কবি বিদ্যুৎ ভৌমিকের গান ও কবিতা
*
লাল পতাকার গান বা মে দিবসের গান
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
সারাজীবন কম্যুনিষ্ট ছিলেন দুখীরাম কৈরী। আমার দাদাশ্বশুর। বাংলা ভালো বুঝতেন না।
হিন্দিতে লেখা আমার আসে না। তবু, সেই শ্রমিক কমরেডরই দাবীতে দুই ভাষায় মিলিয়ে
মিশিয়ে গান লেখার চেষ্টা। সময়টা ১৯৮৩।
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


সাথীদের খুনে লাল, লাল ঝাণ্ডা সামাল,
উঠো দুনিয়া বানানেওয়ালে মজদুর |
আয়া লড়নে কা ঘড়ি, মারো জরসে হাতুড়ি,
তোড়ো জমানেকো হর বদ্ দস্তুর ||

দুনিয়ার মজদুর এক হো,---
এহি হ্যায় ওয়ক্ত কি আওয়াজ |
মে দিবস তুলেছে আওয়াজ |
ক্রান্তিকে বাস্তে পকড়্ লো,
কায়েম করো জনতার রাজ
নাও পুরা হক ছিনে, নাও জীবনকে জিনে,
গোলামীকা জঞ্জীর করো চূর ||

ভুখো নাঙে নিকালো ওঠাও নারা,
লুঠেরার দোমহলা ধ্বসে যাক্ |
হর্ শাস হি তো আগ হ্যায় তুম্ হারা,
দুষমণ যতো পুড়ে হোক খাক্ |
মিছিলের পায়ে পায়ে, দাও মাটিতে মিশায়ে,
গরীব চুষনেওয়ালা সব হুজুর ||

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সাধের স্বাধীনতা হায়রে
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
অনেক মণিমুক্তো দিয়ে সাজানো স্বাধীনতা নিয়ে অনেক গান আছে | তবু বিষয়টা নিয়ে
বলার ইচ্ছেটা দমাতে পারিনি | ’৮২-র শেষভাগে এ গান লেখা |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


এক হাত থেকে আর এক হাতে
বদল হ’লো ছড়ি,
দেশটাকে ভাগ করলো ফেলে
স্বাধীনতার দড়ি |
দংশাইলো বাস্তু সাপে
জীবন পুড়ে ছাই,
নিজভূমে পরবাসী হলেম
ভাই হলো কসাই |
.                           আদর করে ডাকলে না হয় পদ্মলোচন নাম ধরে |
.                           ছেলেটা যে জন্মকানা ভোলাবে কেমন করে ||

নিকানো ঘর জুরে শাড়ী
গরম দুটো ভাত,
চোখ জুড়োনো সবুজ ক্ষেতের
স্বপ্নভরা রাত |
জানের দামে মানের বসত
চাওয়াই শুধু চাওয়া,
গুমরে কাঁদে লাখো পাঁজর
হয়নি কিছুই পাওয়া |

.                           আদর করে ডাকলে না হয় পদ্মলোচন নাম ধরে |
.                           ছেলেটা যে জন্মকানা ভোলাবে কেমন করে ||

সেই লাঠি সেই কয়েদখানা
সেই গুলি সেই গালি,
হুকুমজারির হাকিম হুজুর
বদলে গেছে খালি |
বুকের কথা আনলে মুখে
চাইলে অধিকার,
নামাবলির ঢাকনা খোলে
দেখায় দাঁতের ধার |                   
.                           আদর করে ডাকলে না হয় পদ্মলোচন নাম ধরে |
.                           ছেলেটা যে জন্মকানা ভোলাবে কেমন করে ||

আমার মায়ের বুকের আঁচল
টানছে দুঃশাসন,
আমার বোনের সিঁথির সিঁদুর
মুছলো দশানন |
আমার ভাইয়ের কলজে ভাঙা
রক্তে আরোয়াল,
বুকের মধ্যে মাদল বাজে
পলাশ ফোটে লাল |

.                            আদর করে ডাকলে না হয় পদ্মলোচন নাম ধরে |
.                            ছেলেটা যে জন্মকানা ভোলাবে কেমন করে ||

মরার জন্যে ধুঁকে ধুঁকে
বাঁচবো কেন আর,
বাঁচার জন্যে মরতে হবে
এই কথাটাই সার |
লড়লো যারা লড়ছে যারা
তাদের প্রাণের কথা,
নাফা লোটার সমাজ ভেঙেই
আসবে স্বাধীনতা |

.                           আদর করে ডাকলে না হয় পদ্মলোচন নাম ধরে |
.                           ছেলেটা যে জন্মকানা ভোলাবে কেমন করে ||

.              **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভোটের গান – ১
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
ভোটে রাজা বদলায়, দিন বদলায় না | তাই ভোট বিরোধী এই গান | ১৯৮২ তে রচনা | বহু
বহু মিটিং মিছিলে গাওয়া | সময় যেমন পাল্টেছে, তেমনি পাল্টেছে কিছু ছত্র, কিছু শব্দ |
এ গান আজও প্রাসঙ্গিক |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


ও দাদা জমছে না ভোটের বাজার,
ভোটের নেতায় বুকনি বেচেন চটকদার ||
সবাই ভাবেন দিল্লী যাবেন পাবেন গদি দিলবাহার ||

মিছিল সাজিয়ে মাইক বাজিয়ে,
ফাঁপা গলায় ফাঁকা বুলি মিটিংয়ে দিয়ে,
মন্ত্রী হবেন উর্দি পাবেন লুট-মহালের তহ্ শীলদার ||

কংগ্রেসী দেয় বাত দিনেক বানায় রাত,
শান্তি ঐক্য সংহতি সব আনবে কাটা হাত |
কুঁজোয় শোবে সটান হয়ে পঙ্গু ডিঙোবে পাহাড় ||

কি যে কয় পাগল, ( শুনে ) হাসে রামছাগল,
দর কমাবে চাকরি দেবে খুলবে বন্ধ কল |
বাঘে নেবে গো-রাখালি চোর হতে চায় চৌকিদার ||

ঐক্য সংহতি দেশের অগ্রগতি
খাটিয়ে মাথা বের করেছে দারুণ পদ্ধতি |
বসাবে গরুর গাড়ীতে হেড্ লাইট, ঠেলবে ঠেলা কম্পুটার ||

শরীর ঝাঁকিয়ে মুষ্টি পাকিয়ে
বামফ্রন্টী নেতারা বলেন ঘাড়টি বাঁকিয়ে |
আবার মোর্চা পাচ্ছি, দিল্লী যাচ্ছি দেখিয়ে দেবো চমত্কার ||

বেকার হটাবো, চাঁদ ধরে দেবো,
রুশ-মার্কিনী পুঁজি এনে ব্যাওসা বাড়াবো |
সাম্রাজ্যবাদ লুটুক নাফা, চাকরী হোক মামার শালার ||

ঐক্য সংহতি দেশের অগ্রগতি
রাষ্ট্র মোর্চা খিচুড়িতে দুরন্ত গতি |
বন্ধু রাজা হলে দেখিয়ে দেবো ন্যায়বিচার ||

আমরা শান্তিবাদী ভাই রাজ্যে শান্তি চাই,
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে খুন করি মাধাই |
নিরামিষ ছিল আমিষ হলো জ্যোতি-বচন বেদের বার ||

ভাঙতে আন্দোলন আছে সরস আয়োজন,
লাঠি পেটাই গুলি চালাই, নয় কথা গোপন |
কেন্দ্রের দৈন্য, পাঠায় সৈন্য আমরা নামাচ্ছি ক্যাডার ||

আমরা যত বিরোধী,  ছিলাম প্রতিবাদী
গদি পেয়ে হয়ে গেছে ঠ্যাঙাড়েবাদী |
এখন গদিই মোক্ষ গদিই লক্ষ্য জনগণের কপ্ নি সার ||

ঐ যে পৈতে টিকির দল আদবানি-অটল
( বলে ) চল্ ঘুরিয়ে চল পেছিয়ে, রামরাজত্বে চল
বাবরি ভাঙবো দাঙ্গা করবো লাগিয়ে দেবো ধুন্ধুমার ||

ওরা রামের ভক্ত নয় দেশের ভক্ত নয়
ভুজোর লোভে পূজোর বাড়ির পুরুত মহাশয়
হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের জুড়েছে জবর চীত্কার ||

যত লুটের কারবারী মুনাফার ব্যাপারি
আইন-আদালত মন্ত্রী পুলিশ সবই তাদেরই |
( ওরা ) মোদের অর্থে ওদের স্বার্থে ভোটে গড়ে এ সরকার ||

ভাই রে, নিজের ঘর সামলে হয়ো না বেহাল
ভালো করে বুঝে নাও এই ধাপ্পাবাজির চাল |
ভোটের ঘোটে সময় নষ্ট জোট বেঁধে লড়া দরকার ||

.              **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভোটের গান – ২
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


একবার ঠকলে ঠকের দোষ
( আর ) দুবার ঠকলে আহাম্মক,
ঠোকর খেয়ে বোকাও শেখে তিনবারে,
ঠেকে শেখাই আসল শেখা সংসারে ||
ফি বছরে ভোটের জ্বরে কত না বোলচাল,
দেঁতো হেসে নেতা ফেরান গরীব লোকের হাল |
দিন ফেরে না নেতা ফেরে আবার ভোট এলে পরে ||

বাইরে দেখি নেতায় নেতায় কতই চুলোচুলি,
অন্দরেতে বেজায় পিরীত হয়ে গলাগলি |
মোদের পাতে বেড়াল কাঁদে মেদ জমে নেতার ঘাড়ে ||
নিত্য চলে মিছিল মিটিং লড়াই লড়াই খেলা,
চাঁছা গলায় চাপান উতোর জবাব দেবার পালা |
শুনলে মগজ হাঁচোড় পাচোড় কান দুটো ভোঁ ভোঁ করে ||

ভালই বুঝি, লংকা, যে যায় সেইতো হয় রাবণ,
গদী পেলে একই চালে শোষণ আর শাসন |
ভোটে রাজা বদল হলেও রাজবদল তো হয় নারে ||

হাত চিতিয়ে চাইলে খাবার জুটবে মিঠে বুলি,
মুঠোয় করে ধরলে পরে ছুটবে সীসের গুলি |
মাথা তুলে হক চাহিলে ( দেবে ) ছ-ইঞ্চি ছোট করে ||

মিথ্যে আশা ঠক-গদীবাজ নেতার পিছে ধাওয়া,
এবার শুধু জোটের জোরে বাঁচারই গান গাওয়া |
ভোটের ঘোটে মিললো না যা নেব তা লড়াই করে ||

.              **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মনরে ভোলা
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
ভাঙে তবু মচকায় না, এমন মধ্যবিত্ত মানসিকতাকে আর্থিক বাস্তবতা থেকে তার ভবিষ্যৎ
এর কর্তব্য দেখাবার চেষ্টা ছিল | ১৯৮৩ তে তৈরী |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


ও কি হায়রে মন দিন কানা
আপন ভালা দেইখাও দ্যাখ্ লো না ||

আইজ তুমার যা খানিক আছে
লাখো হাতে তাও খুবলাইতাছে
দিশি বিদিশি মালিক জুজুর দলে |
যার কথা ভাইব্যা রইলা সইব়্যা
হেই পোলায় বাঁচাই বা কি কইব়্যা
কাইল য্যাখন আর কিছুই থাকবো না ||

খোকার বাপে করতো চাকরী
চৈদ্দ টাকার ইস্কুল মাষ্টারী
দুইটা সইন্ধ্যা বিশটা পড়তো পাত |
( অখন ) হাজার দুয়েক খোকায় কামায়
মাসের শ্যাষে ধার কত্তি হয়
বাজার আগুন সামলানো যায় না ||

নাফাখোরের হাজার কলে
হতাছি পিষাই সকলে মিলে
মরণ বাঁচন সবই একত্তরে |
আইজ নয় কাইল তো চুইষাই খাইবো
তয় ক্যান রে মোন পাছ ফিরাইবো
মরণ কামড় না দিয়া ছাড়বো না ||

.            **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পুরনো সেই দিনের কথা
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
নকশালপন্থীরা গুণ্ডা, খুনে ইত্যাদি অপপ্রচারের জবাবে, তাদের যারা ভালবাসতো, সেই
সব চাষীবাসীদের কাছে শোনা ; তাদেরই মনোভাবকে গানে বাঁধবার এই প্রচেষ্টা ১৯৮২
সালে |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


কিষাণ :    ও  সাথী ও---
.             ভুলিবা কেমনে
.             মশাল হইয়া আইসাছিলা
.             আন্ধার জীবনে ||  সাথী ও----
কিষাণী  :   ও বাছা ও---
.              রইলা কুথায় গিয়া
.              আর কবে জুড়াইবো পরাণ
.              মা ডাক শুনিয়া ||  বাছা ও---
কিষাণ  :    প্রথম যেদিন আইলা সাথী বুকের আগুন নিয়া
.              তখন তো বুঝি নাই লইবা বেদামা কিনিয়া || সাথী ও---
কিষাণী :    কোন্ মায়ের অঞ্চলের নিধি, ( কার ) নাড়ী ছেঁড়া ধন
.              কোন্ যাদুতে হইলা গাঁয়ের আপনের আপন || বাছা ও---
কিষাণ :     বাপ পিতামো’র বোঝা নিয়া খাইয়া বাবুর লাথি
.              আমরা চাষী ভুইল্যা ছিলাম সবাই মানুষ জাতি || সাথী ও----
কিষাণী :    য্যাখন য্যাখন কইতা কথা পুরুষ জনের সাথে
.              জ্বলতো আগুন ধিকি ধিকি চখের পাতাতে || বাছা ও----
কিষাণ :     তোমার কথায় লাগলো আগুন আইলো বুকে বান
.              চাষীর হাতে ঝকমকাইলো কাস্তে খরশান || সাথী ও----
কিষাণী :     ধইন্য তুমার গভ্যধারী ধইন্য তুমার মায়
.              মোন্দ কওয়া মোন্দ লোকের বাজ পড়ক মাথায় ||  বাছা ও----
কিষাণ :     তুমার কথা আছে মনে ( আছো ) বুকির মাঝখানেতে
.              মিসার জবাব দেবে কিষাণ হেঁসুয়ার ঘায়েতে ||  সাথী ও----

.                           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মানিককে মনে রেখে
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
কমরেড কাঞ্চন স্মরণে গেয়েছি | লেখা কিন্তু অনেক আগে | যতদূর মনে পড়ছে ‘৮২-র
শেষদিকে | বাহাদুরপুর থেকে বাসে সবজির বোঝা নিয়ে কৃষ্ণনগর আসার সময় বাস
দুর্ঘটনা | তাতেই মারা যায় যুবসংগঠন আর.ওয়াই.এল.এর কর্মী মানিক | শহীদ ? বিতর্ক |
তারই ফসল এ গান |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


সাত রাজার ধন মানিক আমার
ভাই গিয়েছে খোয়া |
বিন বাদলে খসলো আকাশ
বুকেরই লাগোয়া || আমার ভাই গিয়েছে খোয়া ||

পোড়া পেটের দারুন জ্বালায়
চলছে টহল জংলা জলায়,
সুযোগ বুঝে ফাঁদ পেতে যায়
খুন খেকো ফাঁদুয়া |
মানুষখেকোর দুনিয়াতে
রক্ত চোষার ভোজের পাতে,
লাল কলিজা চিরলো লেগে
চিকণ দাঁতের ছোঁয়া || আমার ভাই গিয়েছে খোয়া ||

ঢাকের বাদ্যি হাহাকারে
ভাঙছে বুকের কুয়াশা রে,
পাঁজর ফুঁড়ে জাগছে চারা
শিশির জলে রোয়া |
বলছে মরণ ফাঁদ গুঁড়িয়ে
কালিদহের পাঁক পুড়িয়ে,
চল্ গড়ে তোল্ নয়া বসত
বুকের খুনে ধোয়া ||

.        **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
যেখানে মিছিল
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
সেটা সম্ভবত ১৯৮২ | আমার সাংস্কৃতিক কর্মীরাও তখন একটু অন্ধ্র-উদ্বেল | সেটা
স্বাভাবিকত্ব | ‘অন্ধ্রপ্রদেশের নাগরিক মুক্তি কমিটি’-র সম্পাদক ডঃ বালগোপালকে পুলিশ
গুলি করে মেরেছিল | প্রতিবাদে স্মরণসভা আয়োজন করেছিল ‘বিপ্লবী লেখক বুদ্ধিজীবী
সংঘ’ স্টুডেন্টস হলে ; সেই সভায় গিয়েছিলাম | বিশেষ করে আমার কাছে এই গানটা
যথেষ্ট স্মরণীয়, কারণ ঐ সভায় উপস্থিত শ্রদ্ধেয় সুরেশ বিশ্বাস নিজে আমাকে ডেকে
গানটার গায়কি, পরিবেশনা এবং কথার প্রশংসা করেছিলেন | আমার কাছে সে এক
বিরল সম্মান |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


যেখানে মিছিল
.            মেজাজে ধারালো মিছিল চলে,
পাঁজেরের তাপে যেখানে দুচোখে
.                        আগুন জ্বলে,
মানুষ যেখানে গোলামখানার
.         ভিত ধরে মারে টান,
সেখানে তাদের দেখি,
সেখানে তাদের চিনি,
বাঁচার লড়াইয়ে একদিন যারা
.                কুরবানি দিল জান ||

.                নাম জানি আর নাইবা জানি
.                 চিনি কিংবা নাহি চিনি
.                 খুনের দামে হইয়াছে আপন
.                           ও শহীদের বন্ধু রে ----
.                 সাথী আমার পরম স্বজন ||

ভাতের মিছিল, রাতের মিছিলে
.            ভোরের আলো,
বেপরোয়াদের জবাবী মিছিল,
.                   রুখে দাঁড়ালো,
বাঁচার মিছিলে আজো ফুঁসে ওঠে
.             মরণ জয়ের গান,
সময় দিয়েছে ডাক,
ভীরুরা পেছনে থাক,
জয়ের মিছিলে দাঁড়াও বন্ধু
.             রাখো শহীদের মান ||

তোমার ঈমান সওদা করে
তোমার নিশান সামনে ধরে
রাম-রহিমের মাথায় মারে লাঠি |
.                   ও শহীদ বন্ধু রে ----
ভাঙ্গতে হবে বেইমানের এই ঘাঁটি ||

.        **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শক্ত হাতে ওঠাও হাতিয়ার
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
সমাজ বদলের লড়াই সশস্ত্র হতেই হবে, একথা দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক দু’ভাবেই সত্য |
দেশের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে সে সত্য তুলে ধরার চেষ্টা এই গান | সময়টা ১৯৮৪ |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


( ও ভাই )     শক্ত হাতে ওঠাও হাতিয়ার
.                কেড়ে নাও হকের মাটি |
.                               শক্ত হাতে ওঠাও হাতিয়ার ||

.                 মুক্তির লাল নিশান ওড়াও
.                 ভাঙ্গো দুষমণের ঘাঁটি ||

.                 কয় সেয়ানে যুক্তি করে মোদের পেটে লাথি মারে,
.                 আমরা মরি গতর খেটে নেপোয় মারে দুধের বাটি ||


.                 সাগর পারের গোরা ভূতে
.                 এলো যখন এই দেশেতে,
( ওরা )        কতই ফন্দি ফিকির করে
.                 ধনে প্রাণে নিল লুটি |

.                 তখন জানের বাজী ধরে দেশের মানুষ লড়াই ক’রে,
.                 মারের চোটে ভূত ভাগালো উল্টে দিল পাশার পাটি ||

.                 কিন্তু ওরা যেতে যেতে
.                 রেখে গেল ফাঁদটি পেতে,
.                 ওদের ধামাধরার হাতে
.                 দিয়ে গেল চাবিকাঠি |

.                 দেশী দালাল সামনে ঢলায় বিদেশী ভূত হুকুম চালায়,
( এসব )        ভূত ভাগানোর একই মন্ত্র বাগিয়ে দরো হাতের লাঠি ||

.                 মার্কিনী-রুশ সব বেনিয়া
.                 দেশী গাধার মদত নিয়া,
.                 রস চুষে খায় মোদের লাগি
.                 থাকছে শুধু শুকনো আঁটি |

.                আমরা মরি জোয়াল ঠেলে, ঠ্যাং নাচিয়ে ওদের ছেলে
.                গবগবিয়ে পোলাও গেলে, মোর বাছা খায় ফ্যানের বাটি ||

.                আমার দেশে ব্যবসা ফেঁদে
.                মুনাফা নেয় পুঁটলি বেঁধে
.                ঘাম ঝরিয়ে আমরা গড়ি
.                ওরা ফসল নেয় যে লুটি |

.                বন্ধু সেজে দিয়ে বুলি পেছন থেকে মারে গুলি,
( এসব )       ফন্দিবাজের ফন্দিবাজী শেকড় থেকে ফেলবো কাটি ||

.                 খুনেরা কি গেছিস ভুলে
.                 দেখ্ গে পিঠের কাপড় তুলে
( তোদের )    গোরাদাদার পিঠের দাগে
.                 আমার বাপের বাঁশের লাঠি |

.                 শহর গঞ্জ গাঁয়ের বুকে হাজার মানুষ উঠছে রুখে
.                ( তোদের ) নিকেষ করে দখল নেবো এই দুনিয়ায় সোনার মাটি |

.                     **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভ্যালারে উন্নয়ন
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
উন্নয়নের গাওনা তো নেতা-মন্ত্রীরা গেয়েই  চলেছ  চিরকাল | আমরা পেলামটা কী ? শুধু
বলি আর এঁটো কাটা |  তাই এ গান ৮৫ শোনানো শুরু |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত,  ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


(
নিশান্তিকা গণসঙ্গীত গোষ্ঠী প্রকাশিত সি.ডি. থেকে গানটি শুনুন এখানে ক্লিক করে . . . )
বাজে কাঁই না না কাঁই না না না ---
উন্নয়নের ভাঙ্গা কাঁসরখান ||

সাতচল্লিশে জহর কইলো,   দেশটা সবে স্বাধীন হইল,
ধৈর্য ধরি থাকো চুপ মারিয়া ---
শিশু রাষ্ট্র যদি বাঁচে, গড়বো সমাজবাদের ধাঁচে,
( এখন ) পেট পেচাইয়া বাঁধো গামছাখানা || রে কাঁই না না --- ||

তার বেটি সরেস এককাঠি, বুট বেয়নেট বন্দুক লাঠি,
দিয়া করলো ভারতভূমি চাষ---
অঢেল টাকা ধার করিল,   মুখে গরিবী হটাইলো,
তামাম দেশটা হইল রে শ্মশান || রে কাঁই  না না ---- ||

ধন্যি মায়ের ধন্যি পোলায়, একলাফে বিশ বছর লাফায়,
দেশ বেচিলো বিদেশীদের পায়ে---
ধারে মাথায় চুল বিকাইলো,  শিখের রক্তে হাত রাঙাইলো,
( আবার ) বন্যা খরায় অকালে যায় জান || রে কাঁই না  না --- ||

হেসে বলে শ্রীমনমোহন, ঘোমটার নীচে খেমটার নাচন
নাচবো না আর, নাচবো খোলাখুলি----
খুল্লমখুল্লা দাদা এসো,  নাফার বেওসা খুলে বসো,
যায় যদি যাক ভারতভূমির মান ||    রে কাঁই না  না ---- ||

আগমার্কা হিন্দুত্বের পোলা  রাম নাম নিয়ে মারণ খেলা
মন্দির-মসজিদ-দাঙ্গায় পটু ভারী---
আমরা যতো হাড় হাভাতে   ছুরি ধরায় তাদের হাতে
আওয়াজ তোলে হিন্দু-হিন্দুস্তান || রে কাঁই না  না -----  ||

মন মোহিনী আজব দাওয়াই, জ্যোতিবাবুর দোকানে পাই,
লাল বুলি আর লাল কাগজে মোড়া ---
( ওদের ) বাইরে যতো গালাগালি, তলায় তলায় ঢলাঢলি,
একই আত্মা একই মনপ্রাণ || রে কাঁই না না -----  ||

গরীব গুর্বো আমরা যারা,  একেই আছি জ্যান্ত মরা,
বেল্ট কষণের জায়গা নাই কোমরে ---
( ওরা ) হাড় খাইয়াছে মাস খাইয়াছে, চামড়া কেবল বাকী আছে,
( এবার ) তাতেই হবে ডুগডুগি বাজান্ || রে কাঁই না  না ---- ||

.                     **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর