কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা |
দুষ্টু কবি অতীন্দ্র লাল দাশ রচনা –১২ / ১১ / ১৯৫৭ শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া। জগৎ পারাবারের তীরে “জগৎ” করে খেলা হাসিয়া হয় কুটি কুটি ধূলা ছড়ায় মুঠি মুঠি ক্লান্তি নাহি শ্রান্তি নাহি খেলিছে সারা বেলা || কখন ছুটে দাঁড়ায় গিয়ে পদ্মানদীর পাড়ে মাতাল নদী সর্বনাশী কীর্তিনাশা সর্বগ্রাসী অবাক “জগৎ” চাহিয়া রহে এই পাড়ে ঐ পাড়ে || কভু গিয়ে বসে থাকে আস্তাকুড়ের মাঝে রাসমণি নিয়ে তাঁকে তুলসীতলার মাটী মাখে পবিত্রিয়া সযতনে পতিত পাবন রাজে || বনের মাঝে বনমালী কোথায় চলে যায় ছাড়া ভিটেয় বসে একা সাপের গর্তে ঢুকিয়ে পা দুষ্টু ছেলে মিষ্টি হাসে শঙ্কা নাহি তায় || কালীয়রে দমন করে শিশু ভগবান ; বন্ধু শিশু সদানন্দ সর্প-ভয়ের নাহি দ্বন্দ্ব রাসমণি ভয়ে ভীতা, দুরু দুরু প্রাণ | পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায় বন্ধু সোনামণি প্রেমের কাঙ্গাল দ্বারে দ্বারে জাতের বিচার নাহি করে, যে যাহা দেয় তাহাই খায় স্নেহের ক্ষীর ননী || ননী গোপাল ননী চোরার সদাই হাসিমুখ, পেলে সব ক্ষীর-ছানা উজল বদন চাঁদপানা পাষাণ বুকেও কুসুম ফোটে উপজায় সুখ || বন্ধু ধনে বক্ষে ধরি জুড়ায় হৃদয়খানি সাগর সেঁচা মাণিকটিরে চুমো খেয়ে পরশ করে তৃপ্তি আসে মুক্তি পথে ধন্য মনে মানি || . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
বিদ্যারম্ভ কবি অতীন্দ্র লাল দাশ রচনা --২১/ ১১ / ১৯৫৭ শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া শুক্লপক্ষ মাঘ মাস শিশিরেতে দুর্বাঘাস তরুণ অরুণ করে শোভে ঝল্ মল্ শুভ শ্রীপঞ্চমী তিথি, বাণী দেবী সরস্বতী, শোভিছে আমন শুভ্র শ্বেত শত দল | সপ্ত সুরে বীণাপানি অপূর্ব মূর্চ্ছনা টানি সপ্ত সুরে সপ্ত লোকে তুলেছে ঝঙ্কার অক্ষরে অক্ষরে তার ক্ষরিছে অমৃত ধার চরাচরে উঠে ধ্বনি মহা ওঙ্কার | হৃদয় উজার করে বাণীর অর্চনা করে সকাতরে বিদ্যা মাগে পুলকে ধরণী চন্দনে চর্চিত করি অঞ্জলি অঞ্জলি ভরি পাদ্য-অর্ঘ্য দেয় সর্ব বিদ্যা-বিদ্যার্থিনী | বীণাধ্বনি সপ্ত সুরে সপ্তমী আসিল ধীরে অবিদ্যা নাশিল বুঝি বিদ্যা দায়িনী দীপ্ত শুক্লা সপ্তমীতে সূর্য্য পূজা বিধিমতে বিদ্যা ভানু করে শোভে বিশ্বজননী | সে কিরণে হাঁসি হাঁসি আপনি শ্রীহরি আসি দিব্য শিশুরূপে মাগে বিদ্যা সন্দীপনী চন্দল তিলক ভালে লতাপত্র গন্ডস্থলে কটীদেশে পীতবাস বন্ধু সোনামণি | নয়নে কাজল রেখা বন্ধু হরি বাঁকা সখা স্বর্ণ সূত্র কন্ঠে ধরি জগৎসুন্দর যোগ সূত্র বেদ সূত্র সূত্রে গাঁথি সর্বসূত্র সূত্রে বুঝি ধরিয়াছে শিশু শ্রুতিধর | শ্রীদুর্গা চরণ-স্মরি অঙ্কে নিল বন্ধু হরি শ্রী দুর্গাচরণ শাস্ত্রী গুরুমহাশয় সযতনে নিয়া খড়ি জগতের হস্ত ধরি রেখায় রেখায় লিখে অক্ষর নিচয় শঙ্খ বাজে ঘন্টা বাজে গোবিন্দ-মন্দির মাঝে পুরনারী সবে মিলে দেয় উলুধ্বনি বিদ্যাতীত ভোলানাথ শিশু বন্ধু জগন্নাথ তারও হয় বিদ্যারম্ভ শিক্ষাগুরু মানি || . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
ধলী, ওচমান কবি অতীন্দ্র লাল দাশ রচনা --২২ / ১১ / ১৯৫৭ শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া জগৎ বন্ধু রস ইন্দু শিশু সরল প্রাণ | প্রেমের জগৎ প্রেমে বাঁধা প্রেমের অনুখান || যারে দেখে তারেই ভাবে সবাই আপন জন | ভালবাসায় বাঁধা তারে দিয়ে হৃদয় মন || বাড়ীতে দুই কুকুর আছে ভাই বোনের প্রাণ | একটি হল “ধলী” আর অপরটী ওচমান || বন্ধু সোনার “ওচমান” নিস্তারিণীর “ধলী” | দুইটীতে বড়ই ভাব থাকে নিরিবিলি || জগতের প্রসাদ তারা পাবেই সদা পাবে | অন্য কোনও কুকুর সাথে ঝগড়া না করিবে || খেতে বসে বন্ধু মনি ছুঁড়ে দেয় ভাত | ‘ধলী ওচমান’ খেয়ে তাহা মিটায় মনের সাধ || এমনি ধারা খেলা চলে প্রেমের জগতে | প্রিয় সে যে শ্রেয় তিনি আছেন সর্বভূতে || . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
জগৎ-বন্ধু কবি অতীন্দ্র লাল দাশ রচনা --২৪ / ১১ / ১৯৫৭ শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া “ব্রাহ্মণ কান্দা ফরিদপুর দেড় ক্রোশ হয় দূর বাংলা ইস্কুল সেথা শহরের প্রান্তে জগৎ ত কচি খোকা কেমনে যাইবে একা কেবা যাবে তার সাথে নিতে আর আনতে |” ভাবে দিদি দিগম্বরী চিন্তায় চিন্তায় ভরি স্নেহ প্রীতি ভরা বুকে আকুল হৃদয় || জগতের বন্ধু যেবা কোথায় দেখেছে কেবা বন্ধুর অভাব তার কোথাও যে হয় ? স্নেহে অন্ধ দুনয়ন তবুও দিদির মন বুঝেও বুঝে না তা ভাবে নির্বিশেষ, ব্যাকুল চিন্তিত প্রাণে চেয়ে রয় পথ পানে চিন্তামণি তরে চিন্তা নাহি অবশেষে | * * * জগৎ সুন্দর সে যে সহজ সুন্দর সাজে রাতুল চরণ দুটি পথ চলি যায়, সঙ্গে সখা অনুচর নিবারণ গদাধর প্রাণ প্রিয় বকুলাল সাথে সাথে ধায় || সুকুমার সুন্দর গৌর কান্তি জলধর নিটোল নধর তনু নবীন কিশোর | তুলসীর মালা গলে হেলে দুলে নেচে চলে জগতের পথে সাথী বন্ধু মনোহর || করিয়া কৌতুক ব্যঙ্গ রঙ্গনাথ করে রঙ্গ জলধরে ডাকে কভু “জলা” “জলা” বলি গৌরাঙ্গের জগৎ আলা তাই ডাকে তারে “ধলা” জলধর চিত্ত উঠে পুলকে উছলি , তুলসীর মালা দেখি ডাকে “ধলা বৈরাগী” “বিবাগীর” তরে জাগে দিব্য অনুরাগ অনুরাগে হয়ে সিক্ত জলধর অনুরক্ত প্রেমের কমলে ফুটে ভকতি পরাগ | জলধরে ভালবেসে বন্ধু যায় তার বাসে জলধর ভাসে সদা বন্ধু-প্রীতি রসে, সঙ্গীদল নিয়া সাথে আনন্দ-উৎসবে মাতে খায় সবে ক্ষীর-ননী পরম হরষে || জলধর হরষিত পিতা তার পুলকিত চাঁদের বাজার বুঝি বসেছে ভবনে চাঁদে চাঁদে হাঁসা-হাঁসি মধুমুখে সুধারাশি ক্ষীর-ননী তুলে দেয় হৃষ্ট চিত্ত মনে || “দুঃখের হরণ করি বুঝিবা এসেছে হরি” অলক্ষিতে ভাবে মনে জলধর ঘোষ, এত হাঁসি এত খেলা এ যে গোলোকের লীলা হেরিয়া হৃদয়ে জাগে পরম সন্তোষ || . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |