কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা
*
সুন্দরে বন্দে
( সুর : মল্লার-কাহারবা )
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা --০৬ / ১২ / ১৯৫৭
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

চিত্ত চাতক ধায়               দিকে দিকে ছন্দে
বন্ধু হে, দেখি যেন               পরম আনন্দে |
আকাশের নীলিমায়
তারকায় তারকায়
নয়নে নয়নে হেরি             হৃদি নাচে ছন্দে ||
চরাচর ভেসে যায়
আলোকের বন্যায়
জগতের জ্যোতি সে যে          সচ্চিদানন্দে ||
সুন্দর বন্ধু
সুধা রস সিন্ধু
নিত্য সে উতরোল                নব নব ছন্দে ||
ফুটে উঠে শতদল
পঙ্কজ নিরমল
হেরি আয় বন্ধুর                   চরণার বিন্দে ||
ভকতি কুসুম দিয়া
ঢালিয়া সকল হিয়া
চঞ্চল চিত মোর                    সুন্দরে বন্দে ||

.                         ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জগৎ খেলা
( গান ) সুর--- মিশ্র ভৈরবী, তাল – কাহারবা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা --০৭ / ১২ / ১৯৫৭
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

রূপে রূপে রূপময়                     করিছ লীলা
রঙ্গে রঙ্গে খেলে যাও                রঙ্গের খেলা ||
কুলের হাসিতে হাস
সবারে যে ভালবাস
দলে দলে বিকশিত                       বরণ ডালা
দিকে দিকে খেল                  প্রভু জগৎ খেলা ||
সমীরণে বয়ে যাও
পরশি পরশি যাও
সুরভিত দশ দিশি                      জুড়াও জ্বালা
দিকে দিকে খেল প্রভু                   জগৎ খেলা ||

.                                 ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পরীক্ষা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা --০৮ / ১২ / ১৯৫৭
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বার্ষিক পরীক্ষা চলে জেলা বিদ্যালয়ে
বর্ষ শেষ হয়ে এল
বিদ্যা শিক্ষা কিবা হল
প্রশ্নোত্তরে জানা যাবে সংখ্যা মান দিয়ে ||
কেহ হয় চিন্তান্বিত আঁখি ছল ছল
প্রশ্ন পত্র নিয়ে হাতে
উত্তর কি হবে তাতে
ভাবিয়া ভাবিয়া চিত্ত হ’তেছে বিকল ||
কেহ লেখে মনোযোগী আপনার মনে |
আশার আলোক রেখা
চোখে মুখে দেয় দেখা
উত্তীর্ণ হইতে হ’ব উচ্চতর মানে ||
অষ্টম মানের ছাত্র বন্ধু গোপাল
লেখা পড়া নাহি করে
হেথা হোথা ঘুরে ফিরে
আনমনে কাটে তার সকাল বিকাল ||
কিবা চিন্তা করে সে যে অদ্ভুত বালক--
সবার পিছনে বসে
কোন কথা নাহি ভাবে--
ভাবিছে ভুবন সেন প্রধান শিক্ষক---
তবু করে ভাল ফল প্রতি পরীক্ষায়
কেমনে যে পাশ হয়
এ কথা রহস্যময়,
বুঝি বা নকল করে সন্দেহ না যায় |
প্রেমের গোপাল বন্ধু ভাবের কিশোর |
ইতিহাস পরীক্ষায়
“শ্রীচৈতন্য” প্রশ্নে পায় |
আত্মহারা হয়ে থাকে ভাবেতে বিভোর
শ্রীকরে লেখনী ধরি স্তব্ধ হয়ে ভাবে
নয়নে নিমেষ নাহি
উদাসী রহিল চাহি---
সহসা সমাধি ভাঙ্গে তিক্ত কটু রবে ||

আচার্য্য ভুবন সেন কহে রুক্ষ ভাষে
“অন্য খাতা দেখ তুমি,
বন্ধ করে দিনু আমি,
তাইত পরীক্ষা তব, বুঝহ আভাষে |”
চমকিয়া চলে যায় বন্ধু সোনা মণি
কহিল না কোন কথা,
বুকে ধরি আকুলতা,
গৌর প্রেমে পরিপূর্ণ করি হৃদিখানি ||
ভাবের জগৎ এ যে পরীক্ষার স্থান
সুখে দুঃখে সর্বভাবে
কর্ম ক্ষেত্র এই ভবে
পরীক্ষা অনলে শুদ্ধ তনু মন প্রাণ ||

.                                 ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সর্বদমন
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা --০৯ / ১২ / ১৯৫৭
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

রায় বাহাদুর রাখালবাবুর মহা তেজী ঘোড়া আছে
উন্মাদ সে যে দুর্দ্দম অতি দমে নাত কারো কাছে ||
তারিণীচরণে ডাকিয়া একদা রায় বাহাদুর বলে,
“দামী ঘোড়া মোর অকেজো হইল, এত টাকা গেল জলে |”
ইহা শুনি কহে বন্ধু গোপাল, “বাগাইতে পারি আমি”
তারিণী বলিল, “এমন কাজটী করিও না ভাই তুমি,
তাহারে বাগাতে পারিল না কেহ সারা রাঁচি সহরেতে,
তুমিত বালক, এ কাজ ভীষণ পারিবে না কোন মতে |”
ঈষৎ হাসিয়া জগৎ কহিল, “মেজদাদা, তবে শোন,
পশুরাজে আমি করিব মূষিক, ভয় করিও না কোন ||”

*    *    *    *      

একদা জগৎ চড়িয়া ঘোড়ায় বাহির হইল পথে,
উল্কার বেগে ছুটী অশ্ব সহসা অলক্ষিতে ||
রাখাল তারিণী ভাবিয়া আকুল শঙ্কা জাগিছে মনে,
সুকুমার তনু বন্ধু সোনার কিবা হয় কেবা জানে,
কোন বা গহনে গিয়েছে ছুটীয়া কোথা কন্ঠক বনে |
বুঝিবা বালক ভূতলে লুটায় মুর্চ্ছিত এতক্ষণে ||
স্নেহের গোপাল চলিয়াছে বুঝি মরণের পথে ধীরে,
তমসা রজনী বুঝিবা ঘনায় জীবন নদীর তীরে,
ছিন্ন কমল ভাসিয়াছে যেন প্লাবনের কলরোলে |
পরশ মাণিক বুঝি ডুবে যায় অতল জলধি তলে ||

*    *    *    *     

বহুদূরে যেথা আকাশ নেমেছে ধূসর ধরণী তলে,
যেন দেথা যায় আসে বুঝি ঝড় উড়াইয়া মেঘ জালে ||
ঘূর্ণি বাত্যা আসিছে ছুটীয়া উড়ায়ে পথের ধূলি |
দিকে দিকে কিবা ঘোষিছে বারতা বিজয় কেতন তুলি ||
উচ্চৈঃশ্রবার পিঠে বিরাজিছে সুকুমার দেবরাজ,
সপ্ত অশ্বে সবিতার সম শোভে জগতের সাজ ||
কেশরীর সম উড়িছে অলক ধূলি ধূসরিত অঙ্গ,
নয়নে খেলিছে দামিনী দীপ্তি বদনে হাসির রঙ্গ ||
সর্ব-দমন দমন করেছে দুর্দম তুরগেরে,
রায় বাহাদুর বিস্ময় মানে অপরূপে হেরে হেরে ||

.                               ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিষহরি
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা --১১ / ১২ / ১৯৫৭
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

তারিণী চরণ রাঁচিতে থাকে চাকুরী করেন সেথা |
বালক জগৎ সঙ্গে রয়েছে, ইস্কুলে পড়ে তথা ||
পাচক ঠাকুর, ভৃত্যেরে নিয়ে চলে ছোট সংসার |
গৃহ লক্ষ্মীরা কেহ নাহি তথা, ভৃত্য-তন্ত্র সার ||
মোটা মাইনের চাকুরে তারিণী, হিসাব নাহিক তার,
ঠাকুর চাকর ব্যস্ত সদাই বাহিরে বাহিরে কাটে |
বাজার হিসাব করিতে তাহার সময় নাহিক মোটে |
সুযোগ বুঝিয়া ঠাকুর চাকর দুহাতে লুটিয়া খায়,
বালক জগৎ আসাতে বাসায় মহা বাধা হল তায় |
বুদ্ধি দীপ্ত বন্ধু গোপাল থাকে আপনার ধ্যানে |
দুইটী চোরের অপকর্ম্মের কোন কিছু নাহি গণে |
হরণ বৃত্তি করে আচরণ অন্ধকারের জীব,
হরিল আঁধার জগতের হরি হেঁসে উঠে জীব শিব |
প্রমাদ গনিল দুই চোর তাতে সব বুঝি ফেঁসে যাবে,
ব্যবসার বাধা বালক জগতে সরাইতে হবে হবে |
অন্নের সাথে মিশাইয়া বিষ দিল সম্মুখে ধরি,
হাঁসি মুখে তাহা করিল গ্রহণ জগতের বিষহরি |
মূর্চ্ছিত হ’য়ে ভূতলে লুটায় সুকুমার তনুখানি,
বামুন ঠাকুর করে পলায়ন মনেতে শঙ্কা মানি |
বালকেরে দেখি ডাক্তার বলে, “মহাবিষ আর্সেনিক্”,
সকল শরীর জ্বলে যায় যেন দংশিছে বৃশ্চিক |
প্রাণের গোপাল বাঁচিয়া উঠিল যতনে চিকিত্সায়,
তারিণী তাহারে বক্ষে ধরিল ভালবাসি মমতায়,
ক্রোধেতে শাসায় পাষণ্ডের দলে পুলিশে দিবে বলি,
জগৎ বলিল, “ক্ষমা ক’রো দাদা, রাগ তুমি যাও ভুলি,
পাপ-প্রতিকার নহে শাস্তিতে, নহে প্রতিহিংসায়,
অনুশোচনার অনলে দহিয়া পাপী যে মুক্তি পায় |”

*    *    *    *

স্বার্থ দৈত্য মন্থন করে পাপের বারিধি জল,
লোভের পিশাচ ----দণ্ড ঘুরিছে উঠে তায় হলাহল |
জগতের শিব বন্ধু গোপাল কন্ঠে ধরিয়া তারে,
সে নীল কন্ঠে মঙ্গলরূপ পরকাশে বারে বারে ;
বিষের পাথার ইহ সংসার প্রলয় তুফান ঘোর,
কামনা তীব্র মদিরা নেশায় জীবন হ’য়েছে ভোর,
কালের আঁধারে ঢেউয়ের দোলায় ডুবিছে জীর্ণ তরী,
যুগে যুগে তাই আসে প্রেমময় জগতের বিষহরি |

.                            ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
খেলা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –০১ / ১২  / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

তাঁতি বন্দের                তাঁত চলেছে
রং বেরং এর খেলা
হরি নামের                  টানা পোড়েন
বন্ধু হরির লীলা |
তাসের নেশা                    বড় নেশা
অতি চমত্কার
ছেলেরা সব                     বসে গেছে
খেলা মজাদার |
হরিদাস  আর                    হরিদয়াল
জনা পাঁচ ছয়
তাসের খেলায়                 মজেছে মন
হয়েছে তন্ময়
বাদ সাধিল                         বন্ধু এসে
বাধায় গন্ডগোল
আরেক খেলা              খেল্ দেখি ভাই
বলরে হরি বোল
ছেলেরা সব                     মত্ত খেলায়
কেউ না মানে তারে
চিরিতনের                    চিচিং ফাঁকে
মন গিয়েছে উড়ে
হৃদয় রতন                    হারিয়ে গেছে
হরতনের ফাঁকে
ইসকাবনের                   তুরুক্ মেরে
ভুলে ভাগ্যটাকে
বন্ধু হরি                         ঘুচায় নেশা
বলে দেয় সব তাস
খেলা তেমন                   জমে না আর
সব হয়ে যায় ফাঁস |
তাসের খেলা                     সাঙ্গ করে
নূতন খেলায় মাতে
মধুর মধুর                        নাচে গায়
হরি নামের সাথে |

.                            ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নবদুর্গা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –০৪ / ১২  / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

তাঁতি বন্দের আকাশে বাতাসে উঠে আনন্দ গীতি,
বিশ্বজননী আসিয়াছে আজি বুকভরা স্নেহপ্রীতি |
সুনীল আকাশ ছিন্ন মেঘের অলস চাহনিখানি,
করেছে শোভন শারদ শশীরে স্নিদ্ধ বরণদানি |
গ্রাম পথে পথে শেফালী ধরিছে শুভ্র অমিয় রাশি
সরসীর নীরে ফুটেছএ কমল কিবা মায়া পরকাশি |
নব দুর্গার শ্যামল পরশ লেগেছে শষ্য শীর্যে,
পুলকে উছলি ব্যাকুল বনানী মাতিয়া উঠেছে হর্ষে |
লাহিড়ী বাড়ীর পূজামন্ডপে উঠে আনন্দরোল,
কি খেলা খেলিছে জগতের সাথে ভোলানথ শিশুদল |
কিশোর জগৎ সেজেছে মোহন গৌরী উমার বেশে,
রূপে ঝলমল উড়ে অঞ্চল কিরীট শোভিছে কেশে |
মৃন্ময়ী দেবী অসুর নাশিনী শোভে গিরিসুতারূপে,
স্নেহের দুলালী আসিয়াছে বুঝি হরিবারে সন্তাপে |
পদ্ম পলাশ আয়ত নয়নে শোভে কাজলের রেখা,
আনত বয়ানে ভুবনমোহিনী ফুটিছে হাসির লেখা |
করে কঙ্কন পায়ে বাজে মল চপল চরণে চলে,
গলায় শোভিছে বনফুলমালা কটিতে মেখলা দোলে |
নাচিয়া নাচিয়া করতালি দিয়া শিশুরা চলেছে সাথে,
হাঁসিয়া গাহিয়া জগতে ঘিরিয়া মহা উত্সবে মাতে |
নরনারী সবে আবেশে বিভোর হেরিয়া ও রূপ রাশি,
অপরূপে বুঝি এসেছে জননী সন্তানে ভালবাসি |
কেহ চেয়ে রয় অপলক আঁখি কেহ বা যুক্ত করে,
কেহ বা প্রণমে রাতুল চরণে পরম ভকতি ভরে |
বন্ধু আজিকে বান্ধবীরূপে জগৎতারিণী উমা,
নিখিল ভুবনে ভুবনমোহিনী প্রকাশ হয়েছে ভুমা |
চরাচর তাই মাতিয়া উঠেছে দিব্য মহোত্সবে,
হৃদয় তন্ত্রী বাজে অনাহত মহা ওঙ্কার রবে |

.                            ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অগ্নিশিখা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –০৫ / ১১  / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

শারদ নবমী ঊষা সময়েতে তাঁতি বন্দের গ্রামে,
পূজারী বামুন স্নান করিবারে ধীরে ধীরে ঘাটে নামে |
হেন কালে হেরে জ্বলিছে অদূরে জলের মাঝারে যেন,
সোনার বরণ শিখা অচপল দিব্য জ্যোতিতে হেন |
পরি গেল সাড়া ছুটে আসি সবে হেরিল বহ্নিশিখা,
কেবা নাহি জানে কিসের অনল কেমনে সে যায় দেখা,
অনল জ্বলিছে সলিলের মাঝে অনলে সলিলে মিশি,
তরুণ অরূণ ফুটিয়াছে যেন সকল তিমির নাশি |
অনল অনিল বৈরী যুগল কেমনে পরিল বাঁধা,
বরুণ বৈশ্বানরের রূপেতে চোখেতে লাগিছে ধাঁধা |
শত্রু হয়েছে বন্ধু আজিকে গভীর আলিঙ্গনে,
চির সুন্দর শিখা শতদল ফুটেছে সঙ্গোপনে |
হেনকালে সবে হেরিল সভয়ে আলোকে পুলকে ভাসি,
জলের মাঝারে জ্বলিছে অমল জগতের রূপ রাশি |
চিত্ত হরণ সোনার বরণ জগৎ উঠিয়া আসে,
নবীন কিশোর নব নব ভাবে নবলীলা পরকাশে |

.                            ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সংযমী
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –০৯ / ১২  / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

সুকুমার কিশোর জগৎ বন্ধু,
যেন রাকা শশি সুধাবিন্দু |
নিয়ম নিষ্ঠা পালে সযতনে,
নিয়মিত সময় কাটে সাধনে ভজনে |
আসন, শয্যা, অশন ভূষণ সকলই স্বতন্ত্র,
নবীন ব্রহ্মচারীর প্রতিমূর্তি জগৎ অতি পবিত্র |
বিদ্যালয়ে পড়ে পাবনা শহরে,
বালকেরা তাকে আপন মনে করে |
কেহ কেহ থাকে তাহার সঙ্গে,
সংযমেতে নিয়ন্ত্রিত সময় কাটে রঙ্গে |

#                  #                 #

কঠিন এক নিয়ম করেছে জগৎ,
অবশ্য উদ্দেশ্য তার অতি মহৎ,
ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠ্ তে হবে অন্যথা না হয় |
তাতে যেন বন্ধ হয় জীবনের অপচয়,
যারা ঘুমায় আশে পাশে |
ডাকা ডাকি করে শেষ রাত্রে তাদের নিদ্রা নাশে,
সঙ্গে যারা ঘুমায় একই ঘরে |
তাদের উঠায় ব্রাহ্মমুহূর্তে ভোরে,
ডাকে ডাকে ঘুম যদি না ছাড়ে |
বাঁধা পড়ে তারা কাপড়ে কাপড়ে |
উঠতে গিয়ে শেষে,
গড়ায় হেঁসে হেঁসে |
এ সব হল প্রেমের শাসন বন্ধু সোনার খেলা,
প্রেমের জগৎ প্রেমে মাতায় প্রেমের মধুর লীলা |

.                            ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ক্ষমাসুন্দর
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –০৯ / ১২  / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

পাবনা সহরে পাবনী খেলায় মেতেছে বালকবন্ধু
প্রেমসুধাকর ঢালে সুধারাশি আকুল প্রেমের সিন্ধু |
সরল সুবোধ সদা অকপটে জুটেছে কিশোরদল,
বন্ধু তাদের নয়নের মণি বন্ধু সে সম্বল |
জগৎ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে সেজেছে ব্রহ্মচারী,
সাধনে ভজনে নিয়ম নিষ্ঠা শুচি পূতঃ সদাচারী |

*     *     *     *     

সংসারী দেবী অসুর স্বভাব কিছু নাহি বুঝে তাহা
হিতে বিপরীত বুদ্ধি ঘটিল যেই জন বুঝে ভাবে যাহা |
ভাবিল “ছেলেরা গোল্লায় গেল জগতের সনে মিশে
লেখাপড়া আর হবে না কিছুই, কিবা হবে অবশেষে |
জগৎবন্ধু বিষের সিন্ধু তাহারে সরাতে হবে,
নতুবা মোদের ছেলেরা কেহই মানুষ নাহিক হবে |”

*     *     *     *    

অসুরের দল একদা জগতে করিল আক্রমণ,
করিল প্রহার অবোধ বালকে করিল নিষ্পেষণ |
কেমনে পালাল বালক জগৎ চতুর সে চূড়ামণি,
শিব-পূজারতা ছিলেন বসিয়া জগতের দিদিমণি |
জগৎ ছুটিয়া কোলেতে লুকায় ভীত শাবকেরসম,
পিছু ধেয়ে এল ধরিবারে তারে চর একা নিরসম |
দিদিমণি দিল তাড়াইয়া ; হেরিয়া স্পর্দ্ধা তার,
দিদির নয়নে নামিল অঝোরে দুঃখের অশ্রুধার |

*     *     *     *
সহসা জগৎ ঘুছাইয়া দেয় দিদির আননখানি,
বলিল, “অশ্রু তোমার এখনি থামাও থামা ওগো দিদিমণি |
একটী বিন্দু অশ্রু তোমার পড়িলে শিবের শিরে,
অশুভ ঘটিবে ধ্বংস নামিবে অত্যাচারীরে ঘিরে |
ক্ষমা কর দিদি ক্ষমা কর আজ সকলের অপরাধ,
ভুলে যাওদিদি ভুলে যাও সব ঘাটিও না পরমান |
দিদিমণি তাহে অবাক মানিল মুখেতে না সরে বাণী,
ক্ষমা সুন্দর বালক জগৎহৃদয়ে প্রেমের খনি ||

.                            ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর