গান বলিয়ের গান কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক কবে কি সূত্রে এ গান এসেছিল মনে নেই | সম্ভবত ১৯৯৭ এ নকশালবাড়ীর ৩০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রথম গেয়েছিলাম | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
যদি গতর খেটে ভাত কাপড় আর . কাজ না মেলে | তবে আজ শুধু নয় একশ বছর পরেও . অন্য ভুখ-মিছিলে ( আমি ) ধরবো হাতে মার্কস-লেনিনের মাওবাদেরই . লাল নিশান, আর বাঁচতে গেলে লড়তে হবে . তুলবো শ্লোগান ||
কলে তালা, চিমনিতে জং জাত মজুরের . কাজ জোটে না | ঘোলাটে চোখ ফোঁপরা পাঁজর, চিমনিতে . ধোঁয়া ওঠে না | টেবিল ঘিরে মজুর-মারা লড়াই ভাঙার . কচ্ কচানি | ( আমি ) সইবো নাকো এ বেইমানি, তুলবো . মে দিবসের আজান, ঢেউ জাগাবো, ঢেউ জাগাবো, হবো . ভিখারি পাশোয়ান ||
হাত আছে তাও বেকার যারা কাজ খুঁজে . যায় হন্যে হয়ে | সাট্টা চোলাই টক সিনেমায় মগজটাকে . নুন জারিয়ে | খাচ্ছে যে সব ধান্দাবাজে তাদের পাশা . উল্টে দিতে , ( আমি ) সুর শেখাবো অন্ধ্র-বিহার, স্বপ্নে দেবো . প্রাণেরই গান | দিন বদলের লড়বে লড়াই . তরতাজা প্রাণ ||
সময়ের ডাক কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ক্রমশ বাড়তে থাকলো | ২০০২ সালে সেই সন্ত্রাসের এবং রাজনৈতিক পেশীবলের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাইছিলাম | তাই--- [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
সময়টা গোলমালে চোখ কান রাখো খুলে, সামলাও----- দু-আনি চার-আনি নেতা রাঙা চোখে কয় কথা . গদি দেয় এ ক্ষমতা || সামলাও || দুশো পঁয়তিরিশের নেতারাই বড়লাট | ঘাড় যার উঁচু তার কান ধরে মারে চাট্ | থানাতেই বাঁশডলা হাড়গোড় ভেঙে ফেলা, ঠুকে দেয় গোটা দশ মামলাও || সামলাও ||
‘মত প্রকাশের অধিকার’ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক বন্ধু গৌর চক্রবর্তী, আমার গৌরদা আজ জেলে | তারই অনুরোধে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে আমার মত প্রকাশ করতে এইটি এবং পরের গানটি দিয়েছিলাম | ছাপাও হয়েছিল, “রাজনৈতিক মতপ্রকাশ” পত্রিকায় | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
সঠিক বুঝে মানতে পারলে আমার মতটা পাই, আমার হাতে আমার কলম লিখবে সে মতটাই | কালো কি আর সাদা হবে সোনার কলম দিলে লেখা বন্ধ হবে হাতের পাঞ্জা কেটে নিলে | . তখন আমি লক্ষ হাতে-লক্ষ হাতে লিখবো, . হাতিয়ারের জোরটা আসল, সেটাও বুঝতে শিখবো |
তোষামোদের ধার ধারি না বলবো দিয়ে যুক্তি, সেই পথেতেই আমার চলা, যে পথ শেষে মুক্তি | বলা বন্ধ করতে হলে জিভটা নিও ছিঁড়ি, চলা বন্ধ করতে পারে পরাও ডাণ্ডা-বেড়ি | . তখন আমি অযুত-পায়ে পায়ে চলবো, . ডাণ্ডা-বেড়ির বাঁধন ঠুনকো, বুক ঠুকে তাও বলবো ||
গান তো আমার বুকের ভাষা স্বপ্নে মাতোয়ারা, লড়াই জেতার ছন্দে সুরে আকাশ মুঠোয় ধরা | পারলে গলার নলি কেটে আমার এ গান থামাও, তোমার আছে সেই ক্ষমতা গুণ্ডা পুলিশ নামাও | . তখন আমি কোটির গলায়-কোটির গলায় গাইবো, . গানের ভাষায় মুক্তি আদায় করে নিতেই চাইবো ||
মুখদেখি বা মুখোশ দেখি দুটোই দেখি স্পষ্ট চোখের আলোয় দেখি, দেখাই মেকী এবং ভ্রষ্ট দেখবো নাকো নাকের ডগায় লোভের চশমা ফেলে দেখা আমার বন্ধ করবে ? চোখ দুটো দা’ও গেলে |
. তখন আমি সবার চোখে দেখবো নতুন সৃষ্টি . দুনিয়াটাই বদলাবো তাই পাবো আবার দৃষ্টি ||
মত প্রকাশের অধিকার ‘কিন্তু’ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
কাগজ আছে, আছে কলম, লেখো অনেক কথা, গল্প লেখো, গদ্য লেখো, লিখে যাও কবিতা, হুদো হুদো লিখেও কিচ্ছু না লেখাটাই চাই, মান, যশ আর নগদ পাবে অভাব কিছু নাই’ | . অদ্ভুতুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশে, . একটা শুধু ‘কিন্তু’ আছে, বলবো সেটা শেষে ||
কথা বলো যেমন খুশী, চেঁচিয়ে মাতাও পাড়া, তেড়ে-ফুঁড়ে বক্তৃতা দাও পড়ুক দেশে সাড়া | অনেক বলো আসল কথা কিচ্ছুটি না বলে, নেতা-মন্ত্রী বানিয়ে দেবো দিল্লী যাবে চলে | . অদ্ভুতুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশে, . একটা শুধু ‘কিন্তু’ আছে, বলবো সেটা শেষে ||
গাল ফুলিয়ে গান গেয়ে যাও তা তুন্ তুন্ তা না না, টপ্পা, খেয়াল, পপ্ বা গণ কেউ করেনি মানা | যুদ্ধ জয়ের গান ফাঁদা ভুল এইটি মনে রেখো, মনের আগুন চাপা দিয়ে ভোগের জলুষ দেখো |. অদ্ভুতুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশে, . একটা শুধু ‘কিন্তু’ আছে, বলবো সেটা শেষে ||
সব ধরণের মতপ্রকাশের অধিকার বহাল, সরকারী মত না মানলে তো ফুলবে দাদার গাল | অদ্ভুতুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশে, মাওবাদী মত সন্দ হলে পুলিশ ধরবে ঠেসে ||
ভ্যালারে উন্নয়ন কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক রাজারহাটে উন্নয়ন ও নগরায়নের পলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অনেক চাষী পরিবার | এই গানে এমনই একটি পরিবারের সর্বনাশের ছবি তৈরী করতে চেয়েছিলাম | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
. একটা গল্প শোনো | . দাদা একটা গল্প শোনো || . ও বোন ও মা একটা শোনো . গল্প, তবু কল্পনা নয় সত্যি জেনো ||
. এক যে ছিল মিষ্টি মেয়ে গরীব চাষীর ঘরে . অঢেল পেতো বুকের আদর খাবার পেতো কম . বাপ মায়েতে যত্ন করে নাম দিল শবনম ||
শিল্পায়নের পাঁচালী কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক শিল্পায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে বিতর্কের যে ঝড় বছর চারেক আগে শুরু হয়েছিল তাতে আমার সামান্য অংশগ্রহণ এই গানের মারফৎ | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ শুনতে ভাল্লাগে মশাই, পুঁজিপতির ঢের মুনাফা গরীব পাবে চুলোর ছাই | সরকার করে চাষী উচ্ছেদ উন্নয়নের পিটিয়ে ঢাক, একর কিছু বাম সরকার দালালী খায় কয়েক লাখ | . শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ জিগির তোল জগাই মাধাই . ( কৃষির )কাঁচা ভিত্তি চাকনাচূর কর, রাওলাট আইন চল শানাই |
উড়ালপুল উপনগরী খাবো, না মাখবো মাথায়, স্বাস্থ্যনিবাস মোটরগাড়ী কার ভোগে কার পরাণ যায় | ক্ষতিপূরণ পুনর্বাসন নতুন চাকরীর জারী গাও, চোরবাজারে নিলেম হাওয়া পুরান কথা ক্যান্ শোনাও | . কৃষি আমাদের ভিত্তি জিগির তোলরে জগাই তোল মাধাই, . কাঁচা ভিত্তির চাকনাচূরকর শাবল কোদাল চল শানাই |
নেতার ঘুষ, বাবুর সেলামী দুচার বছর তৈল দান, তদ্দিনে তো দেনার দায়ে জীবন মরণ ছত্রখান | জমিন্ আমরা দিচ্ছি না হে, জমিন্ মোদের মা, ( যা ) করতে পারো করো, চাষী জমিন ছাড়বে না | . চষে বোনে কাটে যে ধান জমিন্ তারই চাই, . তা বুঝে শিল্পায়ন যা হোক, আপত্তি তো নাই |
উন্নয়ন এবং ভাতের জন্যে কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক এ গানও শিল্পায়ণ—নগরায়ণ –উন্নয়নের প্রশ্নে আমার দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
এমন নগরায়ন করো ভাত যেখানে দেদার মেলে | হোক না উপনগর, যদি ভাত খেতে পায় কাঙাল ছেলে | . উন্নয়ন সে এমন হলে . সঙ্গে আছি দিচ্ছি কথা | . ভাতের জন্যে গান বানাবো . ভাতের জন্যে সব কবিতা ||
স্বাস্থ্যনিবাস গড়লে রেখো ক্ষিধের ওষুধ, ভাতের হাঁড়ি | উড়ালপুলে কি হবে ছাই ধান যদি না বুনতে পারি | শপিং মলে ভাতের ঝুড়ি | নুন মরিচ আর পেঁয়াজপাতা . উন্নয়ন সে এমন হলে . সঙ্গে আছি দিচ্ছি কথা ||
হলদে সাদা ভাতের রংএ পারো যদি দেশটা সাজাও উতল ভাতের গন্ধ ঢেলে আকাশ বাতাস ভরিয়ে দাও | ভাত ব্যাগোরে সবই মিছে কি ছাই মটরগাড়ীর কথা | . উন্নয়নের এই ভাবনার . সঙ্গে আছি দিচ্ছি কথা ||
ভাত মানে তো সোঁদা মাটি চাষের জমি মেঠো চাষী | তোমার দেখছি সালেম-জালেম টাটাম্বানির পিরীত বেশী থাকুক আমার সোনার ফসল থাকুক আমার কলমি লতা | . উন্নয়নের খুড়োর কলে . আমরা কেন মুড়োই মাথা ||
উন্নয়নের খুড়োর কলে যতই ঝোলাও অমন মুলো | ভুলবো নাকো আমার মতো বেয়াড়া এই মানুষগুলো | লাল খুনে বুলেট চুবিয়ে ভরছি আমার গানের খাতা . ভাতের জন্যে গান বানাবো . ভাতের জন্যে সব কবিতা ||
মুখপাত কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক উপরে লেখা অংশটুকুই আমার কথা ও গানের পরিপ্রেক্ষিতে | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
সিঙ্গুর চলো যাই কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বাংলায় যে ঢেউ জাগলো, সে তো কৃষক সংগ্রামেরই ঢেউ | তাই নিয়ে গান অনেক-অনেক হয়েছে | এ গান কি তার সাথে এক সারিতে জায়গা পাবার যোগ্য ? [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
লক্ষ ড্রাগন হিস্ হিসাবে উন্নয়নের বয়লারে, শিল্পায়নের হাজার চিমনি উগরে দেবে ছাই | ভয়তরাসে থরথরিয়ে কাঁপছে সবুজ কাঁপছে ফাগুণ তাই |
রক্তে রাঙা নন্দীগ্রাম কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক অভিশপ্ত সেই ১৪ই মার্চ | নন্দীগ্রামে গণহত্যার খবর পেয়ে ধর্মতলায় গেলাম | মন বলছে গান চাই, গান | বাঁধিনি তো | একটা পুরনো গানের কাঠামো ধরে, শুধু শব্দ পাল্টানো, সবটা তাও নয়, এই গান | মিছিলে যেতে যেতেই গাইতে শুরু করলাম | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
রক্ত মেখে ফুঁসছে নন্দীগ্রাম ||
সাথীর এ লাশ মাটি দিতে . মাটির দখল চাই | হিসেব কষে উশুল নেবার দিনে ভুলব কি আর বামাচারী . কসাই নেতার নাম |
চাষী বৌয়ের চোখের নোনা জল হলদি নদীর জলের ধারায় মেশে | মা বাঁচাতে মান খোয়ালো কেউ ফায়দা লোটে কেউ দরদীর বেশে |
সাফাই গাওয়া সরকারি রামধুনে ও-ডায়ার আর কসোয়ানের . আওয়াজ শুনিলাম ||
দিন দাহারে গ্রামগুলোতে ঢুকে মানুষ মেরে লাইফ করলে হেল | জনদরদ মুখোশ এঁটে মুখে খুব দেখাচ্ছে গণতন্ত্রের খেল |
জনদরদ মানববন্ধনে যায় না ঢাকা গদিবাদীর . আসল পরিণাম ||
তদন্ত আর ক্ষতিপূরণ দিয়ে হয় না শাস্তি যায় না বুকের ব্যথা | স্বামী-ছেলে মান-হারা বোন, মা ফিরিয়ে দেবে কোন সে মিষ্টি কথা | মাটির ছেলে মাটি মায়ের টানে লড়াই পড়ে বেপরোয়া . ঝরায় রক্ত ঘাম |