ছোট্ট রামায়ণ
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
সুন্দর কান্ড
হনুমান বড় বীর, ডিঙ্গাবে সাগর,
কিচির-মিচির করে যতেক বানর |
ফুলিয়া হইল হনু পর্বতের মতো,
গুছায়ে লইল গায় জোর
তারপরে দুই পায়ে যেই
পর্বত নিঙাড়ি জল ঝরে
আকাশ ফাটিয়া যায়, উছ
লাফাইল হনুমান বড় ভয়
মেঘের উপর দিয়া ছোটে
দেবতা অসুর সবে ভয়ে
সুরারে কয় ডাকি দেবতা
“দেখ তো মা, হনুমান কত
সুরসা নাগের মাতা, যে-সে
পৃথিবী গিলিতে পারে যদি
হাঁ করে আইল সে সুরসা
হনুমান বলে, “বাবা ! না,
হাঁ করেছে কত ক্রোশ, দে
বড় যদি নাই হই, গিলিবে
ফুলে উঠে হনুমান মনে ভ
সুরসা হাঁ করে ঢের বড়
ফুলে-ফুলে হয় হনু নব্বই
হাঁ করে যোজন শত সুর
হনু বলে, “তাই তো রে, গিলিবেই নাকি ?
সে হবে না ঠাকরুণ---- হনু জানে ফাঁকি |”
শরীর গুটায়ে হনু লইল তখন,
পলকে হইল তেলাপোকার মতন |
ঝাঁ করে ঢুকিল গিয়া সুরসার মুখে,
তখনি বাহির হয়ে পলাইল সুখে |
ঠকিয়া সুরসা হাসি ফ্যাল্-ফ্যাল্ চায়,
কোথা দিয়ে গেল হনু ভাবিয়া না পায় |
ডাকিয়া কহিল তারে, “যাও বাছাধন
সুখেতে নিজের কাজ কর গে এখন |”
বলিয়া সুরসা যায় আপনার দেশে
আকাশে ছুটিয়া হনু যায় হেসে হেসে |
সিংহিকা রাক্ষসী এল সরসার পরে,
মুখ মোল হনুমানে গিলিবার তরে |
হনু বলে, “বুড়ি তুই ভালো ভোজ খাবি,
অসুখ না হয় পরে, তাই শুধু ভাবি |”
ছোট হয়ে গেল হনু রাক্ষসীর পেটে,
নাড়ি ভুঁড়ি সব তার নখে দিল কেটে |
হাঁ করে রাক্ষসী মরে, হাসে দেবগণ,
আকাশে ছুটিয়া হনু যায় ততক্ষণ |
লঙ্কার সোনার পুরী দেখে তার পরে,
ঝলমল করে তাহা জলের উপরে |
হনু ভাবে, ‘বড় হয়ে যদি সেথা যাই,
রাক্ষসে করিবে দেখি ভারি কাঁই-মাঁই |’
খুব ছোট হয়ে তাই, পাখির সমান,
ত্রিকূট পর্বতে গিয়া নামে হনুমান |
লুকায়ে রহিল বনে দিনের বেলায়,
আঁধার হইলে গেল খুঁজিতে সীতায় |
চুপি চুপি যায় হনু, ছোট হয়ে ভারি,
বিকট রাক্ষসী তায় দেখে এল তাড়ি |
গালি দিল দুশো দাঁত করি কড়্ মড়্,
তালগাছপানা হাতে কষে দিল চড় |
হনু তারে এক কিল দিল বাম হাতে,
পড়িল রাক্ষসী মুখ সিঁটকায়ে তাতে |
তখন খুঁজিয়া হনু ফেরে ঘরে-ঘরে,
কত মাঠে, কত পথে, রথের উপরে |
মন্দিরে-মন্দিরে খোঁজে, ঘাটে আঙিনায়,
কোথাও সীতায় নাহি দেখিবারে পায় |
হনু বলে, “হায়-হায় ! বুঝিনু এখন,
নিশ্চয় খেয়েছে তাঁরে অভাগা রাবণ |”
কত সে কাঁদিল, ভাবি এই কথা মনে
তারপরে এল এক অশোকের বনে |
সেই বনে গিয়া হনু দেখিল সীতায়,
কেবলই কাঁদেন তিনি পড়িয়া ধূলায় |
. কাপড় তাঁর, আলুথালু চুল,
. ঘিরিছে তাঁরে, লয়ে শেল শূল |
হনু বলে, “এই সীতা, চিনিনু এখন,
. আনিল রাবণ |”
. নু দেখিল সেথায়,
বাঘমুখী কেউ কারু গোদ বড় ভারি,
কারু নেই মাথা, আর কেহ এক-পেয়ে,
উটপানা, বকপানা আছে কত মেয়ে |
সীতারে ঘিরিয়া তারা খিঁচাইছে দাঁত,
কিল দেখাইছে, তুলি এই বড় হাত |
রাবণ সীতারে আসি কত কথা কয়,
রাঁধিয়া খাইবে বলি দেখায় সে ভয় |
ছিঁড়িয়া খাইতে চায় রাক্ষসীরা তাঁরে,
কুড়াল তুলিয়া তাঁরে যায় মারিবারে |
সীতা কন, “তাই হোক ওরে বাছাগণ,
মরিলে তো যাই বেঁচে, মার এইক্ষণ |”
এই কবিতাটি মিলনসাগর.কম্ থেকে
সরাসরি এখানে কপি পেস্ট করা হয়েছে।
.
এই
পাতার উপরে
ছোট্ট রামায়ণের সূচিতে
কবির মূল সূচিতে
কবি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছোট্ট রামায়ণ
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
কবি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পরিচিতির পাতায় . . .
রামের অঙ্গুরী দিয়া হনু কয় তাঁরে,
“কাঁধে ওঠ, যাই মাগো লইয়া তোমারে |”
সীতা কন, “বাছা তুই এতটুকু হয়ে
কেমনে যাইবি বল মোরে কাঁধে লয়ে ?”
শুনিয়া তাঁহার কথা হেসে হনুমান,
দেখিতে-দেখিতে হয় পর্বত সমান |
সীতা কন, “বুঝিলাম, ভারি বল তোর,
কিন্তু বাপ্, মাথা যে রে ঘুরে যাবে মোর |”
হনু কয়, “তবে মাতা কাজ নাই গিয়া
রাম লক্ষ্মণেরে মোরা হেথা আসি নিয়া |
একখানি অলঙ্কার দাও মা আমারে,
রামের নিকট গিয়া দেখাইতে তাঁরে |”
শুনিয়া মাথার মণি দেন সীতা খুলি,
বিদায় হইল হনু লয়ে পদধূলি |
যাবার সময় হনু মনে-মনে কয়,
‘রাক্ষস কেমন বীর না দেখিলে নয় |’
হুপ্-হাপ্ , ধুপ্-ধাপ্ করি তারপর,
অশোকের বন হনু ভাঙে মড়্ মড়্ |
বড়-বড় গাছ তোলে দিয়া এক টান,
গাছ দিয়া বাড়ি-ঘর করে খান্-খান |
তখন রাক্ষস যত করি “মার-মার্”,
ক্ষেপিয়া আইল লয়ে ঢাল তলোয়ার |
হনু বলে, “জয় রাম ! কে মরিবি আয় |”
শতেক রাক্ষস মরে তার এক ঘায় |
যত আসে তত মরে, তবু আসে আর,
সাগরের ঢেউ যেন, শেষ নাই তার |
“জয় রাম ! জয় রাম !” হাঁকে হনুমান |
রাক্ষসের মাথা পড়ে হয়ে খান্-খান্ |
হাতি দিয়া হাতি মারে, ঘোড়া দিয়া ঘোড়া,
রাক্ষসে রাক্ষস ঠোকে লয়ে জোড়া-জোড়া
জাম্বুমালী, বিরুপাক্ষ, ভাসকর্ণ আর,
দুর্ধর প্রঘসে মারি করে চুরমার |
যুপাক্ষের হাড় ভাঙে শাল গাছ দিয়া,
অক্ষেরে করিল গুঁড়া সানে আছাড়িয়া |
রাবণের ছেলে অক্ষ মরিল যখন.
বড় ছেলে ইন্দ্রজিতে পাঠাল রাবণ |
বড় শঠ সেই বেটা, ভারি ফন্দি জানে,
ব্রহ্মাস্ত্রে বাঁধিল আসি বীর হনুমানে |
হনু ভাবে, ‘লয়ে যাক রাবণের কাছে,
দেখে নিব, পেটে তার কত বিদ্যা আছে |’
তখন রাক্ষস যত ছুটে গেল নাচি
হনুরে বাঁধিল কষে আনি যত কাছি |
তায় কি হইল, সবে শুন মন দিয়া------
ব্রহ্মাস্ত্র খুলিয়া গেল দড়িতে ঠেকিয়া |
দড়ি ঠেকাইতে কভু না হয় সে বাণে,
অবোধ রাক্ষসগণ তাহা নাহি জানে |
হাততালি দিয়া তারা হাসে খিলি-খিলি,
“হেঁইয়ো, হেঁইয়ো !” বলি টানে সবে মিলি |
চিমটি কাটিছে কত কি হবে তা কয়ে,
এই মতে রাবণের কাছে গেল লয়ে |
এই কবিতাটি মিলনসাগর.কম্ থেকে
সরাসরি এখানে কপি পেস্ট করা হয়েছে।
.
এই
পাতার উপরে
ছোট্ট রামায়ণের সূচিতে
কবির মূল সূচিতে
সীতাকে ফিরায়ে যদি না দেয় রাবণ,
কাটিবেন মাথা তার শ্রীরাম লক্ষ্মণ |”
“কাট্ তো অভাগারে, কাট্ এইক্ষণ |”
সেথা ছিল বিভীষণ, রাবণের ভাই,
সে বলে, “দূতেরে কভু মারিতে তো নাই |”
রাবণ কহিল, “তবে কাজ নেই মেরে,
লেজটি পোড়ায়ে তার, দে বেটাকে ছেড়ে |”
কাপড় হনুর লেজে জড়ায়ে তখন,
তেল ঢালি দিল জ্বালি সেই দুষ্টগণ |
হো-হো করে হনুমান হেসে তায় সুখে,
ঘষে দিল সেই লেজ দুষ্টদের মুখে |
ছোট হল তারপর, ইঁদুর যেমন
খুলিয়া পড়িল তায় দড়ির বাঁধন |
অমনি লাফায়ে উঠে চালের উপরে,
আগুন লাগায়ে হনু ফেরে ঘরে-ঘরে |
না পোড়ে শরীর তার সীতার কথায়
সকল পোড়ায় হনু যাহা কিছু পায় |
জ্বলিল আগুন ভারি করি দাউ-দাউ
ভয়েতে রাক্ষস যত করে হাউ-মাউ |
ছুটাছুটি করে শুধু পাগলের মতো,
আগুনে পুড়িয়া মরে না জানি-বা কত |
তারপর হনুমান সাগরে নামিয়া,
লেজের আগুন সব দিল নিবাইয়া |
এমন সময়ে হনু ভাবে, ‘হায়-হায়’
পোড়ায়ে মারিনু বুঝি মোর সীতা মায় |’
অমনি গেল সে ছুটে অশোকের বনে,
ভালো দেখে তাঁয় বড় সুখ পেল মনে |
আবার পায়ের ধূলা লইয়া তাঁহার,
সাগর ডিঙায়ে হনু দলে ফিরে তার |
আনন্দে তখন দেশে চলিল সকলে,
আকাশ ফাটিয়া যায় তার কোলাহলে |
দেখিতে-দেখিতে হনু এসে কিষ্কিন্ধ্যায়,
রামের পায়ের ধূলা লইল মাথায় |
সীতার মানিক দিয়া কহিল সকল,
আনন্দেতে শ্রীরামের চোখে এল জল |
এই কবিতাটি মিলনসাগর.কম্ থেকে
সরাসরি এখানে কপি পেস্ট করা হয়েছে।
. সুন্দর কাণ্ড সমাপ্ত
.
এই পাতার উপরে
ছোট্ট রামায়ণের সূচিতে
কবির মূল সূচিতে
মিলনসাগর