কবি আবদুস শুকুর খান-এর কবিতা
*
প্রেমের পদ্য
কবি আবদুস শুকুর খান

তোমার মনটি পেতে রোজ
ছুটছি আমি এখান-সেখান
লিখছি যতো আঁধার কথা
সাদা পাতায় স্বপ্ন সোপান |

চিঠির পাহাড় তোমার ঠোঁটে, আমার ঠোঁটে
তবুও তুমি মন দিলে না ?
ফুলের ভাষায় ডাকলে না !
বুকের ভাষায় ডাকলে না !

হলকলমি ঘেরা ছোট্ট ঘরে
তোমার জন্য আসন পাতা
তোমার জন্য জ্যোত্স্নাধোয়া সাদা পাতা
লিখছি যত, রইল তত
তবুও লেখা শেষ হবে না
চাঁদের মতো নিঃস্ব মনের দুয়ার খুলে
কেউ এল না |
দুঃখীর ঘরে দুঃখ মুছে
আলো হয়ে কেউ এল না |

প্রেম কি এসব রেখা মানে, দেয়াল মানে
শাসন-শোষন কিই-বা মানে ?
হৃদয় দেবার হৃদয় নেবার গন্ধ যে জানে না
সারাজীবন দূরের হাত দূরেই থাকবে
কেউ ছোঁবে না |
প্রেমের জন্য পাগল হলেই, তবেই প্রেম সফল জেনো
ব্যর্থ কবির প্রেম কাহিনি, রূপক বলে তুমি-ই মেনো |

.             *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
অচিন
কবি আবদুস শুকুর খান

কে তুমি
গা ছমছম আলোর ঘ্রাণে, হাঁটছ দূরে
একলা হয়ে অচিন পুরে
তোমার ছায়ার ঝর্ণা নদী
চিন্তনে আর চলমানে বাজায় আমায়
নিরবধি, আসলে পরে
বুকের ভিতর পাপরি গুলো উঠবে ফুটে
অস্তিত্বময় ভাবনাগুলো
বুকের ভিতর মাথা খোঁটে |
আলো ঝলমল অক্ষর সব আসছে উড়ে
মথের ডানায়, মনমুকুরে
ভালোবাসার নৌকা দোলে, চন্দ্রালোকে
ঢেউটলমল, ঢেউ টলমল
পাচ্ছি গন্ধ তোমার আমি
আসছে যেন বৈশাখী ঝড়
বাজ আর বিদ্যুতে গড়া সেই ক্ষণিক কাঁপন
.                       মেঘ কড়্ কড়্
তুমি এলেই ফুরাবে সব
.         আমার স্বপ্ন কথাকলি
তুমি এলেই দানা বাঁধবে
.         জন্ম-কাতর স্বপ্নগুলি |


এই তো তুমি হাঁটছিলে
শীর্ণ নদীর পাড়টি ধরে, একলা একা
এই তো ধান্য শিষে
প্রজাপতির ডানায় ডানায় দিলে দেখা
এই তো ছিলে আলো রেখায়
আমার সুপ্ত মনের গোপন খেলায়,
যেই ডেকেছি ----- আমনি পাখি
আত্মক্ষত গুলির শব্দে
বোধের খেলায় অনুপ্রাস আর উপমাতে
মিলিয়ে গেল চিরতরে
একলা করে মিলিয়ে গেল, অচিনপুরে |

কে তুমি ছন্দে মারো, ছন্দে গড়ো
কাব্যে গড়ো বসত বাড়ি,
হামানদিস্তার থেকে করো
সাজাও প্রাণে বাটা ভরা পান-সুপারি
তাতে আমার যায় আসে না
আকাশ দেখি, স্বপ্ন দেখি
নিঃসঙ্গতায় মান করি না |

কে তুমি সূর্য হয়ে রোজ হেঁটে যাও কোন সূদুরে
সান্ধ্যরাগে আস ফিরে
বীণা বাজাও আমন মনে
চন্দ্রকলায় কথা রাখো, জ্যোত্স্না ছড়াও
নীলগগনে |
অসীম হয়ে আসীন থাকো মনের কোঠায়
যুগে যুগে রহস্যময় যুগের খেলায় |

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
দক্ষিণের বারান্দা
কবি আবদুস শুকুর খান

একরাশ নৈঃশব্দ্যে ঝিম মেরে আছে
হেলে-পড়া দক্ষিণের বারান্দা,
যার ফাটলের ফাঁকে ফাঁকে জড়িয়ে রয়েছে
মাধবীলতার শিকড়, ওই কংক্রিটে
অর্থব আতুর বাবা বসে বসে নির্মাণ করেছিলেন
তাঁর নিজস্ব আকাশ |
পাশে, একটু দূরে হামানদিস্তায় পান থেতো করে
মা চেয়ে থাকতেন একমনে----
সূর্যাস্তের রোদ মেঘে মগ্ন থাকত
ওই হেলে-পড়া দক্ষিণের বারান্দা |


এইসব প্রেমময় চিত্র আজও
ধুলো হয়ে জড়িয়ে রয়েছে বারান্দার গ্রিলে
ছায়া হয়ে আছে সাংসারিক প্রতিচ্ছবি
ধ্বনি-প্রতিধ্বনি,
এক চিলতে রোদ্দুরের ক্ষুধার্ত রূপকথা |

মেঘের ছন্দোময় ছায়া নিয়ে এই জীবন
খণ্ড খণ্ড কংক্রিটের গায়ে ছেয়ে আছে
মাধবীর সংলাপে, ফুটে আছে গুম্ফন
.                     অতিক্রান্ত সময়ের ঋণ---- |

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
ঋণ
কবি আবদুস শুকুর খান

জীবনের চেয়ে অতি ক্ষুদ্র ছিল আশা
দুজনের দ্রোহে দুজনে চেয়েছি ভালবাসা
ঘরকে করেছি দেবালয়----
হৃদয়ে মেখেছি আলো----
মৃত্যু জেনেও সানন্দে জন্মকে বেসেছি ভালো |

উহ্য ভাষায় লিখে গেছি এ জীবনের ইতিকথা
ভুবন ভরে দিয়েছি ভুবনের সজীবতা
ধ্বংসের মুখে ছাই দিয়ে সৃষ্টি করেছি জয়
তবুও ঋণী থেকেছি ঋণ হয়েছে অক্ষয় |

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
চিঠি
কবি আবদুস শুকুর খান

মাঝরাতে তোমাকে চিঠি লিখছি রাত্রি |
পূর্ণিমার চাঁদ এখন আকাশের গ্রীবায়
তোমার মেঘরঙ শরীর আর
সীমাহীন স্তব্ধতার নির্যাস ফুলের
ফুলের কোরক ছেড়ে বাতাসে ;
জ্যোত্স্নায় ভিজে যাওয়া
অক্ষর আর উপমারা
.           ঢেউ দিচ্ছে জলে, আত্মমনে
তোমাকে চিঠি লিখছি রাত্রি
.           চিঠি লিখছি একাকি !
আমার যন্ত্রণা, স্বপ্ন, অভীপ্সা এখন
.                      মন্ত্র মুগ্ধ সাপ,
ফণা তুলে ছোবল দিচ্ছে
বিষে জর্জরিত আমি, মৃত্যুর তিলার্ধ দূরে
দাঁড়িয়ে দেখছি তোমাকে আর
.           সাদা পাতা ভরে উপচে পড়ছে
.                      অসীম তৃপ্তি |
নক্ষত্রস্বর ভরা এই চিঠি তোমাকেও
.                      প্রত্যুত্তর শেখাবে |
আমাকে দেবে
অসীম আনন্দ আর মৃত্যুর অনুভব |

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
প্রকৃত সময়ে
কবি আবদুস শুকুর খান

প্রাতঃভ্রমণে পারতপক্ষে কাউকে সঙ্গে নিই না
ওই সময়টুকু তোমাকে সঙ্গ দেবার প্রকৃত সময়
যতক্ষণ পথে পথে ঘুরি, ততক্ষণ
তোমার বিস্ময় চিহ্নগুলো প্রকট হয় বোধের খেলায় |
তোমার মগ্ন স্বরে নিবিড় হয়ে আসি
তুমি জ্ঞাত-অজ্ঞাত কত পথের ঐশ্বর্যে
আমাকে সন্মোহিত করো |
গাছেদের ভুবনে রাখো কত নৈঃশব্দ্য কথা
রাখো অনন্তর ব্যথা, জানিনা
কেন তোমার পায়ের ছন্দে পা মেলালে
কোন কিছুই আড়াল থাকে না !
তুমি প্রকট হয়ে ওঠ বোধের ভিতর |

সকালের ভ্রমণ-সময়টুকু তুমি আমার
একান্ত আমার হয়ে থাক আত্মার ভিতর |

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
ভাবনার বৃত্ত থেকে
কবি আবদুস শুকুর খান

কী চেতনায় আমরা গাছকে গাছ, মাটিকে মাটি
পাখিকে পাখি, নদীকে নদী কিংবা
পাহাড়কে পাহাড় ও জলকে জল বলতে শিখেছি !       
এই যে আকাশ, সূর্য-চন্দ্র, গ্রহ-নক্ষত্র, মেঘ-বৃষ্টি
জ্যোত্স্না, রোদ, ধুলো-বালি
এ-সবের সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম কিভাবে আভিধানিক
এই যে তুমি
তোমার কোমল অঙ্গের প্রতিটি ভাষা কিভাবে জানা হল ?
চোখের স্পর্শে এ-কোন বিদ্যুৎ, এ-কোন প্রেম
যার উপেক্ষায় ও দহনে এত যন্ত্রণা, এত সুখ
এ কোন সুরে, এ কোন অর্থে
অন্তরের ছেঁড়া ছেঁড়া তারে বাজে শান্তি !
ভাবি, ভাবনার বৃত্তে ঘুরে ঘুরে
ডিমের কুসুমে প্রাণ সঞ্চারের বিস্ময়
দু-ফোঁটা শুক্রের মিলনে
মাতৃগর্ভের দশমাস দশদিন অন্ধকারে
.                              এই মানব জন্ম !
ডাবের খোলের ভিতর সু-স্বাদু জল,
আবার সময়ে শাদা শাঁস
মাটি গর্ভে তেল জল খনিজ সম্ভার | ভাবি,
পৃথিবীর প্রতিটি ধূলিকণা কীভাবে
পরিপূরক এই জীবনের কাছে, ভাবি----
কেন রহস্যময় মৃত্যু এসে জন্মেকে মুছে দেয়
ফের নতুন ভোরের প্রতীক্ষা করে সূর্য |

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
আগামী
কবি আবদুস শুকুর খান

আজ যেভাবে কেটে যাচ্ছে যাক
কাল কিন্তু নতুন ভোর চাই
সূর্যটা নতুন হবে না মানি
কিন্তু নবীন রোদ্দুর যেন মুছে দেয় আত্মগ্লানি |
মননের সংবেদনশীল অহমিকা যত
কাল যেন শূন্য থালায়
পৃথিবী উপচে পড়া জ্যোত্স্নার মতো
শান্তিতে ঢালে গরম ভাতের গন্ধ |
শিশুদের ম্লান মুখ যেন ----
পূর্ণিমার চাঁদের মতো করে ঝলমল !
একটি রক্তপাতহীন ; সন্ত্রাস, আতঙ্ক---- বিষাদহীন
অন্য এক পৃথিবী চাই
অন্য রঙে, অন্য রূপে, নতুন এক পৃথিবী |

নতুন অঙ্গিকারে, মুষ্টিবদ্ধ হাতে, মিছিলে মিছিলে
যুবকের উষ্ণ স্বপ্নে চাই নতুন বিপ্লব
সবুজে, শিল্পসম্ভারে, রূপে-রূপান্তরে চাই প্রাণ
চাই আরও উদ্ভাস
চাই আরো উচ্ছাস
কাল তোমাকে একেবারে অন্যরূপে চাই | হাত
থেকে হাতের সরে যাবার মুহূর্তে
পাখির নিবিড় স্বরের মতো মিশে যেতে যেতে
আগামীর শিরড়ে রেখে যাব বিস্ময়-
কাল নতুন এক ভোর চাই, ভোর----

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
মুখোমুখি হলে
কবি আবদুস শুকুর খান

মুখোমুখি হ’লে      
রক্ত গোলাপ ফুটে ওঠে বুকের ভিতর-----
শুরু হয় আত্মক্ষয়ের নৈঃশব্দ্য খেলা |

মুখোমুখি হ’লে     
চোখের আগুনে পোড়ে সংযম, মেধা ও শরীর |
শুরু হয় অন্তর্দহন, তার ও আমার
চাঁদে ভর করা পৃথিবীর মতো
জ্যোত্স্নায় ডানা মেলে উদাসীন,
মুখোমুখি হলে
সহস্র বছরের মিলনের ক্ষুধার্ত ইচ্ছা মিটে যায় |

মুখোমুখি হলে
অকাল বসন্ত নামে কুমারী অরণ্যে
.                       স্তনবৃন্তে আসে কুসুম জোয়ার
স্বপ্নের জাহাজ ভাসে নীল অথৈ জলে
মুখোমুখি হ’লে
বাঙ্ময় অক্ষর পঙ্ ক্তির সাযুজ্যে কী গভীর বাক্য

মুখোমুখি হ’লে
জন্ম শঙ্খ বাজে একসঙ্গে দিগন্ত-প্রান্তরে |
মুখোমুখি হলে
নীল পতাকা নেড়ে মৃত্যু দূরে সরে যায় |

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
মানদণ্ড
কবি আবদুস শুকুর খান

ঘন্টার পর ঘন্টা তোমার সামনে নীরবে বসি
তবুও মুখ ফুটে কিছু চাইতে পারিনি |
তুমিও কোনদিন বললে না, ‘কি চাই’ ?

আসলে, মনে হয় তুমিও চাওনা
আমি অন্যের মতো কাঙাল হয়ে আসি |
প্রিয়তম সেই যে চাওয়ার আগে পরিপূর্ণ করে
শূন্য পাত্র নীরবে |


তোমার মুদ্রিত মগ্ন চোখ
আমাকে বসিয়ে রাখে সহস্র বছর |
আমাকে মৃত্যু আলোয় সম্পূর্ণ করে |

.         *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর