কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা
*
মাতুল শ্রীহরি
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –৯৯ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
গোলকমনি দিদিমনি অন্তিম শয্যায়,
কত কথা স্মৃতিপটে কভু আসে যায়,
ভৃগুপদ-লাঞ্ছন জগতের বুকে
অপরূপ বনমালা দোলে কিবা সুখে ;
ফলিয়াছে জগতের ভবিষ্যৎ বাণী,---
বৈধব্যের ছয় মাস হ’লে দিদিমনি
চলেছেন দিদি আজি পরাৎপরধামে
জীবনের তটপ্রান্তে অন্ধকার নামে,
ডাকিল শয্যার পাশে যতনে সবারে
প্রবোধ, সুশীল, শশি সর্ব সন্তানেরে
“জগৎসুন্দরে ভাবি মাতুল শ্রীহরি
পূজিও তাহারে বৎস, সদা ভক্তি ভরি,
তাহা হ’তে হইবেক সর্ব বিঘ্ন নাশ |”
এত বলি ইহলোক ছাড়িলা নিঃশ্বাস ||
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
রঞ্জিতের অনুরাগ
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –৯৯/ ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
বন্ধু-ধনে ভালবাসে রঞ্জিত কিশোর,
হৃদয় হরেছে তার বন্ধু মনোচোর ;
প্রেমপূর্ণ সুদর্শন মেধাবী বালক,
বংশের গৌরবনিধি আশার তিলক,
বন্ধুগত-প্রাণ তার | শঙ্কিত হৃদয়
পিতা মাতা ভাবে সদা কখন কি হয়---
বন্ধু-প্রীতি-মতি-গতি ফিরাবার তরে
শতাবৃত্তি চন্ডীপাঠ হ’ল তার ঘরে |
বৈষ্ণবী-চন্ডীকা শক্তি সদা কৃষ্ণময়,
চন্ডী হ’তে কৃষ্ণভক্তি আরও উপজয় |
রঞ্জিতের বন্ধু-প্রীতি হয় ঘণীভূত,
কৃষ্ণ-প্রেমে মাতোয়ারা লাহিড়ীর সুত---
বন্ধু-সঙ্গ-লাভে তার পবিত্র জীবন
দিব্য-ভাব-রস-পূর্ণ তৃপ্ত তনু মন ||
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
বনমালি রায়
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –৯৫ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
হস্তী পৃষ্ঠে চলে রাজা বনমালী রায় ;
চকিতে হেরিল পথে নব গোরা রায়,
হেলে দুলে বাহু তুলে নবীন কিশোর,
হরি নামে নেচে গেয়ে নামেতে বিভোর |
মুগ্ধ হয়ে বনমালী নামিল ধূলায়,
বালক জগৎসনে পিছু পিছু ধায় |
সমধুর নামরোল জগৎ মাতায়
ঝঙ্কারী হৃদয়তন্ত্রী সুর মূরছায় |
আত্মহারা বনমালী বলে জগতেরে
“দীনালয়ে যাবে কিগো, প্রভু , কৃপা করে ?”
ভাবমুগ্ধ বন্ধুধন বলিল তাহারে
“বৃষভানু নন্দিনী যদি ইচ্ছা করে
যাইব সময়ে |” শুনি বনমালী রায়
ধন্যমানি আপনারে সুখ তৃপ্তি পায় |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
ফল দেখে নিও
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –৯৯ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
রাঁচি উচ্চ বিদ্যালয়ে উচ্চতম মানে
জগতেরে ভর্তি করি রাখে সযতনে
তারিণীচরণ | সদা জগতের ঘরে
হেথা সেথা পড়ে আছে থরে বিথরে
গীতা, ভাগবত, আদি, চৈতন্যমঙ্গল,
এই সব নিত্য-সঙ্গী পরম সম্বল ---
প্রেম-ভক্তি-তত্ত্ব কথা | দেখিয়া তারিণী
জগতের ডাক দিয়া শুধায় তখনি,
“স্কুলের পাঠ্য বই নাহি পড় যদি
ফেল করি মনস্তাপ পাবে নিরবধি |”
জগৎ বলিল, “তায় কিবা আছে বাধা,
ফল মোর ভাল হ’বে, দেখে নিও দাদা |”
পরীক্ষার ভাল ফল করে বন্ধু ধন,
ফল দেখি চমকিত সকলি তখন |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
বন্ধু-শিব
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২০ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
একনিষ্ঠ শিব-ভক্ত লাহিড়ী দম্পতি
গৌরকান্তি বন্ধু-শিবে ভালবাসে অতি ;
স্বর্ণ-সূত্রে রুদ্রাক্ষের মালা সযতনে
রচিয়াছে পরাইতে বন্ধু রতনে |
শৈব প্রাণ পুজে শিব ভকতি চন্দনে
ত্রিগুণের বিল্বপত্র নিবেদি চরণে |
বন্ধু শিব আসিয়াছে তাহার ভবনে,
দোলাইয়া দিল মালা হৃষ্ট-চিত্ত মনে ;
পদ্মাসনে উপবিষ্ট বন্ধু শিব গলে
উমাপতি গৌর কান্তি কন্ঠে মালা দোলে |
গলিত রজত যেন বন্ধু শোভা পায়
শুভ্র দীপ্তি শোভে ভালে অতুল বিভায় |
লাহিড়ী-দম্পতি হেরি পুলকিত মন
ভাবে, “শিব আবির্ভুত আরাধ্য রতন,
ভক্ত-বাঞ্ছা-কল্প-তরু আপনি শঙ্কর
আসিয়াছে কৃপাকরি দেব শুভঙ্কর |”
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
