ভূমিকা
কবি উত্পলকুমার বসু
কহবতীর নাচ কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা



















.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
কবি উত্পলকুমার বসুর কবিতা
*
নীলকুঠি
কবি উত্পলকুমার বসু
আবার পুরী সিরিজ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া


তোমার সঙ্গে ছিল ব্যক্তিগত রমণীয় আলোছায়াময় টানা দিনগুলি
.     গোল বারান্দার দিকে চেয়ে থেকে চোখে জল আসে
উদ্ভিদের, বটপাকুড়ের তলে অপর্যাপ্ত দিন ছিল, রাত্রি ছিল আমাদের
সকালে পায়ের কাছে অ্যাসিডের মতো তীব্র রোদ এসে নামত তখন
জ্যৈষ্ঠে আমাদের ছিল ব্যক্তিগত রমণীয় আলোছায়াময় টানা দিনগুলি
গোশালায় সে-সময়ে কখনো-বা ঝল্ সে যেত গোরু ও গোয়ালা
.     বাতাসে নরম মাংস পোড়ার গন্ধে আমাদের বিষণ্ণতা লেগেছিল
দূরে আধো-অন্ধকারে, আগুনে ও সন্ধ্যার মেঘে
.      ডুবে যেত তোমাদের লাল বড়ো বাড়ি |


জামের বনের মধ্যে আমি এক চিরস্মরণীয়
বাঘের হলুদ ছোপে সাথীহারা সন্তান বাঘের
ঘোরাফেরা দেখি | পুরনো জামের বনে আমি শুধু মানুষের
শোভাযাত্রা দেখেছি শৈশবে | সে-সব জামের বন আজ আর
উপদ্রবহীন নয় |


নগরে নগরে তুমি গান গাও রমণীবিজয়ে |
ওদিকে পোকার স্তূপ জমে ওঠে---তারা আজ যাযাবর
স্ত্রী-পাখিদের দলে মিশে গিয়ে বাতাসনির্ভর
প্রাণবন্তের মতো শুয়ে আছে |

যদিও লাম্পট্য নয় ঔপনিষদিক তবু, সাথি, মহার্ঘ রেশম
রেখেছ কাঁধের ‘পরে এবং বৃদ্ধের দলে
আধোভাঙা জীবদ্দশায় তুমি ডুবে গেছ | আমি বা কী কম ?

যুবার পেশির তলে সদ্যজন্ম, ক্ষুধার্ত ইঁদুর
কবির মনীষা বলো, ছন্দোময়--- লক্ষ সে-রেশম |


কিছু কিছু ঘোড়া আজ নেই
এবং সহিস একা প্রাসঙ্গিক নয়
এজন্যই ফিরে আসে ঘাস আর ঘাসের জন্ম হয়
শরতকালীন
আবহাওয়ায় আমাদের ক্লান্তিবোধ হতে থাকে |

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
*
চায়ের নিমন্ত্রণ
কবি উত্পলকুমার বসু
আবার পুরী সিরিজ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া


তোমার দু’খানি হাত টেবিলে ন্যস্ত আছে |
.                   টেবিল মানুক
তার তুল্য কিছু নয় |  ফাল্গুনের আঁচে
.            হৃদয় জ্বালিয়ে দেয় স্তন-চিনাংশুক,
.       অবলীলা, অতিরিক্ত হায়
অপরাহ্নে পাতা হল আরো বেশি চা-টেবিল বনের ছায়ায় |


অপরাহ্নেও আমি মাকড়সার জালবোনা দেখি |
লেবুপাতা গন্ধে নুয়ে আসে

আমার মেয়েরা আজ কোথায় ? আমার
স্ত্রীলোকেরা কোথায় ?

সহসা নক্ষত্রগুলি বালু থেকে জেগে ওঠে---
সান্তাল, বাঁশি বাজানোই জানো
লেবুপাতা জানে না ও-সব |


বৃষ্টি, কুয়াশা তবু ফোয়ারায় জল পড়ে দ্রুত
মেয়েদের হস্টেল এক মাস বন্ধই রয়েছে
বাগানে অনতিদূরে --- অর্ধেক জঙ্গলে----
পড়ে আছে ভূগোলদিদির
ভেঙে যাওয়া বিবাহের ছিঁড়ে ফেলা সুতো |


আমি চাই নিজে দিক দেখা
ঐ সন্ধ্যাতারা | যেন নিরুপায়
ঝর্ণা, বিমানবাহী মেঘে ঢুকে পড়া
দার্জিলিং কুজ্ঝটিরেখায়
জেগে ওঠে | ঘুরে চলে জাঁতি |
আঙুলে সুপুরিফল | রেশম জানালো
‘অচুড়, বোকার মতো বসে আছ | পৌত্রী ও নাতি
ছিঁড়ে নেয় জবাফুল লাল আর কালো |’


তাকি হতে পারে তোমার ভ্রূ-ভঙ্গে আমি কপট, চঞ্চল
সামুদ্রিক খেলা ফেলে চলে যাওয়া উত্কন্ঠিত জল
সরে যেতে দেখি | কোন্ দেশ ? লাক্ষা বুঝি-বা |
নাব্য নয় | তরী নয় | রাজমিস্ত্রিদল
ভেঙে ফেলে বনগত বনানী ও বিভা
গড়ে না নতুন কিছু | তোমার ভ্রূ-ভঙ্গে তাই খসে পড়ে ফল |
বনে বনে চিনাংশুকে ঢাকা ও-ঈগল
মিথ্যা হয় | কোন্ পাখি ? মানুষী বুঝি-বা |
রৌদ্র লেগে নড়ে উঠে তির্যক শিকল
অলকদামের প্রতি নাব্য ঢেউ,  টানাটানি, ছিঁড়ে যায় জাল
এসেছে বিশাল মাছ, ধন্যবাদ, কোন্ মাছ ? মর্মর বুঝি-বা |

তবু ধন্যবাদ | তুমি মাছ নও | ধীবর হিসেবে
কিছু শাপ থেকে গেল | মকর হিসেবে কিছু ব্যথা থেকে গেল |
মানুষ হিসেবে কিছু প্রশ্ন থেকে গেল | যাবে
কোন্ দেশে ? কোন্ দেশ ? নীলিমা বুঝি বা |


বনের ভিতরে আজ জেগে ওঠে বিহ্বল উপজাতীয়ের বন |
শ্রেণীসমাধির কথা মনে পড়ে |
বনের ভিতরে বন একই ভাবে পর্যুদস্ত হতে থাকে
হতে পারে মুকুলের পত্রবিন্যাসলিখা ততখানি তৎপর নয় |
আমাদের যায় বা আসে না কিছু
আমাদের যায় বা আসে না কিছু
অর্থনীতি বাড়ে কমে | ব্রিটিশবাগান ক্রমে ছোটো হয়ে আসে |
ফাল্গুনের বিকেলবেলায়
বনের ভিতর যুগ্ম কোম্পানির ঝাড় জ্বলেছিল |


ফুলভাবে ফুটছে শিমুল
নতভাবে জাগছে বিকেল
জ্যামুক্ত নক্ষত্রগুলি ফিরে আসছে এই পৃথিবীতে
পূর্বস্থলীর মঠে গান গাইছে সন্ন্যাসীদল
আজ অনেক বছর পর
আমিও দেখছি চেটে সবুজ তামার ক্ষার
এবং সকলে জানো ওইখানে জ্বলে নেভে কটু ও লবণ
.                                    লাবণ্যসিন্ধুর নুন |

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
দেবী
কবি উত্পলকুমার বসু
আবার পুরী সিরিজ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া


ঈশ্বরীর গর্ভ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়েছ তুমি ঈশ্বরীর কোমল সন্তান |
কালো কিন্তু জোড়া উরু—গর্ভ থেকে এনেছ কি কিছু
উপহার---আমাকে দেবে কি কিছু ? অনেক মলিন আছি
সারাদিন ---ঢাকা আছি পরচুলাময়
আতঙ্কজনক লোমে – দু’পায়ের ফাঁকে |


একাকী ভ্রূণের শিশু শুয়ে আছ তুমি | তোমাকে চুম্বন |
নর্মদার জলে আমি অব্যবহৃত ভ্রূণ ভেসে যেতে দেখি |
তোমাকে নদীর বাঁকে কাঠি দিয়ে তুলে নেয় বাগ্দী কিশোর | তাঁহাকে চুম্বন |
চাঁদে ঐ জ্যোতিষ্মান ভয়াবহ গর্ত দেখে আমি ভাবি গর্ভের দুয়ার |
যদিও ডালিম তুমি,  চাঁদ ও গ্রহের মতো পরধর্মময়
বস্তুত তোমার মুখে পৃথিবীতে জন্মাবার স্বেদ লেগে আছে |
রক্তনাড়ীর গ্রন্থি কেটে দিয়ে বৈদ্য ও মানুষ
স্রোতের উল্টোদিকে যেতে চায় তোমার ভেলায়—
ছুরি-কাঁচি সঙ্গে নিয়ে নর্মদার জলে তারা শিখছে সাঁতার |

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
ডাকি অন্তঃকরণবাসী কোথাও
কবি উত্পলকুমার বসু
কহবতীর নাচ কাব্যগ্রন্থের ৯ নম্বর কবিতা































.             *************************              
.                                                                                       
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
*
দাঙ্গা
কবি উত্পলকুমার বসু
আবার পুরী সিরিজ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

শহরে,  শীতের রাত্রে ঢুকে পড়ি একা,  হেঁটে ঢুকি কলকাতায়, অথচ
ধর্মাবতার, আমার অভ্যেস ছিল ট্রেনে ফেরা, ব্যতিক্রম হল এই
প্রথম, লক্ষ্য করুন,

জিনিস বিশেষ কিছু সঙ্গে নেই, ছোটো থলি, এবং পানের দোকানের
পাশ দিয়ে যেতে যেতে শুনলাম নৈশ-ইস্তাহার,
লক্ষ্য করুন, সেই প্রথম আমি খবর পেলাম, আপনাদের
দেশের বিপুল আন্দোলনের খবর পেলাম, সেই প্রথম আমার
মাথার মধ্যে হাহাকার বেজে উঠল, নিজের বাড়ির জন্য
টান দেখা দিল, হুজুর, দেখলাম

মেষপালকের মৃতদেহের উপর ক্রন্দনরত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ---
এবং আগেই বলে রাখা ভালো
আমি চাষিদের সঙ্গে মেলামেশা করতাম এই ভেবে যে
তারা মধ্যবিত্তদের চেয়ে অধিকতর জটিল
ও পরিসংখ্যানজাত---
‘কথা বলো’  এই জলছাপ-সমেত কয়েকটি চিঠিলেখার কাগজ
আমি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম-বা,
ছিল চমত্কার আরেক ভেজানো ডাকটিকিট, লিখলাম—
‘ইন্দ্রানী, আমাকে তুমি ফিরে দাও প্রত্যাখ্যাত ছোরা,
অন্ধকার হয়ে আসে--- পড়ে আছি আমি আর ধর্মীয় স্ক্রোল ---’

এবং শুনলাম আর্মেনীঘাটে প্রথম নগরসংকীর্তন
তখন আগুন জ্বলছে এখানে—ওখানে,
আরো শুনলাম বিশেষ প্রতিনিধির পাঠানো খবর----
হুজুর, লক্ষ্য করুন, আমি সেই মানুষ যার করণীয় কিছু নেই
শুধু পাখিদের আহার জোগানো ছাড়া
শুধু সিঁড়ির মার্বেলগুলি সাফ রাখা ছাড়া অতিরিক্ত
কাজ কিছু নেই---
ছিল অবশ্য চাষজমি, কোম্পানিকাগজ,
ছিল শহরে-বন্দরে বেশ তদারকি, ছিল বীরেনবাবুর চিনিকল---

কিন্তু আমি দেখেছিলাম গাছ থেকে খসে পড়ছে
পাখি ও পালক --- তার ছিঁড়ে ফেলা নীড় আর মৃত সন্তান আর
ফেটে যাওয়া ডিম---দেখেছিলাম ইস্তাহার উড়ে আসছে পিছি পিছু |

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
তাম্বুলের ডালা
কবি উত্পলকুমার বসু
আবার পুরী সিরিজ কাব্য গ্রন্থ থেকে নেওয়া

সমুদ্রতীরকে তুমি বিদায় জানাও ! বলো : বিদায় ঝাউয়ের বন | বলো : যজ্ঞোপবীত
.        ছিঁড়ে ফেলে : বিদায় সেনানী, বিদায় জরিপঘর, হিত ও অহিত
.            নষ্ট হোক, ভেঙে যাক বাতাস, গরিমা, ঢেউ, প্রচারকৌশল

.                        একদা আকাশ যেন ভরে গিয়েছিল
.                 জলের ঝাঁঝরি থেকে ঝরে পড়া জলেরই আগ্রহে
.        আমার রচনাগুলি আরো বেশি প্রামাণ্য ও তাত্ক্ষণিক মনে হয়েছিল
.   নিশ্চয় সুন্দরী তুমি, নইলে চাঁদ কেন-বা আকাশপারে উঠেছিল
.                 হায়, পুলিশব্যারাকে কেন বেজেছিল বাঁশি-----

.   বেঁচে থাকা ক্রমশই আমার কাছে নিয়ে আসছে ফুল আর শবাচ্ছাদন |
.       কার শব ?   হয়তো আমার নয় |   আমি জীবিত বা মৃত
.   জীবন্মৃতের জন্য কোনোদিন এত উপকরণের প্রয়োজন হতে পারে
.       আজই জানা গেল | তাই গ্রহণের ছাউনি, চাঁদ দূরে অতর্কিত
.                       সমর্থনের মতো সাড়া দেয় |

.                              *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
বায়ু আন্দোলিত
কবি উত্পলকুমার বসু
টুসু আমার চিন্তামণি কাব্যগ্রন্থের ২১ নম্বর কবিতা

































.   *************************              
.                                                                            
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
*
প্রকৃতি
কবি উত্পলকুমার বসু
লোচনদাস কারিগর কাব্যগ্রন্থ থেকে

যখন ছিলাম শূন্যে ভাসমান তুমি ছিলে কোথায় হায় রে
যখন ছিলাম ঘাসে ঘাসবীজ তুমি ছিলে কোথায় হায় রে
আগুন নেভার পর বুনো ঘাস উড়ছে বাতাসে

আঁধারে যে-সব ফল পেকে উঠত তারাও তো ঝাপটাত ডানা
গোহাড় জ্বলত রোদে--- শ্বেত মেষরেখা ---শ্বেত শকুনের ডানা---
আগুন নেভার পর বৃশ্চিক নাচছে পাথরে

যখন পাহাড়ে এসে সেনাদল ছাউনি ফেলেছিল তুমি ছিলে কোথায় প্রবাসে
যখন ছিলাম হাঁসে হাঁসডিম তুমি ছিলে কোথায় প্রবাসে
আগুন নেভার পর বুনো হাঁস নেমেছে ঝর্ণায়

বহুদিন এ-পাহাড়ে বৃষ্টি নেই, হিম নেই, মাটিতে ফাটল
ভস্মপাথর থেকে আমরা লাফিয়ে পড়ি পোড়া গর্তে, জলের ফাটলে
আগুন নেভার পর ভুল হয় ব্যক্তিমানুষের আর ব্যক্তিপাখির আর ব্যক্তিশ্বাপদের

যখন ছিলাম পেটে জায়মান, ভ্রূণরূপী, অসত্য ছিল না
খন্ডবিশ্বাস ছিল, কাদা ছিল, ছিল বনে পায়ে হাঁটা পথ
আগুন নেভার পর উড়ে আসি দগ্ধ জলায় আর ছাইকাঠে, পথের ফাটলে |

.                *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
রক্ষাকবচ
কবি উত্পলকুমার বসু
লোচনদাস কারিগর কাব্য গ্রন্থ থেকে নেওয়া


স্তব্ধ নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে আমার মতো দীর্ঘসূত্রী লোক
কি-ই বা ভাবতে পারে--- জলের গভীরতম প্রহেলিকা ছাড়া,
যার শিয়রে কঠিন ধান, আঁটিবাঁধা অগ্নিময় শোক,
ধাতব বীজের কাছে একমাত্র আমিই পাহারা
দিতে চাই, কেননা প্রকৃত স্বপ্নের রূপ নেই, শুধু অবতংশ আছে,
আছে হাতুড়ি পেটার শব্দ, যার ভ্রমে তৈরি হয় ফুল
বিদায়-বারুদে মোড়া, তাত্ক্ষণিক, গিলে ফ্যালে মাছে
নকল আংটি যেন, পাশে গৃহস্থের চুল
সহসা স্রোতের টানে দেখা গেল | সে তো বহুদিন গত ?
মনে কি পড়ে না ঘাট, কাছিনৌকা, পালের বিস্তার ?
হাতুড়ি-পেটার শব্দে স্বপ্নের নির্মাণ হয়, চিরদিন যে-রকম হত
আজ বাংলায়, উড়িষ্যায় নদী-মোহনার মুখে মৃতের আছাড় |


আমি লিখি আলাদা যুদ্ধের গল্প | ফুল হতে ঝরবার আগে
যে-মাকড়লালাবিন্দু স্থির হয় শতছিদ্র জালে
স্মৃতি থেকে বিস্মৃতির ভিতরে ক্রমশ তাকে টেনে নেয় প্রকৃতি ও আমাদের
হুল সাংবাদিকতার বোধ | এইভাবে শান্তি টানে যুদ্ধকেও | নালে

পদ্ম টানে জল | ব্রিজ-নেই নদীর ওপারে
এদিকের নৌকাটিকে টান দেয় বুঝ্ মান ক্ষেত্রজ লোক |
শব্দ ও স্রোতের ঊর্দ্ধে দেখা যায় হাত নাড়া | দিদি, পৌঁছেই চিঠি দিও |
আমি পরোপকারের জলে নেমে পড়ি |  অসংখ্য যুদ্ধের শোক,

তারবার্তা, গালা ও দলিল এই দেহে ভাসমান |
আমি স্বস্তি পাই | যা ভাঙবার নয় তা-ও টুকরো হয়, ফাটে,
যেমন পাথরখন্ড, ন্যাড়া বট, আমাদের ইহলৌকিকতা,
ঘুমন্ত বোষ্টম পুঁথি ভেসে যায় খান-খান কাঠের মলাটে |


যদি প্রাণ,  যদি হে রসিক,
নৌকায় ঠেলা দিয়ে বলো
দু’টো দিন, বেয়াই মশাই,
দু’টো দিন থেকে গেলে হত ----
মেনে নিই  এ-শুধু লৌকিক
ভদ্রতার আরো একটি দিক

এই ঘাটে পরমার্থ সিঁড়ি
বহুদিন বাসন মেজেছি
বহুদিন কাপড় কেচেছি
নামিনি গভীরতর জলে
মনে ছিল ভয়,  আজো আছে,
আংটির গল্প-গেলা মাছে

হেথা টান, স্রোত খরতর
দ্বি-মুখ  দ্বি-ধার তরী ভাসে
চলে যাওয়া, পিছে ফেলে-যাওয়া
ফেরা নয় ফিরে-আসা নয়
সচ্ছলতা ঘটছে এখানে---
বাতাস ও জোয়ারের টানে

ধুয়ে নিই জুতোজোড়াখানি
মুছে নিই এ-পদযুগল
তবু নদী যতটা জটিল
তারও চেয়ে লৌকিকতা গূঢ়---
কাঁপে মাছ থলির ভিতর
পাতা ঝরে, গাছের অক্ষর |

.   *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর