কবিআশিস সান্যাল-এর কবিতা
*
দেখিনি তো
কবি আশিস সান্যাল

দুপুর গড়িয়ে শেষে
বিকেলের আলো,
বাঁশবনে নিরিবিলি
ক্রমশ ছড়ালো |

উড়ে যায় সাদা বক
পার হয়ে ঝিল,
আকাশ ক্রমশ গাঢ়
হতে থাকে নীল |

দূরের আকাশে ক্রমে
মিট্ মিট্ তারা
পাখিদের গাম থামে
রোদ পথহারা |

আমবন, জামবন
তালবনে হায়,
ক্রমশ শিশির ভেজা
কুয়াশা ছড়ায় |

বাংলার পথে-ঘাটে
নিরালা রঙিন,
দেখিনি তো এই রূপ
আগে কোনদিন |

.  *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
এখন
কবি আশিস সান্যাল

এখন দিনান্তে মেঘ
চারদিকে ক্ষীয়মাণ প্রাত্যহিক আলো,
যেন ফের অসহায়
চৈত্রের মেঘের মতো নীরবে ছড়ালো |
তাহলে কি বৃষ্টি হবে ?
উড়াল মেঘের থেকে বৃষ্টি হবে ফের ?
ছড়াবে দূরন্ত হাওয়া
সমস্ত প্রান্তরে আজ নীল আকাশের ?

অথচ এখন নেই
তোমার মতন কোনও মায়াবতী নারী,
নেই কোনও আলোকিত
হরিদ্রা বনের পাশে স্বপ্নময় বাড়ি |
ডাকে না রঙিন পাখি
নদীতীরে নেই কোনও বাউলের গান----
কেবল রয়েছি আমি প্রবল সাম্পান |

নেই নেই শূন্যতায়----
শুনি যেন দূরবর্তী শ্রদ্ধেয় কূজন---
একা বসে হরিয়াল
ভাবে তার সহচরী কোন বনে রয়েছে এখন ?
কোথায় অমরাবতী ?
কোনখানে সারাক্ষণ শুধু সূর্যোদয় ?
এখানে মলিন সব-----
চারদিকে আলোড়িত হারাবার ভয় |

.       *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
ভুলে যাব
কবি আশিস সান্যাল

পাতার ধূসর শব্দ
সারাক্ষণ ধ্বনিরত শফেদার বনে,
এবার হারিয়ে যাব
ঘরানার কোনও স্মৃতি রাখব না মনে |
ভুলে যাব হে আকাশ
তোমাদের ভুলে যাব নক্ষত্র-নীলিমা,
যা কিছু বিগত হায়
আর আমি কিছু তার মনেও রাখব না !

সব কিছু আবর্তিত,
পৃথিবীর সব কিছু জানি গতিময় |
আজ হবে গতকাল
আহ্নিকের পরিণামে আগত সময়
দেবে জানি অন্য এক
সুদূর দিনান্ত ছুঁয়ে ঝড়ের আভাস,
নির্ভয়ে জাগবে জানি
অন্য এক দিগন্তের দীর্ঘ প্রতিভাস |

জীবন সীমিত জানি
প্রত্যাশারা জানি দীপ্ত অনন্ত অসীম,
পৃথিবীর সবখানে
স্মৃতিময় উদ্ভাসিত আনন্দপ্রতিম
সুখ-দুঃখ ভালোবাসা
দেখায় অন্যত্র গ্রহে আরেক প্রতিমা---
ভুলে যাব সব কিছু
ভুলে যেতে হয় জানি বিগত মহিমা |

.       *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
নদীর শেষে
কবি আশিস সান্যাল

সবুজ বনের কিনার ঘেঁষে
চলছে ছুটে নদী,
ডাকলে পরে ব্যাকুল হয়ে
আসতো কাছে যদি

আমি হতাম ময়ূরপঙ্খী ---
স্রোতের জলে ভেসে
যেতাম মাগো সাত সমুদ্দুর
কিংবা নতুন দেশে |

হয়তো পথে চুপটি করে
দেখতো দূরের বন,
হাজার রঙের পাখিরা সব
উড়তো সারাক্ষণ |

পাহার কিংবা বনের শেষে
হয়তো আছে কেউ,
নদীর শেষে আছে জানি
নীল সাগরের ঢেউ |

.   ***********************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
শঙ্কা
কবি আশিস সান্যাল

তেলের বেড়েছে দাম
খাও কচুপোড়া
জলেতে ভিজিয়ে খাও
লাউ তিন জোড়া |

চালের বেড়েছে দাম
ভয় কেন বত্স ?
শত টাকা কেজি দরে
খাও কিলো মত্স্য |

আলুর বেড়েছে দাম
খাও রুটি-দই,
ভাতের বদলে খাও
মুড়ি আর খই |

তাও যদি নাই মেলে
খাও ভেজে লঙ্কা |
রেখো না মনেতে আর
অকারণ শঙ্কা |

.   ***********************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
কে যে কার ?
কবি আশিস সান্যাল

প্রতিটি সন্ধ্যায় এসে
বাতাস শুধায় যেন : বলো, তুমি কার ?
কী তার উত্তর দেব ?
কে হায় জেনেছে বিশ্বে কতখানি তার ?
কে জানে মৃত্যুর আগে
জীবনের অনুভূত প্রত্যাশার মানে ?
একপাশে দুঃখ তার
অন্য পাশে স্মৃতি----
জীবন কেবল তার পরিণিতি জানে |

প্রত্যহ নির্জনে বসে
ভাবি আমি : এরপর যাব কোনদিকে ?
বাতাস ছড়ায় ভীতি
নক্ষত্রও ক্রমাগত হতে থাকে ফিকে |
জেনেছি পৃথিবী এক
আবর্তিত বিন্দু
একটি আঁধার থেকে
আরেক আঁধারে
প্রসারিত যেন এক জ্যোতির্ময় সিন্ধু |

দূরের আকাশ থেকে
প্রতিটি সন্ধ্যায় যেন
চুপি চুপি কাছে এসে কথা কয় আলো,
মনে পড়ে একদিন
সে এক কিশোরী মেঘ
প্রবল বৃষ্টির মতো বেসেছিল ভালো |
তারপরে কত দিন
কত মাস কেটে গেছে অযুত বছর |
হারায়েছে মেঘ-মেয়ে----
কেউ কি জেনেছে তার
জীবনের কোনখানে কে যে কার কতটা নির্ভর !

.   ***********************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
জানি তাকে
কবি আশিস সান্যাল

নির্জন নিরালা মেঘ যেন তার চোখের কাজল,
দিঘির মতন স্নিগ্ধ চোখের ভঙ্গিমা ;
যখন-ই দেখেছি তাকে মৃদু হেসে বলেছে কেবল ;
“কেমন প্রেমিক তুমি ?”  ভোরের মহিমা

যেন আর অন্তর্গত বেদনার আশ্চর্য রক্তিম |
দেখি চেয়ে সব কিছু বড় স্মৃতিময়----
বুকের তরল দীপ্তি মনে হয় স্তব্ধ মেহগনি,
জানি তাকে অন্ধকারে স্পষ্ট বরাভয় |

.         ***********************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
নাকি
কবি আশিস সান্যাল

কার নাকি মাথা থেকে
বেরিয়েছে অঙ্কুর,
তাই ভেবে সারা রাত
ঘুম নেই শঙ্কুর

দিনেতেও হাঁড়িমুখ
চোখভরা জল,
হাঁটু কার গেছে ভেঙে
লেগে ফুটবল |

চুপচাপ বসে থাকে
মনে খুব শঙ্কা,
মিনিদের বাড়ি জুড়ে
বাজে নাকি ডঙ্কা  |

বাস চাপা পড়ে নাকি
মারা যাবে অদ্য,
বার্লিন থেকে আনা
পুষি এক সদ্য |

পুকুরেতে যদি লাগে
ভয়ানক অগ্নি,
মাছ নাকি উড়ে যাবে-----
বলে গেছে ভগ্নী |

এ পৃথিবী একদিন
হবে নাকি ক্ষয়,
দিন-রাত ভেবে ভেবে
শঙ্কুর ভয় |

.   ***********************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
যখন আমরা
কবি আশিস সান্যাল

যখন আমরা ছোট ছিলাম
বলছি তোরে বত্স,
হাট-বাজারে কেনার জন্য
মিলত অনেক মত্স্য |

ছিল না তেলে ভেজাল
পেতাম ঘৃত খাঁটি,
জল-খাবারের সঙ্গে মিলত
ভর্তি দুধের বাটি |

দশ বছরের ছেলের জন্য
বই ছিল মোট সাত,
পড়ার সময় পড়ত সবাই-----
জাগত না কেউ রাত |

ক্লাসের ঘরে গুরুমশাই
যা পড়াতেন, তাই
মনে রেখেই পাশ করতাম
সব শ্রেণীতে ভাই |

স্বপ্ন দেখার জন্যে ছিল
একটু অবকাশ,
দু’চোখ মেলে দেখতে পেতাম
সুদূর নীলাকাশ |

.   ***********************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
প্রতিটি সূর্যাস্তে এসে
কবি আশিস সান্যাল

প্রতিটি সূর্যাস্তে এসে
দেখি দূরে
রয়েছে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ ভোরের নীলিমা,
তোমার মুখের থেকে
উত্সারিত
যে-রকম প্রত্যাশার দুর্লভ সুষমা |

জেনেছি জীবন আছে
প্রত্যহের আলো আর নীল অন্ধকারে,
প্রেম আছে অভিনব
পৃথিবীর সবখানে নির্মল বিহারে |
তুমি আছো অনুভূতি----
চারদিকে আবর্তিত জেনেছি জীবন,
সর্বত্র তোমার মতো
অপরূপ উল্লসিত দেবদারু বন |

দিন যায় দিন আসে
অবারিত চারিদিকে প্রসন্ন রঙিন,
আহ্নিকের পরিণামে
নিজস্ব খেলায়
প্রত্যেক রাতের শেষে আবির্ভূত দিন |
প্রতিটি সূর্যাস্তে এসে
তাই স্নিগ্ধ কাছে ডেকে বলি সে নারীকে :
প্রেম দাও পরিশুদ্ধ
প্রত্যাশার অতিরিক্ত যদি কিছু থাকে |

.             ***********************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর