শিল্পী কবি বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায় - জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার বেহালায়। পিতা বিপিন
বিহারী মুখোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনের এই বিখ্যাত শিল্পী বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট এবং কনটেক্সচুয়াল
মর্ডানিসম্ এর একজন দিশারী ছিলেন। তাঁর খ্যাতির একটি দিক ছিল মুরাল পেইন্টিং ও ভাস্কর্য। তাঁর
কাজে প্রাচ্যের বিশেষ করে জাপানী প্রভাব স্পষ্ট। তিনি ওয়াশ পদ্ধতি ও ক্যালিগ্রাফিকেও তাঁর কাজে
ব্যবহার করেছেন।

কবি জন্মের সময় থেকেই চোখের গভীর সমস্যা নিয়ে জন্মেছিলেন। এক চোখে ছিল ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি বা
মাইয়োপিয়া আর অন্য চোখে তিনি কিছুই দেখতে পেতেন না বা সেই চোখে ছিলেন অন্ধ। ১৯৫৬ সালে
একটি চোখে ছানি কাটাতে গিয়ে চিকিত্সা-বিভ্রাটের কারণে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান।

১৯১৯ সালে তিনি শান্তিনিকেতনের কলাভবনে শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন। তিনি
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নন্দলাল বসুর প্রিয় শিষ্য ছিলেন। বিখ্যাত ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজ ছিলেন তাঁর বন্ধু ও সহকর্মী। ১৯২৫
সালে তিনি কলাভবনের শিক্ষক নিযুক্ত হন এবং সেই সঙ্গে সেখানকার ছোট মিউজিয়ামের কিউরেটার ও
লাইব্রেরিয়ান হন। ১৯৪৯ সালে তিনি নেপাল সরকারের আমন্ত্রণে, কলাভবন ছেড়ে যান কাঠমাণ্ডুর
মিউজিয়ামের কিউরেটর এবং নেপালের শিক্ষা বিভাগের উপদেষ্টা হয়ে। ১৯৫১-৫২ সালে তিনি রাজস্থানের
বনস্থলী বিদ্যাপীঠে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫২ থেকে স্ত্রী লীলাদেবীর সঙ্গে তখনকার উত্তর প্রদেশ, অধুনা
উত্তরাখণ্ডের মুসৌরিতে একটি আর্ট-স্কুল ও শিশুশিক্ষাকেন্দ্র খুলে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। ১৯৫৮
সালে তিনি পুনরায় শান্তিনিকেতনে ( বিশ্বভারতী ) ফিরে আসেন অধ্যপক হিসেবে। ১৯৭৩ সালে তিনি
কলাভবনের সঙ্গে এমারিটাস অধ্যাপক রূপেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৬ এর ছানির চিকিত্সা-বিভ্রাটের পরে অন্ধ
হয়েও তিনি ছবি এঁকেছেন, করেছেন ভাস্কর্য, কাগজ কেটে ছবি বসানো এবং টালি দিয়ে মুব়্যালের কাজ করে
গিয়েছেন। শেষ জীবনে সম্পূর্ণ নির্জনবাস করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কাজের মধ্যে রয়েছে ১৯৪৭ সালে করা
শান্তিনিকেতনের হিন্দী ভবন এর দেয়ালের মুব়্যাল।

তাঁর বিশিষ্ট শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী জহর দাশগুপ্ত, কে.জি. সুব্রমনিয়াম, বেওহার রামমনোহর সিনহা,
ভাস্কর সোমনাথ হোড়, জিজাইনার রিতেন মজুমদার, বিশ্ববরেণ্য সিনেমা পরিচালক
সত্যজিৎ রায় প্রমুখ।
বিনোদ বিহারীর জীবন, কাজ আর অন্ধত্ব কে জয় করে বাঁচা নিয়ে ১৯৭২ সালে
সত্যজিৎ রায় তৈরী করেন
তথ্যচিত্র “দ্য ইনার আই”।

চিত্র সমালোচক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “চিত্রকর”। রয়েছে
আত্মজীবনীমূলক রচনা “কর্তাবাবা”।

১৯৭৪ সালে তাঁকে ভারত সরকার “পদ্মবিভূষণে” ভূষিত করেন এবং বিশ্বভারতী তাঁকে “দেশিকোত্তম”
উপাধিতে সম্মানিত করেন ১৯৭৭ সালে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন
১৯৮১ সালে, তাঁর “চিত্রকর” গ্রন্থটির জন্য।  

তাঁর কবিতা কোনো কাব্য সংকলনেই আমরা খুঁজে পাই নি। কিন্তু তাঁর দুটি কবিতা সরলা দেবী সম্পাদিত
“ভারতী” পত্রিকার দুটি সংখ্যা থেকে পেয়ে, এই মানুষটিকে আমাদের কবিদের সভায় স্থান দিতে পেরে ধন্য
হলাম।
আমরা  মিলনসাগরে  কবি বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কবিতা প্রকাশিত করে আগামী প্রজন্মের
কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এই প্রচেষ্টার সার্থকতা




উত্স – সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত “সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান”, প্রথম খণ্ড, ১৯৭৬।

.           
উইকিপেডিয়া      



কবি বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।    



আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     

এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ..২০১৬
...