কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা
*
ব্রতপূর্ণ
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৯, রামবাগানে পদার্পণ
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৪ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

রামবাগানেতে আজি চলিছে উত্সব,
ঢালিয়া সকল হৃদি ভকতি বিভব,
মুখরিত ডোমপল্লী আনন্দ আকুল
সর্বস্ব দানিতে চাহে ছিঁড়ি মর্ম্ম মূল |
দরিদ্রের ভগবান পরম বান্ধব---
সর্ব দুঃখ সর্ব গ্লানি মানে ভরাভব
পতিতের উদ্ধারণে শ্রীবন্ধু সুন্দর,
উজলিয়া দশ দিশি এল মনোহর |
তুমুল কীর্তন রোল ভেদিলে অম্বর,
নামের হুঙ্কারে কাঁপে সর্ব চরাচর |

*    *    *    *      

হেনকালে আর্তরবে আসিল অতুল
মহা কীর্তনেতে নাচে হইয়া আকুল |

*    *    *    *

শ্রীবন্ধু সুন্দর তারে আদরে ডাকিল,
“ব্রতপূর্ণ আজি তব” স্নেহেতে বলিল |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অপূর্ব বালক
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪১২, মহাপুরুষ দর্শন
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৪ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

অতুলের সঙ্গে করি শ্রীবন্ধু সুন্দর
পাবনা ঘাটেতে আসে নব সুধাকর |
ইষ্টিমার হতে দেখে একটি বালক,
অপরূপ ক্লান্তি ভার চাহে অপলক |
বন্ধু কহে অতুলেরে, “অপূর্ব এ ধন,
দিব্য শিশু, দিব্য ভাব, সুনির্মল মন |
নামাবলী দিয়ে এস মস্তকে তাহার,
স্পর্শি তারে ধন্য কর দেহ আপনার |”
অতুল চাহিয়া দেখে শোভায় অতুল,
ঢল ঢল মুখখানি চরণ রাতুল |
নামাবলী হাতে নিয়ে যায় ধীরে ধীরে,
আবেগেতে স্নেহভরে ধরি বালকেরে |
মস্তকে জড়ায়ে দিল পুতঃ নামাবলী,
সহসা হৃদয় তার উঠিল আকুলি |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শিব, ওকে নাও
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪১৩, শিব ওকে নাও
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৪ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

অতুলেরে সাথে নিয়ে পাবনা সহরে
শ্রীবন্ধু সুন্দর শেষে আসিলেন ধীরে
সহরের ঋকপ্রান্তে নির্জন মন্দিরে
স্মিত হাস্যে দেখিলেন হারাণ ক্ষ্যাপারে |
ক্ষ্যাপা শিব ফুকারিয়া “জগা” বলি ডাকে,
আনন্দে দীপ্তি খেলে তার চোখে মুখে |
“সঙ্গে কে অতুল নাকি ?”  পুছে পুনরায়,
জগারে টানিয়া শিব কোথা চলি যায় |
উভয়ে পরমানন্দে কাটে কিছুক্ষণ,
ক্ষ্যাপা শিব নাচে গায় ভাবে নিগমন |
ক্ষ্যাপারে টানিয়া আনি বন্ধু কয় তার,
“শিব, ওকে নাও তুমি, নাও অতুলেরে |”
অতুল খুঁজিয়া পায় নতুন মানুষ,
ক্ষ্যাপা এত ক্ষ্যাপা নহে, পরম পুরুষ |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শিবের আদেশ
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪১৫, শিব ওকে নাও
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২৪ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

অতুল আছিল ঘুমে গোফার দুয়ারে,
শিবের ত্রিশূল স্পর্শে নিদ্রা গেল দূরে |
শিব তারে সাথে নিয়ে গেল নদী তীরে
সন্তরণ করে শিব তটিনীর নীরে |
পরিশেষে স্নান সারি বাজারেতে গেল
গালি পাড়ি দোকানীরে বাসন ভাঙ্গিল,
আপনারে ধন্য মানি দোকানী আসিল,
সুমিষ্ট সুখাদ্য আনি শিবে নিবেদিল |
এইরূপে ঘুরে ঘুরে রাগে অনুরাগে
অতুলের সমাদরে বলে তারপর
“ওপারেতে আছে বঙ্কা চাঁড়ালের ঘর
সেথা গিয়ে পেতে হবে প্রসাদ তাহার
জলাঞ্জলি দিতে হবে সর্ব অহঙ্কার |”

