তোমার মনটি পেতে রোজ ছুটছি আমি এখান-সেখান লিখছি যতো আঁধার কথা সাদা পাতায় স্বপ্ন সোপান |
চিঠির পাহাড় তোমার ঠোঁটে, আমার ঠোঁটে তবুও তুমি মন দিলে না ? ফুলের ভাষায় ডাকলে না ! বুকের ভাষায় ডাকলে না !
হলকলমি ঘেরা ছোট্ট ঘরে তোমার জন্য আসন পাতা তোমার জন্য জ্যোত্স্নাধোয়া সাদা পাতা লিখছি যত, রইল তত তবুও লেখা শেষ হবে না চাঁদের মতো নিঃস্ব মনের দুয়ার খুলে কেউ এল না | দুঃখীর ঘরে দুঃখ মুছে আলো হয়ে কেউ এল না |
প্রেম কি এসব রেখা মানে, দেয়াল মানে শাসন-শোষন কিই-বা মানে ? হৃদয় দেবার হৃদয় নেবার গন্ধ যে জানে না সারাজীবন দূরের হাত দূরেই থাকবে কেউ ছোঁবে না | প্রেমের জন্য পাগল হলেই, তবেই প্রেম সফল জেনো ব্যর্থ কবির প্রেম কাহিনি, রূপক বলে তুমি-ই মেনো |
কে তুমি গা ছমছম আলোর ঘ্রাণে, হাঁটছ দূরে একলা হয়ে অচিন পুরে তোমার ছায়ার ঝর্ণা নদী চিন্তনে আর চলমানে বাজায় আমায় নিরবধি, আসলে পরে বুকের ভিতর পাপরি গুলো উঠবে ফুটে অস্তিত্বময় ভাবনাগুলো বুকের ভিতর মাথা খোঁটে | আলো ঝলমল অক্ষর সব আসছে উড়ে মথের ডানায়, মনমুকুরে ভালোবাসার নৌকা দোলে, চন্দ্রালোকে ঢেউটলমল, ঢেউ টলমল পাচ্ছি গন্ধ তোমার আমি আসছে যেন বৈশাখী ঝড় বাজ আর বিদ্যুতে গড়া সেই ক্ষণিক কাঁপন . মেঘ কড়্ কড়্ তুমি এলেই ফুরাবে সব . আমার স্বপ্ন কথাকলি তুমি এলেই দানা বাঁধবে . জন্ম-কাতর স্বপ্নগুলি |
২ এই তো তুমি হাঁটছিলে শীর্ণ নদীর পাড়টি ধরে, একলা একা এই তো ধান্য শিষে প্রজাপতির ডানায় ডানায় দিলে দেখা এই তো ছিলে আলো রেখায় আমার সুপ্ত মনের গোপন খেলায়, যেই ডেকেছি ----- আমনি পাখি আত্মক্ষত গুলির শব্দে বোধের খেলায় অনুপ্রাস আর উপমাতে মিলিয়ে গেল চিরতরে একলা করে মিলিয়ে গেল, অচিনপুরে |
কে তুমি ছন্দে মারো, ছন্দে গড়ো কাব্যে গড়ো বসত বাড়ি, হামানদিস্তার থেকে করো সাজাও প্রাণে বাটা ভরা পান-সুপারি তাতে আমার যায় আসে না আকাশ দেখি, স্বপ্ন দেখি নিঃসঙ্গতায় মান করি না |
কে তুমি সূর্য হয়ে রোজ হেঁটে যাও কোন সূদুরে সান্ধ্যরাগে আস ফিরে বীণা বাজাও আমন মনে চন্দ্রকলায় কথা রাখো, জ্যোত্স্না ছড়াও নীলগগনে | অসীম হয়ে আসীন থাকো মনের কোঠায় যুগে যুগে রহস্যময় যুগের খেলায় |
একরাশ নৈঃশব্দ্যে ঝিম মেরে আছে হেলে-পড়া দক্ষিণের বারান্দা, যার ফাটলের ফাঁকে ফাঁকে জড়িয়ে রয়েছে মাধবীলতার শিকড়, ওই কংক্রিটে অর্থব আতুর বাবা বসে বসে নির্মাণ করেছিলেন তাঁর নিজস্ব আকাশ | পাশে, একটু দূরে হামানদিস্তায় পান থেতো করে মা চেয়ে থাকতেন একমনে---- সূর্যাস্তের রোদ মেঘে মগ্ন থাকত ওই হেলে-পড়া দক্ষিণের বারান্দা |
জীবনের চেয়ে অতি ক্ষুদ্র ছিল আশা দুজনের দ্রোহে দুজনে চেয়েছি ভালবাসা ঘরকে করেছি দেবালয়---- হৃদয়ে মেখেছি আলো---- মৃত্যু জেনেও সানন্দে জন্মকে বেসেছি ভালো |
উহ্য ভাষায় লিখে গেছি এ জীবনের ইতিকথা ভুবন ভরে দিয়েছি ভুবনের সজীবতা ধ্বংসের মুখে ছাই দিয়ে সৃষ্টি করেছি জয় তবুও ঋণী থেকেছি ঋণ হয়েছে অক্ষয় |
কী চেতনায় আমরা গাছকে গাছ, মাটিকে মাটি পাখিকে পাখি, নদীকে নদী কিংবা পাহাড়কে পাহাড় ও জলকে জল বলতে শিখেছি ! এই যে আকাশ, সূর্য-চন্দ্র, গ্রহ-নক্ষত্র, মেঘ-বৃষ্টি জ্যোত্স্না, রোদ, ধুলো-বালি এ-সবের সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম কিভাবে আভিধানিক এই যে তুমি তোমার কোমল অঙ্গের প্রতিটি ভাষা কিভাবে জানা হল ? চোখের স্পর্শে এ-কোন বিদ্যুৎ, এ-কোন প্রেম যার উপেক্ষায় ও দহনে এত যন্ত্রণা, এত সুখ এ কোন সুরে, এ কোন অর্থে অন্তরের ছেঁড়া ছেঁড়া তারে বাজে শান্তি ! ভাবি, ভাবনার বৃত্তে ঘুরে ঘুরে ডিমের কুসুমে প্রাণ সঞ্চারের বিস্ময় দু-ফোঁটা শুক্রের মিলনে মাতৃগর্ভের দশমাস দশদিন অন্ধকারে . এই মানব জন্ম ! ডাবের খোলের ভিতর সু-স্বাদু জল, আবার সময়ে শাদা শাঁস মাটি গর্ভে তেল জল খনিজ সম্ভার | ভাবি, পৃথিবীর প্রতিটি ধূলিকণা কীভাবে পরিপূরক এই জীবনের কাছে, ভাবি---- কেন রহস্যময় মৃত্যু এসে জন্মেকে মুছে দেয় ফের নতুন ভোরের প্রতীক্ষা করে সূর্য |
আজ যেভাবে কেটে যাচ্ছে যাক কাল কিন্তু নতুন ভোর চাই সূর্যটা নতুন হবে না মানি কিন্তু নবীন রোদ্দুর যেন মুছে দেয় আত্মগ্লানি | মননের সংবেদনশীল অহমিকা যত কাল যেন শূন্য থালায় পৃথিবী উপচে পড়া জ্যোত্স্নার মতো শান্তিতে ঢালে গরম ভাতের গন্ধ | শিশুদের ম্লান মুখ যেন ---- পূর্ণিমার চাঁদের মতো করে ঝলমল ! একটি রক্তপাতহীন ; সন্ত্রাস, আতঙ্ক---- বিষাদহীন অন্য এক পৃথিবী চাই অন্য রঙে, অন্য রূপে, নতুন এক পৃথিবী |
নতুন অঙ্গিকারে, মুষ্টিবদ্ধ হাতে, মিছিলে মিছিলে যুবকের উষ্ণ স্বপ্নে চাই নতুন বিপ্লব সবুজে, শিল্পসম্ভারে, রূপে-রূপান্তরে চাই প্রাণ চাই আরও উদ্ভাস চাই আরো উচ্ছাস কাল তোমাকে একেবারে অন্যরূপে চাই | হাত থেকে হাতের সরে যাবার মুহূর্তে পাখির নিবিড় স্বরের মতো মিশে যেতে যেতে আগামীর শিরড়ে রেখে যাব বিস্ময়- কাল নতুন এক ভোর চাই, ভোর----
মুখোমুখি হ’লে রক্ত গোলাপ ফুটে ওঠে বুকের ভিতর----- শুরু হয় আত্মক্ষয়ের নৈঃশব্দ্য খেলা |
মুখোমুখি হ’লে চোখের আগুনে পোড়ে সংযম, মেধা ও শরীর | শুরু হয় অন্তর্দহন, তার ও আমার চাঁদে ভর করা পৃথিবীর মতো জ্যোত্স্নায় ডানা মেলে উদাসীন, মুখোমুখি হলে সহস্র বছরের মিলনের ক্ষুধার্ত ইচ্ছা মিটে যায় |
মুখোমুখি হলে অকাল বসন্ত নামে কুমারী অরণ্যে . স্তনবৃন্তে আসে কুসুম জোয়ার স্বপ্নের জাহাজ ভাসে নীল অথৈ জলে মুখোমুখি হ’লে বাঙ্ময় অক্ষর পঙ্ ক্তির সাযুজ্যে কী গভীর বাক্য
মুখোমুখি হ’লে জন্ম শঙ্খ বাজে একসঙ্গে দিগন্ত-প্রান্তরে | মুখোমুখি হলে নীল পতাকা নেড়ে মৃত্যু দূরে সরে যায় |