কবি বিদ্যুৎ ভৌমিকের গান ও কবিতা
*
গান বলিয়ের গান
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
কবে কি সূত্রে এ গান এসেছিল মনে নেই | সম্ভবত ১৯৯৭ এ নকশালবাড়ীর ৩০ বছর
উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রথম গেয়েছিলাম |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]

(
নিশান্তিকা গণসঙ্গীত গোষ্ঠী প্রকাশিত সি.ডি. থেকে গানটি শুনুন এখানে ক্লিক করে . . . )
      

যদি গতর খেটে ভাত কাপড় আর
.                  কাজ না মেলে |
তবে আজ শুধু নয় একশ বছর পরেও
.               অন্য ভুখ-মিছিলে
( আমি ) ধরবো হাতে মার্কস-লেনিনের মাওবাদেরই
.               লাল নিশান, আর
বাঁচতে গেলে লড়তে হবে
.               তুলবো শ্লোগান ||

( যদি ) রস জুগিয়ে অন্নদাতা চাষীর ছেলে
.                 রয় উপোষী |
লোভের থাবায় নীল হয়ে যায় শিউলি মেয়ের
.                 ঝরণা হাসি |
মাটি-মা বেদখল যেথায় ফন্দীবাজী
.                 গায়ের জোরে,
আমি ধরবো লাঠি হা-রে-রে-রে ;
বুক ফাটিয়ে তুলবো তুফান
.                  বলবো হেঁকে,
বলবো তামাম জমির মালিক
.                  তুই রে কিষাণ ||

কলে তালা, চিমনিতে জং জাত মজুরের
.                 কাজ জোটে না |
ঘোলাটে চোখ ফোঁপরা পাঁজর, চিমনিতে
.                 ধোঁয়া ওঠে না |
টেবিল ঘিরে মজুর-মারা লড়াই ভাঙার
.                 কচ্ কচানি |
( আমি ) সইবো নাকো এ বেইমানি, তুলবো
.                  মে দিবসের আজান,
ঢেউ জাগাবো, ঢেউ জাগাবো, হবো
.                  ভিখারি পাশোয়ান ||


হাত আছে তাও বেকার যারা কাজ খুঁজে
.                যায় হন্যে হয়ে |
সাট্টা চোলাই টক সিনেমায় মগজটাকে
.               নুন জারিয়ে |
খাচ্ছে যে সব ধান্দাবাজে তাদের পাশা
.                উল্টে দিতে ,
( আমি ) সুর শেখাবো অন্ধ্র-বিহার, স্বপ্নে দেবো
.                প্রাণেরই গান |
দিন বদলের লড়বে লড়াই
.                তরতাজা প্রাণ ||

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সময়ের ডাক
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ক্রমশ বাড়তে থাকলো | ২০০২ সালে সেই
সন্ত্রাসের এবং রাজনৈতিক পেশীবলের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাইছিলাম | তাই---
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


সময়টা গোলমালে চোখ কান রাখো খুলে, সামলাও-----
দু-আনি চার-আনি নেতা রাঙা চোখে কয় কথা
.                                  গদি দেয় এ ক্ষমতা || সামলাও ||
দুশো পঁয়তিরিশের নেতারাই বড়লাট |
ঘাড় যার উঁচু তার কান ধরে মারে চাট্ |
থানাতেই বাঁশডলা হাড়গোড় ভেঙে ফেলা,
ঠুকে দেয় গোটা দশ মামলাও ||  সামলাও ||

ছা-পোষা মানুষ বলে সব সয়ে যাচ্ছো |
কানে তুলো, চোখে ঠুলি, মুখ বুজে থাকছো |
তোমার বুকের ব্যথা, তোমার প্রাণের কথা,
তোমার দাবী কে তোলে ! ভাবছো ?
বুকনিতে ভুলো নাকো, চোখ কান খোলা রাখো
বন্ধুকে চিনতে শেখো  সামলাও ||  সামলাও ||

যারা সত্যিটা বলে, যারা চায় মুক্তি |
তারা সন্ত্রাসবাদী, বিটকেলে যুক্তি |
বুট বেয়নেট ধরে, ভোটে গড়া সরকারে,
দমন পীড়ন করে মার্কসেরই উক্তি |
এনকাউন্টার করে রাম-বাম সরকারে
এবার লড়াই ধরো, হামলাও || সামলাও ||

ভয় পেলে ঘেউ ঘেউ করে নেড়ী কুত্তায় |
বাগিয়ে ধরলে লাঠি লেজ মুরে ধা-পালায় |
আকাশে মেঘ ঘনালো, পাঁজরে মশাল জ্বালো
মুষ্টি পাকিয়ে হিম্মত আনো কলিজায় |
পায়ে পা মিলিয়ে থাকো, বুকে হিম্মত রাখো,
একতার জয় গাও | হামলাও || সামলাও ||

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
‘মত প্রকাশের অধিকার’
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
বন্ধু গৌর চক্রবর্তী, আমার গৌরদা আজ জেলে | তারই অনুরোধে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
বিষয়ে আমার মত প্রকাশ করতে এইটি এবং পরের গানটি দিয়েছিলাম | ছাপাও হয়েছিল,
“রাজনৈতিক মতপ্রকাশ” পত্রিকায় |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


সঠিক বুঝে মানতে পারলে
আমার মতটা পাই,
আমার হাতে আমার কলম
লিখবে সে মতটাই |
কালো কি আর সাদা হবে
সোনার কলম দিলে
লেখা বন্ধ হবে হাতের
পাঞ্জা কেটে নিলে |
.                         তখন আমি লক্ষ হাতে-লক্ষ হাতে লিখবো,
.                         হাতিয়ারের জোরটা আসল, সেটাও বুঝতে শিখবো |

তোষামোদের ধার ধারি না
বলবো দিয়ে যুক্তি,
সেই পথেতেই আমার চলা,
যে পথ শেষে মুক্তি |
বলা বন্ধ করতে হলে জিভটা নিও ছিঁড়ি,
চলা বন্ধ করতে পারে
পরাও ডাণ্ডা-বেড়ি |
.                          তখন আমি অযুত-পায়ে পায়ে চলবো,
.                           ডাণ্ডা-বেড়ির বাঁধন ঠুনকো, বুক ঠুকে তাও বলবো ||

গান তো আমার বুকের ভাষা
স্বপ্নে মাতোয়ারা,
লড়াই জেতার ছন্দে সুরে
আকাশ মুঠোয় ধরা |
পারলে গলার নলি কেটে
আমার এ গান থামাও,
তোমার আছে সেই ক্ষমতা
গুণ্ডা পুলিশ নামাও |
.                              তখন আমি কোটির গলায়-কোটির গলায় গাইবো,
.                              গানের ভাষায় মুক্তি আদায় করে নিতেই চাইবো ||

মুখদেখি বা মুখোশ দেখি
দুটোই দেখি স্পষ্ট
চোখের আলোয় দেখি, দেখাই
মেকী এবং ভ্রষ্ট
দেখবো নাকো নাকের ডগায়
লোভের চশমা ফেলে
দেখা আমার বন্ধ করবে ?
চোখ দুটো দা’ও গেলে |

.                              তখন আমি সবার চোখে দেখবো নতুন সৃষ্টি
.                              দুনিয়াটাই বদলাবো তাই পাবো আবার দৃষ্টি ||

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মত প্রকাশের অধিকার ‘কিন্তু’
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


কাগজ আছে, আছে কলম, লেখো অনেক কথা,
গল্প লেখো, গদ্য লেখো, লিখে যাও কবিতা,
হুদো হুদো লিখেও কিচ্ছু না লেখাটাই চাই,
মান, যশ আর নগদ পাবে অভাব কিছু নাই’ |
.        অদ্ভুতুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশে,
.        একটা শুধু ‘কিন্তু’ আছে, বলবো সেটা শেষে ||

কথা বলো যেমন খুশী, চেঁচিয়ে মাতাও পাড়া,
তেড়ে-ফুঁড়ে বক্তৃতা দাও পড়ুক দেশে সাড়া |
অনেক বলো আসল কথা কিচ্ছুটি না বলে,
নেতা-মন্ত্রী বানিয়ে দেবো দিল্লী যাবে চলে |
.        অদ্ভুতুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশে,
.        একটা শুধু ‘কিন্তু’ আছে, বলবো সেটা শেষে ||

গাল ফুলিয়ে গান গেয়ে যাও তা তুন্ তুন্ তা না না,
টপ্পা, খেয়াল, পপ্ বা গণ কেউ করেনি মানা |
যুদ্ধ জয়ের গান ফাঁদা ভুল এইটি মনে রেখো,
মনের আগুন চাপা দিয়ে ভোগের জলুষ দেখো |.        
    অদ্ভুতুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশে,
.        একটা শুধু ‘কিন্তু’ আছে, বলবো সেটা শেষে ||

সব ধরণের মতপ্রকাশের অধিকার বহাল,
সরকারী মত না মানলে তো ফুলবে দাদার গাল |
অদ্ভুতুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশে,
মাওবাদী মত সন্দ হলে পুলিশ ধরবে ঠেসে ||

.              **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভ্যালারে উন্নয়ন
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
রাজারহাটে উন্নয়ন ও নগরায়নের পলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অনেক চাষী পরিবার |
এই গানে এমনই একটি পরিবারের সর্বনাশের ছবি তৈরী করতে চেয়েছিলাম |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


.            একটা গল্প শোনো |
.            দাদা একটা গল্প শোনো ||
.            ও বোন ও মা একটা শোনো
.            গল্প, তবু কল্পনা নয় সত্যি জেনো ||

.       এক যে ছিল মিষ্টি মেয়ে গরীব চাষীর ঘরে
.       অঢেল পেতো বুকের আদর খাবার পেতো কম
.       বাপ মায়েতে যত্ন করে নাম দিল শবনম ||

বিঘে দেড়েক মাটি                            সকাল সন্ধ্যা খাটি
.        জোটে কেবল মোটা কাপড় পান্তা লংকা-পোড়া |
মেয়ের আধো বোলে                       সুখের ঢাকনা খোলে
.       সাঁঝ বেলাতে ঘোড়া ঘোড়া খেলতো বাপ বেদম ||

.        লাউয়ের ডগার মতই মেয়ে লকলকিয়ে বাড়ে,
.        হাসলে মেয়ে খিলখিলিয়ে চাঁদের পরীর খেলা,
.        ঠোঁট ফোলালে নথ-পেতলে কদম ফুলের মেলা |

হাত লাগালে কাজে                           আজান ঘন্টা বাজে
.        তকতকে ঘর উঠোন দাওয়া বেহস্ত হয়ে যায়
মা ডাকে শবনম                                 আব্বা ডাকে শবু
.        খেজুর গাছের ছায়ায় বাঁধা গাই ডাকে হুম্ হুম্ |


তারপর উন্নয়নের দৈত্য এলো

.                    কার দোষে এমন হলো, যা ছিল তাও নাই—
( ভালোবাসার )  কুঁড়ে গুঁড়িয়ে দিলো, গাছের তলায় ঠাঁই ||
.                    ক্ষিদের দায়ে মা বেটি যায় বাবুর বাড়ী কাজে,
.                    বড়লোকের এঁটো সবাই খায় রোজানা সাঁঝে |
.                    হইল চাষী রিক্সাওয়ালা, চাষী বৌ হয় দাসী---
.                     ময়দানেতে নেতায় হাসে উন্নয়নের হাসি |
.                     কার দোষে এমন রে হইলো, যা ছিল তাও নাই ---
( বুকের )          পাঁজর লাজে রাঙ্গাইলো উন্নয়নের মুখে ছাই ||
.                     মা মরেছে, বাপের যক্ষা, পেট বড়ো বালাই
.                     সন্ধ্যে হইলে বাবু খুঁজে শরীর বেচতে যাই |
.                     মেয়ে ছিল, বেবুস্যে হইলো, কার জীবন কে পোড়াইলো....
( ঐ )                উন্নয়নের দানোয় খাইলো জান মান ইজ্জত সগলটাই ||


তাইতো বলি দেখে শেখো, ঠেকে শেখো

.                    যা হয় কিছু করো বাপু যা হয় কিছু করো |
.                    ঘেন্না হলে থুথু ছেঁটাও রাগলে ধরে মারো |
.                    নামিয়ে মাথা বুকের ব্যথা সহ্য করা ছাড়ো ||
.                    প্রাণের কথা শিরায় শিরায় গুমরে গুমরে মরে,
.                    ক্ষিদেটা সয়, সয় না বাঁচা অপমানের ঘরে |
.                    মুখ বুজে নয় বুক চিতিয়ে আওয়াজ তোলা ধরো ||


.                            **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শিল্পায়নের পাঁচালী
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
শিল্পায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে বিতর্কের যে ঝড় বছর চারেক আগে শুরু হয়েছিল তাতে আমার
সামান্য অংশগ্রহণ এই গানের মারফৎ |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


বিষের ভাণ্ড মধুর ঢাকনি মিষ্টি বুলি দুষ্ট কাজ,
চাষীর গলায় ফাঁসির দড়ি তা ঢাকতে বোম্বাই আওয়াজ |
ভদ্রলোকের অপকম্ম জাঁকজমকের আড়ে |
বামুন মশাই ধরলে ঘন্টা বেদম জোরেই নাড়ে |
.                  কৃষি আমাদের ভিত্তি জিগির তোলরে জগাই, তোল মাধাই,
.                  কাঁচা ভিত্তি চাকনাচূর কর শাবল কোদাল চল শানাই ||

শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ শুনতে ভাল্লাগে মশাই,
পুঁজিপতির ঢের মুনাফা গরীব পাবে চুলোর ছাই |
সরকার করে চাষী উচ্ছেদ উন্নয়নের পিটিয়ে ঢাক,
একর কিছু বাম সরকার দালালী খায় কয়েক লাখ |
.                    শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ জিগির তোল জগাই মাধাই
.                    ( কৃষির )কাঁচা ভিত্তি চাকনাচূর কর, রাওলাট আইন চল শানাই |

উড়ালপুল উপনগরী খাবো, না মাখবো মাথায়,
স্বাস্থ্যনিবাস মোটরগাড়ী কার ভোগে কার পরাণ যায় |
ক্ষতিপূরণ পুনর্বাসন নতুন চাকরীর জারী গাও,
চোরবাজারে নিলেম হাওয়া পুরান কথা ক্যান্ শোনাও |
.                      কৃষি আমাদের ভিত্তি জিগির তোলরে জগাই তোল মাধাই,
.                      কাঁচা ভিত্তির চাকনাচূরকর শাবল কোদাল চল শানাই |

নেতার ঘুষ, বাবুর সেলামী দুচার বছর তৈল দান,
তদ্দিনে তো দেনার দায়ে জীবন মরণ ছত্রখান |
জমিন্ আমরা দিচ্ছি না হে, জমিন্ মোদের মা,
( যা ) করতে পারো করো, চাষী জমিন ছাড়বে না |
.                        চষে বোনে কাটে যে ধান জমিন্ তারই চাই,
.                        তা বুঝে শিল্পায়ন যা হোক, আপত্তি তো নাই |

.                            **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
উন্নয়ন এবং ভাতের জন্যে
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
এ গানও শিল্পায়ণ—নগরায়ণ –উন্নয়নের প্রশ্নে আমার দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


এমন নগরায়ন করো
ভাত যেখানে দেদার মেলে |
হোক না উপনগর, যদি
ভাত খেতে পায় কাঙাল ছেলে |
.                               উন্নয়ন সে এমন হলে
.                               সঙ্গে আছি দিচ্ছি কথা |
.                               ভাতের জন্যে গান বানাবো
.                               ভাতের জন্যে সব কবিতা ||

স্বাস্থ্যনিবাস গড়লে রেখো
ক্ষিধের ওষুধ, ভাতের হাঁড়ি |
উড়ালপুলে কি হবে ছাই
ধান যদি না বুনতে পারি |
শপিং মলে ভাতের ঝুড়ি |
নুন মরিচ আর পেঁয়াজপাতা
.                              উন্নয়ন সে এমন হলে
.                              সঙ্গে আছি দিচ্ছি কথা ||

হলদে সাদা ভাতের রংএ
পারো যদি দেশটা সাজাও
উতল ভাতের গন্ধ ঢেলে
আকাশ বাতাস ভরিয়ে দাও |
ভাত ব্যাগোরে সবই মিছে
কি ছাই মটরগাড়ীর কথা |
.                                উন্নয়নের এই ভাবনার
.                                সঙ্গে আছি দিচ্ছি কথা ||

ভাত মানে তো সোঁদা মাটি
চাষের জমি মেঠো চাষী |
তোমার দেখছি সালেম-জালেম
টাটাম্বানির পিরীত বেশী
থাকুক আমার সোনার ফসল
থাকুক আমার কলমি লতা |
.                                 উন্নয়নের খুড়োর কলে
.                                 আমরা কেন মুড়োই মাথা ||

উন্নয়নের খুড়োর কলে
যতই ঝোলাও অমন মুলো |
ভুলবো নাকো আমার মতো
বেয়াড়া এই মানুষগুলো |
লাল খুনে বুলেট চুবিয়ে
ভরছি আমার গানের খাতা
.                                 ভাতের জন্যে গান বানাবো
.                                  ভাতের জন্যে সব কবিতা ||

.                            **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
[ সিঙ্গুরের চাষের জমি বাঁচাও আন্দোলনে সকলকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান
বসু ( পশু বিশারদ ? ) বিড়াল এবং বাঁদর বলেছেন | ]

মুখপাত
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
উপরে লেখা অংশটুকুই  আমার কথা ও গানের পরিপ্রেক্ষিতে |  
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


ধোপদোরস্ত সাদা,
বঙ্গেশ্বর দাদা
হুলোমুখো, হোত্কা গতর
গোঁফজোড়া জমকালো,
সত্যিকারের লড়াই ওঠার
ভয়েতে চমকালো |
ফ্যাঁচ ফেঁচিয়ে কেশে,
মিয়াও হেঁকে শেষে,
সব বেটাকে গালি পেড়ে
বললো মেনী---- পুষি,
আরশি দেখে জাত চিনেছে
তাইতো জবর খুশী |

আভোগী

জাত চেনা যায় ইতিহাসে
এবং কর্ম ধরে |
জাত চেনা যায় বোলে চালে
আচার ব্যবহারে |
দাঁত খিঁচোনো লম্ফ ঝম্প
আলাপ সালাপ কথা |
রসে বশে লেজ নাড়ানো
বাঁদুরে ব্যগ্রতা |
এসব দেখে তোমায় চেনা
একেবারে সোজা |
আপনি যেমন তেমনি তোমার
দুনিয়াদারি বোঝা
কোঁচার নীচেই সামলে রাখো
লেঙুরখানা মোটা |
সবাইকে যে পাগল বলে
আসল পাগল সেটা |

সঞ্চারী

আলাং ফালাং বকলে পরে জবাব পাবে চ্যাটাং
বেশী করলে লম্ফ ঝম্প ফাটবে ভুঁড়ি পটাং |
বেড়াল বাঁদর নয়তো চাষী পারলে লক্ষ করো
ওরাই ক্ষ্যাপা ষাড়, বুনো মোষ, ওরাই তো টাঁড়বারো |
ওদের হাতেই খুলে যাবে ধোপ দুরস্ত কাছা
তোমার জান বাঁচাতে তখন আসবে না সাম চাচা |

.                **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সিঙ্গুর চলো যাই
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বাংলায় যে ঢেউ জাগলো, সে তো কৃষক সংগ্রামেরই ঢেউ |
তাই নিয়ে গান অনেক-অনেক হয়েছে | এ গান কি তার সাথে এক সারিতে জায়গা পাবার
যোগ্য ?
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


লক্ষ ড্রাগন হিস্ হিসাবে উন্নয়নের বয়লারে,
শিল্পায়নের হাজার চিমনি
উগরে দেবে ছাই |
ভয়তরাসে থরথরিয়ে কাঁপছে সবুজ
কাঁপছে ফাগুণ তাই |

ধানীরঙা মাঠ কিনারে ঝিঙে ফুলের মৌ,
দোয়েল শ্যামার মিষ্টি ডাকের তালে |
জলের বুকে ডোবে ভাসে পানকৌড়ি বৌ,
কুমড়ো লতার লতিয়ে ফেরার চালে |
উল্টো দিকে ঘুরছে ঘড়ি
আঁধার নামে ভাই |
আর দেরী নয়, সবাই মিলে সিঙ্গুর চলো,
সিঙ্গুর চলো যাই |

কাল সেখানে মোটর গাড়ীর টুকরো জোড়ার ছলে
নগরায়ন ছিনিয়ে নেবে হাজার একর ভুঁই |
বাম মুখোশে বিশ্বায়নের ছবিটা ঝলমলে,
চাষীর চিতায় আগুণ দেবে টাটা বা সানসুই |
উড়ালপুল আর স্বাস্থনিবাস
মুনাফার ঐ ডাঁই |
মোটর গাড়ীর চাকার নীচে পড়বে চাপা
কলিম আর কানাই |

মন বোঝে না তীর্থ করি মা বেচে পাই কত,
পেটের চুলোয় আঙরা জীবন সয়না |
বুকের পাঁজর দিক জ্বালিয়ে সর্বনাশের ক্ষত
উঠুক গেয়ে আগুন পাখী লাল তরাইয়ের ময়না |
ধানের শীষে ডাক এসেছে
বিরসা হতে চাই |
আর দেরী নয় সবাই মিলে সিঙ্গুর চলো,
সিঙ্গুর চলো যাই |

.                **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
রক্তে রাঙা নন্দীগ্রাম
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক
অভিশপ্ত সেই ১৪ই মার্চ | নন্দীগ্রামে গণহত্যার খবর পেয়ে ধর্মতলায় গেলাম |  মন বলছে
গান চাই, গান | বাঁধিনি তো | একটা পুরনো গানের কাঠামো ধরে, শুধু শব্দ পাল্টানো, সবটা
তাও নয়, এই গান | মিছিলে যেতে যেতেই গাইতে শুরু করলাম |
[
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর
২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া।
]


রক্ত মেখে ফুঁসছে নন্দীগ্রাম ||

সাথীর এ লাশ মাটি দিতে
.                 মাটির দখল চাই |
হিসেব কষে উশুল নেবার দিনে
ভুলব কি আর বামাচারী
.                 কসাই নেতার নাম |

চাষী বৌয়ের চোখের নোনা জল
হলদি নদীর জলের ধারায় মেশে |
মা বাঁচাতে মান খোয়ালো কেউ
ফায়দা লোটে কেউ দরদীর বেশে |

সাফাই গাওয়া সরকারি রামধুনে
ও-ডায়ার আর কসোয়ানের
.                 আওয়াজ শুনিলাম ||

দিন দাহারে গ্রামগুলোতে ঢুকে
মানুষ মেরে লাইফ করলে হেল |
জনদরদ মুখোশ এঁটে মুখে
খুব দেখাচ্ছে গণতন্ত্রের খেল |

জনদরদ মানববন্ধনে
যায় না ঢাকা গদিবাদীর
.                  আসল পরিণাম ||

তদন্ত আর ক্ষতিপূরণ দিয়ে
হয় না শাস্তি যায় না বুকের ব্যথা |
স্বামী-ছেলে মান-হারা বোন, মা
ফিরিয়ে দেবে কোন সে মিষ্টি কথা |
মাটির ছেলে মাটি মায়ের টানে
লড়াই পড়ে বেপরোয়া
.                     ঝরায় রক্ত ঘাম |

.                **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর