝ’ড়ো বাতাস লেগে।

তেমনি আমি চেয়েছিলেম চেয়েছিলেম ভয়ে
দেখেছিলেম মনের ছায়া মুখে,
আঘাত পেয়ে চমকে ওঠা হঠাৎ পরিচয়ে
নূতন ক’রে ফিরে পেলাম পুরাতনের দুখে।

না হয় যেন জীবন মম দিবস গুনে গুনে
ভাবী কালের মরীচিকায় প্রসাদকামী হেন,
কি লাভ হ’ল তোমার কাছে সত্য কথা শুনে
ভুল ভাঙলে কেন ?

আমি ভেবেছিলেম স্রোতের মুখে খড়ের কুটাসম
অধীর হ’য়ে খুঁজেছিলেম বনপথের রেখা
বিবশ দিশা হারায় নিশা আঁধার নিশীথের
শ্রাবণ-মেঘঘটায় আরো হ’ল নিবিড়তম।

পায়ের তলে শবের মতো ভূবন পড়েছিল
মৌন ছিল মনোলোকের মুখের কাকলী . . .
কখন যেন তরলবায়ু-আঘাত লেগে লেগে
ছেঁড়া মেঘের ফাঁকে ফাঁকে আলোক ধরা দিল।

তখন আমি কেঁদেছিলেম বেঁধেছিলেম বুকে
সেধেছিলেম স্মৃতির সুরগুলি,
কবর-ঘরে বাসর হ’ল অপার উত্সুকে
দেহের দ্বার বন্ধ ক’রে মনের দ্বার খুলি।

না হয় দিনে রাতের ছায়া নামত চুপে চুপে
ভেসে যেতেম ছায়ার দেশে ছায়ার ছবি যেন,
আবার কেন মৃতের বুকে এলে নতুন রূপে
মোহ আনলে কেন ?

.              ******************************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পৃথিবীর দুই সীমা উত্তর দক্ষিণ
কবি উমা দেবী
শনিবারের চিঠি, কার্তিক ১৩৪৮ (অক্টোবর ১৯৪১) সংখ্যা থেকে নেওয়া

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু             


.                          ***********************************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সেই দেবতার জান কেহ পরিচয়
কবি উমা দেবী
শনিবারের চিঠি, অগ্রহায়ণ ১৩৪৮ (নভেম্বর ১৯৪১) সংখ্যা থেকে নেওয়া

পুরোহিত


.                          ***********************************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আঁধারে উধাও দেহ . . . সিঁড়ি যেন অতলে উধাও
কবি উমা দেবী
শনিবারের চিঠি, কার্তিক ১৩৪৮ (ডিসেম্বর ১৯৪৫) সংখ্যা থেকে নেওয়া

সিঁড়ি             


.                          ***********************************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর