| কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের কবিতা |
মিথ্যা কথা, কুল, লাজ ; এস তুমি দেবরাজ! তৃপ্ত কর ; ক্ষিপ্ত প্রাণ, নবভোগ আশে | যথা নব ফুল ফোটে, নব সমীরণ ছোটে, এ নব যৌবন লয়ে যাব সেহি দেশে | . *********************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
| সীতা প্রেমধ্যান কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদার প্রিয় পঞ্চবটি বনে চিত্র কুঞ্জ নিরজনে কোথা সে নয়নানন্দ কহ গোদাবরি ? সুখ-স্মৃতি-মাখা তব হৃদয়-পরশি রব ; ঢালগো তাপিত বক্ষে করুণা-লহরী | লতায় পাতায় ফুলে সরসীর শ্যাম কূলে, গিরি-শিরে, তব নীরে, সুধু রাম নাম ; আজ এই জনস্থানে ছায়া কাঁপে রাম-নামে, করি সে নামের ধ্বনি পাখী গাহে গান | নিশ্বাসে শোণিতে মাখা--- পরাণের বুকে আঁকা প্রীতি যাঁর, ছবি যাঁর, কোথা সে দেবতা ? নিত্য পূজি পাদ যাঁর ঢালি ভক্তি-অশ্রুধার কোথা সে চরমগতি, প্রেমে মুক্তিদাতা ! ওই পুনঃ পম্পাসরে কলহংস গান করে, গগনে বলাকা যেন তোরণে গ্রথিত ; ওই রে আকাশ-গায় ক্রৌঞ্চ-গীতি ভেসে যায়, আনন্দে ময়ূর পুনঃ গাহে কেকাগীত | প্রকৃতির প্রেম-পুরে, কার প্রাণ প্রেমে পূরে কহিব প্রেমের কথা প্রেমের ইঙ্গিতে ? কোক-বধূ যবে দুখে কাঁদিবে, কাহার বুকে মুখ রাখি যাচিব সে রহিব ভাঙিতে ? দীপ্তিহীন দুটি আঁখি আজি করপুটে ঢাকি ধ্যান করি পদযুগ বিরলে বিজনে | আজি শ্যাম চিত্রপটে আজি এ তটিনী-তটে হে দেব! প্রকাশ তনু জলদ-বরণে | কে তুমি দুখিনী বালা ? সীতার মরম জ্বালা মর্মে অনুভবি, বল, কাঁদ অনিবার ? এস দুঁহে গলা ধরি রাম নাম গান করি ; কাছে এস প্রিয় সখি বাসন্তি আমার | ভারত চরণে যাঁর এ দাসী হৃদয়ে তাঁর ; আদরে আদরিণী আমি জান নাকি ? প্রেমময় মোর স্বামী, প্রেমে ভাগ্যবতী আমি ; অভাগিনী নহি আমি, দুখিনী জানকী | প্রাণে প্রাণ আছে গাঁথা, ভিন্ন নহে রামসীতা, প্রজার রঞ্জনে দুঃখ কেন না সহিব আত্ম-সুখ-অন্বেষণে না তুষি সন্ততিগণে, অকলঙ্ক রাম নামে কলঙ্ক আনিব ? কি দুঃখে দুখিনী সীতা, জান নাকি সেহি কথা ? একাকিনী নহে সে যে গহনবাসিনী | অযোধ্যা সিংহাসন, আজি য়ে গহন বন ! কি যে ব্যথা বুকে তাঁর জানে বিরহিনী | চিরদিন মোর তরে সে কমল-আঁখি ঝরে, এ দুঃখ কহিব কারে, সহিব কেমনে ? কূশাগ্র বিঁধিলে পায় এয়ে বুক ফেটে যায় ! হায়রে সন্তাপে তাঁর রহিনু বিজনে ! কপোলে কপোল রাখি, আঁখি দিয়া আঁখি ঢাকি আর কি তুষিতে তাঁরে পারিব কখন ? এস দুঁহে গলা ধরি রাম নাম গান করি, ধ্যান-ভরে, বুকে কোরে, সে রাঙ্গা চরণ | . *********************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
| মোহিনী কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদার কেন গো গাহ ? আমি তো গান . শুনিতে চাহিনি | করুণ ওই গীতিতে তরুণ হয় স্মৃতিতে অতীত সুখ সহিত দুখ-কাহিনী | কণ্ঠ---গড়া ননীতে--- স্পন্দিত সে ধ্বনিতে ; আঁখির কোণে নাচে সঘনে চাহুনি | উরসে তুলি লহরী বরষী রস-মাধুরী, মথি' অধর বহেরে স্বর-বাহিনী | বিভল হ'য়ে চকিতে, অতল কোন্ অতীতে ডুবিয়া মরি, উঠিতে নারি, মোহিনী ! কেন গো গাহ ? আমি তে গান . শুনিতে চাহিনি | . *********************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
| আমায় ভালবাসি কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদার তোমায় ভালবাসিনেক', আমায় ভালবাসি! বুকের পাষাণ, ঘাড়ের বোঝা, তোমার উপর চাপিয়ে সোজা, পথ চলিতে চাহি ব'লে, তোমার কাছে আসি, তোমায় ভালবাসিনেক', আমায় ভালবাসি! তোমার প্রীতির বনে তুলে কুসুম রাশি রাশি, ফুলের মালা গলায় পড়ি ; ভুলতে জ্বালা গলা ধরি ; করুণ চোখে চাইলে তুমি মুখে ফোটে হাসি | তোমায় ভালবাসিনেক', আমায় ভালবাসি! বিষাদ যখন ঘনিয়ে এসে বিশ্ব ফেলে গ্রাসি, তখন তুমি ওগো বঁধু ! চম্বনেতে ঢাল মধু ; সেই অমৃতে বিষের জ্বালা নিঃশেষিয়ে নাশি | তোমায় ভালবাসিনেক', আমায় ভালবাসি! ভাঁটার টানে মৃত্যু-সিন্ধু পানে চলি ভাসি ; আঁকড়ে ধরি তোমার চরণ, তোমার পায়ে সঁপি মরণ, তোমার দেওয়া জীবন-ভেলায় উজান বয়ে আসি | তোমায় ভালবাসিনেক', আমায় ভালবাসি! . *********************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
| উদ্বোধন কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদার জাগো জাগো ভারত মাতা! চরণতলে তব অভিনব উত্সব করিব, রচিব নবগাথা | অগণন-জনগণ-ধাত্রি! অকথিত মহিমা অশেষ গরিমা অনন্ত-সম্পদ-দাত্রি! মঙ্গলযুত তব কীর্তি ; তব গুণ-গৌরব তব যশ-সৌরভ ব্যাপিল বিশাল পৃথ্বী | শূর-জননী সুর-পূজ্যে! নিহত সুকৃতি তব হত সুখ গৌরব দনুজ-দলিত নব রাজ্যে | নব্য জগত-ইতিহাসে নগণ্য তুমি মা! অগণ্য মহিমা বিস্মৃত দেশ-বিদেশে | জাগো জাগো ভারত মাতা! চরণতলে তব রোদন উত্সব করিব, রচিব নবগাথা | . *********************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
| অন্ধের গান কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদার পাখী আমার সাক্ষী আছে, ঊষা-অরুণ এসেছিল | কুঞ্জতলে দীঘির জলে হাসির দীপ্তি ভেসেছিল | আঁধার ঘরে আমি একা! আমাকে না দিলে দেখা! ভুলে গেছে, আগে আমায় কত ভালবেসেছিল | শিশির-ধোয়া কুসুমরাশির গাল-ভরা সেই শুভ্র হাসির মধুটুকু লুটে নিতে এই কাননের দেশে ছিল | তখন আমি দুয়ার খুলে ছুটে গেলাম তরুর মূলে', আমার দুঃখে গাইল পাখী, বাতাস খানিক শ্বসেছিল | জানত তারা আগে মোরে কত ভালবেসেছিল | . *********************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |