কবি বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা
*
শোন্ লো সখী বলি তোরে
স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা
“সুলোচনা” উপন্যাসের অষ্টম পরিচ্ছেদ থেকে।

সুলোচনাকে ক্ষমা বলছেন . . .এমন করে উতলা হলে লোকে কি বলবে জানিস্---লোকে
বলবে বুড়ো বয়সে মাগির রকম দেখ---নাতিপুতির বয়সে এত বিরহ কি ভাল দেখায়? ---
তোর মনের ভাবটা যাহোক আমি জেনেছি---তবে যাবার সময় একটা কথা বলি শোন---

শোন্ লো সখী বলি তোরে।
আসবেন হরি মধুপুরে॥
করগো সজ্জা হাস্যমুখে।
কেঁদনা গো মনের দুঃখে॥

কাণে কাণে আর একটা কথা বলে যাই শোন্---‘রাম (রামহরি, সুলোচনার স্বামী) পত্র
লিখেছে দেশে এসে সুরর বিয়ে দেবে’।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সে সুখ নিদয় বিধি কেন হরে নিলিরে
স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা
“সুলোচনা” উপন্যাসের অষ্টম পরিচ্ছেদ থেকে।

সুলোচনাকে ক্ষমা বলছেন . . .এখন পথে এস---দিদি---একথা একেবারে ফুটে বলিলেই ত
হতো---এত ছেঁদো কথায় আবশ্যক কি। আমি এক্ষনি ঘরে গিয়ে পিলেকে বলছি---বলি
পিলে, রামকে লিখিস্---জনকনন্দিনী ধূলায় পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে---এই বারে বুঝি
সিতাঠাকুরুণ প্রাণত্যাগ করেন। সে দিনে ছেলেগুলো বেশে পড়’ছেন---দূর হোক্ গে ছাই
মনেও পড়ে না---হাঁ হাঁ মনে পড়েছে---

“সে সুখ নিদয় বিধি কেন হরে নিলিরে,
কি দোষ করেছি আমি কেন দুখ দিলিরে।”
“জানাতে দুঃখের কথা কে আছেরে বিধাতা
তুই যদি সুখলতা অকালে ছিড়িলেরে॥”

কেমন মনের কথাটি বলেছে না?

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিষাদে বলিছেন রায়ি ধরিয়ে দূতিকে
স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা
“সুলোচনা” উপন্যাসের অষ্টম পরিচ্ছেদ থেকে।

সুলোচনাকে ক্ষমা বলছেন . . .তবে বহু একবার বেড়া নেড়ে গৃহস্থের মন বুঝ্লুম্---আমরা
কি ছুঁড়ি টুড়ির কথায় রাগ্ করি। তোকে ছড়ার গানে ডুবিয়ে রাখতে পারি, ভয় করে
আবার তোর যা এসে আড়ি পাত্ বে নাকি---একটা তাড়াতাড়ি বলে যাই শোন---

বিষাদে বলিছেন রায়ি ধরিয়ে দূতিকে।
কি
দোষে ত্যজেছেন ব্রজনাথ এ দাসীকে॥
হরিজ্ঞান হরিধ্যান হরি যে মম প্রাণ।
হরির বিচ্ছেদে আমি পাগলিনী সমান॥
সহেনা সহেনা আর এ মরম্ বেদনা।
কিকরে জুড়াব সেই হৃদয়ের যাতনা॥
হাসিয়া কহেন দূতি ধৈর্য্যধর কিশোরী,
তৃষ্ণা বিনা স্নিগ্ধ জ্ঞান হয় কি কভু বারি॥
যত গো দহিবে তুমি বিরহ দাবানলে।
ততই উচ্ছ্বিবে প্রেম পুনঃ সম্মিলনে॥
বারিবিন্দু ধরাতলে পড়িবে কোন কালে।
সেই আশয়ে মুগ্ধ হয়ে থাকে চাতক দলে॥
পড়্ লে বারি চাতক পরি কি সুখ সে পায়।
নিত্য নিরাধারে হইলে তত কভু নয়॥

কেমন ‘বহু’ বেশ বলেছে না?

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হাত আছে তার মাতা নাই গায়ে রত্ন জ্বলে
স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা
“সুলোচনা” উপন্যাসের পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ থেকে।

সুরথনাথের বিবাহ-রাত্রে বাসরগৃহে . . .
ক্ষণকাল মাত্র সকলেই নিস্তব্ধ থাকিয়া পরক্ষণে একজন কহিলেন “শুনেছি ভাই তুমি বড়
বুদ্ধিমান,  আমাদের এক আদটা হেয়ালির মানে বল দেখি”।সুরথনাখ কহিলেন “হেয়ালির
মানে বলবার আমার ক্ষমতা নাই”। রমণী কহিলেন “দুই একটা সোজা জিজ্ঞাসা কচ্ছি---তা
না যদি উত্তর দিতে পার জান্ ব কেবল শিং উঠতে বাকি আছে”। এমন সময়ে আর এক
যুবতী বক্তার স্কন্ধ ধরিয়া কহিলেন “তোর এত কেঁড়েলিতে কাজ্ নেই, যা বলবার হয় বল্
না”---তখন প্রথমা যুবতী কহিলেন “আচ্ছা ভাই অধিক জিজ্ঞাসা কর্ বো না একটা বলি---


হাত আছে তার মাতা নাই গায়ে রত্ন জ্বলে।
বাঘ নয় ভাল্লুক নয় আস্ত মানুষ গেলে॥


বল দেখি দাদা মানে কি?

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঘরকন্না ছেলেপুলে ভাব্ ছ দিবা নিশি
স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা
“সুলোচনা” উপন্যাসের সপ্তদশ পরিচ্ছেদ থেকে।

. . . অনেক হিতবাক্য দ্বারা সুলোচনাকে বুঝাইতে লাগিলেন---দেখ দিদি মিছিমিছি
কান্নাকাটি করে শরীরটা মাটি করো না---পূর্ব্বাপর  সকলেরই এই দশা। রামসম পুত্রকে
বনবাস দিয়ে কৌশল্যা রাণীও প্রাণধারণ করেছিলেন। রামসম পতিকে  ছাড়িয়াও
সীতাগেবী রাবণের পুরিকে ধৈর্য্য বাস করিয়াছিলেন। মা’র কোল থেকে কত লোকের কত
দুধের বাছা লয়ে যাচ্ছে তাতে তারা জীবন ধারণ করে থাক্ ছে---জন্মের মত কতলোকের
ভাতারপুত রাজদণ্ডে দেশত্যাগী হচ্ছে তাতেও কত লোক শোক সম্বরণ করে সংসার
কর্ ছে---তোমার ভাই তো তাদের মত বিপদ নয়---তোমার এত ভাবনার কারণ কি---
সুরথ বেঁচে থাক্---সুরথের ছেলেপুলে হউক---নাতিপুতি নিয়ে ঘরকন্না কর্ তোর এত
অপার ভাবনা কি জন্যে! ---লোক কথায় বলে---

ঘরকন্না ছেলেপুলে ভাব্ ছ দিবা নিশি
অসার ভাবনার হার জড়াইবে কশি।
চঞ্চলা চপলাসম ঐহিকের সুখ
এই আছে এই নাই দর্পণে মুখ।
জলবিন্দু সম এই নরের জীবন
কভু আছে কভু নাই কভু হয় লীন॥

কেন ভাই মিছে হাই হুতাস কর এতে কেবল ভাতার পুতের অকল্যাণ বই আর কিছু লাভ
হয় না।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর