কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
ভারত উত্সবের গল্প
কবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়
উত্তম দাশমৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত “আধুনিক প্রজন্মের কবিতা” (১৯৯১) থেকে নেওয়া।


বহুত দণ্ডবৎ আইজ্ঞা . . .
বোকাসোকা গাঁয়ের ঘরের লোকবটি
তাখেই আমার ঝুপড়ির দিয়ালে চিপা
ছবিটি দেখাঁই বইললম . . .ই ছবিটি কার বটে
কোন বাবু বটেন ইনি ত সরাগবাবুর ছেইলাট বইলেক . . .
ই আচ্ছা ভূষা বটিস রে . . .চিনিস নাই
ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী বটেন ইনি . . . ইনার মা-য়ের মৃত্যুর বাদে . . .
হঁ সে খবরট জাইনেছিলম সিংবাবুর দুকানট জ্বইলল যে দিনকে . . .
আইজ্ঞা আপনার মা-য়ের মৃত্যুর বাদে
উনার সোনার কুরশীট মিলল আপনার . . . ঠিকেই
আমার মা-য়ের মৃত্যুর বাদে . . .উয়ার ফুটা সানকীট
মিলল আমার . . .ই সকল কপালের লিখা নাকি আইজ্ঞা . . .

আইজ্ঞা ই দেশের নামট কি . . . ভারতবর্ষ . . .ত
ভারতবর্ষ আমারও দেশ বটেত . . .না কি . . .
আমার গাঁ-ট ভারতবর্ষের ভিতরকেই ত . . . নাকি . . .
চারিধারের বাঁধ জোড়ের জল আর সকল আমার . . .না কি
সরাগবাবু বইললেন ভারত মেলা বইসছে বড় জোড়
সাহেবদের দেশকে . . . শুইনলম উঠিনে
পুরা ভারতবর্ষকে উঠাঁই লিছে . . .ত
উখানে রাইখবেন নাই আইজ্ঞা জামতাড়া মেলার পারা
গুড় সেউ লালচুড়ি ফিতা . . . আমার পুড়ো বুকের সাঁঝ বিহান
আমার ই গাঁ টকে . . .রুখাশুখা খরায় জ্বলা আমার মা টকে . . .
ঝড়ে জলে রোদে পুড়া আমার ই শরীরট
মাচা বাঁইধে রাখেন কেনে উ মেলাতে . . .
লালমুহাদের ভীড়  জইমথ দমে . . . মেলায় হাঁইকতেন
দেখো দেখো ভারতমেলা . . . আট আনা . . .
টিকিস বিকায় আট আনা . . .দুখেপুড়া
মানুষ দেখো . . . আট আনা . . . মেলা দেখো আট আনা . . .

.     
               ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভারতবর্ষের মা
কবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়
শ্যামলকান্তি দাশ ও বিমল গুহ সম্পাদিত “হাজার কবির হাজার কবিতা” (২০০৪) থেকে
নেওয়া।


বিদেশী ডলার পাউণ্ডের ঢল নামছে
তবু ছেলেটার মুখে হাসি নেই . . .।
ও দেখেছে অনেক রাতে দরজা খুলে ওর মা
কোথায় যেন যায় . . . ও দেখেছে
মেলট্রেন-ঝাঁকানো শেষরাতে ফিরে আসে ওর মা।

.                        অদূরেই মৃত কাচকলের চিমনি।
.                        ওর বাবা বন্ধ গেটের কপাটে মাথা খোঁড়ে
.                        এদোর ওদোর ঘুরে ফিরে আসে . . . তারপর
.                        শুকনো খড়ের মত পড়ে থাকে দাবার কোণে।
.                        বিদেশভ্রমণের সুখস্মৃতি বিস্তার করেন নেতা
.                        কনফারেন্সের টেবিলে। অঢেল বাণিজ্যের
.                        জাহাজ ভাসবে সমুদ্র থেকে সমুদ্রে . . . সীমান্ত
.                        পেরিয়ে আসবে ফুলেল খুশবুর পসরা . . .।

কে যেন ভারতরত্ন . . . কে যে অস্কার বিজয়ী . . .
কে যেন জ্ঞানপীঠ . . . এতকাণ্ডেও ছেলেটার হাসি নেই।
কালো কালো বিষণ্ণ বাঁয়াতবলার মত
উবু হয়ে বসে থাকে . . . আর দেখে
.                        ভোররাতে কোঁচড়ভরা চাল এনেছে ওর মা
.                        চ্যালাকাঠের আঙরায় হাঁড়ি উপছে ফেন গড়াচ্ছে . . .

সমস্ত ভারতবর্ষের মা শেষ রাতে ফিরছে চারটি চাল নিয়ে
সমস্ত ভারতবর্ষের ছেলেদের মুখে তবু হাসি নেই . . . ।

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর