দিনগুলি কবি যশোধরা রায়চৌধুরী (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি নিজে টাইপ করে তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
সেরদরে গল্প বলি সের দরে ভাল হই, কাজ করি, মাইনে পাই, ডি এ বাড়লে আম কিনি, লিচু কিনি, কাঁদি কাঁদি কলা কিনি, হাসতে হাসতে বুক চিতিয়ে দিই মৃত্যু ও মিনিবাসের মাঝে ব্রেবোর্ন রোড দৌড়ে পার হয়ে মনে করি সের দরে বেঁচে থাকি সি এল ই এল আর বন্ধ্ শুদ্ধু এই তো মুরারি তুমি রূপশুদ্ধু গুণশুদ্ধু সেরদরে ভালোবাসতে দিও সেরদরে ভিজি, ভিজে যাই আমরা বাস থেকে নেমে শ্রাবণের জঘন্য সকালে...
লেখা যা দেখেনি কবি যশোধরা রায়চৌধুরী (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি নিজে টাইপ করে তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
দাঁত খোঁটা বড়বাবু ইষৎ খোঁড়ান পিয়ন ঝুলকম প্যান্টপরা কেরাণি আমাদের জীবনের ভেতরের কথা বলো দেখি পা ঝোলানো মিস শাশ্বতী গাঙ্গুলি নীল সালোয়ার কামিজ পরা . টাইপিস্ট আমাদের বৃষ্টি-পড়া রোদ-ওঠা নাতিদীর্ঘ দিন বলো দেখি টিপিনবক্স হাতে দৌড়ে নামা, সিঁড়িতে আটকানো নোটিশ-বোর্ডে চোখ ক্লান্তি, উৎসাহ, গল্প, মনখারাপ বলে ফেলো দেখি কিছু না বলতে পারলে দু হাত তুলে দাও, বলো : না আমি কিছুই দেখিনি কেবল রাইটার্সের সামনে আগুনের আঁচে গোল মোটা ফুলকো ফুলকো রুটি বানানো ছাড়া
কাটাকুটি আঁকিবুকি কবি যশোধরা রায়চৌধুরী ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১১ (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি নিজে টাইপ করে তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
এ জীবন এ সময় একজন মহা সেলসম্যান এ বিজন কে মশাই ? ঘোরে ফেরে ব্যাখ্যায় আখ্যান লোভী জীবগণকে যে বোঝায় এই অন্ধতা গহবরে একপ্রস্ত নেবে দেখো, ভেবে দেখো গোল ও সুন্দর ভাবো এটি মাতৃস্তনসম এক বর্তুল পিন্ডর অভ্যন্তর, ঘুরে ঘুরে নেবে পড়তে ভাল লাগবে এতে ভেবে ঝাঁপ, অন্ধঝাঁপ, দেবে জীব, যেন সর্ষেক্ষেতে নেবেছে পক্ষীটি, জাল পাতা আছে ধরে ফেলিবার চোখে সর্ষেফুল দেখবে কিছু পরে, যখন ফেরার সময় পাবে না আর, অথবা যেভাবে সেলসম্যানে গছায় বস্তুটি অতি সুনিপুণ বোকাটে আখ্যানে ক্রেতার বিশ্বাস আসে, ফালতু কেনে, রৌপ্যচক্রদরে, পড়ে যায় অচিরাৎ একস্ট্রা আর ফ্রি-এর চক্করে শেষ অবধি হতবাক, দেখে, আরে, এ কী গেরো বাবা! একি গছাইলেন প্রভু, ফিরিওয়ালা, আমিও কী হাবা... অতিকায় বাটিখানি, ওয়ারান্টিবিহীন, এক-বার কিনলে সারাজন্ম সাথ : রিনিউ হবে না, বক্রপথে ঘুরবে, নো রিটার্ন পাথ ফেরত্ হবে না পয়সা, ফেরানো যাবে না চাকাটিকে যত বলবে ‘ফিরে এস’ তত কন্ঠে চেপে বসবে ফিতে। যে লেখা লিখিনি আজো সেই লেখা কন্ঠ চেপে ধরে কলমের মাথা থেকে রক্তবৎ শব্দ ঝরে পড়ে ঘুরতে থাকি চক্রাকারে জীবনের বাটি আকৃতির গোল গহবরের মধ্যে, সারাজন্ম যে যে প্রকৃতির ছিদ্র গুনি, সেই ছিদ্রে মাথা দিয়ে পড়েছি ধপাস মাথায় লেগেছে ভান্ড, কষ বেয়ে পড়ে সর্বনাশ যেন বিড়ালের মাথা আটকেছে মাটির ভাঁড়েতে উন্মাদ নৃত্য করি, পা দাপাই, পাড়িনা এড়াতে... এই তান্ডবেরই কথা লিখি লিখি করেও লিখিনি আজো আমি কী ভাবে যে লিখতে হয় একটুও শিখিনি...
শ্রাবণ কবি যশোধরা রায়চৌধুরী ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১১ (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
দূর কবি যশোধরা রায়চৌধুরী ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১১ (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
বৃষ্টি নামে কবি যশোধরা রায়চৌধুরী ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি নিজে টাইপ করে তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
বড় বড় ফোঁটা নামে, বৃষ্টি নামে সহস্রধারায় নিজেই নিজের মধ্যে মূর্ছিত হয়েছি অতএব আবেশে মন্দ্রিত হয় মাটি আর বৃষ্টির কামনা এমন দিনটি ভাল, সঙ্গী কিন্তু প্রয়োজন নেই
এমন দিনেই তারে না বলা কথাটি বলা ভাল বাজে সেটি মনোমাঝে, আর সে ফাটা রেকর্ড বেজে গিয়ে সুবিশাল চার্জ আসে, আসে এক অঢেল প্রণয় নিজেই নিজের মধ্যে সে প্রণয় পাক খেয়ে ফেরে
তারপর গান আসে, ভবদেহে স্বর্গীয় সঙ্গীত বড় বড় ফোঁটা নামে, আবেগের, রতি উৎপাদনে আমাদের ক্লান্তি নেই, একা একা শিহরিত দেহে বৃষ্টি ভিজলে “ঘরে যাও, ঠান্ডা লাগবে” একথা বলার কেউ না থাকাটি ভাল, বিবাদভঞ্জন
অগ্রন্থিত কবিতাগুচ্ছ কবি যশোধরা রায়চৌধুরী ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি নিজে টাইপ করে তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
১ পিঠের উপর দিয়ে হাত চলে গেছে হাতের উপর দিয়ে চলে গেছে চা বাগান, অনিঃশেষ পিঠ পাহাড়পল্লব দিয়ে চলে গেছে ঢালু , আঁকাবাঁকা পিচরাস্তা – যেন নষ্ট করে গেছে পাইপজল, গাছের নিকেত
এইজন্য , জানো, আমি ভালোবাসা পারিনি কখনো এইজন্য, জানো, আমি পিচরাস্তা পারিনি, আবেগ ভালোবাসা মাত্রে শুধু অধিকার কায়েম করার লড়াই, ঝটপট শব্দ, পিঠ থেকে ডানাতে যাবার ব্লেডের শীতল টান, কালো টান, অনিঃশেষ টান ডানার স্খলিত অংশ পড়ে আছে, ওখানে, শিলং ! বড় ভালোবেসে বুঝি তাই ওর ডানা কেটে খুলে নিয়ে ঝর্না থেকে টাঙিয়ে রেখেছ ?
২ যাই হোক, ফিরে আসা, প্রত্যয়িত কপি দিয়ে যেও। বারান্দায় আমিও টাঙিয়ে রাখব সতেজ বাদামি সালোয়ার।
৩ মাত্র এগারোটাই তো বাজে। এতো তাড়াতাড়ি শুতে যাওয়া কেন? চাঁদ ও চাঁদের পুষ্টির অভাব বলল মেয়েটিকে । প্রতিবাদিনীর রাগ ততক্ষণে গলে গলে জল , ও জোছনা। আমিও ক্লান্ত, ওকে কত বলব আর একটুক্ষণ আমার সঙ্গে থাক, মণিদীপা!
৪ ওকে আমার কেমন লেগেছে, বলব ? কেমন লেগেছিল ওর গায়ের ওপর কড়া, মাড়যুক্ত, আধনীল ইস্তিরির শার্ট ? বলছি । আমরা বহুক্ষণ দাড়িয়েছিলাম ইস্তিরিওয়ালার দোকানের সামনে ।
চারটি কবিতা কবি যশোধরা রায়চৌধুরী ৪ মার্চ ২০১০ (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি নিজে টাইপ করে তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
১ অন্ধের মতন করে কাঁদি কান্নার ভেতর দিয়ে আরো অন্ধ হই
২ ব্যর্থতায় ব্যর্থতায় নম্র হয়ে গেছি ক্রমশই লড়াই, তখনি ভাল , যখন লড়ার কেউ নেই যে মুহূর্তে বর্ম ছেড়ে, অস্ত্র-শস্ত্র ছেড়ে খোলা মাঠে নেমেছি যুদ্ধের কল্পে , দেখেছি দূর্বল কত , ছি ছি এই অহংকার । আমি এতদিন আনন্দে ছিলাম ? হায় শূন্য তূণ, তুমি এ প্রস্তুতি নিয়ে এতদিন আমাকে শুনিয়েছিলে তীরন্দাজ হবার কাহিনি ? কে কাকে বেধায় বলো, আগে প্রয়োজন ছিল চোখ তাকানোর সঠিক অভ্যাস, আর লক্ষ্যস্থির করার ক্ষমতা
গহনানন্দেই আমি এতদিন ডুবে গর্বে, মোহে নিজ প্রিয় ব্যর্থতাকে জলেতে ভাসিয়ে রেখে , ফের ব্যর্থতায় ব্যর্থতায় গর্ত হয়ে গেছি ক্রমশই এবার তোমাকে নেবো, নিতে দেবে, প্রিয় তীরন্দাজ?
৩ আকাশের রঙ মাধব মাধব নীল রাত্রির রঙ মাধব মাধব কাল তোমাকে ফেরাবে কালো ছেলেটার কাছে এমন কে আছে সে নিজেই ছাড়া, বলো?
৪ যথাপ্রস্তাবিত, করো । বিভাগীয় অধিকর্তাদের ধরে ধরে টেনে আনো যোগাসন অভ্যাসের ক্লাসে মাথা নামানোর শিল্প, পা-উপরে রাখার বিষয়ে অবহিত করো, বলো, জীবনের টেনশনপ্রধান তারগুলি ঢিলে করো, উচ্চগামী রক্তচাপগুলি নামাবার এই এক , একমাত্র উপায় - আসন যোগাসন শবাসন মৃত্তিকায় বিছানো আসন -
নতুন কবিতা কবি যশোধরা রায়চৌধুরী ২ জুন ২০১০ (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি নিজে টাইপ করে তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
একটা কবিতাই এটা পারে যশোধরা রায়চৌধুরী
কেন্দ্রে ঢুকে বসে আছে । তারপর কুমন্ত্রণা করে । এই অস্বাভাবিকতা। হয়ে ওঠা। এই নিষ্করুণ নিস্তারহীনতা। বর্ম। অবলেপ, চর্মরোগে প্রকৃতির গুণ। চন্দনের গন্ধময় এই পুণ্য রতিঅভিষেক।
উদ্বেগ কথামালা কবি যশোধরা রায়চৌধুরী ২ জুন ২০১০ (আমরা কৃতজ্ঞ কবির কাছে এই জন্য যে তিনি কবিতাটি তাঁর ফেসবুক-এর পাতায় তুলেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে কবিতাটি তুলেছি।)
( ক ) উ
কথা কথা কথা আমাদের চরাচর তারপরে থাকে আরো আরো সব ভাবা ঘাঁটা চিন্তারা পাশে চলে যেতে থাকে তারপরে আসে রাস্তার মোড়, ধাবা
গরম, তপ্ত রুটির একলা বুকে ধোঁয়া উড়ে যায় এতবড় ফুটো করে কথা ছুঁড়ে দিই আমরা সকাল বেলা চায়ের ধোঁয়ায় সেই কথা নামে ধীরে
ধোঁয়ার ভেতর থেকে উঠে আসে গান দিনগত যাপনের দুই ডানা মেলে বলতেই থাকে বিবর্ণতার কথা আমাদের ক্ষয়, উদ্বেগ বলে ফেলে
এখন
আর থাকাথাকি ছিঁড়ে আমরাও খসে পড়ি আর শহর ফুরোলে চলেছি শহরতলি আর ক্ষয় হয়ে গেলে পরিবার, নিভু নিভু বাবা-মায়ের স্মৃতিতে ছোট মোমবাতি জ্বালি
সেই মাতাপিতা ঘেরা নীরব শান্ত বাড়ি ছিল বালিশ তোষক কাঁথা আর ছারপোকা আজ বাড়ি নেই, শুধু বাড়ির স্বপ্ন আছে আর বেডকভার আজ উদ্বেগ দিয়ে কাচি
আজ প্রেমের খসড়া কাগজে কাগজে ওড়ে শুধু উষ্ণতাগুলি মরে থাকে থরে থরে সরে যাওয়া ঢেউ থেকে রয়ে গেছে নুনদাগ যেন বালির স্তরের কাছে শুখা সংরাগ
আর
আস্তে ধীরে তেলের মতো করে গড়িয়ে আসে কান্না চোখ ভরে সে কান্নাকে তেলোয় মুছে ফেলি লুকিয়ে রাখি আস্তিনের তলে
এবং সেই হাঁটার পথে পথে শহর যদি গিলতে থাকে পথ আমরা সেই বিবর্ণ রাজধানী ছেয়ে দিলাম নিজেরই মনোরথে
স্কুটার চলে আনন্দের ভুলে মারুতি আসে উত্তেজনাময় ছোট্ট অটো চলছে উদ্বেগে রিকশা শুধু বিষণ্ণতা সয়
পবন, আজ পবন দেবতারই আশীর্বাদে সে সব রথ চলে বাইক আর বাসের জটাজালে আমরা চড়ি মোটরে মশগুল
ভেবেছি প্রেম বিশাল ফরম্যাটে যেমন করে বাইপাসের হাওয়া ভেবেছি আমি ফ্লাইওভার দিয়ে হয় না কেন প্রেমের পথ চাওয়া