কবি উত্তম দাশ-এর কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*

.             ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
কিন্তু জীবন শব্দ নিয়ে কত কি ভেবেছে,
সে জন্যই তো সে দিন সুন্দরকে বাঁচিয়ে দিলুম,
কি বললো, আমায় গাইবে তো ---- দেশে গিয়ে ?
মিলনসাগর থেকে নেওয়া হয়েছে
আটচল্লিশ বছরেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ভারতচন্দ্র
কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, জীবন শব্দের দীপ্তি
কেউ কেড়ে নিয়েছে, অসহায় ভঙ্গিতে বললেন----
দেবী আমার আর কিচ্ছু ভালো লাগেনা, তুমি এসো |    
www.milansagar.com             www.milansagar.com
দিগন্তে সূর্যদেব রঙ মেখেছেন,
ভারতচন্দ্র উচ্চারণ করলেন----- জবাকুসুম সঙ্কাশং,
অন্নদা বললেন, তোর কি হলো ভারত
আমাকে ছেড়ে সূর্যবন্দনা, ওকে বললে
এ সব দিনরাত্রি সব বন্ধ করে দিতে পারে, জানিস ?
মিলনসাগর থেকে নেওয়া হয়েছে
ভারতচন্দ্র উত্তর দিলেন না, কৃষ্ণচন্দ্রকে
দুটো শব্দ লিখলেন -- মহারাজ প্রণাম,
বিদ্যার কথা মনে হতে বললেন, মনে রাখিস মা |
অন্তিমের কিছু শব্দ থাকে, বললেন --- অন্নদা, অন্নদা,
বললেন --- শিব-শিব |
মিলনসাগর থেকে নেওয়া
Copied from www.milansagar.com
মূলাজোড় গ্রাম ভেঙে পড়েছে |                
কাল রাতে কবি চলে গেলেন  |               

*******                ***                *******

আর পাড়ায় বেরুতে পারে না গৌরী,
পরের বাড়িতে ধান ভেঙে যেটুকু খুদকুঁড়ো আসছিলো,
তাও বন্ধ, এক ফোটা মুরোদ নেই, শুধু গাঁজা ভাঙ
খেয়ে শ্মশানে মশানে, চাষের জন্য যে দুটো বলদ
দিয়েছিল বাবা, সেগুলো এখন ধর্মের ষাঁড় হয়ে
ঘুরছে, ঘরের মরদ কোন রোজগার পাতি করে না,
এখন শুনি ভিক্ষা করে আর বাগদী পাড়ায়
পুড়িয়ে ছেলেদুটোকে অর্ধেকটা দিল, একটা
ভাঙা সানকিতে বাকিটা তুলে রেখে এক ঘড়া
জল খেয়ে শুয়ে পড়ল, মানুষটা নেশাভাঙ করে
ক্ষুধায় ছটফটায়, কিছু পেটে না পড়লে-----
বুকটা টনটন করে ওঠে দেবীর |
মিলনসাগর থেকে নেওয়া
অনেক রাতে ফিরেছে শিব, ঝোলাভর্তি চাল,
গোটা কয় বেগুন, ঝিঙে, করলা, কে একজন আস্ত
একটা ঝোড়া-আলু দিয়েছে | অনেক রাত অবধি
হাত পুড়িয়ে রাঁধলো দুজনে, শিব বললো----
দেবী, তোর হাতে ঝোড়া--- আলু দিল্ মজিয়ে দিল,
দেবী গুণেগুণে তিনটে খুচরো চুমো খেলো --- তোর হাতে
খুদের জাউ, ভোলানাথ, অম়ত |
মিলনসাগর থেকে নেওয়া
ছেলে দুটো অকাতর ঘুমোচ্ছে, বুনো ওলের
নেশা হয়েছে ওদের, দেবী পিদিম নেভালেন,
তারপরেই যে সব মানুষীকান্ড, সে সব শুধু
মানুষই পারে |

*******                ***                *******

গৌরী অনেকক্ষণ বাপের বাড়িতে, বললেন----
কিরে রামপ্রসাদ আগমনী গাইবি না,
রামপ্রসাদ থ মেরে গেলেন, ভাবেনই নি এ সময়ে
গৌরীর সঙ্গে দেখা হবে, একবার দেবী
বেড়া বেঁধে দিয়েছিলেন, সেই সুখস্বপ্নেই এত বছর |
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অভাব রাখেন নি, চাষবাস সেরে
যে টুকু সময়, মায়ের গান লিখেই বেশ আনন্দে
কিন্তু এই অসময়ে দেবীর আগমন |
রামপ্রসাদের বাক্যরোধ হলো, ভাবা যায়
স্বয়ং দেবী বলছেন, গান গাইতে |
অনেক কিছু বন্দনার পর, রামপ্রসাদ বললেন--
মা, এখন তো শরৎ নয়, কি করে আগমনী গাইব ?
সত্যিকারের ভুরু কোঁচকালেন দেবী, সে কিরে
রামপ্রসাদ, বাপের বাড়িতে এলাম, তার সঙ্গে
শরৎ গ্রীষ্মের কি সম্পর্ক, তুই যে একেবারে
ভারতীয় মার্গসংগীতের ধারায় কথা বলছিস ?
একটু দেশীয় ভাব আন, গানের কোন ঋতুভেদ নেই
প্রাণ জাগলেই তার সময়, তুই গা |
মিলনসাগর থেকে নেওয়া
রামপ্রসাদ গাইলেন, দেবীর বুক গুমরে উঠল,
বুড়োটার জন্য মন খারাপ হলো খুব |
অসময়ের গান, তাতেই স্বাতী নক্ষত্র থেকে
জল ঝরলো অনেকক্ষণ |

*******                ***                *******

আল বড়াই, তুই আমায় কৃষ্ণ এনে দে

কচি নাতনিকে কৃষ্ণের হাতে ছেড়ে কদিন বড়ই বিষণ্ণ ছিল বড়াই,
ফিরে দেখলো রাধার গৌর অঙ্গে কালি ঝরছে
কৃষ্ণ পরসঙ্গে অঙ্গ জরজর, পরপুরুষে এমন আসঙ্গ দেখে
ধর্ম ভয়ে ভীত হলো বড়াই | যমুনার ঘাট শূন্য,
আড়-বাঁশিও আজ কোথাও কাঁদে না |  চারদিক দেখে বললো--
দিলুম তো তোকে, রাখতে পারলি না কেন, কেন গেলি ওর
বাঁশি চুরি করতে, ওটা যে ওর প্রাণধন |
আমার চে বাঁশিকে ভালোবাসলে আমার সয়, তুই বল
আড়বাঁশি যে আমার মরণ, ঘরে থাকতে দেয় না, তাই চুরিয়েছি |
আজ ভরা ভাদর, আইহনকে কত বুঝ দিয়ে ঘাটে এসেছি
শূন্য কুঞ্জ একাকী ভিজছে, তুই বল এসব প্রাণে সয় ?

গুরু-গুরু মেঘের সঙ্গে রাধা খানিক কেঁদে নিলো,
নিজের ভাগ্যকে অনেক শাপমন্যি করলো,
মেদিনী বিদার দেঁউ বলে অনেক ডাকলো ধরিত্রীকে
ঘন বর্ষায় কেউ সে ডাক শুনলো না, একটা ডাহুক
একা চরছিল, ঊর্ধ্বমুখ হয়ে রাধার কান্না শুনলো
তারপর যমুনার দিকে উড়ে চলে গেল |

অনেক পরে বড়াই ফিরলো, পিছল পথে আছাড় খেয়ে খেয়ে
কোমরের হাড় সরেছে, বুড়ির দয়ার শরীর কিন্তু ফিরে এলো
শূন্য হাতে. যন্ত্রণায় টনটন করছে কোমর, বড়াই তবু জননীর মতো
জড়ালো রাধাকে, এবারে সত্যিকারের গর্জন করলো রাধা---
তুই আমার ধর্ম খেয়েছিস বড়াই, তোর ধর্মের দোহাই, তুই
আমায় কৃষ্ণ এনে দে |

*******                ***                *******

টানা তিনদিন চোখের পাতা এক করেন নি মহাপ্রভু
বঙ্গদেশ থেকে নিত্যানন্দ অদ্বৈত আচার্য এসেছেন
সঙ্গে জগাই মাধাই, বৃন্দাবন থেকে এলেন রূপ সনাতন
শ্রীজীব গোস্বামী রথযাত্রার দিন আসবেন,
এতসব বুধমন্ডলী, এবারে নীলাচল রসের তরঙ্গে ভাসবে |
কিন্তু জ্যৈষ্ঠের শেষ থেকে টানা বৃষ্টি, রথযাত্রায়
এবার নীলাচল ভাসবে, খোল করতালের ধ্বনি
বৃষ্টিপাতকে বলছে---- শোন | বারিধারা ঝরছে
প্রতিটি পতনেই জাগছে কৃষ্ণনাম |
কালিদাস অনেক পুরানো মানুষ, বললেন--
প্রথম আষাঢ় -ই তো প্রকৃত বিরহের কাল
সেজন্যই তো মেঘকে বললুম বৃষ্টি এনে দাও |

এত মানুষ এত ভক্ত এত বন্ধুজন, তবু মহাপ্রভুর
বিরহ কাটে না, কৃষ্ণপ্রেমে এমন বিরহ জাগে কেন
সে কথা রাধাই জানেন, অদ্বৈত আচার্য বিজ্ঞ মানুষ
তিনি বললেন, আর একজন জানেন, তিনি এখন নবদ্বীপে |
নবদ্বীপের কথা শুনে মহাপ্রভু বললেন--- নিতাই
আমার মা, বিষ্ণুপ্রিয়াকে তোরা দেখিস----
বলতে বলতেই তাঁর শরীরে কাঁপন এলো, বাহ্যজ্ঞান নেই |
সনাতন কানে কৃষ্ণমন্ত্র বললেন, রূপ গাইলেন
‘থশোদে তোর কৃষ্ণ ধন দে, গোষ্ঠে নিয়ে যাই’--------
মিলনসাগর থেকে নেওয়া
প্রথম আষাঢ়ে রথ, ভারতভূমি জেগে উঠেছে নীলাচলে,
আখড়া থেকে আটটায় বেরুলেন মহাপ্রভু
আকাশ বিরহের মন্ত্র পড়ে ঝাঁপালো
জগন্নাথ দেব চলেছেন, সে রথের আগে তিনি
কৃষ্ণনামে ধুয়ে দিচ্ছেন চরাচর,
নিত্যানন্দের হাত ধরে দু হাত তুলে তাঁর নাচের মুদ্রায়
প্রেম-রতন ফল অনর্গল ঝরছে------

মাসির বাড়িতে থামবে এই মহাযাত্রা
হঠাৎ ধ্বনি উঠল আঃ, বিশ্বচরাচর ডুকরে
উঠল  : হায় | রথ থামলো না
জগন্নাথদেব এখন বিশ্রামে যাবেন |

রূপসনাতন কোলে করে নিয়ে চলেছেন প্রভুকে,
ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উড়ে গেছে
শ্রীজীব মুঠো করে ধরে আছেন প্রভুর আঙুল
তাঁর আঙুলের ফাঁক দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে |

রাতে প্রভুর জ্বর এলো,  সেদিন আখড়ায় অরন্ধন,
পরের দিন আকাশের সে কি কান্না
সমুদ্র আছড়াচ্ছে, ভেঙে ফেলবে বেলাভূমি |
মাথায় সারারাত জলপট্টি দিলেন নিত্যানন্দ,
আষাঢ়ের তিন তারিখেও বৃষ্টি থামলো না----
প্রভু এখন ঘোরের মধ্যে, মাঝে মাঝে বলছেন --- মা---
সন্ধ্যারাতে তাঁর জ্ঞান এলো, বললেন---
আমি নবদ্বীপ যাব----- আমার রাধা-----
আবার জ্ঞান হারালেন তিনি, অস্ফুটে ডাকলেন---- বিষ্ণু,
শ্রীজীব মুখের কাছে কান নিয়ে শুনলেন -- বিষ্ণু , আমায়
রাধাতত্ত্ব শেখাবে না---- আবার নৈঃশব্দ

কতক্ষণ কুঞ্জে বসে আছি, এই বর্ষায়
এত দেরি করে আসে, কত চিন্তা হয় বলতো----
নিত্যানন্দ ঠিক শুনলেন, প্রভু বলছেন |

সমস্ত আখড়ায় একটাই দ্বীপ
অদ্বৈত্ব বললেন --- নিবিয়ে দাও,
জগাই-মাধাই বললেন--- প্রভু,