কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
মাছ মাইরতে গেল শ্যাম
কথা - কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়
সুর - প্রচলিত
শিল্পী -
শুভেন্দু মাইতি
“মঈনুদ্দীন কেমন আছ” (১৯৯৫) সি.ডি.-র গান। শুনে লেখা।


মাছ মাইরতে গেল শ্যাম
বুড়ীর বান্ধের জলে
চাং মাছের খাপুর খুপুর
কদম্বেরি তলে

তুমি বাঁশী ফুকো
বাঁশী ফুকো শ্যাম বাঁশী ফুকো

পান্তা খায়ে গামছা গায়ে
ঘুরছে পথে রাধিকা সুন্দরী
তার স্বামী খ্যাদাইছে কূল ভাঙ্গাইছে
রক্ষা করো হরি

তার মান রাখো
মান রাখো ও তার মান রাখো

চাং মাছের ঝোল খাইয়ে
চল বৃন্দাবন
ভাদর মালে ভজ কৃষ্ট
রাধিকা মদন

ভজ কৃষ্ট কৃষ্ট
মাছ মাইরতে গেল শ্যাম . . .

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দেশ হইয়াছে ভাগ রে মণি
কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” থেকে নেওয়া |


দেশ হইয়াছে ভাগ রে মণি
.                পরাণ পুইড়্যা খাক্,
আর দেশের মাইনষে বলি দিয়া
.                নেপোয় মারে ভাগ, রে মণি---
.                দেশ হইয়াছে ভাগ |

সুখ কন্যা ঘুমায় যাদু
.                তেপান্তরের পার ;
আর সোনার কাঠি চুরি কইরা
.                দানোয় পগার পার, রে যাদু---
.                কন্যা তেপান্তরের পার |

আইস আমার যাদুমণি
.                কও নূতন রূপকথা
আর তরোয়ালের ঝিলিক হাইনা
.                কাইটো দানোর মাথা,
রে যাদু, রে মণি ---
.                কও নূতন রূপকথা |

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হেই মাগো দুগ্ গা
কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” থেকে নেওয়া |

হেই মাগো দুগ্ গা
তোমার দশ হাতে অস্ত্র মিছাই
লুটেপুটে লিলেক অসুর
ভুখা পেটে দিন ধিতাই |

বাবা আছেন দিগম্বর
তো আমারও লাই ফাটা কানি
ভিখ্ মাইগবার দেবতা উনি
আমিও যে মা ভিখ মাগানি |

ভাদুর লাচে ঘুঙুর দে মা |
মাচান ভইরে ডিংলা-ঝিঙা
নিমক মরিচ মাড়ে ভাতে
মাদলের বোল ঘিচাং ধিনা |

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
রাত বিতাইলো বিহান হইল
কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” থেকে নেওয়া |

রাত বিতাইলো বিহান হইল
ঘরকে মরদ ঘুইরলো নাই
চাষনালার গহীন গাড়ায়
গেইছে দামোদরের জল সামহাই |

হেই বাবা দামোদর
তুয়ার পায়ে হাজার গড়
রোষের আগুন নিবাই দাও
ডিংলা মাচায় ফুল দাও
ঘরের মানুষ ফিরাই দাও
ভাদুর লাচে ঘুঙ্গুর দাও |

দামোদর হে কীড়া খাও
সুখের বিহান ফিরাই দাও |

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বাবা হে ই দেশটাতে আর রইব নাই
কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” থেকে নেওয়া |

বাবা হে ই দেশটাতে আর রইব নাই |
ই দেশের মাটি বানভাসি,
ফিরে দিছে খরা জ্বালাই |

ই দেশে রাজারাণীর দেশশাসনা,
ভাল কথা বইলছে মুহে
কাজের বেলায় রা কাড়ে না
শুইনলাম চাঁদে মানুষ জমি লিছে,
বাঘের মাস মানুষ খাইছে,
পাতালেতে রেল চলিছে
তবু পেটের ভুখ তো মিটছে নাই |

ই দেশে বিটি ছেইলার চুলে ছাঁটাই,
খাদে কলে চাকরী ছাঁটাই,
চাষীর ঘরকে যেমন শুখা মরাই
তেমন মরদগুলার তাগদ নাই |

( বাবা হে ) ই দেশের গুণিন যত
মন্ত্র কত জাইনছে ঠিকেই
তবু কেনে ডাইন-খেদা সরযূপড়া
ঝাঁটাপিটা কইরছে নাই ?

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কবে আইসবেক সে দিন
কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়
দেবশংকর রায়চৌধুরী সম্পাদিত “প্রতিবাদী বাংলা কবিতা সংকলন” (২০০৭) থেকে
নেওয়া।


কেতা চিপা বাবুগুলা মিটিং কইরলেক্ ...
কি ... শিশুশ্রমিক চইলবেক্ নাই
ছুট নুনা নুনির কাজ বন্ধ কর...
ত আইজ্ঞা আমার দশ বছরের বেটা-ট
একটি চা-দুকানকে বর্তন ধুয়াধুয়ি কইরছে
বার বছরের বিটি বাবুঘরকে কাজ ধইরেছে
উয়াদের মায়ে পাথরভাঙা মিশিনে খাইট্ ছে দিনভর...
কেনে... ই খবর ট লিলেন .. কি নাই..
ত শুনেন বিত্তান্ত .. কাঁচকলকে চাকরি কইরথম
আমি চাষির বেটা ভুজুং .. কিস্ কে ... কিস্ কে আইজ্ঞা ..
খয়ারপুড়া জমিতে ফসল নাই... লাঙল বলদ সকলি
গিলে লিলেক্ মহাজন .. তা বাদে কাঁচকলে তালা ঝুইল্ ল ..
বুকের ভিথরকে আমার বড় দুখায় বাবু.. তাগদ নাই..
ডাকতর বইললেক্ –- রেস লাও—ফল দুধ মাছ—ই সকল খাও---
তাতেই আমার নুনানুনিক কাজ কইরতে হইছেক্ বাবু
ইট কুন সখের খেল্ লয়.. ভুখাপেটের ডরে আইজ্ঞা ...
ইবার শিশুশ্রমিক বন্ধ কইরবার আগে
বন্ধ কলকারখানাগুলার তালা খুলেন কেনে..
তা বাদে উসকল মিটিং কইরবেন..
সি দিনট কবে আইসবেক্ আইজ্ঞা
কিতাব কাগজে লিখাপড়ি করা নুনানুনি আমার
কবিয়াল ঠাকুরবাবার গান কইরবেক্... পইদ্য বইলবেক্...
রোজ দুপহরে শান্ কি ভরা ভাত লিয়ে
ঘরের মানুষ দাঁড়াই থাইক্ বেক খেতের আল ধারকে
কবে আসসবেক্ বাবু সে দিনটি কবে ...

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিপন্নতা নিয়ে ঘর কোরি
কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়
ট্রিনিটি ট্রাস্ট, আসানসোল, থেকে প্রকাশিত, অসীমকৃষ্ণ দত্ত ও আবদুস সামাদ সম্পাদিত,
“আসানসোল শিল্পভূমি : কবি ও কবিতা” (২০০৫) থেকে নেওয়া |


বিপন্নতা নিয়ে আমার বসবাস . . .
দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি . . . বোললেও
.                আমি যেতে পারি না
আমার সব কিছু গচ্ছিত রেখেছে বাড়িওয়ালা
লিঙ্গ হৃদয় কিডনি . . . সব কিছু . . .
.                মায় অনুভূতির তন্তুও . . .
তাই প্রস্তুত গাড়িও ফিরে যায় . . .
বেলা কিন্তু থেমে থাকে না
ছুটন্ত ট্রেনে চেপে সে
.                দূর থেকে দূরে ক্রমাগত . . .
আমি বাড়িওয়ালাকে ডাকি . . .
আমার গচ্ছিত ধন কিছু ফিরিয়ে দাও . . .
.                বিপন্নতার ধুলো উড়িয়ে
সে ফেরারিই থেকে যায় . . .
বিপন্নতা নিয়ে আমি ঘর কোরি . . .

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পনেরোই আগস্টের গল্প
কবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়
অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত "বাংলা কবিতা সমুচ্চয় ১৯৪১-১৯৮৫ দ্বিতীয় খণ্ড"
থেকে নেওয়া।


হঁ আইজ্ঞা আমাকে চিনতে লাইরছেন?
গাঁয়ের ভুজুংমাঝি বটি বাবু---
শুনেন নাই সেই---
.        টাঁড়ে টাঁড়ে লাল পাগড়ী
.        গাঁ ঘিরে লিল
.        ঘর লুইট্ ল জান লুইট্ ল
.        বিটির ধম্ম লুইটে লিল
.        পৌষের পঞ্চ দিনে---
ইটো রাবণ মাহাতোর গান বটে বাবু . . .
ত আমরা বুইঝলেন আইজ্ঞা শেষতক্ক ছাড়ি নাই
শন্ নাই কাঁড় চইলল লাঠি আর টাঙ্গি
উয়াদের বন্দুক আর বারুদ--- সি সকল ছিরছাতুর বিত্তান্ত
কিতাবে কাগজে লিখাপড়ি কইরছেন ত বাবুরা . . .
আমার নামটো লিখেন নাই আইজ্ঞা
ভুজুংমাঝির কাড়ার পারা তাগদ গুলিতে এখন ফুটা
ভুজুংমাঝি ইঠিনে ঠিকাদারের বেগার কুলি খাইটছে
সিপিশাল টিরেনে ঝকঝকাঁই পৌঁছাই দেন কেনে
দিল্লী সহরটোতে! সোনার মিডেল তামার পাত্ লিতেলয়
একটি কথা বইলতে--- আমি তো লড়াই কইরেছি
লালমুহাদের সঙে শেষ তক্ক পারি নাই . . .
ই-টো মাইনবোন ত না কি?
তামার পাত মিডেল আপনারাই লোন বাবু
বড় খাতাটোয় নাম লিখান আপনারাই
আমার নামটো থাক কেনে বেগার কুলির পাতেই . . .
লিয্যাস কথাটো বইলতে দিবেন বাবু
পাপ লিবেন নাই মনে---

.        আমার ঘর আমার খামার
.        আমার টিচকে জমিন
.        সোনার বন্ন ধান
.        ফিরাঁই দেন কেনে বাবু . . .
.        হ’ আইজ্ঞা শুনছেন
.        আমার সোনার বন্ন ধান . . .
.        শুনছেন আইজ্ঞা
.                সোনার বন্ন ধান . . .

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পিরীতের ঝাঁপি রাখ
কবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়
উত্তম দাশমৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত “আধুনিক প্রজন্মের কবিতা” (১৯৯১) থেকে নেওয়া।

বুড়ি বাঁধ কে যাস নে মেঝেন
সাঁঝ বিহানের কালে
বাঁধের কালো গহীন জলে
কালো সর্প খেলে।

কদম্বেরি নিচে সর্প
বাঁশির বোলে দোলে
মেঝেন তুমার দেহের বন্ন
বিসাইবে ছোবলে।

পিরীতের ঝাঁপির ভিতর
কালো সর্প রাখ
ঝাঁপিতে বাঁধিয়া মেঝেন
সর্পের মুখ দ্যাখ।

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রতিবিম্ব দেখে
কবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়
উত্তম দাশমৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত “আধুনিক প্রজন্মের কবিতা” (১৯৯১) থেকে নেওয়া।

নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে খুব ভয় করে।

নির্জন অন্ধকার ঠিক আয়নার মত
তার কাছে গেলেই ভেতরে প্রবেশ অনিবার্য
এবং তখনি মুখোমুখি নিজের
মধ্যিখানের কাটা ছেঁড়া হতকুচ্ছিত চেহারাটা
বেরিয়ে এসে ঝুলে থাকে অন্ধকার দেয়ালে।

আলোয় আলোয় প্রসাধন সেরে যাই।

এই পুরনো বাড়িটায় যদি অন্ধকার নামে
নির্জনতা চারপাশ গিলে খেয়ে দর্পণ হয়ে যায়
নিজেই তখন নিজের প্রতিবিম্ব দেখে কেঁপে উঠি।

.              ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর