কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায় - বাংলার মানভুম-সাঁওতাল পরগনার, বিশিষ্ট কবি। তাঁর নাম অনেক
জায়গায় অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় পেয়েছি। তিনি জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার খিদিরপুরে। পিতা পশুপতি
চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ব্রিটিশ আমলের নামকরা সরকারী চিকিৎসক।
মাতা সুধারাণী দেবী। শৈশবে পিতার
কর্মসূত্রে মানভুম জেলায় ছিলেন অনেকদিন।

কলকাতার আশুতোষ কলেজে থেকে পাশ করে, কর্মজীবন শুরু করেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দপ্তর গার্ডেন
রিচে এবং পরে চিত্তরঞ্জন এ। কলকাতার চাকরী জীবনে, ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির রেললর্মী-আন্দোলনে
অংশ নিয়ে জেলবন্দিও হয়েছিলেন ১৯৪৯ সালে।

কর্মসূত্রে মানভুম অঞ্চলে থাকার থাকার সুবাদে কবি লোকজীবন দেখেছেন ঘণিষ্ঠ সান্নিধ্যে। তাদের ভাষা,
লোকাচার ও জীবন যাত্রার একজন শরিক হতে পেরেছিলেন তিনি। কবিতায় ও গানে সেই অঞ্চলের প্রকৃতি
ও মানুষজনের কথা বলেছেন তাদেরই ভাষায়, তাঁর নানা রচনার নানান চরিত্রের মুখ দিয়ে।

তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “সোনালি ডানার চিল” (১৯৬২), “সমুদ্রের দিকে” (১৯৬৫), “আমি একা
এবং সে” (১৯৬৭), “এইসব হার্দ্য প্রেম রক্ত ধূলিকণা” (১৯৭১), “মাঠপাথারের গান” (১৯৭০), “সুখ দুঃখের
কবিতা” (১৯৮৪), “আদিম কিংশুক” (১৯৮৮), “কারাবাসে মগজ বিষয়ক” (১৯৯০), “নাকছাবি” (১৯৯০), “ঝিঙা
ফুলের রঙ” (১৯৯০), “সাঁঝবিহান ৩য় সং” (২০০৩),
“The poster and other poems” (১৯৯১), “কিঞ্চিৎ বিনয়
এবং অপরাপর কবিতা” (২০০১), “পাখিরা ফেরে না”, “অপরাহ্নের কাক” (২০০২), “শ্বাস প্রশ্বাস” (২০০৪),
“আলোকিত ইচ্ছার তরীগুলি” এবং “অলিন্দে সূর্যের হাওয়া” ( যৌথভাবে ),
“The afternoon crow” প্রভৃতি।  

তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে “ইছরী গোয়াই” (১৯৯৯), “ছিন্ন বিচ্ছিন্ন” (২০০১) প্রভৃতি। ছোটগল্পের
মধ্যে রয়েছে “অগস্ত্যের নাভি” (১৯৯৫), “ছেঁড়া সিনারিও” (২০০২) প্রভৃতি।

তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে “সোমপ্রকাশ”, “বাইরে দূরে”, “পরবাস”, “বোধ” প্রভৃতি। তাঁর সম্পাদিত
কাব্যগ্রন্থ “সুদূরের টেলিফোন”।

তাঁর প্রাপ্ত সম্মাননার মধ্যে রয়েছে “তারক সেন স্মৃতি পুরস্কার”, “অল উড়িষ্যা রাইটার্স কনফারেন্স সম্মাননা”,
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত “শ্রেষ্ঠ লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনার পুরস্কার”। কবি সম্বর্ধিত হয়েছেন
“আসানসোল সাহিত্য উত্সব সমিতি”, “নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্যের রানিগঞ্জ শাখা”, “দৈনিকলিপি
আসানসোল”, “চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস”, “হিন্দুস্তান কেবলস্”  এবং
“P.E.N.” (P - Poet, Playwrite, E -
Editor, Essayist, N - Novelist )
কলকাতা সহ বহু সংগঠনের পুরস্কার ও সম্মাননা।

কবি খুব ভালো ছবি আঁকতেন। তাঁর সম্পাদিত “বোধ” পত্রিকা এবং নিজের কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ
তাঁর নিজেরই আঁকা। চিত্তরঞ্জন-আসানসোল-বর্ধমানের অনেক ছোট পত্রিকায় তাঁর অনেক কবিতা ছড়িয়ে
ছিটিয়ে প্রকাশিত হয়। তাঁর স্মৃতি চিহ্নিত উপন্যাস “দীর্ঘপথে অশ্বারোহী একা” আসানসোল থেকে প্রকাশিত
“আজকের যোধন” পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল।

তাঁর গানে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রখ্যাত
গণসঙ্গীতকার শুভেন্দু মাইতির মত শিল্পীরা। আমরা শুভেন্দু মাইতির
“মঈনুদ্দীন কেমন আছ” সিডি থেকে কবির লেখা একটি গান, শুনে শুনে লিখে, এখানে তুলে দিয়েছি।

কয়লাখনি, শাল-মহুয়াময়া অন্ত্যজ জনমানুষের লড়াই সংগ্রাম ও যাপন কে কবিতা ও গানে গানে তিনি
ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ( সুবীর সরকার,  কবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় - আবহমানের এক কবি,  অন্যনিষাদ
ব্লগ )।

আমরা
মিলনসাগরে  কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে
এই প্রচেষ্টার সার্থকতা।




উত্স - ট্রিনিটি ট্রাস্ট, আসানসোল, থেকে প্রকাশিত, অসীমকৃষ্ণ দত্ত ও আবদুস সামাদ সম্পাদিত,
.           “আসানসোল শিল্পভূমি : কবি ও কবিতা” (২০০৫) থেকে নেওয়া।
.           সুবীর সরকার, কবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় - আবহমানের এক কবি,
অন্যনিষাদ ব্লগ
.           
অন্যনিষাদ ব্লগ, প্রয়াত কবি অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি 'অন্যনিষাদে'র শ্রদ্ধার্ঘ্য।
   



কবি অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন



আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতা প্রথম প্রকাশ - ১৩.২.২০১৬

...