তবু আয় কবি চিরশ্রী দেবনাথ প্রথম প্রকাশ ত্রিপুরার “দৈনিক সংবাদ” পত্রিকার “সংবাদ বিচিত্রা” পাতায়।
জবালার শরীর ছোঁয়া সব কৃত্রিমতা বুঝি নেমে আসছে মাটিতে পৃথিবী বুক পেতে নারীর জন্য আজন্ম ঋষি গৌতমের এজলাস পেরিয়ে বিক্রমজিতের আদালতে পৌঁছুতে হাজার হাজার বছর গর্ভশোনিতে কি নতুন কোন প্রজন্মের হাতছানি যজ্ঞসমিধ জমিয়ে রেখেছি কোনদিন করবো ক্যাম্পফায়ার মেঘমল্লারে আগুন ধরবে সেদিন সামবেদীয় শুদ্ধতা দেবো না তোকে কেবলি আমার রক্ত কোষ কলা অনুভব ঘনীভূত হবে আমার আমি সে পথে ছড়াবে কি পান্না না শুধু শ্লেষ ছড়ানো চুনীরঙা আকাশ .. ..
কাল রাতে স্বাধীনতা এসে দাঁড়ালো আমার কাছে, বড় শুকনো মনে হলো তারে, ভারত মহাসাগর থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় সে যেন কাঁপছিল তির তির করে, হরিদ্রাভ দুটি চোখে মরুভূমির শুস্কতা মনে হলো, তাকে স্পর্শ করলাম, ছলকে উঠলো তার বরফ মুকুট। তাকে আমি মাখতে লাগলাম আমার শরীর জুড়ে, দ্রবীভূত রোদের মত সে আমার মধ্যে মিশে যেতে লাগলো। আমি তাকে অর্জন করিনি, কোন রক্ত ঝরাইনি তার জন্য, অপেক্ষার মুহূর্ত গুনিনি কোন দ্বীপান্তর বাসীর ফিরে আসার, তার কাছে এসেছি আমি ঘরে ফেরা পাখীর মত, গাঢ় ভালোলাগার মত আমার দিন রাত্তির ওম্ ওম্ হয়ে আছে তার উষ্ণতায়। তবু মনে হল আজ আমি তাকে আদর করব, কিশোরী মেয়ের দুই বেণী বেঁধে দেওয়ার সময় মার কোমল হাত থেকে ঝরে পরে যে মায়াবী জোৎস্না সেরকম আদর,তাকে কোলে তুলে নেবো, ধীরে ধীরে বড় করে তুলব, আমার স্বপ্নরা নক্ষত্র হয়ে ঝিকমিক করবে তার শরীর ছুঁয়ে, আমার ভালোলাগার একটুকরো আলো যেন, পায়ে পরিয়ে দেবো নূপূর আর তার সঙ্গে মিশে যাবে আসমুদ্র ভারতকন্যাদের দৃপ্ত পদচারনা, কিন্তু এখন থাক,বঙ্গোপসাগরের উপর থেকে ধেয়ে আসা মৌসুমী বায়ু একটু দাঁড়াও, না হয় ঘুমোক আমার কোলে কিছুক্ষণ, বড় ক্লান্ত, বড় ক্লান্ত সে আজ।
কিছু মেয়ে যাচ্ছিল ঢেউ এর মতো, ফসফরাস জ্বলে জ্বলে উঠছিল তাদের চুল ছুঁয়ে শরীর বেয়ে চারপাশে ধূমায়িত শালবন পলক ফেলার আগেই তারা মিশে গেলো আমি পিছু নিয়েছি তাদের আমার হাতে যন্ত্রফলা আবার যেন চারপাশ থেকে জমে উঠল কিছু অবয়ব ওরা কারা জানতেই হবে আমার দৌড়ুতে লাগলাম মেয়েগুলো কিন্তু হাঁটছে, ধীর লয়ে তবু ধরা যাচ্ছিল না কেউ পেছন ফিরছে না একবারও যদি দেখতে পেতাম কোন মুখ হাঁপাচ্ছি আমি পথের ধারে ধারে এখন ঝাউয়ের গাছ কাছে কি কোথাও তবে সমুদ্র! এই তো কথা শোনা যাচ্ছে তাদের তীব্র ধাতব গর্জন যেন আমার যন্ত্রফলা মুহুর্তে ছুটতে লাগলো আমি আলাদা হতে লাগলাম এবার ছুঁয়ে ফেলছি ঐ মেয়েদের পেছনে আরেকটা আমি সেও কখনো ছোঁবে এই মেয়েদের ..
এমন কেন মনে হয় এই যে আজকের কৃষ্ণপক্ষীয় রাতে সাজানো ঘরের দেয়ালে পুরুলিয়ার মুখোশখানি শুধু এক টুকরো অশরীরী মৃত্যুর ছায়া তুমি এসে দাঁড়ালে, ঝকমকিয়ে উঠলো তোমার কানের ঐ হীরককুচি মনে হলো "পান্না"র হীরের খনির শ্রমবালকের রাসায়নিক দগ্ধ দুটি হাত তোমার গ্রীবা জুড়ে রঙবেরঙের জাঙ্ক জুয়েলারির বন্য শোভা মনে হলো বনহারানো আদিবাসী গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আমার চারপাশে তোমার কাঁকনের ঐ স্বর্ণালী উদ্ভাসে মিশে যায় "কোলারের" ক্ষীণতনু খনিবালিকার শ্বাস নিতে না পারা সারা শরীর বেয়ে মসৃণ কলমকারী, মনে হলো সুতোয় সুতোয় "কালাহস্তীর" তাঁতির ক্ষয়ে যাওয়া নখ নিটোল শরীরের বিভাজিকায় শুধু যেন ক্রমাগত বেঁধে ফেলা স্রোতহীন তিস্তার বিষাদী অববাহিকা বিরক্তিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম হাতের "লাস্ট ম্যান ইন্ টাওয়ার" তাকালাম তোমার দিকে কখন ঘুমিয়ে গেছো তুমি আবছায়া খাজুরাহে লেগে আছে দেবদাসী অভিমান তুমিই কি আমার দেশ আর আমি পাথরের ভগবান ......
সেই তরুণটি কবি চিরশ্রী দেবনাথ প্রথম প্রকাশ ত্রিপুরার “দৈনিক সংবাদ” পত্রিকার “সংবাদ বিচিত্রা” পাতায়।
ঘুম ঘুম বিসুভিয়াস থেকে কিছু লাভা আর চিরহরিৎ অরণ্যের সবুজ নিয়ে বেড়ে ওঠা সেই তরুণটিকে হারিয়ে যেতে দিও না, যার গভীর ঘাড়ে রাখা আছে পালকের মত হালকা একটুকরো বিশুদ্ধতা, নদীর চরের মত জেগে ওঠা কোনও পেলব প্রেম, তার সামনে রাখবো আমি খাপখোলা তলোয়ার, হাঁটবে সে ধার ছুঁয়ে ছুঁয়ে, ছিটকে পরবে কিছু রক্ত, ছড়িয়ে পড়বে গ্লোবালাইজড্ বিপ্লবের ডিজিটাল নীলাভ রঙ, বিশ্বায়ন হাত বাড়াক না তার দিকে, মুচকি হেসে সে হাত ধরবে সময়ের, তার ঘন পল্লবিত দুই চোখের খরতায় মিশে যাবে কোনও মৌন নদী, নাই বা হলো তাতে জোঁয়ার ভাঁটা, সব কি আর এক সরলরেখায় হয় সবসময়? পলকা পা ফেলে অমল তরুণ হেটে যাবে দীর্ঘায়িত দুপুরের পথে, বিকেল থমকে দাঁড়িয়ে সেখানে রোদমেখে, হোক না একা, জেনে রেখো কিছু জোনাকি আলো জ্বেলে বসে আছে এই খন্ডিত বসন্তপ্রান্তরে .....
মেয়েটির নাম : আফ্রিকা বাবা : সমুদ্র মা : পৃথিবী গায়ের রঙ : কালবৈশাখীর আকাশ উচ্চতা : গনগনে অগ্নিশিখা শিক্ষাগত যোগ্যতা : কিছু কোমল কিছু দুরন্ত অনূভব স্বপ্ন : ইচ্ছে করে আকাশ ছুঁয়ে দেখতে।