কবি অক্ষয়চাঁদ-এর কবিতা
*
ধর্ম নেই
কবি অক্ষয়চাঁদ

আজ কীভাবে পৃথিবীর ইতিহাস লেখা হবে,
কীভাবে আঁকা হবে মানুষের মুখ ও মুখোশ,
গুয়ের্নিকার রাক্ষস ও খোক্কস
কার যোগসাজসের প্রতিফলন,
সমবেত মানুষের অন্তর্লোকের আলের কন্ঠরোধ
যাহাদের পরিতৃপ্তির মুখ্য ভূমিকা,
উহারা ব্যতীত অসংখ্য মানুষের অস্তিত্বের সীমা
নীলিমার অনুরূপ, শ্রেণীবিরোধের অবরোধ প্রতিপন্ন করে |
ভারসাম্যের বৈষম্য বেজে ওঠে অশ্রুসমীপে,
সময়ের নিরিখে তার আর্তনাদ ব্রাত্য আবেগে
শূন্যের প্রকৃত অবস্থান নিরূপণ করে,
ব্যতিরেকে অন্য কোন ধর্ম নেই |

.      *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
বারবণিতার ধারা
কবি অক্ষয়চাঁদ

বুকের ভেতর বালি জমেছে,
হারিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ঘটিত অশ্রুধারা,
মুছে যাচ্ছে শরীরের অন্তর্গত আকাশ,
চরাচরের বাহুপাশ ক্রমশঃ ছিন্ন দিশেহারা,
আবেগবিহীন জীবন শুধু বস্তুজাত কায়া,
আমরা যারা শব্দপ্রেমিক নগ্ন ছন্নছাড়া,
হাসনুহানার মরা ঝোপের নীচে কবর দিচ্ছি প্রিয় কবিতার খাতা,
তোমরা হাসছো চাপাহাসি বিজ্ঞাপনে গড়া,
এমনতরো জীবনযাপন বারবণিতার ধারা |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
অপার্থিব
কবি অক্ষয়চাঁদ

অবধারিত নেচে উঠলো লালবর্ণ
নীলবর্ণ, দিনশুরুর আকাশ ভোরের
সূর্য |  তোমার মনের পাখি ডেকে
উঠলো গহনমধুর স্বরে, তুমি
টইটুম্বুর ঘুমের ঘোরে ভোরের
স্বপ্নে ভাসিয়ে দিলে ময়ূরপঙ্খী নাও,

তারপর অস্পষ্ট হয়ে উঠলো স্বপ্নবর্ণ,
তুমিও অবুঝ, গভীর স্তরে আঁকড়ে ধরলে
স্বপ্নকথন, খেলার সত্য হারিয়ে গেলো
ক্ষণকরুণ সুরে | তুমি জেগে উঠলে
নীল আকাশ লক্ষ্য করে, তোমার
ময়ূরপঙ্খী নাও বেজে উঠলো দিনমণির
বিচ্ছুরণে, তুমি উন্মীলনে স্পর্শ করলে অপার্থিব |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
প্রান্তরের স্তরে
কবি অক্ষয়চাঁদ

নিজের ভেতরে যেতে হবে আপাদমস্তক,
যতদূর সঞ্চারিত তুমি
অতিদূর একা অনুভূতি,
চরাচরহারা থরোথরো সাঁকো,
সকল আকাশ অতিক্রম করে
ঐ কাঁপনটুকু পেতে হবে প্রাণে |
অবশিষ্ট শুধু গ্রীষ্মের ধু ধু মাঠ
রুদ্রের অবয়ব রূপে ও রূপান্তরে,
কখনো সঘন শ্রাবণ কালোর গভীরে কালো,
যেমত মহাকাল বাজায় ডমরু,
বেজে যায় শ্রুতির গোপন ধ্বনি যোজন যোজন |
প্রেরণা রচিত হয় অতিসূক্ষ্ম সমভাবে,
চিরাচরিত ভারসাম্যে ওড়ে শীতহাওয়া,
ঝরা পাতারা বাজে সমস্বরে প্রান্তরের স্তরে |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
তোমার একটা হাত
কবি অক্ষয়চাঁদ

পথ যখন দুর্গম হয়ে উঠলো,
ঠিক ঐ মুহূর্তে নীলিমা ফুঁড়ে দৈববাণী হলো,
এই পথ তুমিই করেছো দুর্গম,
আমি মাথার ওপর মুখ তুলে বলি,
আর কত রক্তপাত হজম করবো বলো,
ত্রিলোচন, তুমি আমার নয়নের মণি

তুমি আমার পথের দুর্গম, অমনি
আমি নেচে উঠি সকল নাচের পরম্পরায়,
এবার তোমার জেনে নেবার দায়
পথ কীভাবে হয়ে উঠলো দুর্গম |
হঠাৎ আমি ভূলুন্ঠিত, সংজ্ঞাশূন্যপ্রায়,
দেখি, আমার মুখোমুখি আলোকিত
এক সাঁকো অথবা তোমার একটা হাত |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
চরাচরের স্বমহিমা
কবি অক্ষয়চাঁদ

না হওয়ার মধ্যে একটা হওয়া
ঘুরতে থাকে ধুলো হাওয়ায়
ফসলভরা ক্ষেতে যেমনতরো কাকতাড়ুয়া
বোবায়ধরা মানুষ যেমন অদৃষ্টেরে দেয় পাহারা
এমনধারা একটা হওয়া বস্তুছাড়া
মুঠোর মধ্যে ভস্মসম স্থূল নীলিমা |

ধুতরো সাদা আত্মহারা অভিজ্ঞতার
রসগ্রহীতা তুমুল অরূপ অর্ধসত্য ছিন্নমস্তা
তাড়নার বৃন্তজুড়ে নৃত্যরতা,
মৃত্যু যেথায় দ্বিখণ্ডিত অগ্নি হতবাক,
অতীব তীব্র ছুটতে থাকে বেআব্রু রক্তধারা,
না হওয়ার মধ্যে একটা হাওয়া
.                           চরাচরের স্বমহিমা |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
আত্মরতি
কবি অক্ষয়চাঁদ

যে সব ঘটনা ঘটার কথা ছিল
তাই তাই ঠিকমতো ঘটে গেলে
আমি ছিন্নমস্তার নাম জপ করি,
প্রশ্ন করি না আর, শুধু, দেখি
দেবী, আর তার অপরূপ ও অরূপ |

আত্মরচনার সুখ অতিবিরল এককাহন,
শ্রুতির ললাটে বাজে দেবীর পদধ্বনি ও তাঁর পা-দুখানি,
বুকের গভীর প্রান্তে এসে বুঝি,
কতটা গভীর হলে ক্ষত প্রায়শ্চিত্ত ঘটে,
ক্ষিপ্ত হয় পাথর, ভাঙতে থাকে ধ্বস,
আমিও এক চিরঅবশ আত্মাহুতি দিই তোমার স্খলনে |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
নিরপেক্ষ সমান       
কবি অক্ষয়চাঁদ

এক হাতে সূঁচ এক হাতে সুতো
যেভাবে এই বেঁচে থাকার ব্রত
সাঙ্গ করি যেমন-তেমন, ভাবের মধ্যে
অভাবনীয়ের স্পর্শ পেতে চাই, অতঃপর
বাতাস জাগে চরাচর জুড়ে বাজে রাত্রি  |

তুমি একা নৈশালোকে নথিবদ্ধ করো
কার প্রতিজন্মের ঐক্যের প্রণয়,
চকমকি পাথর থেকে যার শিরা ও প্রত্যঙ্গ |

মনে মনে জানি আমিও বধির, যেহেতু অধীর নই
আজো, নৈরাজ্যে বিরাজমান উন্মাদনার অবুঝ মন
সঙ্গীতপ্রবণ, তনু তার নিরপেক্ষ সমান |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
নীলিমাব্যাপি বিদ্রোহ
কবি অক্ষয়চাঁদ                       

প্রতিটি সম্ভাবনা পেরিয়ে যেতে যেতে না পাওয়ার ভাষায়
কথা বলছি, দেখো,
বলো, উত্কন্ঠা আকন্ঠ নৈকট্যে কতটা বাজে----
কতটা বাজে বাঁশির নৈরাজ্য-----
বৈরাগ্যের কতটা দাপট বিশুদ্ধ লম্পটও জানে
মাতৃজ্ঞানে দৈবাৎ------
‘না ও অ’ এর সান্নিধ্য শব্দের তাত্পর্যে
ফণা তোলে, দোল খায়,
প্রতিধ্বনি হয়ে হাওয়ায় হাওয়ায় বাজে,
অস্থি মজ্জায় বাজে নীলিমাব্যাপি বিদ্রোহ |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
কবি কি কখনো কারো প্রেমিক হতে পারে                      
কবি অক্ষয়চাঁদ

কার স্বয়ংবরা তছরূপ করে তুমি অট্টহাস্যে
ফেটে পড়েছিলে রহস্যের বাতায়নে,

তোমাকেই কেন্দ্রবিন্দু করে দেখি
লৌকিক অলৌকিক একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ,

মধ্যরাত্রির একটু আগে প্যাঁচা ডেকে গেলো,
বাসনা বলে উঠলো ডেকে উঠলো লক্ষ্মীপ্যাঁচা,
অথচ বিকেলের কিছু আগে একটা চিল
তোমার দৃষ্টির সঙ্গে চোখ রেখে কোনো
অজানা এক সন্ধি করে নিলো,
অতঃপর বলো, কবি কি কখনো কারো
প্রেমিক হতে পারে |

.           *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর