প্রকৃত দুর্গা কবি অজিত বাইরী মিলনসাগরে এই কবিতার প্রকাশ - ১৪.১১.২০২০।
সহ্য করো নারী, সহ্য করো, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সহ্য করাই নিয়ম। ধর্ষণ করে, খুন করে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হবে, প্রশাসন জেনেও জানবে না; কেননা ধর্ষিতা, নিহত নারীর মরদেহ ফেরত পাবার কিংবা মৃতাকে শেষবার দেখার অনুমতি মিলবে না জননীর, পিতার, স্বামীর।
সহ্য করো নারী, সহ্য করো, কতোই তো সহ্য করেছো সেই সতীদাহের কাল থেকে, যখন বল প্রয়োগ করে তোমাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হোত জ্বলন্ত চিতার দিকে। তারপর হাত পা বেঁধে ছুঁড়ে দেওয়া হোত ক্ষুধার্ত চিতার উপর, আর তোমার আর্তচিৎকার ঢেকে দেওয়া হোত ঢাক ঢোলের বাদ্যিতে।
তুমি সহ্য করেছো অনেক, অগ্নি-পরীক্ষা থেকে বস্ত্রহরণের অপমান; তোমাকে বাধ্য করা হয়েছে গ্রহণ করতে পতিতাবৃত্তি। রাজদরবারে কখনও নৃত্যপটিয়সী, কখনও বজরায় প্রমোদ-ভ্রমণে দেহসঙ্গিনী; ঝাড়লন্ঠনের আলো আর নূপুর-নিক্কনে উচ্চকিত হয়েছে হারেম; আর তোমার চোখের জলে ভরে গেছে উন্মাদদের নিশি-যাপনের রঙিন পেয়ালা।
এসবও সহ্য করেছো তুমি; বলো, সহ্যের আরও কী বাকি? নিজের দেহকে এবার করে তোলো কষ্টিপাথর, ওষ্ঠে রাখো বিষ; যেন চুম্বন করামাত্র নীল হয়ে যায় প্রেমহীন কামার্ত পুরুষের পাশব-দেহ।
নিষ্কলুষ ভালোবাসা তুমিও চেয়েছিলে; পুরাণের সতী, বেহুলা, শৈব্যার আত্মত্যাগ প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো পাপড়ি মেলে আছে। যদি প্রেমের কাছে কেউ পরাজিত না-হয়; তবে অস্ত্র তুলে নাও হাতে; অসুরের বক্ষ বিদীর্ণ হোক তোমার ত্রিশূলে, তুমি হও পশুত্ব নিধনের প্রকৃত দুর্গা।
কবির বাড়ি কবি অজিত বাইরী মিলনসাগরে প্রকাশ ৯.৫.২০১৭ তারিখে, ২৫শে বৈশাখ ১৪২৪।
যত অবহেলা আর বঞ্চনার মধ্যে কাটুক জীবন লোকে চিনুক বা না-চিনুক, খ্যাতি, পুরস্কার না-জুটুক, তাতে কি কিছু যায় আসে ? সারমেয় যেমন দাঁতে চেপে ধরে হাড়ের খণ্ড কলমকে সেইমতো কামড়ে আছি সারাজীবন কোনো কিছুর প্রলোভনে চোয়াল আলগা করিনি। আমি যখন থাকব না, তখন যেন বাড়ির সমুখ দিয়ে যাবার সময় লোকে আঙুল তুলে দেখায়, এটা কবির বাড়ি।
হাত কবি অজিত বাইরী মিলনসাগরে প্রকাশ ৯.৫.২০১৭ তারিখে, ২৫শে বৈশাখ ১৪২৪।
মানুষকে অতো সামর্থ্যহীন ভেবো না হে তার কাঁধের দু’পাশের দুটি হাতে উপর আস্থা রেখো। ওই দুটি হাতই অসাধ্য সাধন করে, অসম্ভবকে করে সম্ভব। ওই দুটি হাতই খাদান কাটে, পাহাড়ে পথ বানায়, নৌকোর গুণ টানে।
হাত দুটোকে অত সহজ ভেবো না হে।
বিপর্যয় যত ভয়ঙ্কর হোক, ধ্বংস যে বিভত্স চেহারাই নিক, ওই দুটি হাতই পুনর্নিমাণ করে বন্দর, শহর, সড়ক, সেতু, মানমন্দির।
মানুষের যাবতীয় স্বপ্নসৌধ যখন চূর্ণ হয়, অন্ধকার যখন শ্বাপদের মতো থাবা উঁচিয়ে ঘাড়ের উপর ফেলে নিশ্বাস ; ওই দুটি ভয়হীন হাতই ধ্বংসস্তুপে জ্বালে আলো।
কাঁধের দু’পাশের ওই দুটি হাতের উপর ভরসা রাখো। দুর্গমকে সুগম, অনিশ্চিতকে নিশ্চিত, দুর্লভকে সুলভ করতে ওদের জুড়ি নেই। সম্ভাবনা ও সামর্থ্যে মানুষই মানষের তুলনা। কাঁধের দু’পাশ থেকে দুটি হাত--- ওই দুটি হাত আত্মারই অংশ ; ওদের কখনও অক্ষম দুর্বল ভেবো না হে।