রাজর্ষি
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২০ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
তড়াসের ভক্ত রাজা বনমালী রায়
একান্তে পেয়েছে বন্ধু নবগোরা রায় |
প্রাণে প্রাণে কদত কথা নিভৃতে নির্জনে
বনমালী মন্ত্র মুগ্ধ মধু আলাপনে
কিশোর জগৎবন্ধু হৃদয়ের সখা
জীবন নিকুঞ্জে বুঝি এসে দিল দেখা |
বন্ধু সুধাকর রূপে উদিত অম্বরে
ডেকেছে প্রেমের বান জীবন সায়রে |
ভাব আছে ভাষা নাই, পূর্ণ প্রাণ মন
আপনি আপন হারা করে নিবেদন
লীলাময় কিশোরের চরণের তলে
স্বতস্ফুর্ত সম্বোধনে “প্রভু প্রভু”, বোলে |
“প্রভু” তারে সম্ভাষিল “রাজর্ষি প্রবর”,
মধুছন্দে স্নিগ্ধ হ’ল সর্ব চরাচর |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
জামাই বিনোদ
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –৯৫ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
রাজর্ষির রাজবাড়ী বনওয়ারীপুর
শ্রীরাধা বিনোদ সেবা চলে সুমধুর |
প্রবাদ র’য়েছে কত | কান্তারূপে কবে
আত্মসাৎ ক’রেছিল বিনোদিয়া ভাবে
ভক্তিমতী ভাবাবিষ্টা রাজ দুহিতারে –
তা হতে জামাই ডাকে সবে বিনোদরে ;
সেই মত সেবা দেয় সাজায়ে সম্পুট
চর্ব, চোষ্য, লেহ্য, পেয় আর তাম্রকুট |
একদিন সেবাকালে কহে বন্ধুধন,
“আসুন, রাজর্ষি, শুনি তামাক সেবন |”
এত বলি পরশিল বন-মালী তনু---
কৃপাস্পর্শে শিহরিল অনু পরমাণু---
দিব্য কর্ণে শুনি শব্দ বনমালী রায়
প্রত্যয় জন্মিল তাহে দ্বন্দ্ব চলি যায় |
মূর্তি শুধু মূর্তি নহে জীবন্ত দেবতা
ভক্তি-রসে লীলা তার চলিছে সর্বথা |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
অভিনব ক্ষমা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২০ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
পাবনা সহরে কবে জগতের গায়
আঘাত হেনেছে কেবা | বনমালী রায়
শুনি পায় মর্মব্যথা, শুধাল বন্ধুরে
তুমি নাকি চিনিয়াছ পাষন্ড পামরে
কিবা নাম, কেবা হয়, বল কৃপা করে
বড় ইচ্ছা হয় প্রভু তাহা জানিবারে |”
প্রভু বলে, “দন্ডদাতা কভু নাহি আমি
উদ্ধারণ বটে শুধু জীবে মুক্তি দানি |”
লিখিয়া জানায় তবু রাজ অনুনয়ে
বনমালী পড়িলেন অবাক বিস্ময়ে
“পাপরূপ হিমাচল শিরোদেশে ছিল
লাহিড়ী পবন বেগে উড়াইয়া দিল |”
রাজা আর রাজগুরু ভাবে বারে বারে
“ক্ষমার দেবতা বন্ধু ক্ষমিছে সবারে |”
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
হাকিম ফকির
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২০ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
কলিকাতা কলেজেতে পড়ে বকুলাল
মেসে থাকে! সকাল বিকাল
কাটে তার বাল্য-বন্ধু বন্ধুর বিরহে---
নবাগত তরুণের মর্মে যেন দহে --- ;
বন্ধু স্মৃতি বন্ধু-প্রীতি তার হৃদয়েতে |
বন্ধু এসে দেখা দিল তারে আচম্বিতে ;
বকুর বিষাদ-পুরী আনন্দে ভরিল,
বন্ধুর অমিয় বাণী ধ্বনিয়া উঠিল ---
ব্রহ্মচর্য-তত্ত্বকথা, চরিত্র গঠন –
পুণ্যালোকে হেরে বকু আশার স্বপন |
বকুরে জানায় বন্ধু সুধীর সুস্থির
“হয়ত হাকিম হবি নতুবা ফকির |”
* * *
কর্ম জীবনেতে বকু হইল হাকিম
হাকিমের বেশে যেন ফকির মহিম |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
শ্রীমূর্তি
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২০ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
কলিকাতা রাজপথে চলে বন্ধু সোনা
সাথে চলে বকুলাল বলে কথানানা |
চলিতে চলিতে পথে দেখে ফটো-ঘর
চিত্রালয়ে প্রবেশিল বন্ধু সুন্দর ;
মধু কন্ঠে নির্দেশিল, “ওগো গুরুদাস,
ফটো তোল আমাদের |” না হয় বিশ্বাস---
মুগ্ধ গুরুদাস হেরে রূপের সাগর
স্বর্ণ-কান্তি-নবারুণ নিটোল সুন্দর---
পদ্মাসনে শোভে যেন পূর্ণ শতদল ;
কৃতাঞ্জলি করপুটে প্রেমে ঢল ঢল
দাঁড়ায়ে রয়েছে বকু ভক্তি-পূর্ণ-প্রাণ
রাতুল চরণে যেন করে আত্মদান |
ছবি তোলা সাঙ্গ করি ভাবে গুরুদাস
“ধন্য আমি আমা হ’তে শ্রীমূর্তি প্রকাশ |”
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .