কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা
*
মাতৃ মিলন
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২১ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
জন্মস্থানে আসিয়াছে শ্রীবন্ধু সুন্দর,
চিত্ত মাঝে জাগিয়াছে কিবা ভাবান্তর ;
মস্তক মূন্ডন করি অবগাহি নীরে
শুভ্র বস্ত্রে অঙ্গ ঢাকি চলিয়াছে ধীরে
উপবিষ্ট হ’ল শেষে বিল্ব বৃক্ষমূলে
ন ‘মা দেবী ক্ষমাময়ী আমি সেইস্থলে
“বাবা, বাবা”, বলি ডাকে স্নেহসিক্ত সুরে,
হারা নিধি পেয়ে মাতা অন্তরে বাহিরে
আনন্দে অধীর হয়ে ভাবে মনে মনে
“আর ছেড়ে দিবে নাত মোর হারাধনে |”
নিজ কন্ঠ হ’তে নিয়া রুদ্রাক্ষের হার
পরাইয়া দেয় বন্ধু মায়েরে তাহার
বলে, “মাগো, আছি আমি এই মালা সনে”,
মুগ্ধ মাতা চেয়ে থাকে ও দাঁদ বদনে |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
রাধা নাম
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২১ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
রাধা-ভাবে বন্ধু সোনা প্রেমে ভেসে যায়,
রা-রা-রবে কল্প মূর্চ্ছা, নব গোরা রায় |
* * * *
সাথীরা বিহার করে নিয়া জগতেরে
নৌবিলাসে মাতিয়াছে ইছামতী নীরে |
কৌতুক করিয়া বলে “রাধে-রাধে- রাধে”
কি হ’তে কি হ’ল হায় সাধে বাদ সাধে |
শিহরণ তোলে তাহে বন্ধু—হিয়ায়
মূর্চ্ছিত হইয়া বন্ধু তরঙ্গে মিলায় |
সখারা শঙ্কিত অতি প্রমাদ গণিল,---
অবশেষে তরুতলে বন্ধুরে হেরিল ;
আবেশে অবশ অঙ্গ সফেন বদন,
বেদনায় ছল ছল করুণ নয়ন |
* * * *
“হরেকৃষ্ণ”কীর্তনেতে প্রকৃতস্থ করে
বন্ধুরে লইয়া যায় আপনার ঘরে |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
দুঃখীরামের দর্শন
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২১ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
মাতৃভক্ত দুঃখীরাম জপে মাতৃনাম
গভীর নিশুতি রাতে ক’রে ইষ্ট ধ্যান |
ধ্যানমূর্তি জ্যোতির্ময়ী প্রকাশিত হ’ল
আবেশেতে জননীরে ভক্ত জিজ্ঞাসিল,
“আমার স্নেহের ধন বন্ধু গুণমণি
স্বরূপেতে কিবা হয় বল গো জননী |”
সহসা পশ্চাতে শুনে দিব্য দৈব বাণী
“তুমি যারে কর ধ্যান তার বাবা আমি |”
নিমেষে হেরিল দুঃখী বন্ধু মনোহর
স্নেহের জগৎ তার নব নটবর |
চকিতে হেরিল পুনঃ ষড়ভুজধারী
ঊর্ধ করে ধনুর্বাণ মধ্যে বংশীধারী
দন্ড আর কমন্ডুল্ শোভে নিম্ন করে
দুঃখীর জগৎ ভাসে আলোর সাগরে |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
নন্দ ঘোষ
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২১ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
ব্রাহ্মণ কান্দা কক্ষমাঝে দ্বার রুদ্ধ করি
ধ্যান-রত রহিয়াছে প্রভু বন্ধু হরি,
বাইরেতে পদ শব্দ পে’য়ে বন্ধু বলে
“কেবা তুমি, কোথা বাস, কেন তুমি এলে ?”
সঙ্কোচে বলিল দুঃখী “আমি দুঃখীরাম,
উপদেশ চাহি কিছু ওগো প্রাণারাম |”
খস খস লেখনীর শব্দ শোনা গেল
দ্বার ফাঁকে পত্রখন্ড উড়িয়া পড়িল ;
আকুলিত দুঃখীরাম ফিরিয়া তাকায় |
আচম্বিতে পত্রখন্ড দেখিবারে পায় ;
কুড়াইয়া লয়ে পত্র পড়ে মনে মনে
“দুঃখীরাম নন্দঘোষ” দেখিল নয়নে |
দুঃখীরাম ভেসে যায় পুলক অশ্রুতে
দুঃখীর দুঃখের নিশি উজ্জ্বল আলোতে |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
সাত সম্প্রদায়
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২২ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
কার্তিক মাসেতে বিঘ্ন হইয়া কর্তন
রাস মঞ্চেতে নাচে মদনমোহন,
কার্তিকেতে গিরিধারী ধরি গোবর্ধন,
ইন্দ্র দর্প খর্ব করে দর্প নারায়ণ ;
কার্তিকেতে কাত্যায়ণী ব্রত উদযাপন,
কার্তিকেতে করে কানু বসন হরণ |
লীলাময় করে লীলা লীলার কিশোর
ভক্তবাঞ্ছা পূর্ণ করে ভক্ত মনচোর |
কার্তিকেতে মহাভাব সতত সঞ্চরি
কীর্তন যজ্ঞেতে মাতে প্রভু বন্ধু হরি |
মাসান্তে সংক্রান্তি দিনে সাত সম্প্রদায়ে
চতুর্দশ মর্দলনে ভুবন মাতায়ে
নগর কীর্তন নাচে জগতের হরি
“হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ” বলে “হরি, হরি |”
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
পতিতের হার
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২২ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
নগর উপান্তে বাস ঘণ্য বুনা জাতি,
হিন্দু হয়ে নহে হিন্দু নিম্নতর অতি,
অষ্পৃশ্যের অষ্পৃশ্য তারা নহে জলচল
মানুষ নামেতে শুধু মানুষ কেবল,
মানুষ আকৃতি মাত্র নাহি অধিকার
পশুর স্বভাব সদা আহার বিহার,
অন্তরে গুমরি কাঁদে পতিতের প্রাণ,
“কোথা মহা উদ্ধারণ, হায় ভগবান |”
নিষ্পেষিত মানবতা যুগ যুগ ধরি ;--
বেদনার ডাক শুনে জাগে ব্যথাহারী |
সর্ব গ্লানি অপসারি মহা নাম বোলে
পতিতের বন্ধু হরি হুঙ্কারিয়া চলে |
বন্ধু-হরি-কৃপা পেয়ে ধন্য বুনা জাতি,
আশার অরুণোদয়ে পোহাইল রাতি |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
হরিদাসের প্রতি
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২২ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
রজনী গো, প্রিয়তম নহ কভু হীন,
ভক্তিতেই মুক্তি সদা, হরি ভক্তাধীন |
রজনীর রজনীত্ব হয়ে যাক নাশ,
নব জীবনের প্রাতে জাগ হরিদাস ;
আজি তব নব জন্ম নবারুণ রাগে
হরি নামে দীক্ষা নাও হরি অনুরাগে |
ভুলে যাও সব গ্লানি সকল দীনতা,
নাম-মন্ত্রে জেগে ওঠ মানব দেবতা |
সুপ্ত সিংহ জেগে ওঠ নামের হুঙ্কারে,
সে ধ্বনি ঝঙ্কৃত হোক সর্ব চরাচরে |
তুমি, তব সম্প্রদায়, তোমরা মহান,
মোহান্ত উপাধি তাই জেনো, ভক্তিমান |
‘বুর্না ‘বন্য’ নহ কভু, ওগো ভক্তবীর”,
বন্ধু এই দিল দীক্ষা “সত্য, ধ্রুব, স্থির |”
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
কুলদা সুন্দর
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২৯ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
কুলবালা কুলবতী সুন্দরী বধু
চুরি করি আনিয়াছি কেবা অসাধু ;
মিত্রদের কালীবাড়ী রাখিয়াছে তারে |”
রটি গেল এই বার্তা গ্রাম বাকচরে |
হাটবারে হাটে কত পথচারী যায়
বিস্ময়েতে একজন অপরে সুধায় |
হাটে চলিয়াছে মিত্র ভক্ত গোপাল
শুনি সেই কথা হাটে, সকাল সকাল
হাট সেরে বাড়ী ফিরে মন্দিরে গেল
অবাক বিস্মিত নেত্রে বধুরে হেরিল ;
বধূ বটে বধূ নয় বন্ধু মনোহর
বধূবেশে মুখ ঢাকি এল বাক্ চর
বস্ত্রে ঢাকি সর্ব অঙ্গ, রূপের ছটায়,
লীলাময় শোভিতেছে অতুল বিভায় ;
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
নব গৌর
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২০ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
অন্নদাচরণ দত্ত ভকত প্রবর,
হরি পদে মতি সদা হরি পরাত্পর ;
হুগলিতে বাস তার ; আবেশে বিভোর
মনে প্রাণে অনুভবি, বলে, “নব গৌর
অবতীর্ণ ধরাধামে, কল্য প্রভু ঠিক
জলপথে স্টীমার যাবে নবদ্বীপ
স্টীমারে নব গৌর মিলিবে দর্শন |”
এই বাণী শুনি গেল যত ভক্তগণ,
পুরোভাগে বসি আছে স্নিগ্ধ শান্ত অতি,
বস্ত্রাবৃত সর্ব তনু উঠিয়াছে ভাতি |
মন্ত্র মুগ্ধ ভক্তগণ বসিয়াছে ঘিরি
তারি মাঝে শোভিতেছে জগতের হরি |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .
*
চকিতে মিলাল
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২৯ / ১২ / ১৯৫৮
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
প্রভু বন্ধু নামিয়াছে নবদ্বীপ ঘাটে,
ভক্তদল চলিয়াছে তারি সাথে সাথে |
দ্রুত পদে চলে যায় ও দুটী চরণ
ছন্দে ছন্দে ফুটে উঠে শুভ দরশন |
ভক্তদল ছুটিয়াছে নাহি পায় দিশা
নব -গোরা-সঙ্গলাভ-তরে জাগে আশা,
নয়নেতে হেরিয়া হেরি আশা না ফুরায়,
অন্তর মাঝে তারে ধরিবারে চায় |
নদীয়ার পথে চলে নব রূপ ধরি
নব গৌর সুকুমার প্রভু বন্ধু হরি |
চঞ্চল ছুটে চলে নব গোরা রায়
চকিতে পলক হানি চকিতে মিলায় |
সচকিত ভক্তদল দেখা নাহি পায়
শ্রান্ত দেহে ক্লান্ত পদে ফিরে চলে যায় |
. ****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি অ
তীন্দ্রলাল দাশের
পরিচিতির পাতায় . . .