কবি অতীন্দ্রলাল দাশের কবিতা
*
লোকোত্তর
"লোকগণনার মধ্যে নাপড়ি আসি", বন্ধুলীলা তরঙ্গিণী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৩৭
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২০ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

শ্রীবাস অঙ্গনে এল শ্রীবন্ধু সুন্দর
শরতের বাকা শশি যেন মনোহর,
দিব্যনন্দে পুলকিত গৌর বর্ণ তনু,
এক দেহে লীলা ক’রে গোরা আর কানু |
মনে পড়ে পূর্ব স্মৃতি কীর্তনের রোল
মন্দিরা মৃদঙ্গধ্বনি হরি হরি বোল,
আবেশে বিহ্বল হিয়া নব গোরা রায়
মধুচ্ছন্দে মধুনাম সুরে ভেসে যায়,
সপ্ত সুরে সপ্ত লোকে সপ্ত তন্ত্রী বাজে
লোকোত্তর সেই নাদ গোলকে রনিছে |
লোকোত্তর সেই ধামে বন্ধু গোরা রায়
নাহি আসে নরলোকে লোক-গণনায় |

*    *    *    *   

প্রেমের দেবতা শুধু প্রেম লোকে রহে,
হিসাবের নহে তাহা গণিবার নহে |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জ্যোতির্ময়
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৫০, শয়িরমঙ্গল মধ্যবর্তী
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২০ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

ভক্তবর সিতি-কন্ঠ নদীয়া-নিবাসী
আনমনে চেয়ে আছে গঙ্গাতীরে আসি
সাঁঝের আঁধারে হেরে শ্মশানের ধারে
ধিকি ধিকি চিতা যেন জ্বলে নদীতীরে,
ধূম্রহীন দিব্যজ্যোতি বহ্নিমান শিখা
অপূর্ব আলোক-রাশি যায় দূরে দেখা |
ধীরে ধীরে কাছে আসি দেখে ভক্তবর
জ্যোতির্ময় শুয়ে আছে শ্রীবন্ধু সুন্দর |
কি দেখিতে কি দেখিল ভাবে আত্মহারা
কিবা রূপ অপরূপ আলোকিত ধরা,
মধু কন্ঠে বেজে উঠে “শিতিকন্ঠ” ডাক |
মুহূর্তে রোমাঞ্চ হয় পুলকনির্বাক |
ভক্ত সাথে ভগবান মিলে এক সাথে
হৃদয়ে হৃদয়ে যোগ আনন্দেতে মাতে |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দুঁহু দোঁহা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২১ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

নবদ্বীপে হরি সভা নব বৃন্দাবন,
নটবর গৌরহরি সদা অধিষ্ঠান |
জগৎ হেরিছে তারে নব গোরা রায়,
হেম দন্ড বাহু তুলি দুনয়নে চায় |
দুঁহু হেরে দুঁহু জনে পুলকিত মন
ভাবে নাচে ভাবে গায় ভাবে নিমগণ |
শিহরে সকল হিয়া নব অনুরাগে
নিষ্পলক তন্দ্রাহারা দুটি আঁখি জাগে |
হৃদয়ে হৃদয়ে কথা ভাব বিনিময়,
প্রেমের তরঙ্গ উঠে প্রেমে হয় লয় |
দুঁহু কার রূপ সুধা দুঁহু করে পান |
আলয় সাগরে ভাসে আকুল পরাণ |
মরতে ফুটিয়া উঠে বৈকুন্ঠে গোলকের ছবি,
দুই তনু এক প্রাণ দুঁহু দোঁহা লভি |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
রাই-মাতা
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৫৫, রাইমাতা
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২১ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

নবদ্বীপে হরি সভা নব বৃন্দাবন,
কুটীরেতে রাই-মাতা করেন ভজন |
প্রতীক্ষায় থাকি সদা কাটে দিবানিশি
কবে এসে দেখা দিবে প্রভু গোরা-শশি |
একদিন নিশা-শেষে পথ পানে চায়,
নিমেষে হেরিল যেন নব গোরা রায় |
স্নান সারি ফিরিতেছে শ্রীবন্ধু সুন্দর,
রাই-মাতা দেখে তারে গোরা মনোহর |
দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে শবরীর সম,
বন্ধু রূপে এল তার প্রাণ-প্রিয়তম |
অন্তর-মন্দির পূজে করিয়া যতন,
এত দিনে এল তাঁর হৃদয় রতন,
তুলসী-চন্দনে তারে করিয়া অর্চনা
আপনারে ধন্য মানে পুরিল কামনা |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শিব বন্ধু
শিবের আনন্দ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৬৪
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২১ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

বন্ধু ভক্ত বৈদ্যনাথ থাকে পাবনায়,
বন্ধু কবে আসিবেন আছে প্রতীক্ষায় |
হেন কালে বন্ধু শশি হইলা উদয়
বৈদ্যনাথ হয় সুখী নন্দিত হৃদয় |
বুড়ো শিব ছিল তথা বৈদ্যনাথ ধামে,
বন্ধু সঙ্গ পেয়ে ক্ষ্যাপা ফুকারিয়া ভনে,
“জগা, জগা, এসেছিস্ আয় কাছে আয়
বুকেতে ধরিয়া তোরে হিয়াটি জুড়ায়,”
কভু হাঁসে, কভু কাঁদে, কভু নাচে গায় |
নাচিয়া নাচিয়া শিব বগল বাজায় |
আনন্দেতে কভু ভূমে গড়াগড়ি যায়,
ভাসিছে আনন্দ-স্রোতে ধূলা মাখি গায় |
বন্ধু-শিব, শিব-বন্ধু, বন্ধু শুভঙ্কর
হারান-জগৎ যেন আত্মা হরিহর |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সীতানাথের কৃপা
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৭০, আমার জায়গা ছিল না
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২১ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

হরিদাস মহিমের কীর্তনে একদা
তাল ভঙ্গ হ’য়ে হ’ল নিরানন্দ বাধা |
পরদিন উভয়েরে ডাকাইয়া আনি,
মৃদুমন্দ সম্ভাষিল বন্ধু অন্তর্যামী |
“মদমত্ত মহিমের তাল ভঙ্গ হল,
হৃদয়ে পাইনু ব্যথা অমৃতে গরল,
কীর্তন জীবন মম কীর্তন সাধন,
কীর্তনেতে বাধ সাধা প্রেমের নিধন” |
অপরাধী দুই ভক্ত মরমে মরিল
মহিমেরে সম্বোধিয়া শ্রীবন্ধু বলিল |
“লহ এই শিলা খন্ড সীতানাথ সম
এরে স্পর্শি বাজাইও এই বাণী মম |”
মহিমের হাতে তাই মঙ্গল শ্রীখোল
মধুর বাজিয়া উঠে হরি, হরি বোল |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তিনকড়ি
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৭৬, ডোমপল্লী
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২২ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

কলিকাতা ডোম পাড়া, তিনকড়ি মাঝি,
প্রাণ যেন সদ্য ফোটা ফুলে ভরা সাঝি ;
সুগঠিত কৃষ্ণদেহ মাথাভরা চুল
পাথরে খোদিত যেন মূর্তি সে অতুল,
ঢল-ঢল মুখখানি, নেত্র দুটি জাগে
সদাই ভাসিছে যেন বন্ধু অনুরাগে,
ভক্তিনম্র চিত্তে করে স্মরণ মনন,
বন্ধু প্রতীক্ষায় থাকে সারা দিন ক্ষণ |
বন্ধু কবে আসিবেন তার দীনালয়ে,
কবে দিবে শ্রীচরণে নিজেরে বিলায়ে,
প্রেমময় কৃপা করি কবে এসেছিলে,
কোন স্থানে লীলাময় বিশ্রাম করিলে,
সেই স্থান বন্ধু শ্রীতে আজও ভরে আছে |        
অঙ্গের সুবাস তার আজিও বহিছে |  
দীনালয়ে আটাসোটা দন্ডাছিল যত
শ্রীচরণ পরশেতে হইল রজত |
ধূপ ধুনা দিয়া সেথা করে সে অর্চনা |   
“ওগো বন্ধু এস এস” জানায় বাসনা |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তিন কড়ির বাসনা
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৭৭, ডোমপল্লী
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২২ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

হীন মতি ডোম আমি না জানি ভকতি,
তোমারে পাইব বন্ধু, নাহিক শকতি |
এ অধমে কৃপা করে এলে এক দিন
দীনালয়ে এসেছিলে মহাত্মা মহিম |
অতি দীন জেনে মোরে কৃপা করি কত
কতক্ষণ দন্ডা মোর করিলে রজত,
তার পর অন্তর্ধ্যান হ’লে অন্তর্যামী |
তোমারে সেবার ভাগ্য দিলে না ত’ স্বামী |
চাহি না চাহি না প্রভু রজত কাঞ্চন,
জনমে জনমে মোরে দিও শ্রীচরণ |
অঙ্গের সুবাসে তব মুগ্ধ প্রাণ মন,
অপরূপ রূপে হরি জুড়ালে নয়ন
পুরাও বাসনা মোর হে জগৎ স্বামী,
জীবনে-মরণে তোমা নাহি ভুলি আমি |

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সর্বসুখের সুখ
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৬০, সর্বসুখ সান্যাল
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা – ২২ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

কোলাহলে মুখরিত চলে রেল গাড়ী
তর্কাতর্কি বচসায় হয় বাড়াবাড়ি |
সর্ব সুখ নীতি মান সহিতে না পারে,
উপদেশ দেয় বহু শান্ত করিবারে,
হিতে হয় বিপরীত ফলে এই ফল,
ক্ষেপিল যুবকদল বাড়িল দঙ্গল ;
হাতা হাতি হয় বুঝি শঙ্কা হয় মনে
হেন কালে সৌম্য বন্ধু দাঁড়াল সেখানে |
সুন্দরের মুখে হয় অমিয় বর্ষণ,
স্তব্ধ হ’ল কোলাহল মুগ্ধ সর্বজন |
সর্বসুখ চেয়ে রয় নির্বাক আঁখিতে
প্রেমের দেবতা বুঝি এল কোথা হতে |
সর্বসুখ সর্বসুখে চলিয়াছে বাড়ী
দেহ শুধু চলে যায় মন গেছে চুরি ||

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রতাপের কৃষ্ণকথা           
২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৭৮, “গোকুলানন্দ”
কবি অতীন্দ্র লাল দাশ
রচনা –২২ / ০৯  / ১৯৫৯, উদয়পুর
শ্রীমতী মাধুরীকণা দাশ প্রকাশিত “পঙ্কজ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

প্রতাপেরে উপদেশ করে বন্ধু হরি,
“যুগল কিশোরে সদা ভজ নিষ্ঠা করি |
মানসে যুগল সঙ্গ করিবে সতত,
নিজেরে ‘অমুক’ দাসী ভাবিবে নিয়ত,
কৃষ্ণ গতি, কৃষ্ণ পতি, কৃষ্ণ কর সার,
কৃষ্ণ বিনা জগতের বন্ধু নাহি আর,
কৃষ্ণ জীবনের ব্রত, জপ কৃষ্ণ নাম,
কৃষ্ণ প্রেম পারাবার কৃষ্ণ গুণধাম,
কৃষ্ণ, কৃষ্ণ, ভাবে মজি ভাস আঁখি নীরে,
কায়মনো বাক্যে অর্চ শ্যাম জলধরে,
কৃষ্ণ,কৃষ্ণ লিখ আর পিও কৃষ্ণ-সুধা,
কৃষ্ণ-রসে মিটে যাবে সর্ব তৃষ্ণা ক্ষুধা,
কৃষ্ণই পরম বন্ধু বলি বার বার,
এই মোর মর্মবাণী জীবনের সার |”

.                    ****************                                
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর