কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা
*
মহা  উদ্ধারণ
(কবিতা গুচ্ছ)
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ

"যদা যদা হি ----------- যুগে যুগে"
তুয়া প্রেমা গুরু করি-----করব উদয়
( ১ ) গৌর অবতারে “জগাই মাধাই”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ০৯ / ১২ / ১৯৬০,
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
    

আজু বন্ধু সুন্দর                        আওল নাগর
হরি হরি সুমধুর নাচত মধুর,
নাম রসে ডুবাওল             হরি প্রেমে ভাসাওল
মধুর মধুর হৃদি পুর |
মধুর মৃদঙ্গ ধ্বনি                   হরল হৃদয়খানি
মাতল সব চরাচর,
সাথে সাথে চলত                    সাত দল গাওত
তাল নাচ মনোহর |
লীলার কিশোর জগ                 নাচত আগভাগ
অপরূপ রূপ মনোচোর |
ভরি আউ পবন                         পরশল গগন
মধু মধু পাশঘর |
নাম নামী পাবন                         মহা উদ্দারণ
মরি মরি বন্ধু সুধাকর |
দাস অতীনে ভনে                না দেখলুঁ এ নয়নে
বিফল জনম এ ছার ||

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ২ ) বুনাজাতির পরিচয়
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ০৯ / ১২ / ১৯৬০,
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

নগরের আশে পাশে আছে বুনাজাতি
জাতি নাই গোত্র নাই নাহি কোন পাতি |
নামে হিন্দু, হিন্দু নয় পশুরও অধম
লজ্জা নাই ঘৃণা নাই নাহিক সম্ভ্রম |
কাঁচা খায় পোড়া খায় নাহিক বিচার,
শুকর মারিয়া খায় ঘৃণিত সবার |
কটিমাত্র ছিন্ন বাস বীভৎস আকার,
নিয়ম সমাজ নাই প্রেতপুরী সার |
উচ্চ নীচ ভেদাভেদ গণ্যমান্য নাই,
নিয়ম সংযম নাই বিবাহ বালাই |
ঢোল সমুদ্রের তীরে হেথা হোথা বাস
জীর্ণ কুটীরেতে দুঃখে কাটে বারমাস |
ঝাড়ফুক লাঠিখেলা মজুরি খাটিয়া,
শীতে তাপে দিন কাটে পাথর ভাঙিয়া |
সব লোকে ঘৃণা করে নাহি জলচল,
সর্বহারা চির দুঃখী নাহিক সম্বল |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ৩ ) রজনী সর্দার
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১২ / ১২ / ১৯৬০,
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

কেশরী কেশব সম                  রূক্ষ কৃষ্ণ কেশদাস
মিশ কালো পাষাণ পাহাড় |
ললাটে সিন্দুর ফোঁটা                রক্তচক্ষু যেন ভাটা
বন্য বূনো রজনী সর্দার |
অসুরের বাহুবল                     দৃপ্তোন্নত বক্ষস্থল
কানে শোভে রক্ত জবাফুল |
গরজনে হুঙ্কারে                       কাঁপাইয়া চরাচরে
তীর ধনু লাঠিতে অতুল |
জলপরা ধূলিপরা                    তন্ত্র মন্ত্র কত ঝাড়া
রজনীর আছে অধিকার |
ঔষধ ও মুষ্টিযোগ               আরও কত যোগাযোগ
আরও বহু জারি জুরি তার |
অতি হিংস্র ভয়ঙ্কর                  নাহি তার ভয় ডর
পশু পাখী ভয়েতে পলায় |
বুঝি মহা বিশ্বগ্রাস                    করিবারে বিশ্বনাশ
অবতীর্ণ ধরি মহাকায় |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ৪ ) রজনীর পূর্বরাগ
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১২ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

রজনীর মহা নিশা সে ঘোর রজনী,
কালোয় ঘিরিছে তার সকল অবণী |
কালো পাষাণের বুকে জাগে যে ফোয়ারা,
কখন ভাঙ্গিয়া যাবে পাষাণের কারা |
অন্তরে অন্তরে জাগে কিসের অঙ্কুর,
আকুতি মিনতি ভরা হৃদি ভবপুর |
‘কেমনে মানুষ হব’ ভাবে মনে মনে,
‘মোদের মানুষ বলি কেহ নাহি গণে |’
“অষ্পৃশ্য অধম যারা মেথর চাঁড়াল,
তাদেরও অষ্পৃশ্য মোরা এমনি কপাল |”
“কি করিব কোথা যাব কি করি উপায়,
হেন বন্ধু কেবা আছে দিবে পদছায় |”

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ৫ ) “গৌরলীলা”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১২ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

যুগ যুগ আগে                     প্রেমঘন অনুরাগে
নাচি নাচি কেবা যায় |
দু চোখে বহুত ধার              করুণাত পারাবার
হরি নাম আবেশে বিলায় |
সুরধুনী তট পর                        নাচত নটবর
হেলি দুলি চলি গোরা রায় |
মধু মধু নর্তন                         মধু মধু কীর্তন
শিহরি শিহরি সব কায় |
পতিত পাবন হরি                অব নব রূপ ধরি
পতিত পাবন লাগি ধায় |
আচন্ডালে প্রেম দিলা        নামে প্রেমে ভাসাইলা
জগাই মাধাই তরি বায় |
কাঁহা মঝু গোরাচাঁদ               হরি নাম পরসাদ
পাপ তাপ চলি য়ায় |
এমতি নামক সুধা               মিটাব কি ভবক্ষুধা
দাস অতীনে কাঁদে হায় ||

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ৬ ) মিশনারী
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১২ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বুনাজাতি দুঃখ হেরি মিশনারীগণ,
সেবা করিবার ছলে দিলা দরশন |
হিন্দুদের নিন্দা করি যীশু গুণ গায়,
মন ভুলাবার তরে সকলি বিলায় |
শুন শুন বুনাজাটি টোমরা সকলে,
হিন্দু ধর্ম ছাড়ি মিশ খ্রীষ্টানের ডলে,
টোমাডের কালী ডেথ হাউ হরিবল,
( How Horrible )
ভোলা শিব ম্যাডন্যাস কোয়াইট টেরিবল্
             
( madness quite terrible )
কিষ্ট কান্ট বড্ খাস্ হোয়াট্ এ পিটি শেম্
              
( What a pity shame )
হামাডের যীশু ডেখ পেরেম্ পেরেম্ |
যীশু ভজ যীশু চিন্ট যীশু কর সার,
যীশুর চরণ ছাড়া গটি নহি আর |
হিন্ডুগণ টোমাডের সডা হেট্ করে,
( Hate )
খ্রীষ্টান হইলে রবে মাথার উপরে |
খ্রীষ্টানী রাজার ঢর্ম ইংরাজ খ্রীষ্টান,
খ্রীষ্টান হইয়া ডেখ বাড়িবেক মান |
গড্ মাদার গর্ড সান আর হলি ঘোষ্ট,
লাষ্ট ডে টু হেভেন্ যাবে সিউর এ্যান্ড মোষ্ট |
হিন্ডু থাকি ডুঃখ পাও নাহি কচ্ছু লাভ,
খ্রীষ্ট ভজি সুখ পাও মাই লাভ মাই লাভ |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ৭ ) মিশনারী দালালদের প্রচার
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১৩ / ১২ / ১৯৬০,
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

মদ্ পাবে মেম পাবে মিলেগা হুইস্কী,
eat drink and be merry আউর চিন্টা কি |
নোকরী ভী সব মিল্ যায়েগা কুছ পরোয়া নাই,
হেট্ কোট্ পড়্ নে সিগ্রেট ফুকো সাহেব বন্ যাই |
গাড়ী ঘোড়া চড়্ কে হর্দম চলা যা আফিস,
হিন্ডু তোম্ কো কুত্তা মাফিক করেগা কুর্নিস |
অভি তোম্ লোগ হিন্ডুকো পাশ্ কুত্তা বিল্লী হ্যায়,
এ্যায়্ সা মাফিক্ বাঁচনে ওয়ালে ফায়দা নেহি হ্যায় |
জল্ দী সব্ তো যীশু ভজ খ্রীষ্টান্ বন যাও ভেইয়া,
প্রেমসে দিলমে ফুর্তি লাগাও প্রেমসে নাচো সঁইয়া |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ৮ ) বুনাজাতিদের মধ্যে আন্দোলন ও মতামত
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১৩ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

যীশু ভজ যীশু চিন্ত যীশু কর সার,
যীশু বিনে এ বিপদে নাহিক উদ্ধার |
হিন্দু হয়ে থেকে আর কি লাভ হইবে,
খ্রীষ্টান হইলে সব চিন্তা দূরে যাবে |
অন্ন পাব বস্ত্র পাব পাইব চাকুরী,
ইহলোক ভোগ সুখ পরকালের কড়ি |
যুগ যুগ ধরি মোরা কষ্ট কত পাই
আমাদের দুঃখে কেহ কাঁদিবার নাই |
পাদ্রীরা প্রকৃত বন্ধু বিপদে সম্বল,
সাহেবের কৃপা বিনে নাহি কোন বল |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ৯ ) রজনীর অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সকলে মিলিয়া খ্রীষ্টান হওয়ার সিদ্ধান্ত
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –১৪ / ১২  / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

ভাবিছে রজনী মনে হ’য়ে আনমনা
“কি করিব কোথা যাব বন্ধু কোন জনা |”
একবার ভাবে মনে হবে খ্রীষ্টান,
আবার ভাবিছে তাহা বড় অপমান |
পূর্ব পুরুষের ধর্ম কেমনে ছাড়িব,
জাত নাশা কুল নাশা কেমনে সাজিব |”
হেনকালে পড়ে মনে অতীতের স্মৃতি,
অধম অস্পৃশ্য বলে কতই দুর্গতি |
মানুষ হইয়া তবু নাহিক নিস্তার,
পশুরও অধম তারা পায় ব্যবহার |
পরামর্শ করি তবে করে সমাধান,
হিন্দুধর্ম ছাড়ি সবে হবে খ্রীষ্টান |
দিন ক্ষণ সবে মিলে ঠিক করে তবে,
যথাকালে খ্রীষ্টধর্মে সবে দীক্ষা নিবে |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১০ ) রাত্রিতে রজনীর অবস্থা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১৪ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

রজনীর রজনীতে নিদ নাহি চোখে,
মরম জ্বলিয়া যায় শোকে তাপে দুঃখে |
বুক ভেঙ্গে যায় আদি আঁখিজলে ভাসে,
কত কথা কত ব্যথা ভেসে ভেসে আসে |
প্রহরে প্রহরে যায় কাঁদিয়া আকুল,
“পতিতের তরে কোথা চরণ রাতুল |
কোথা হরি চক্রধারী কৃষ্ণ নারায়ণ,
অসুরেরে উদ্ধারিলে করিয়া হনন |
পতিত অসুরধামে সবংশতে মারি,
উদ্ধারিকে পার নাকি সুদর্শনধারী |
গৌরাঙ্গ রূপেতে এস প্রেমের ঠাকুর,
ত্রিতাপে তাপিত প্রাণ বিশে ভরপুর |
দুই ভাইয়ে উদ্ধারিলে নদের নিমাই,
আমরা যে শত শত জগাই মাধাই |”
ব্রজলীলা গৌরলীলা স্মরিয়া স্মরিয়া,
আবেশে রজনী হায়পরিল ঢলিয়া |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১১ ) বুনারা খ্রীষ্টান হইবে শুনিয়া ফরিদপুর বাজারে প্রতিক্রিয়া
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১৫ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বুনারা খ্রীষ্টান হবে এই কথা শুনি,
হেথা হোথা দশজনে করে কানাকানি |
কেহ বলে বুনোরা সব বন্য জানোয়ার,
দূর করি রক্ষা পাবে সমাজ আচার |
কেহ হাসে কেহ কাঁদে করে হায় হায়--
এত হিন্দু ধর্ম ছাড়ে কি হবে উপায় |
বুনাদের দুঃখ শুনি ঘোষ দুঃখীরাম,
হাহাকার করি উঠে ভাবি পরিণাম |
ত্বরিতে চলিয়া যায় বন্ধুর সকাশে,
নিবেদিবে সব কথা প্রতিকার আশে |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১২ ) দুঃখীরাম চলি গেলা বন্ধুর সদনে
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –১৫ / ১২  / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

দুঃখীরাম চলি গেলা বন্ধুর সদনে,
করজোড়ে নিবেদিলা রাতুল চরণে |
“সপ্তদল কীর্তনেতে নাচিল যাহারা,
খ্রীষ্টান হইবে সবে সেই বুনারা |
এ দুঃখ দহন প্রভু সহন না যায়,
কৃপা করি কৃপাময় করহ উপায় |”
অদ্বৈত হুঙ্কারে যথা ভক্তে কৃপা করি,
এসেছিল একদিন নদীয়া বিহারী |
সেই মত বন্ধু প্রেমে বিগলিত হল,
মধুরে দুঃখীর ডাকে বলিতে লাগিল |
“যাও দুঃখী রজনীরে আনহ ডাকিয়া,
বন্ধুর আদেশ তারে বল বুঝাইয়া |”
আদিষ্ট হইয়া দুঃখী ত্বরা চলি যায়,
রজনীর বুনা জাতি আছয়ে যেথায় |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১৩ ) ইথ মঝু রঞ্জনীয়া ভাবে সূরছত
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –১৬ / ১২  / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

ইথ মঝু রঞ্জনীয়া ভাবে সূরছত
মন চলি সুমধুর স্বপন দেখত |
“থির বিজুরী সম কিশোর নাগর
মনোহর হেলি দুলি নাচত মধুর |
হরি হরি কী রতন মধু মধু গাহি,
ভাবে ঢল ঢল তনু প্রেম বিলায়ি |
বাঁশরী বাজাত নন্দ দুলানা,
নূপুরক রুনু ঝুনু চিকন কালা,
বাহু তুলি নাচত নদীয়া বিহারী,
মধু মধু গাও ত বসি হরি হরি,
কিশোর নাগর বন্ধু ডাক হুঁ মধুর
অব মেরে রজনীয়া আও চলি ঘর
তুঁহি মেরে প্রীতম তুঁহি হরি দাস |”
ভনই স্মরি স্মরি অতীন দাস ||

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১৪ ) হেন কালে স্মরি স্মরি বন্ধু প্রাণারাম
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –১৬ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

হেন কালে স্মরি স্মরি বন্ধু প্রাণারাম
দরশন দিলা আসি ঘোষ দুখীরাম |
বন্ধুর সন্দেশ কিছু দানিবার তরে
“রজনী, রজনী” বলি ডাকিছে মধুরে |
আবেশ কাটিয়া যায়, রজনী দেখিল
দুঃখের রজনী বুঝি আজি পোহাইল  |
“রজনী গো ডাকে তোমা শ্রীবন্ধু সুন্দর |”
এত শুনি রজনিয়া কাঁপে থর থর,
বিশ্বাস করিতে নারে এও কি সম্ভব
অধম পামরে ডাকে বন্ধু দেব দেব |
এতদিনে কৃপা করি পতিত তারণ,
লীলা বুঝি প্রকাশিবে মহা উদ্ধারণ
আনন্দে অধীর হিয়া ভাবিতে না পারে
কখ হেরিব গিয়া নব নটবরে |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১৫ ) অধীরে চলিয়া যায় দেরী নাহি সয়
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –১৬ / ১২  / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

অধীরে চলিয়া যায় দেরী নাহি সয়
রজনীর নিশা বুঝি অবসান হয় |
প্রভু মোরে ডেকেছেন ---- ভাবে মনে মনে,
পতে চলে জপে যেন স্মরণ মননে |
কভু ভাবে হেন ভাগ্য কপালের লেখা,
জগতের বন্ধু সে যে হৃদয়ের সখা,
বাত্স্যল্যোতে ভাবে কভু নধর কিশোর,
পুত্র মম হত যদি হেন মনোহর,
লাবনী নবনী সব যতনে ধরিয়া,
ঢল ঢল কচি মুখে দিতাম ভুলিয়া |
আবেশে অধীর হিয়া পড়ে ঢলি ঢলি
ভাবের তরঙ্গ উঠে উছলি উছলি  |
কভু ভাবে দীন হীন অতি অভাজন
বন্ধুরে সেবিতে মোর আছে কিবা ধন |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১৬ ) ভাবিতে ভাবিতে তনু আবেশ বিহ্বল
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

ভাবিতে ভাবিতে তনু আবেশ বিহ্বল
চোখেতে বহিছে তার ধারা অবিরল
পথে চলি যায় চঞ্চল চরণ
শিথিল হুইল তার সর্ব আভরণ |
নিশার আঁধারে মোর সুধাকর ইন্দু
আলোকে হাঁসিছে বুঝি বন্ধু কৃপাসিন্ধু
হৃদয় উদ্বেল আজি আনন্দ না ধরে,
লহরী খেলিয়া যায় সর্ব চরাচরে |
আমারে ডেকেছে বন্ধু ডেকেছে আমারে
কেমন করিয়া আমি পাইব তাহারে,
বন্ধু হরি প্রভু মোর বন্ধু প্রাণ-ধন
চির দাস হয়ে তার সেবিব চরণ |
আমা হেন নরাধম আমারে কি কভু
চরণে দিবে গো ঠাঁই জগতের প্রভু |
অধম অষ্পৃশ্য আমি আমারে কি ছোঁবে
আমারে ছুঁইলে তার লোক নিন্দা হবে |
এই অপবাদ তার কেমনে সহিব
এ জীবনে হেন কাজ কভু না করিব |
দূরে থেকে দরশন করি প্রাণা  রামে
ব্যথা মোর নিবেদিব ও রাঙ্গা চরণে |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১৭ ) এই মত ভাবি ভাবি পথ চলি যায়
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১৬ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

এই মত ভাবি ভাবি পথ চলি যায়
উপনীত হল গিয়া ব্রাহ্মণ কান্দায় |
“আয় আয় ও রজনী ওরে ছুটে আয়”
এত বলি বন্ধু হরি গেল বাহিরায় |
আচম্বিতে হেমদন্ড বাহু প্রসারিয়া
রজনীরে দিয়া প্রেম বক্ষেতে ধরিয়া |
রজনীর অমানিশা নিমেষে কাটিল,
আলোকিয়া দশ দিশি অরুণ উদিল |
কি বা সে অরুণ হায় কেমন বরণ
নব গোরা নটবর কষিত কাঞ্চন |
পতিত উদ্ধার লাগি মহা উদ্ধারণ
পতিত পাবন বন্ধু মহাবতারণ |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১৮ ) বন্ধু বলে, “তোমরা কি খ্রীষ্টান হইবে ?”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –১৬ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বন্ধু বলে, “তোমরা কি খ্রীষ্টান হইবে ?”
রজনী কাতরে বলে করজোরে তবে |
শুন প্রভু, কল্য সবে হইব খ্রীষ্টান
দূরে যাবে সর্ব গ্লানি জাতি অপমান
খ্রীষ্টান করিতে কাল পাদ্রীরা আসিবে
অস্পৃশ্যতা দূর করি জাতে তুলে নিবে |
হিন্দু হয়ে হিন্দু নহি মোরা অতি হীন
নিঃস্ব মোরা সর্বহারা অতি দুঃখী হীন |”

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ১৯ ) রজনী গো প্রিয়তম নহ কভু হীন
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২২ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

রজনী গো প্রিয়তম নহ কভু হীন,
ভক্তিতেই মুক্তি সদা, হরি ভক্তাধীন |
রজনীর রজনীত্ব হয়ে যাক নাশ,
নব জীবনের প্রাতে জাগ হরিদাস |
আজি তব নবজন্ম নবারণ রাগে,
হরি নামে দীক্ষা নাও হরি অনুরাগে |
ভুলে যাও সর্ব গ্লানি সকল দীনতা,
নাম মন্ত্রে জেগে ওঠ মানব দেবতা |
সুপ্ত সিংহ জেগে ওঠ মামব নামের হুঙ্কারে,
সে ধ্বনি ঝঙ্কিত হোক সর্ব চরাচরে |
তুমি তব সম্প্রদায়, তোমরা মহান,
“বুনা ‘বন্য’ নহ কভু ওগো ভক্তবীর
বন্ধু এই দিল দীক্ষা ‘সত্য ধ্রুব স্থির |”

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ২০ ) সর্ব মোহ দূরে গেল হইলে মোহান্ত
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১৬ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

সর্ব মোহ দূরে গেল হইলে মোহান্ত,
সর্ব দুঃখ অন্ত হল আনন্দ অনন্ত |
সবে মিলে নাচি গাহি কর হরিনাম,
রাধা গোবিন্দের কৃপা লাভ অবিরাম |
প্রসাদ পাইবে সবে তোমরা সকলে
কীর্তন আনন্দ করি হরি হরি বলে |
হরিনামে পতিতের করি মহাত্রান
অবশেষে বন্ধু হরি হল অন্তর্ধান |

.                                  ****************                                
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
*
( ২১ ) পর দিন দলে দলে যত বুনাগণ
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ১৬ / ১২ / ১৯৬০
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

পর দিন দলে দলে যত বুনাগণ
হরি নামে মত্ত হয়ে দেল শ্রীঅঙ্গন |
পাদ্রীরা আসিয়া সবে ফিরে চলি গেল
একটাও বুনা আর খ্রীষ্টান না হল |
হরি নামে যত বুনা হইল মোহান্ত
নাম রস সুধা পানে নাহি পায় অন্ত |
ভক্তিভাবে আস্বাদিয়া সে মহাপ্রসাদ
ভক্তিমূলে মুক্তি মিলে ঘুচে পরমাদ |
প্রেমানন্দে নেচে নেচে মহানাম গায়
বুনো জাতি উদ্ধারণ প্রভুর কৃপায় |

.                                  ****************                               

মহা উদ্ধারণ কবিতা গুচ্ছ সমাপ্ত
                    
.                                                                                     
সূচিতে . . .    
.                           
মহা উদ্ধরণ কবিতা গুচ্ছের এই পাতার শুরুতে . . .


মিলনসাগর
( ১ )   গৌর অবতারে “জগাই মাধাই”      
( ২ )   বুনাজাতির পরিচয়           
( ৩ )   রজনী সর্দার      
( ৪ )   রজনীর পূর্বরাগ        
( ৫ )   “গৌরলীলা”       
( ৬ )   মিশনারী       
( ৭ )   মিশনারী দালালদের প্রচার        
( ৮ )   বুনাজাতিদের মধ্যে আন্দোলন ও মতামত     
( ৯ )   রজনীর অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সকলে মিলিয়া খ্রীষ্টান হওয়ার সিদ্ধান্ত   
( ১০ )  রাত্রিতে রজনীর অবস্থা      
( ১১ )  বুনারা খ্রীষ্টান হইবে শুনিয়া ফরিদপুর বাজারে প্রতিক্রিয়া    
( ১২ )  দুঃখীরাম চলি গেলা বন্ধুর সদনে     
( ১৩ )  ইথ মঝু রঞ্জনীয়া ভাবে সূরছত      
( ১৪ )  হেন কালে স্মরি স্মরি বন্ধু প্রাণারাম    
( ১৫ )  অধীরে চলিয়া যায় দেরী নাহি সয়     
( ১৬ )  ভাবিতে ভাবিতে তনু আবেশ বিহ্বল     
( ১৭ )  এই মত ভাবি ভাবি পথ চলি যায়     
( ১৮ )  বন্ধু বলে, “তোমরা কি খ্রীষ্টান হইবে ?”      
( ১৯ )  রজনী গো প্রিয়তম নহ কভু হীন       
( ২০ )  সর্ব মোহ দূরে গেল হইলে মোহান্ত     
( ২১ )  পর দিন দলে দলে যত বুনাগণ     

মূল সূচিতে . . .    
এই পাতার উপরে . . .       
*
কবিতা গুচ্ছের সূচি