কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা
*
সোনার স্বপন  
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৮৭, “চির সন্ন্যাসী তুই”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৩/ ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বিদ্যালয় হতে ফিরে দেখিল অতুল
প্রাণ বন্ধু কোথা গেল, কিবা হল ভুল !
জ্বলিতে লাগিল প্রাণ বিরহ জ্বালায় |
দেখা দিয়ে প্রাণ পাখী পালাল কোথায় !
বিরল যাতনা আর সহিতে নারিল,
শ্রান্ত ক্লান্ত দুনয়ন মুদিয়া আসিল |
নহে নিদ্রা জাগরণ কি য়েন দেখিছে ,
জ্যোতির্ময় বন্ধু যেন দাঁড়াইয়া আছে |
পান করি সেই রূপ দিব্য সুধাময়
তৃপ্ত হল অতুলের তৃষিত হৃদয় |
পদ্ম হস্তে দিয়ে গেল কি যেন মোড়ক
বিহ্বল অতুল তাহা দেখে অপলক |
“আয়, আয় বলে ডাকে আয় প্রিয় ধন”
সহসা টুটিয়া যায় তো সোনার স্বপন |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিরহ বেদনা
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৮৭, “চির সন্ন্যাসী তুই”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৩ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

কি যেন হইয়া গেছে চম্পটি ঠাকুর,
কাছে যেন প্রিয়তম তবু বহু দূর
হৃদয় তন্ত্রীর তার ধ্বনিছে বেসুরা,
সব আছে তার তবু যেন সর্ব হারা.
চির জীবনের ধন বাঞ্ছিত রতন,
নিমেষর দেখা দিয়ে লুকাল কখন |
অতি আপনার ধন রয়েছে কোথায়
অতীব নিকটে তবু খুজিয়া না পায় |
মাতৃডাক শুনিয়াছে যেন  মাতৃ  হারা,
জননীরে নাহি পায় কেঁদে হয় সারা
প্রোষিত ভর্তৃকা যেন লভিয়াছে স্বামী |
মিলন বিহনে যে কাটে দিবাযামী |
হৃদয় ভাঙ্গিয়া পড়ে কত সহে আর,
যুগল নয়নে তাই নামে ধারা সার |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পত্র প্রসাদ
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯০, কিঞ্চিৎ পত্র প্রসাদ আছে
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৪ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বন্ধুর বিরহ জ্বালা সহিতে না পারে
অতুলের বক্ষভাসে রুদ্ধদ্বার ঘরে !
হেন কালে কপাটেতে করাঘাত শুনি,
হন্ত দন্ত হয়ে দ্বার খুলিল তখনি |
সম্মুখেতে সমুর্দিত বন্ধু সুধা কর,
শ্রীকরে প্রসাদ শুভ ধরিয়া শ্রীধর |
নিমেষেতে ষাষ্টাঙ্গেতে লুটাল অতুল,
বক্ষেতে ধরিতে চায় চরণ রাতুল |
বন্ধু সুধাইল তায় চঞ্চল না হবে
পুনরায় দরশন কলিকাতা পাবে |
বলিতে বলিতে বন্ধু হ’ল অন্তর্ধান,
অতুলের বক্ষ যেন হ’ল খান খান |
খুজিয়া খুজিয়া পায় পত্রের মোড়ক,
সুরভিত পুষ্প-কলি প্রসাদ-কোরক |
দুহাতে মস্তকে ধরে পাগলের প্রায়,
পত্র-অন্ন সর্ব-শুন্থি চিবাইয়া খায় |
প্রসাদ ওষধি ক্রিয়া সর্বদেহে খেলে,
ঊর্ধ-বাহু হয়ে নাচে হরি, হরি বলে |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কৃষ্ণ-গতি
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯৩, ‘ধাবমান শ্রীকৃষ্ণ’
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৪ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বন্ধু দরশন লাগি পাগল অতুল,
কেমনে পাইবে তাঁর চরণ রাতুল |
ট্রেনে চলিয়াছে আর ভাবে আনমনে
কৃষ্ণ ধ্যান, কৃষ্ণ জ্ঞান, কৃষ্ণ মনে প্রাণে |
ভাবিতে ভাবিতে তার শিহরিত কায়,
সহসা অরূপে দেখে রূপের মায়ায় |
যথা হেরে কৃষ্ণ স্ফুরে মুক্ত বাতায়নে,
রূপের অঞ্জন তার লেগেছে নয়নে |
বনমালা গলে দোলে শ্যামল কিশোর,
মৃদু মৃদু হাঁসিতেছে গোপী মন চোর |
চরণে নুপূর বাজে শিখি পাখা চূড়ে,
কটীবাস আছে বাঁশী যায় উড়ে উড়ে !
চলন্ত গাড়ীর সনে ধায় পীতাম্বর,
রূপে তার উদ্ভাসিত সুনীল অম্বর |
বিস্মিত অতুল তায় ফিরিল দক্ষিণে,
লোচন ফিরাতে হেরে কমল লোচনে |
অদ্ভুত অপূর্ব দৃশ্য এও কি সম্ভব,
বিদ্যা বুদ্ধি অতুলের মানে পরাভব |
বিস্ময় পুলকে আঁখি ফিরাইল বামে,
সর্বত্র দেখিতে পায় মদনমোহনে |
কৃষ্ণ-প্রেম-রসে সিক্ত অতুলের মতি |
মানস সরসে হেরি নবীন কিশোর,
কৃষ্ণানন্দে মত্ত সে যে হইয়া বিভোর |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হরেকৃষ্ণ এই দিকে
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯৬, "হরে কৃষ্ণ এই দিকে"
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৪ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

কলিকাতা আসিয়াছে চম্পটী ঠাকুর
চিদ্ ঘন চিদানন্দে চিত্ত ভরপুর |
গঙ্গাস্নানে স্নিগ্ধ করি সকল শরীর,
বন্ধু-দরশন তরে অন্তর অধীর |
ভাবাবেশেতে চলে যায় দুই বাহু তুলি
ভক্তি বিগলিত ধারে সিক্ত পথ ধূলি |
হেনকালে মৃদু মন্দ পবন হিল্লোল,
অমৃত লহরী যেন হেলে দুলে চলে |
বীণা বিনিন্দি, কন্ঠ ভেসে এল কানে,
“হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, এদিকে, এখানে |”
বিস্মিত পুলকে হেরে অতুল সুজন,
তার পানে চেয়ে আছে প্রিয় বন্ধু-ধন |
আনন্দেতে অতুলের পুরিল হৃদয়,
বাঞ্ছিত মিলন রসে হইল তন্ময় |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কীর্তনব্রত
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪০১, দীনবেশ ও তপস্যা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৪ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বন্ধু বলে চম্পটীরে শুন মহাশয়,
গৈরিক ধারণ তব উচিৎ না হয় |
ত্যাগ ও বৈরাগ্য মন্ত্রে দীক্ষা আছে যায়,
কলঙ্ক কালিমা লেখা নাহি বাসনার |
হৃদয় গৈরিক রাগে হয়েছে রঞ্জিত,
গেরুয়া সন্ন্যাস ভুষা এ শাস্ত্র বিহিত,
শুভ্র বাসে আবরিয়ায় অমলিন দেহ,
শুভ্র চিন্তা কর আর ভক্তি প্রীতি স্নেহ |
বৈষ্ণবের হরি ভক্তি কৃষ্ণ সেবিবারে
শুভ্র পুষ্পসম হোক হৃদয় তোমার |
গৈরিক ছাড়িয়া তাই শুভ্র বাস পরি,
হরি নাম উদ্ যাপিয়া ব্রত নিষ্ঠা করি |
টহল কীর্তন নিত্য – এই নাও পাঠ
জগন্নাথ ঘাট হতে যাও কালীঘাট |
স্নান সার দুই ঘাটে যাতায়াত আর
ধর করতাল, কর কর্তব্য তোমার |

*    *    *    *    

নব ব্রত অতুলের নব কর্ম ভার,
আনন্দে মাতিল ভক্ত নাম করি সার |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নাম নামী লীলা
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯৯, “নাম নামী ও প্রেম”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৪ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

হরকুমারের বাড়ী শ্রীবন্ধু সুন্দর
আনমনে পায়চারি করে নিরন্তর
হে কালে আসে সেথা শ্যাম মনোহর,
কিশোর বালক এক নধর অধর |
সুরের লহরী তুলি গাহে কৃষ্ণ নাম,
মধু-স্বর মধু-রূপ নয়নাভিরাম |
মন্ত্রমুগ্ধ করে সবে কীর্তনের রসে
চম্পটী ভাবিতে থাকে বিস্ময়ে তরাসে,
“এই ত বালক সেই যারে দেখেছিনু,
ধাবমান গাড়ী হতে ধাবমান কানু,
সেই মুখ সেই চোখ অঙ্গের লাবনী,
দেখে যে মনে হয় চিনি তারে চিনি |
অতুল চিন্তিত মনে ভাবে কুতুহলে,
গাহিতে গাহিতে শিশু কোথা গেল চলে ||

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ছাত্রবন্ধু
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪০০, “নাম নামী ও প্রেম”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২২ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

কলেজে ছুটির পরে বিকাল বেলায়
কতিপয় ছাত্র এল দর্শন আশায়
বন্ধুবরে ছাত্রবন্ধু ভাবি মনে মনে
ভক্তবর হর রায় নিবাস সদনে |
স্নেহেতে আদরে সবে বসায়ে নিকটে
কুশল পুছিল কত বন্ধু অকপটে !
সিক্ত করি করুণায় মঙ্গল আশীষ
মধুমাখা শিষ্ট বাক্যে তুষিল সবারে,
জননীর মত স্নেহ কত না আদরে |
বন্ধু বলে, “করতালি দাও সবে মিলে,
মধুর কীর্তন কর হরি হরি ব’লে |”
মিষ্টান্ন প্রসাদ দিল বালকবৃন্দেরে,
সকলে প্রণাম করে ছাত্রবন্ধুবরে |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিল্বমঙ্গল
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৩, দীনবেশে তপস্যা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২২ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বীডন স্ট্রীট ঘুরি শ্রীবন্ধু সুন্দর
থামিলেন যথা আছে রঙ্গমঞ্চ ঘর |
অতুলেরে সাথে নিয়ে বন্ধু রঙ্গলাল,
রঙ্গালয়ে প্রবেশিলা দীনের দুলাল |
সম্মুখ সারিতে দোঁহে সুখেতে বসিল,
রঙ্গমঞ্চে রঙ্গলীলা হেরিতে লাগিল |
“বিল্ব মঙ্গলের কথা চলে অভিনয়,
মনোমুগ্ধকর দৃশ্য লাগিছে বিস্ময় |

*   *   *   *          

চিন্তামণি প্রেয়সীর বচন শুনিয়া
বিল্বমঙ্গলের মোহ যেতেছে কাটিয়া---
“বিগলিত নর দেহ জলে ভেসে যায়,
শিয়ালে কুকুরে তাহা টেনে টেনে খায়,
কোথাও বা চিতানলে ভষ্মীভূত কায়,
পবনে সে ছাই ভষ্ম উড়ে উড়ে যায়,
রমনীয় রমনীয় দেহ অভিরাম,
তারও হবে সুনিশ্চিত এই পরিণাম !
নশ্বর জগতে তবে প্রাণ দিনু কারে,
কে হেন দরদী মোর রক্ষিবে আমারে--- ”
বিল্বমঙ্গলের অশ্রু ঝরিছে অঝোরে----

*   *   *   *    

বন্ধুর দরদী প্রাণে হানো বারে বারে,----

*   *   *   *    

উঠিয়া দাঁড়াল বন্ধু ব্যাকুল অন্তরে,
দিব্য জ্যোতিঃ ফুটে উঠে সর্ব অঙ্গ ঘিরে |
আর যত ছিল আলো নিষ্প্রভ সকল,
অঙ্গচ্ছটা উজলিল সর্ব রঙ্গস্থল !

*   *   *   *    

অতুলেরে নিয়া সাথে ছুটে বাহিরায়
মন্ত্রমুগ্ধ জনগণ শিহরিত কায়
আনন্দে পুলকে তারে ধরিবারে চায়
তৃষিত হৃদয় নিয়ে পিছু পিছু ধায় |
হেন কালে জ্যোতিপুঞ্জ করি সম্বরণ,
তীর বেগে বন্ধু হরি হ’ল অদর্শন |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অতুলের ব্রত
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৫, দীনবেশে তপস্যা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২৪ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

হরে কৃষ্ণ বোলে বন্ধু করিল ইঙ্গিত
অতুলের ধ্যান লোকে প্রকাশে সম্বিৎ |
ঊষার অরুণালোকে জগন্নাথ ঘাটে
নিমেষে ছুটে যায় সুরধুনী তটে |
স্নাত পুতঃ শুচি শুদ্ধ পড়ি শুভ্র বাস,
হরিনাম মহামন্ত্রে ধ্বনিল উচ্ছ্বাস |
টহল কীর্তন করি পাগলের প্রায়,
কালীঘাট উদ্দেশেতে পথ ‘পরে ধায় |
স্নান সারি গঙ্গাঘাটে ফিরে পুনরায়,
আর্তস্বরে হরিনাম গেয়ে গেয়ে যায় |
ঘাট হতে ঘাটে যায় হরি হরি বলে,
পথচারী জনগন হেরে কুতুহলে |
এরূপে টহল চলে নাহিক বিরাম,
“হরে কৃষ্ণ, হরে রাম কোথা প্রাণারাম |
কৃষ্ণ গোবিন্দ গোপাল শ্যাম
রাধা মাধব রাধিকা নাম |”
কিবা দিবা কিবা নিশি নাহি ভেদাভেদ,
শীত, তাপ, রোদ, বৃষ্টি সকলি অভেদ |
এক মনে এক ধ্যানে গাহে মহানাম,
ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রাতন্দ্রা নাহি কিছু জ্ঞান |
গোবিন্দের কৃপা হলে কেহ করুণায়
আদরে ডাকিয়া গৃহে কিছুবা খাওয়ায় |

0                    0             0

প্রহর প্রহর করি যায় দিবানিশি
কাল স্রোতে ভেসে যায় মহাকাল রাশি |
মাসে মাসে মাস গেল সুদীর্ঘ সময়
দ্বাদশ মাসের শেষে ব্রত পূর্ণ হয় |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর