১ দেখা মাত্রই বুকের কুঁড়ি ফেটে ঝরে গেল রেণু দেখা মাত্র-ই, সূর্যাস্তের বর্ণময় আলো আরক্ত স্বরে বলে গেল---তোমার চোখের মতো সুন্দর পৃথিবীতে আর কিছু নেই ; সেই থেকে রোজ বুকের গভীরে ডেকে ওঠে পাখি, গান ধরে সন্ধ্যার আসন্ন স্বপ্ন আনে বয়ে---- ধান জ্যোত্স্নায় কুয়াশা ঢাকা মাঠ বিস্ময়ে, জিজ্ঞাসায় কী এক লাবণ্য নিয়ে চেয়ে থাকে ; যেন বা বন-ময়ূরী পেখম মেলে প্রকাশ করে সঙ্গম ইচ্ছা |
২ তোমার চোখের ভুবন ছাড়া স্বপ্নময় অন্য কোনো চোখ নেই আমার ভুবনে | তোমার শরীরে ঘ্রাণে ভিজে এ-শরীর উষ্ণ হাতের যাদু পায় এ-হৃদয় তোমার কন্ঠ যেন মেঘের নিক্কণ, নর্তকীর নূপুর, কথার মাধুর্য যেন ঐশ্বর্য পুরাণ তোমার চুলের মতো এত প্রশান্তির সমুদ্র কোথায় আছে কোনখানে অরণ্য মায়া--- কত শতাব্দী ধরে পথ চেয়ে আছি কত জন্ম জন্ম বেঁচে আছি তুমি সত্য, চিরসত্য, চিরন্তন তোমার ভুবনে |
৪ মননের আলো ঢেলে, স্বপ্নিল ভাষা দিয়ে তোমাকে আকাশের নীলে নীল করে বেঁধে রাখি, রাত্রি দিন তোমার নামে ঘুমাই জেগে উঠি, অন্তহীন ডেকে যাই দূর থেকে দূরান্তে, অন্তরীক্ষে, শূন্যের---- বিষে, স্বপ্ন বিভাষে, একা, একাই |
৫ কি নাম তোমার ? জানা হয়নি | নামেই বা কি কাজ ! তোমাকে যে নামেই ডাকি, তুমি আমার আরাধ্য, হৃদয় রঞ্জিত কথাকার, চিত্রী, আমার তুমি | আমি জানি ----- তুমি এলে গাছে গাছে ফুল ফোটে, দুধ আসে ধানে জ্যোত্স্নার প্লাবনে ভাসে পৃথিবী, তুমি এলে ঋতুমতী হয় নারী, গর্ভে আসে ভ্রুণ | তুমি চলে গেলে ---- ডানা মেলে পাখি হুইসেল দিয়ে ট্রেন ছাড়ে, ফাঁকা স্টেশনের স্তব্ধতায় একা মন চুপচাপ, শিশির পতনের শব্দে কাঁপে পৃথিবী তুমি চলে গেলে ; পুষ্পবতী গাছ গর্ভ উন্মোচনের প্রতীক্ষা করে | ঘাসের কুঁড়ি থেকে শিশির ঝরে ধুয়ে দেয় তোমার চলার পথ | হৃদয়ের অদম্য ইচ্ছা ছাই হয়ে ঘনায় আঁধার |
৬ কে তুমি ? তোমাকে দেখিনি কখনও ; শুধু কল্পনায় বাস্তব অবাস্তবের ঘোরে নামিয়ে আমি চোখ পদ্মপাতার জলের মতো ঢলে পড়ি ; কে তুমি ? আমাকে স্বপ্নাচ্ছন্ন করো আজীবন | কী এক মায়া, সন্মোহনে নারীর জ্যোত্স্নায় স্নিগ্ধ শান্ত করে মারো, কে তুমি, দেখা-না দেখার অবস্থানে আমাকে ডাকো |
৭ তোমাকে না দেখে কাটে না সময় নক্ষত্রবীথিতলে শুয়ে দিন যায়, রাত যায় শবযাত্রীর মন্থর পায়ের মতো শুধু স্বপ্ন আসে ভাবনার বৃত্ত থেকে অসীম ভাবনার | তোমার কাছে যাবার কোন মাধ্যম নেই শুধু চোখ বুজলেই----- এস এম এস কিংবা ইন্টারনেটের চেয়ে দ্রুত পৌঁছে যাই | আমার হৃদয়ে অফুরন্ত আলো----তোমার রৌদ্রমাখা চিঠি |
৮ চিঠি লিখি, অক্ষরবৃত্তে, পয়ারে, দলবৃত্তে চিঠি লিখি, কবিতার ভুবনে শিকড়ের ব্যঞ্জনায়, মেঘ পুঞ্জে, উপমার আকাশে | জ্যোত্স্নার অক্ষরে, তোমার লেখার সমস্ত বয়ান দেয় প্রকৃতি হৃদয়ের কাক জড়ো করে ঘটনার খড়কুটো সমুদ্র লহরী দেয় সুর ছন্দ পাহাড় দেয় শৌর্য্য ; একাত্ম থাকার মন্ত্র | তবুও লেখা হয় না, তোমাকে লেখা হয় না আমার |
৯ তোমাকে জানার পর, হে প্রেম গভীরে জন্মায় একটা নদী যার স্রোতধ্বনি আমাকে জাগায় যার কল্লোলে, বহমান ছন্দে তোমার সুপ্ত জাগরণ, ঘুম | তোমাকে দেখার পর, হে প্রেম আমার ঘুমন্ত সত্ত্বা যেন এক দুরন্ত ঘোড়া দৌড়ে দৌড়ে ছুঁয়ে যায় তোমার নাভি শ্বেত শুভ্র যোনি | তোমাকে দেখার পর, আমি ভালো নেই------ হে প্রেম এই জনপদে, মানব সংসারে বেঁচেও মরে থাকি |
১০ দিনে দিনে কত কিছু রূপান্তর হয় এ-পৃথিবীর | যুগ বদলে যায়, মুখের ভাষা বদলে যায় কত নতুন দিন জীর্ণ করে পুরানো দিন জংধরা টিনের বাক্সের মতো পড়ে থাকে ধুলোয় প্রাণের সজীবতা মরে যায়, যুগ এসে দাঁড়ায় আসন্ন সন্ধিতে | নবজন্মে ফিরে আসি আমি----- তোমার জন্য হে প্রেম, উদাসীন ডাকবাক্স হয়ে ঝুলে থাকি জীবনের দেয়ালে ----
১১ আমার চোখের আলোয় লেখা এ প্রেম পদাবলী জানি তোমার যোগ্য নয় হৃদয়ের খসে পড়া পলেস্তারায় সহস্র স্বপ্ন জানি আমাদের হবে না আমি জানি ---- স্বপ্নের কেন্দ্র বিন্দুতে আমরা কেউ কখনও পৌঁছব না, আমাদের সীমারেখা আমাদের ব্যারিকেড করে দাঁড়াবে | আমাদের অতিক্রম করে যাবে কাল আমাদের ছুঁয়ে থাকবে মহাকাল জন্ম-মৃত্যুর ঋজু রেখায় দাঁড়িয়ে দেখব ---- আমাদের চোখের গভীরে জন্ম হয়েছে অজস্র চোখ আমাদের কথার ভিতরে জন্ম হয়েছে কথা আমাদের মাটি হওয়া দেহের মাটিতে উহ্য থেকে গেছে আকাঙ্খার মাটি তুমি আছ--- এই সত্যনিয়ে আমি পৃথিবীর প্রেমময় ঘাস হয়ে বাঁচব আরও সহস্র বছর | বেঁচে থাকবে আমাদের প্রজন্ম----- আমাদের মৃন্ময় পৃথিবী ----