কবি বিশ্বনাথ দত্তস্বামী বিবেকানন্দ-এর পিতা। বিশ্বনাথের পিতা দুর্গাপ্রসাদ দত্ত এবং মাতা
শ্যামাসুন্দরী দেবী। দুর্গাপ্রসাদ মাত্র ২২ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। বিশ্বনাথের শিক্ষাদান
হয় গৌরমোহন আঢ্যের বিদ্যালয়ে যার নাম পরবর্তিতে হয় ওরিয়েন্টাল সেমিনারি। এরপর উচ্চশিক্ষা লাভ
করেন সম্ভবত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

বিশ্বনাখ দত্তর বিবাহ হয় ভূবনেশ্বরী দেবীর সঙ্গে ১৮৫১ সালে। বিবাহকালে ভূবনেশ্বরী দেবীর বয়স ছিল মাত্র
১০ বছর। তাঁদের ছয় কন্যা ও চার পুত্র, যার মধ্যে দুই কন্যা ও এক পুত্রের শৈশবেই মৃত্যু হয়। জীবিত
জ্যেষ্ঠ পুত্র নরেন্দ্রনাথ (ডাকনাম বিলে), সন্ন্যাস গ্রহণ করেন প্রথমে বিবিদিষানন্দ তারপর সচ্চিদানন্দ ও শেষে
স্বামী বিবেকানন্দ নাম নিয়ে এবং রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠা করেন। মেজ পুত্র মহেন্দ্রনাথ ইংল্যাণ্ডে
ব্যারিস্টারি পড়েন এবং রচনা করেন, তিন খণ্ডে, “লন্ডনে বিবেকানন্দ”। কনিষ্ঠ পুত্র ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত
মার্কসবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং দেশের প্রথম কমিউনিস্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। স্বাধীন
ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসী রাজনেতা
কবি অতুল্য ঘোষ ভূপেন্দ্রনাথ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। যদিও
শেষ পর্যন্ত তিনি গান্ধীবাদী খেকে যান।

কর্ম জীবনে বিশ্বনাথ দত্ত প্রথমে অ্যটর্নি চার্লস এফ পিটারের অধীনে আর্টিকেল্ড ক্লার্ক হয়ে এক বছর কাজ
করেন। এর পর যোগ দেন অ্যাটর্নি হেনরি জর্জ টেম্পলের অধীনে আর্টিকেল্ড ক্লার্কশিপে। এখানে তাঁর
সহকর্মী ছিলেন
কবি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পিতা ভূবনমোহন দাশ। ১৮৬৮ সালে শুরু করেন
পার্টনারশিপে “ধর অ্যন্ড দত্ত” অ্যটর্নির ব্যবসা। ১৮৭১ সালে, দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে, কলকাতার বাইরে
ওকালতীর ব্যবসা করতে চলে যান প্রথমে লখনৌ ও পরে লাহোরে। ১৮৭৭ সালে তিনি চলে আসেন সেন্ট্রাল
প্রভিন্সেস, অধুনা মধ্যপ্রদেশের রায়পুরে। ১৮৭৯ সালে বিশ্বনাথ সপরিবারে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন।
২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৮৮৪ তারিখে, মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ডায়াবেটেস রোগে তাঁর মৃত্যু হয়। নরেন্দ্রনাথের
গৃহত্যাগ ও সন্ন্যাস গ্রহণ তিনি দেখে যাননি।

সুলোচনা --- ১৮৮২ সালে “সুলোচনা অথবা আদর্শ ভার্য্যা” নামে “বঙ্গবাসীদিগের সংসারিক ব্যবহারাবলম্বিত
উপন্যাস” প্রকাশিত হয়, যার রচনাকারের নাম ছিল গোপালচন্দ্র দত্ত। বিশ্বনাথ দত্তর কনিষ্ঠ পুত্র ভূপেন্দ্রনাথ
দত্ত তাঁর “স্বামী বিবেকানন্দ” গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের ১০১ পাতায় লিখেছেন --- সাহিত্যের প্রতি তাঁর
অনুরাগ ছিল অপরিসীম। “সুলোচনা” নামে একটি বাংলা উপন্যাস তিনি রচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর
নিজের অবস্থা তখন সচ্ছল ছিল না বলে তিনি তাঁর খুড়তুতো কাকা গোপালচন্দ্র দত্তের নামে গ্রন্থটি প্রকাশ
করেন। ২০০৬ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শংকর এই উপন্যাসটি পুনঃপ্রকাশিত করেন তাঁর লেখা মুখবন্ধ ও
পশ্চাত্পট সহ। একই বছরে প্রকাশিত হলেও, সুলোচনা প্রকাশিত হয়
বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ, পুস্তকাকারে
প্রকাশিত হবার আগে।

“সুলোচনা” উপন্যাসটি দিন দিন আরও গুরুত্ব লাভ করছে এই জন্য যে এর কাহিনী অনেক অংশেই বিশ্বনাথ
দত্তর নিজের ও তাঁর পারিবারিক জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বহন করে যা
স্বামী বিবেকানন্দের পারিবারিক
অবস্থা জানতে সাহায্য করতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। এই কাহিনীর রশদ হয়তো তাঁর নিজের
জীবন থেকে অনেকাংশে নেওয়া হয়েছিল।

এই উপন্যাসে
পাঁচটি কবিতা আমরা পেয়েছি যা উপন্যাসের একাধিক চরিত্রের মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে।
এখন পর্যন্ত আমরা দেখিনি যে এই কবিতাগুলি কোনো প্রচলিত কবিতা থেকে নেওয়া বা অন্য কোনো কবির
রচনা। কেউ যদি সেরকম দেখেন তাহলে প্রমাণ সহ আমাদের জানাবেন আমরা সংশোধন করে নেবো।
আমাদের যোগাযোগের ঠিকানা - ইমেল :
srimilansengupta@yahoo.co.in ।    

মিলনসাগরের “কবিদের সভা” আসলে বাংলার ইতিহাস, যেখানে কবিতা একটি উপলক্ষ্য মাত্র। তাই
বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা এখানে তোলা হলো তার ঐতিহাসিক মূল্যের জন্যেই।

আমরা  
মিলনসাগরে  কবি বিশ্বনাথ দত্তর কবিতা  তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই এই
প্রয়াসের সার্থকতা।



উত্স – শংকর-এর মুখবন্ধ ও পশ্চাত্পট সহ “সুলোচনা, স্বামী বিবেকানন্দের বাবা যে উপন্যাস লিখেছিলেন”,
.         জুন ২০০৬, প্রকাশক - সাহিত্যম্।
.         
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রথম আলো, দ্বিতীয় পর্ব, জুলাই ১৯৯৭, আনন্দ পাবলিশার্স।
                   

কবি বিশ্বনাথ দত্তর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     

এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ৮.৬.২০১৫
...