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমের লোভে
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪১৭, ‘আমের লোভে’ আলমপুর
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২৪ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বাত্সল্যেতে বাঁধা রয় চঞ্চল কিশোর,
স্নেহের পরশ পেলে আনন্দে বিভোর |

*    *    *    *    

আলম পুরেতে গেলা শ্রীবন্ধু সুন্দর,
আম্রফল আছে সেথা সুমিষ্ট সুন্দর |
কবে ফল খেয়েছিল শিশুকালে গিয়া,
আজও তাহা স্মরি নাচে কিশোরের হিয়া |
আম্র অমৃত ফল রসে ভরপুর,
স্নেহ প্রীতি মাখা তায়আরও সুমধুর |
বন্ধু সুন্দরের বন্ধু রহিয়াছে তথা,
রাখাল, বিনয় কহে বন্ধু প্রীতি কথা,
সবাকারে নিয়া ফল ভক্ষম করিল,
“আরও দাও, আরও” দাও বলিতে লাগিল |

*    *    *    *  

রঙ্গলাল বন্ধু হরি করে কত রঙ্গ,
লীলা রসে ঢল ঢল লীলার তরঙ্গ |

.                 ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বৈষ্ণব চাঁড়াল
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪২৬, ভক্তোচ্ছিষ্ট গ্রহণ
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৫ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

নদী তীরে পরিচ্ছন্ন ঘর কয়খানি,
চাঁড়াল বৈষ্ণব এক নাম বঙ্কুমান
বাস করে তথা সুখে করে হরিনাম,
নিত্য পূজে রাধাকৃষ্ণে নয়নাভিরাম,
নিবেদিয়া ভোগরাগ পায় সে প্রসাদ,
সদা ব্রত আচরণ নাহি অবসাদ |

*    *    *    *       

নিত্য কর্মে রত থাকি বেলা দ্বিপ্রহর,
ভোগ রাগ নিবেদিল বৈষ্ণব প্রবর,
প্রসাদ পাইতে বসে স্নিগ্ধ শুচি মন,
“জয় রাধারাণী” বলি করিল স্মরণ,
ভক্তিভরে মুখে দিল অন্ন দুই গ্রাস
হেন কালে কর্ণে শুনে মধুর উচ্ছ্বাস,---
“হরি” বলে হরি-বোলা আসিল তথায় |
আনন্দেতে বঙ্কুমনি ছুটে পড়ে পায় |
বঙ্কু-পত্নী থালা হস্ত কাঁপিতে লাগিলা,
ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবে দেখি হয় আত্ম ভোলা |
নিমেষে অতুল চন্দ্র উঠি বারান্দায়,
চাঁড়ালের উচ্ছিষ্টান্ন থাবা থাবা খায় |
কান্ড দেখি বঙ্কু-পত্নী প্রমাদ গনিল,
“সর্বনাশ” হল বলি চিত্কারি উঠিল |
বঙ্কুমনি ছুটে এল দেখিয়া উত্পাত,
নিমেষেতে অতুলের চেপে ধরে হাত |
চাঁড়াল-বৈষ্ণব পাতে প্রসাদ পাইয়া,
অতুল আনন্দে করে গড়াগড়ি দিয়া |
বৈষ্ণবের পদরজঃ সর্বাঙ্গে মাখিল,
“হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ”  বলি নাচিতে লাগিল |

*    *    *    *  

ব্রাহ্মণে চন্ডালে হয় অপূর্ব মিলন
প্রেম ডোরে বাঁধা পড়ে বৈষ্ণব সুজন |

.                 ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মান – মুক্ত
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪২৮, “চাঁড়ালের ভাত খায়”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৫ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বঙ্কুর প্রসাদ পেয়ে অতুল সুজন,
ছুটচে যায় যেথা শিব হারাণ রতন |
শিবের আদিষ্ট কর্ম করিয়া সাধন,
অভিমান-মুক্ত হ’য়ে শুদ্ধ হ’ল মন |
অতুলে অতুল রত্ন খুঁজিয়া পাইল,
শিব তারে বুকে ধরি আনন্দে নাচিল,
স্নেহের অঙ্কেতে ধরি অতুল রতন,
সিক্ত গন্ডে আঁকি দিল সাহস চুম্বন|
সাথে তারে নিয়ে ঘুরে রাজ পথে পথে,
যারে হেরে তারে ধরে লাগিল বলিতে ,
“বামুন হইয়া খায় চাঁড়ালের ভাত---
কুলমান খোয়াইল চ’লে গেল জাত |”
আনন্দে অধীর দোহে “হরি হরি” বলে ,
মুখরিত সর্বদিক হরি নাম রোলে |

.                 ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জগাই সেই
২য় খণ্ড, পৃঃ ৪২৯, ‘জগার নাম লবি’
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২৫ / ০৯ / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

নিত্য করে ভক্তি কর্ম অতুল সুজন
শিবের আদেশ মত টহল কীর্ত্তন |
একদা দুর্যোগ দিনে উঠিয়া সকালে
অভুল কীর্ত্তন করে বসি কুতুহলে |

*    *    *    *            

ভজ গৌরাঙ্গ কহ গৌরাঙ্গ লহ গৌরাঙ্গের নাম রে |
যে জন গৌরাঙ্গ ভজে সে জন আমার প্রাণ রে ||”

*    *    *    *   

শিব বলে, “চিন না কি বন্ধু রতন ?
জগা যে জগৎ বন্ধু বন্ধু সেই জন---
বন্ধু শিব, বন্ধু শুভ বন্ধু প্রাণারাম,
প্রাণ ভরে গাহ তবে ‘জগদ্বন্ধু’ নাম |”

*    *    *    *   

নেচে নেচে বাহু তুলে গাহে অবিরাম
দুঁহু দোঁহা প্রেম ভরে ‘জগদ্বন্ধু’ নাম |

.                 ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কল্পতরু
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ০২ / ০৭ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

কৃষ্ণ-কল্পতরু-মূলে বসরে মন কুতহলে,
সুধা মাখা কৃষ্ণ নামে সর্ব ইষ্ট যাবে মিলে |
কৃষ্ণ, কৃষ্ণ জপ সদা পান করবে নাম সুধা,
নামামৃত পান করিলে দূরে যাবে ভব ক্ষুধা |
ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ চতুবর্গ ফল মিলে,
তারও অধিক প্রেম পাবি প্রেমময়ের শরণ নিলে |
সংসারে আসিয়া, মন, জ্বলিতেছে চিন্তানলে,
ত্রিতাপ জ্বালা জুড়াবে সেই চিন্তামনির পরশ পেলে |
প্রেমের কানু বাজায় বেণু হৃদি যমুনার কুলে,
প্রেমের পাগল মাতোয়ারা প্রেম যমুনা উজান চলে |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নাহি ভয় নাহি ভয়
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ০১ / ০৭ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

গ্রীষ্মের ছুটিটা বর্ষায় কাট্ লো
আম, কাঁঠাল, আনারস
.               মিঠা কড়া লাগ্ ল |
সারাদিন লুটোপুটি
.               হৈ চৈ তারে না
ঘুমে আছে বই খাতা
.               রেখে দাও পড়াশুনা |
চার বেলা খাও দাও
.               সুখে দিবা নিদ্রা
লীগ খেলা কে.বি.আই.
.               উদয়পুর হদ্রা |
ইস্কুল খুলে গেল
.               জুলাই-এর পনের
ছুটি হয়ে গেল শেষ
.               মন দিয়ে পড়া কর |
বাঘা মাসী পরীক্ষা
.               আসিতেছে হায় হায়
ভয়ে ভয়ে ভাবি তাই
.               ঘাড় বুঝি মটকায় |
চোট্ পাট্ দেন সদা
.                শিক্ষক মহাশয়,
“মন দিয়ে লেখ পড়
.                 নাহি ভয় নাহি ভয় |”

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর