ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবে-তে এলে খুব মন খারাপ হয়ে যায় ("ঠাকুরপুকুর থেকে" কাব্যগ্রন্থ থেকে) কবি উত্তম দাশ
ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবে-তে এলে খুব মন খারাপ হয়ে যায় জগৎ কাঁপানো সেই সব মানুষেরা কেমন অসহায় শুয়ে আছে কেউ রাজা, কেউ উজির, কেউ নাট্যকার কেউবা কবি দার্শনিক আর রাজনীতিবিদরাও আছেন অনেক পর্যটকের কৌতূহল ছাড়া এখন আর তাদের কিছু দেবার নেই, এর চেয়ে চলো বিগবেনের নীচে দাঁড়াই, বৃষ্টি পড়ছে, পড়ুক, টেমসের ফেরি থেকে উছলে ওঠা জনস্রোত কি তাতে আটকে আছে ? সবাই ছুটছে কিছু একটা দেখবে বলে, যৌবনের এই স্রোত সতের থেকে সত্তর সবাই উন্মাদ, এসো এই চিনার গাছের নীচে বসে এদের পর্যবেক্ষণ করি পৃথিবীর সবচেয়ে দর্শনীয় যে জীবন্ত মানুষ তাদের দেখে নিই, পোষাকের বর্ণাঢ্য আর শরীরের স্হাপত্য, তুমি লক্ষ কর এমন সুন্দর আর কি আছে জগতে, ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবে-তে শুধু মৃত মানুষেরভিড়, অথচ চিনার গাছের নীচ দিয়ে কেমন যৌবন উড়িয়ে চলে যাচ্ছে সুখী মানুষদের কোলাহল, একটু নয় ভিজলে জীবনের বর্ণমালা এখানে কত ভাবে পাঠ করা যায় বলতো, তোমার ঠাকুরপুকুরে কত রাজহাঁস চরে বেড়ায় চারপাশের সবুজ কত অন্তরঙ্গ ভঙ্গি করে দুলতে থাকে ঝিলের মাছগুলোর সে কি উল্লাস, শরীর দেখাবার খেলায় বেশ পটু হয়েছে ওরা, শুধু চারপাশের মানুষগুলোর শরীর থেকে জীবনের রঙ কেউ মুছে নিয়েছে, এত বর্ণময় পরিবেশেও ঠাকুরপুকুর কেমন ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবের মতো মন খারাপ ছড়িয়ে রাখে চারদিকে | চিনার গাছের নীচে এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে টেমসের হাওয়া এসে লাগছে তোমার মুখমন্ডলে ঠাকুরপুকুর থেকে অনেক দূরে তুমি এখন, এ চলমান যৌবনকে তোমার কেমন বন্ধুর মতো মনে হচ্ছে না ?
সরোজ গুপ্ত-হীন ঠাকুরপুকুরে এই প্রথম ("ঠাকুরপুকুর থেকে" কাব্যগ্রন্থ থেকে) কবি উত্তম দাশ
সরোজ গুপ্ত-- হীন ঠাকুরপুকুরে এই প্রথম ছন্দাদির ঘরে বসে ডাঃ সুছন্দার জন্য অপেক্ষা বাইরের পুকুরে সেই মাছের একই খেলা রাজহাঁসগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, কারপার্কিং -এ আর জল জমে না, বেশ সুন্দর বাঁধানো, টয় ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে সদ্য রঙের ছোপ সেডের নীচে চন্দ্রমল্লিকার চারাগুলো আকাশ দেখছে কখন শরৎ আসবে, হিম পড়বে ; ক্যানটিনের চেহারা সেই এক, শিশু--কেন্দ্রের বাগানে আর উলুঘাস নেই, চাতালে বসে সেই কেউটে সাপদুটো কি আর ফণা দেখাবে না ! পেছনে হোগলার বন কেটে বসতি হচ্ছে, সভ্যতা ক্রমান্বয়ে ঘিরে ধরছে ঠাকুরপুকুরের নির্জনতা, আধুনিক সব যন্ত্র আসছে আর ভয় দেখাতে পারবে না মারণ-রোগ |
মাদার টেরিজার কটেজের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম দোতলার সেই ঘরটি, পুরো একটা মাস লিনাক সেন্টারের স্মৃতি, তোমার শরীর থেকে সেই বিষ কতদিন হলো, তবু যেন দহন মোছে নি, সেই ঘরেই তো সরোজ গুপ্ত একদিন এলেন, অশক্ত শরীর তবু ঠাকুরপুকুরের নিসর্গ আর সুশ্রূষার কথা বলতে এলেন জীবনের কথা বলতে এলেন, একটা স্বপ্ন নিভৃত সাধনায় গড়ে তুলেছেন এখানে, মৃত্যুও যেন প্রণাম রেখে যায়, এমন পূণ্যভূমি | সেই ঠাকুরপুকুরে, সর্বত্র ছড়িয়ে আছেন তিনি অথচ কোথাও তাঁর কোন মূর্তি নেই, ঈশ্বরের মতোই তিনি নিরাময় এবং ঈশ্বরের মতোই অবয়বহীন |