কবি অতুলকৃষ্ণ মিত্রর গান ও কবিতা
*
অসংখ্য শিষ্যের মাঝে সত্যধর্ম্ম-প্রচাকর আছি দাঁড়াইয়া
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
ধর্ম্মবীর মহম্মদ গীতিনাট্য ( ১৮৮৫ ) থেকে।

সপ্তম অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য - মেদিনা - জুম্মামসজিদ

মহম্মদ ও শিষ্যগণ উপস্থিত।


মহম্মদ। --
অসংখ্য শিষ্যের মাঝে
সত্যধর্ম্ম-প্রচাকর আছি দাঁড়াইয়া।
সামান্য ভিক্ষুকবেশে,
মক্কা হ’তে পলায়নাবধি
ঈশ্বরের কত কার্য্য করিনু সাধন ; ---
ধ্রুব সত্য করিনু প্রচার কত দূরে।
কিন্তু হায়, কি কহিব
কিলহার-কাহিনী এখন---
জন্মভূমি--- প্রচারের আদিক্ষেত্রখানি
সুপবিত্র মক্কা, হায়,
এখনও বিধর্ম্মি-করে র’য়েছে রক্ষিত!
এত দূরে হইল বিস্তৃত,---
গৃহ-পাশে না হৈল প্রচার!
হিজিরা অবধি
যত কার্য সাধুনি উত্সাহে,
সে তালিকা শুন পুনর্ব্বারষ---
মৃদুতা ত্যজিয়ে, করে করি’ করবাল,
অস্ত্রবলে করিতে সত্যের সুপ্রচার,
বেদার নদীর তটে---এহোদের তলে
মক্কাবাসী সনে রণে মাতিনু বিষম ;
সন্ধিসূত্রে করিল বন্ধন সোফিয়ন ;
পুন ভঙ্গ করিল
বত্সর না ফিরিতে ফিরিতে।
সলমান-পরামর্শে
পরিখা খনন করি মেদিনা চৌদিকে
হটাইনু বিষেম সাহসে!
যিহুদা-সাহায্যকারী কোরাইদাগণ
দলে দলে হৈল পরাজিত!
হারেতের অনুজ্ঞায়,
রেণীমোস্তালেক বংশ
ঘোষণা করিল রণ বিরুদ্ধে সত্যের ;
মুহূর্ত্তের হৈল পরাজিত!
সশিষ্য চলিনু তীর্থদর্শনে মক্কায় ;
পুন সন্ধি হইল তথায়।
চলিনু খাইবার রাজ্যে সসৈন্যে আবার
বিতাড়িত যিহুদিয়গণ সনে রণে।
বহু পরিশ্রম করি’  
পরাজিনু পৌত্তলিকদলে।
দিলে বিষ রমণী জনেক ;
মাংস সনে উদরস্থ করি,  
অবশিষ্ট ফেলিয়া দিনু তিক্ত আস্বাদনে ;
দৈববলে বাঁচিয়া রহিনু!
দেহে কিন্তু রহিল সে তীব্র কালকূট!
পরে পাইনু বহু সেনাপতিগণে
ভিন্ন ভিন্ন দিকে
আনিতে স্ববশে---সত্য ধর্ম্মসংস্থাপনে।
পাঠাইনু পারস্য-অধিপ দন্তী খসরু সদনে ;
হিরাক্লিস রোমান সম্রাট্ কাছে দূত ;
পাঠাইনু মিসর-অধিপে ;
বালক খসরু বিনা
সাদরে লইল সত্য মম অন্য সবে।
পরে পুন তীর্থ-যাত্রাচ্ছলে
পশিয়া মক্কায়---পেনু
মহাবীর খালেদে স্বধর্ম্মে একেবারে।
সিরিয়া-বিজয়ে, হায়,
হারাইনু জাফারে জিয়দে
জিয়দ দীবন-ধন
প্রথম অবধি ছিল পাছে পাছে মের।
পরে, হায়, আছে ত স্মরণে সবাকার,
সামান্য বিবাদ করি’
মক্কাবাসী এত দিনে সন্ধিভঙ্গ কৈল।
আইল মিটা’তে সফিয়ন,
ঘৃণায় না করিনু সাক্ষাৎ।
আজি তাই কহিতেছি,---
গুপ্তভাবে চল, ধনুর্ধর,---
চল সবে মক্কা-অধিকারে।
মক্কা অধিকার বিনা
কার্য্য পূর্ণ হ’বে না কখনও।


আবুবেকার।---
প্রস্তুত সকলে, গুরুদেব!
সৈন্যসংখ্যা অসংখ্য এখন।


ওমার।---
সেনাপতিগণ
প্রত্যেকেই মহা-ধনুর্ধর।
আজ্ঞা দিন, রণবেশে সাজি’
উত্সাহে হই গে আগ্রসর।

.      **********************     

.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
রণমদে প্রমত্ত বীরবর নিকর
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
ধর্ম্মবীর মহম্মদ গীতিনাট্য ( ১৮৮৫ ) থেকে।

ষষ্ঠ অঙ্ক
তৃতীয় দৃশ্য - আহোদ পর্ব্বততল - রণক্ষেত্র
( হেন্দা ও পঞ্চদশ সম্ভ্রান্ত রমণীর সমর-সঙ্গীত )

॥ মালকোষ ॥

রণমদে প্রমত্ত বীরবর নিকর!
খর খর অসি করে করহ ঘোর সমর।
.        বীরাঙ্গনা মোরা করি বরণ,
.        উত্সাহ-,ঙ্গীতে মাতাইয়ে মন,
দিনু বিদায়, রণরঙ্গে বিচর ;---   
অরিশির ছিন্ন করি’ গর্ব্বে বিহর॥
.        পতিপুত্রহীনা মোরা অবলা,
.        প্রতিহিংসা-আশে বিক্ষোভে বিভোলা,
শান্তি দাও এ দগ্ধ-হৃদয়ে, হৃদয়হর,
দীরঘ নিশ্বাস ঘুচাইয়ে আঁখিবারি নিবার॥

.            **********************     

.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
ওই দ্যাখ দিদি ওই দ্যাখ
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
এমারেল্ড থিয়েটারে অভিনীত "নিত্যলীলা বা উদ্ধব-সংবাদ" গীতিনাট্য, আশ্বিন ১২৯৮ ( অক্টোবর
১৮৯১ ) থেকে।

প্রথম অঙ্ক
দ্বিতীয় দৃশ্য।
মথুরা - রাজ অন্তঃপুরস্থ এক কক্ষ।
( রোহিণী ও দেবকীর প্রবেশ।)

রোহিণী।
ওই দ্যাখ দিদি ওই দ্যাখ, কেমন সাজাচ্ছে দেখ?
আমরি মরি, এমন সোনার চাঁদ ছেলে কি, আর
কারো আছে দিদি?  

( উভয়ের করতালি ও গীত। )

আজু ভালি সাজে দুলাল।২
বাল গোপাল সাজে সাজে দুলাল।
সাজে বলদেও সাথে সাজে কানায়ালাল॥
ধটি ছটি পীঠ বাস্ কণ্ঠে বনমাল॥
শিরে শিখিপুচ্ছ চূড়া ধরজ ভূপাল,
বাজে বাঁশরি শৃঙ্গা মৃদঙ্গ রসাল॥
.        ______________

( গান করিতে করিতে রাম কৃষ্ণ কে লইয়া
উদ্ধবের প্রবেশ। )  

গীত।

পেখহুঁ দেওকী রাণী যুগল কিশোর তুঁহারি।
শ্বেত সাঙল রূপ, বিশ্বরূপ, স্বরূপ আকারি॥
নীল নলিনী দৌ নয়ন বিকাসিত,
মৃদু মধুরাধরে হাস্য বিভাসিত,
কুণ্ডল মণ্ডিত, গণ্ডযুগস্মিত,
অলকাবৃত বনোয়ারি।
ঝনরন ঝনরন, নূপুর বাদন,
নর্ত্তন জন মনোহারি॥

শ্রীকৃষ্ণ।---

গীত।

( আজ ) রাখাল সাজে সেজেছি মা মখন ননী দে।
ওমা তেমনি ক’রে আদর ভরে কোলে তুলে নে॥
.        কাঁদিয়ে কত কেঁদেছি মা,
.        তুইতো তেমন কাঁদাবি না,
হাসবো খেলবো নাচবো সুখে ভুলবো মা তাঁকে।
ওমা তেমনি করে আদর ভরে কোলে তুলে নে॥

.            **********************     

.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
( ওই ) নলিনী মলিনী ওর দিনমণি চলে যায়
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
এমারেল্ড থিয়েটারে অভিনীত “নিত্যলীলা বা উদ্ধব-সংবাদ” গীতিনাট্য, আশ্বিন ১২৯৮ ( অক্টোবর
১৮৯১ ) থেকে।

দ্বিতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য - অদূরে যমুনা হ্রদ - গোষ্ঠ-অস্তোন্মুখ সূর্য্য
( গাভী বত্স শয়ান-শ্রীদাম সুবল সুদাম ইত্যাদি রাখালগণ কদম্বমূলে অর্দ্ধ শায়িত অবস্থায় গীত। )

.                ॥ সুবলের গীত॥

( ওই ) নলিনী মলিনী ওর দিনমণি চলে যায়২।
কাঁদিয়ে কাটিয়ে নিশি ( পুনঃ ) হাসিবে প্রভাত যায়॥
.             অভাগা আমরা হায়,
.             কত দিবা নিশি যায় ;
কাঁদিয়ে কাতরে ডাকি ফিরেতো সে নাহি চায়।
দীন ব’লে দীননাথ বুঝিরে ঠেলেছে পায়॥

.        ( উদ্ধবের প্রবেশ )

উদ্ধব।
.                ॥ গীত॥
ওরে কেরে তোরা - কার তরে - ঝুরিছে নয়ান।
কি নিধি সে - কৈ নিয়েছে - কে হেন পাষাণ২॥

শ্রীদাম।
.                ॥ গীত॥
ওগে জীবনের সাথী, শৈশব স্যাঙাতি,
.        বড় ভাল বাসা ভাই।
হাসিতে হাসাত, নাচিতে নাচাত,
.        কাঁদিয়ে কাঁদাত নাই।

সুদাম।
.                ॥ গীত॥
আঁখিতে আঁখিতে, রাখিত থাকিত,
.        পিয়াতো পীযূষ বোল।
তিলেকের তরে, ইতি উতি গেলে,
.        তুলিত রোদন রোল।

সুবল।
.                ॥ গীত॥
হেন ভালবাসা, চরণে দলিয়ে,
.        ছেড়ে গেচে নিরদয়।
কাঁদিলে কাঁদে না, সাধিলে আসে না,
.        ডাকিলে না কথা কয়॥

উদ্ধব।
.                ॥ গীত॥
.    বিরহী শুন শুন বচন হামারি।
সখা তুয়া সুন্দর,         সর্ব্ব গুণাকর,
.        ধরম করম সদাচারী॥
তুঁহু লাগি বিকল,        সদত সুচঞ্চল,
.        নয়নে গলয়ে জলধারা।
হাহা রব করি,                কিবা দিবা শর্ব্বরী,
.        ঘুমত ফিরত চিতহারা॥
নব দূরবাদল,                শ্যাম মোহন তনু,
.        অতি ভেলো দুবরি বিষাদে।
সোরাথ নাহি ক্ষণে,        কম্পনে শিহরণে,
.        রোয়ত রহত অবসাদে॥

.            **********************     

.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
অভাগিনী জেলেখা না জীয়ে চাহিয়ে চাহিয়ে
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বেশ্যাসংগীত বাইজিসংগীত” (২০০১) গীত সংকলন থেকে নেওয়া।

অভাগিনী জেলেখা না জীয়ে চাহিয়ে চাহিয়ে,
কাঁদে চকোরী, চাঁদে সুধা না পিয়ে॥
যৌবন জাগে, যাচে সোহাগে,
প্রেম ভিখারিণী নব অনুরাগে ;
সাধে, বিশাদ আসে বাদ সাধিয়ে।
অভাগিনী জেলেখা না জীয়ে॥

থর থর কলেবর, নৈরাশ বিষধর,
করিছে জরজর, রহিয়ে রহিয়ে,
ভালোবাসা ভরা বুক, দংশে আসিয়ে।
অভাগিনী জেলেখা না জীয়ে॥

.            **********************            

.                                                                                                 
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
আমার জ্বালার উপর জ্বালা দেয় সে চিকন কালা সই
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বেশ্যাসংগীত বাইজিসংগীত” (২০০১) গীত সংকলন থেকে নেওয়া।

আমার জ্বালার উপর জ্বালা দেয় সে চিকন কালা সই,
বলে ভালোবাসার আশা ভালো, বাসিয়ে ভালো নই॥
সে যে ভক্তি দিলে প্রেমের কথা কয়,
প্রেমের আপন বোলে বাঁধন দিলে আপন হারা রয়,
এখন কোন পথে যাই, কার পানে চাই, কার কাছে কি কই।
সে যে ঠাঁই দিলে পায় চায় না কিছু, মিশিয়ে তাতে রই॥

.            **********************            

.                                                                                                 
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত “বাঙালীর গান” (১৯০৫) সংকলন থেকে নেওয়া। এই গানটি দেবজিৎ
বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বেশ্যাসংগীত বাইজিসংগীত” (২০০১) গীত সংকলনেও রয়েছে।

॥ মিশ্র ললিত, একতাল ॥

আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল।
সকলি ফুরায়ে যায় মা।
জনমের শোধ, ডাকি গো মা তোরে,
কোলে তুলে নিতে আয় মা॥
পৃথিবীর কেউ ভালো তো বাসে না,
এ পৃথিবী ভালো বাসিতে জানে না,
যেথা আ
ছে শুধু ভালো বাসাবাসি,
সেথা যেতে প্রাণ চায় মা॥
বড় জ্বালা সয়ে বাসনা ত্যজেছি,
বড় দাগা পেয়ে কামনা ভুলেছি,
অনেক কেঁদেছি কাঁদিতে পারি না
বুক ফেটে ভেঙে যায় মা।
স্বরগ হইতে, জ্বালার জগতে,
কোলে তুলে নিতে আয় মা॥

.            **********************            

.                                                                                                 
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
আমি কালারে পাইতে, সকলি ত্যজিনু
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বেশ্যাসংগীত বাইজিসংগীত” (২০০১) গীত সংকলন থেকে নেওয়া।

আমি কালারে পাইতে, সকলি ত্যজিনু
কত লোকে কত কয়।
কলঙ্ক পশরা              শিরে যার তরে
সে ধন অপরে লয়॥
কেমনে বা সই,             কেমনে বা রই,
কিসে বা বাঁধিব হিয়া।
আমার নাগর,                যায় পর ঘর,
আমার আঙিনা দিয়া॥
দেখিব যে দিনে,              আপন নয়নে,
তার সনে মোর কথা।
মুড়াইব কেশ,                ছিঁড়িব সুবেশ,
ভাঙিব আপন মাথা।
প্রাণনাথে মোর এমন করিল কে,
আমার এ প্রাণ,               জ্বলিছে যেমন
এমন জ্বলুক সে॥

.            **********************            

.                                                                                                 
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
( আহা ) প্রাণ দিয়ে সই প্রাণের ছবি হাতে এঁকেছে
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বেশ্যাসংগীত বাইজিসংগীত” (২০০১) গীত সংকলন থেকে নেওয়া।

( আহা ) প্রাণ দিয়ে সই প্রাণের ছবি হাতে এঁকেছে।
তুলিতে ললিতে ভালো তুলে লয়েছে॥
ভালো তুলেছ ললিত ঠাম, কমনীয় সম কাম,
চোখে মুখে ভালোবাসা উছলে দেছে।
ওলো তুলিতে ললিতে ভালো তুলে লয়েছে॥

.            **********************            

.                                                                                                 
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
( ও সে ) আমায় কেন কাঁদায় দিবা রাত
কবি গীতিকার অতুলকৃষ্ণ মিত্র
দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বেশ্যাসংগীত বাইজিসংগীত” (২০০১) গীত সংকলন থেকে নেওয়া।

( ও সে ) আমায় কেন কাঁদায় দিবা রাত।
( সে তার ) প্রাণের পানে চাইলে, বুকে সহায় শেলাঘাত॥
প্রাণেতে তার প্রেমের নিশানা,
দেখতে পেয়ে চাই পেতে তায় মানি না মানা ;
পাই কি না পাই, সাধ করে তাই কচ্ছি দেহ পাত।

.            **********************            

.                                                                                                 
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*