হাত আছে তার মাতা নাই গায়ে রত্ন জ্বলে স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা “সুলোচনা” উপন্যাসের পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ থেকে।
সুরথনাথের বিবাহ-রাত্রে বাসরগৃহে . . . ক্ষণকাল মাত্র সকলেই নিস্তব্ধ থাকিয়া পরক্ষণে একজন কহিলেন “শুনেছি ভাই তুমি বড় বুদ্ধিমান, আমাদের এক আদটা হেয়ালির মানে বল দেখি”।সুরথনাখ কহিলেন “হেয়ালির মানে বলবার আমার ক্ষমতা নাই”। রমণী কহিলেন “দুই একটা সোজা জিজ্ঞাসা কচ্ছি---তা না যদি উত্তর দিতে পার জান্ ব কেবল শিং উঠতে বাকি আছে”। এমন সময়ে আর এক যুবতী বক্তার স্কন্ধ ধরিয়া কহিলেন “তোর এত কেঁড়েলিতে কাজ্ নেই, যা বলবার হয় বল্ না”---তখন প্রথমা যুবতী কহিলেন “আচ্ছা ভাই অধিক জিজ্ঞাসা কর্ বো না একটা বলি---
হাত আছে তার মাতা নাই গায়ে রত্ন জ্বলে। বাঘ নয় ভাল্লুক নয় আস্ত মানুষ গেলে॥
ঘরকন্না ছেলেপুলে ভাব্ ছ দিবা নিশি স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা “সুলোচনা” উপন্যাসের সপ্তদশ পরিচ্ছেদ থেকে।
. . . অনেক হিতবাক্য দ্বারা সুলোচনাকে বুঝাইতে লাগিলেন---দেখ দিদি মিছিমিছি কান্নাকাটি করে শরীরটা মাটি করো না---পূর্ব্বাপর সকলেরই এই দশা। রামসম পুত্রকে বনবাস দিয়ে কৌশল্যা রাণীও প্রাণধারণ করেছিলেন। রামসম পতিকে ছাড়িয়াও সীতাগেবী রাবণের পুরিকে ধৈর্য্য বাস করিয়াছিলেন। মা’র কোল থেকে কত লোকের কত দুধের বাছা লয়ে যাচ্ছে তাতে তারা জীবন ধারণ করে থাক্ ছে---জন্মের মত কতলোকের ভাতারপুত রাজদণ্ডে দেশত্যাগী হচ্ছে তাতেও কত লোক শোক সম্বরণ করে সংসার কর্ ছে---তোমার ভাই তো তাদের মত বিপদ নয়---তোমার এত ভাবনার কারণ কি--- সুরথ বেঁচে থাক্---সুরথের ছেলেপুলে হউক---নাতিপুতি নিয়ে ঘরকন্না কর্ তোর এত অপার ভাবনা কি জন্যে! ---লোক কথায় বলে---
ঘরকন্না ছেলেপুলে ভাব্ ছ দিবা নিশি অসার ভাবনার হার জড়াইবে কশি। চঞ্চলা চপলাসম ঐহিকের সুখ এই আছে এই নাই দর্পণে মুখ। জলবিন্দু সম এই নরের জীবন কভু আছে কভু নাই কভু হয় লীন॥
কেন ভাই মিছে হাই হুতাস কর এতে কেবল ভাতার পুতের অকল্যাণ বই আর কিছু লাভ হয় না।