কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা |
আগমনী কবি অতীন্দ্র লাল দাশ রচনা --১৪ / ৭ / ১৯৫৭ শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া আকাশে বাতাসে সোহাগ ছড়ায়ে হাসিছে সোনার বরণী শেফালী বিছান গ্রাম পথে পথে শিশিরে ফুটেছে লাবণী | কোমরপুরেতে নব দুর্গার আবাহন আয়োজন শম্ভু আরাধন সাধনায় রত করি আত্মনিবেদন || শঙ্করী-হারা শঙ্কর বুঝি রুদ্র ভয়ঙ্কর ক্ষ্যাপা ধূর্জটী মেঘ জটাজালে ঘিরিয়াছে অম্বর | হিম গিরিরাজ বিগলিত আজ পদ্মা প্রবল মত্তা কীর্তি নাশিনী কাহারে গ্রাসিবে চঞ্চল উন্মত্তা || দুকূল প্লাবিয়া ছুটে অবিরল পদ্মা সর্বনাশী | কোমরপূরেরে ভাসাইয়া চলে নিঠুর অট্ট হাঁসি | চক্রবর্তী চক্রে পরিয়া হইয়াছে দিশাহারা মায়ের তরণী ভাসাইলে জলে ছুটে চলে পথহারা || প্রাণ গোবিন্দে ধরিয়া বক্ষে আকুলিত অভাজন জননীর পূজা কোথায় সাধিবে চিন্তিত আরাধন | দুর্গতি হরা দুর্গা ভবানী দুর্গম পারাবারে হৃদি গোবিন্দ পদার বিন্দ শোভে গোবিন্দপুরে || দিশেহারা তরী লাগিয়াছে ঘাটে উঠে আনন্দ রোল মুক্তারামের মুক্তিতীর্থে জাগে প্রাণে হিন্দোল || সিদ্ধির পথে সাধনা চলেছে নিতি নিতি এই ভবে নব নব রূপে সম্ভব করি দিব্য আবির্ভাবে || . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
শিশু সুন্দর কবি অতীন্দ্র লাল দাশ রচনা --০৪ / ১১ / ১৯৫৭ শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া পুণ্যশীলা ধর্মময়ী মহারাণী স্বর্ণময়ী সদা সাধু সমাবেশ আলয়ে তাঁহার | নিত্য সেবা পূজা চলে নিষ্ঠাভরে কুতূহলে দীন অভাজন তরে সদা মুক্ত দ্বার || একদা নেপালবাসী আসে এক সন্ন্যাসী পরম দৈবজ্ঞ বলি রটি গেল নাম | বিজ্ঞজন দীননাথ পেয়ে গেল এ সংবাদ বন্ধুবর কবিরাজ গঙ্গাধর ধাম || দীননাথ সুপণ্ডিত তাতে বহু শাস্ত্রবিৎ জন্ম-পত্র রচনায় আছে অধিকার | পুঁথি পড়ি রাশি রাশি রেখা টানি অঙ্ক কষি করেছে ঠিকুজিখানি অতি চমত্কার || জন্ম লগ্ম রাশিচক্র কত রেখা অষ্ট বক্র কেমনে বাঁধিবে সেই ত্রিভঙ্গ বাঁকায় | স্নেহে অন্ধ বৃদ্ধ পিতা নাহি ভাবে সেই কথা নিয়তির নিয়ন্তারে নিয়ন্ত্রিতে চায় || দীননাথ ন্যায়রত্ন করিয়া পরম যত্ন পুত্রের ঠিকুজিখানি করেছে নির্ভুল | একমাত্র পুত্র তায় বাঁচে কি না বাঁচে হায় বুক করে দুরু দুরু সংশয় আকুল || জন্মপত্র লয়ে সাথে দীননাথ ত্রস্ত পদে গেল যথা আছে সাধু বসি যোগাসনে | ঠিকুজি করিয়া পাঠ সাধু হয় হতবাক বিস্ময় পুলক চিত্তে ভাবে মনে মনে || পরদিন বিপ্রপুছে জাতক কি বেঁচে আছে ? ঠিকুজি বিচার করে দোখিতে হইবে | বিদ্যাস্থান বন্ধুস্থান কোন গ্রহ অবস্থান ইষ্ট রিষ্ট বিচারিব সর্ব শুভাশুভে || দীননাথ মনে মনে অশুভ প্রমাদ গণে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসিল কাতরে সম্ভাষি | “পুত্র শোকাতুর বুকে দিলা বিধি এ জাতকে হারা নিধি হয়ে নিবে মোরে সর্বনাশি ?” সন্ন্যাসী কৌতুকে হাসে কহেন মধুর ভাষে ‘জানিতে চাহিনু শুধু খোকা কিবা করে ?” বিপ্র কহে “খেলা করে” সাধুজী বলিল তারে “বারেক দেখিতে চাহি আনিও কুমারে ||” দ্বিতীয় দিবস গতে তৃতীয় দিবস প্রাতে ন্যায়রত্ন গেলা তব সন্ন্যাসী সদন | দুই স্নেহ বাহু ডোরে পরম যতন করে বুকে ধরি হারা নিধি পরম রতন || নিমেষে দর্শনমাত্র পুলকে শিহরে গাত্র সন্ন্যাসী কুমারে নিল নিজ অঙ্ক পরে | শ্রীপদ ধরিয়া বক্ষে অশ্রু বিগলিত চক্ষে অপলক রহে চাহি সে চির সুন্দরে || ছোট ছোট পা দুখানি নিজ শিরোপরে আনি আনন্দ সাগরে ডুবে সন্ন্যাসী ঠাকুর | ন্যায় রত্ন কহে তার একি দেখি হায়, হায়, দাও পুত্রে পদধূলি বিঘ্ন কর দূর || সন্ন্যাসী রহিল চাহি নয়নে নিমেষ নাহি বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত তার কথা নাহি সরে | তবে কিছুক্ষণ পরে সাধু কহে ধীরে ধীরে ‘এ শিশু সামান্য নহে কভু চরাচরে || জনম মাহেন্দ্রক্ষণ পঞ্চতত্ত্ব গ্রহগণ সমাবেশ একসাথে অবতার যোগ সরল শিশুর বেশে মহাউদ্ধারণ হাঁসে আনন্দ মূরতিখানি হরি তাপ শোক || যুগে যুগে আসে সে যে ভূ-ভার হরণ কাজে গণনায় গর্গ করে আপস নির্ণয় জন্ম সার্থক মানি ভগবানে গনি আমি সর্ব্বেন্দ্রিয় গুণাভাসে বর্ব পরিচয় || দীননাথ মনে মনে অবাক বিস্ময় মানে পিতৃ-স্নেহে অপত্যেরে নিল বক্ষে তুলি | মঙ্গল কামনা করে চুম্বিল অধর পরে ইষ্ট নাম স্মরি যায় গৃহে চলি || . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
জগৎ-বন্ধু কবি অতীন্দ্র লাল দাশ রচনা --২১ / ১১ / ১৯৫৭ শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া দুর্বাঘাসে লতায়-পাতায় হাসে শরৎ রাণী, দোয়েল শ্যামা গাইছে ডালে বইছে মধুর বাণী | লতায়-পাতায় ফুলের শোভা সবুজ বনানী , বিশ্বমাতা পেতেছে তাঁর সোনার আঁচল খানি | সকাল হতে চল্ ছে বড় --- আয়োজনের ঘটা, নেমতন্ন নামকরণ অনেক কেনা-কাটা | ইষ্ট পূজি যথা সাধ্য কার্য করি শেষ, দীন সুতের নাম-করণ হ’ল অবশেষ | ধন-রত্ন ফেলি দিয়া শিশু চিন্তামণি দুই হাতে চেপে ধরে ভাগবতখানি | ভাগবত প্রেমের খনি প্রেম-ভক্তি-সিন্ধু, নামটি হয় বামা-সুতের শ্রীজগৎ-বন্ধু | . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |