সকালের ঝকঝকে রোদ গ্রাম গ্রাম শহরের গায়ে সবে চায়ের ধোঁয়ার গরম শ্বাস কিছু পথ পরে থাকে পেছনে আশে পাশে ফসলহীন ঢালু জমি বাসের মানুষগুলো বেশ গল্পসল্পে কেমন হাসি হাসি সদ্য কাচা শাড়ি মেলে দিতে দিতে অচেনা বউটির চোখে খানিকটা হেলাফেলা থামলো এসে গাড়ি "ছোটহাটে" এমন নাম কেন, জানি না হয়ত বা.... নেমে গেলাম, ছিল কি আমার এখানে নামার কোন কথা আজ তবে না দেওয়া কথার সঙ্গে কিছুক্ষণ মুদির দোকানের বাঁশের বেঞ্চীতে গা এলানো, ঝোলানো চিপসের প্যাকেট, হাতে নিয়ে কোকাকোলা দুই বোস্টম বোস্টমী, কপালে গলিত রসকলি ঝোলা ব্যাগে হরেকৃষ্ণ রিংটোন পথ হারিয়ে গেছে গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকদূর ঐ পথে দাঁড়িয়ে আছে কোন এক বাউল থলেতে তার অনেক অক্ষর চিঠি লেখা হয়নি কোনদিন নতজানু আমি আজ তার কাছে......
সুনীল বাবু, নীরাকে বড় ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়, কেমন হালকা শব্দময় কুয়াশা দিয়ে তৈরী সে আপনার ইচ্ছেমত, তার হাসি কান্না, সফেন তাকানো অথবা শিশু উচ্ছ্বাস। সবই হয়তো গভীর রাতে নয়তো কোন অশ্রান্ত দুপুরে, সন্ধ্যার ঐকান্তিক নিঃসঙ্গতায়, অস্পষ্ট ভোরে আপনার ভারী লেন্সের চশমার গাঢ় অনূভবের আবছা সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছে সাদা প্রান্তরে, গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টির অক্ষরে, গোগ্রাসে পড়েছি তাকে, ভাল লাগেনি প্রায়শই, তবুও আবার একটু দেখবো বলে খুলেছি নীরার পাতা, "পীত অন্ধকারে ডোবে হরিৎ প্রান্তর" এমন কিছু নয় তবু আমার ভীষন প্রিয়, মনে হয় এ যেন অনিবার্য, হতেই হবে নীরা আছে বলে। আপনি বললেন "তখন কবিতার প্রতিটি লাইন শব্দ অক্ষর কমা ড্যাশ রেফ ও রয়ের ফুটকি সমেত ছুটে যাচ্ছে তোমার দিকে"... আমার আজ মনে হয় এ যেন রহস্যময় গড পার্টিকলের থাকা বা না থাকার সংঘাতে অনুভবের অনিশ্চিত পথখোঁজা। আপনার ভাষায় "অক্ষরবৃত্তের মধ্যে তুমি থাকো, তোমাকে মানায় মন্দাক্রান্তা, মুক্ত ছন্দ, এমনকি চাও শ্বাসাঘাত দিতে পারি, অনেক সহজ "বার বার পড়লাম, মনে হয়, যে ঘামগন্ধী নারী তীব্র বাস্তব হয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় মেঝের স্পর্শ থেকে দেয়ালের ছায়ায় সে কিন্তু নীরা নয়, "আমার একটি অতি ব্যাক্তিগত কবিতার প্রতিটি শব্দের আত্মা" সে শুধু আপনার পরাবাস্তবতা অথবা ভীষণ প্রিয় কল্পনা যা শুধু কবিকে ঘিরে রাখে সবসময়। আচ্ছা সুনীলবাবু কবি মানেই কি দ্বৈত সত্বায় নিরন্তর অবগাহন, ছায়াপথে অবিরাম সুপারনোভার তীব্র বিস্ফোরণ, তাই নীরাকে ছুঁয়ে আমার কেন যেন মনে হয় স্তব্ধতা থাক না অবিরত সীমারেখা স্পর্শ করে, ওপারে বোতলবন্দী ফোয়ারায় স্বপ্নিল শ্যাম্পেইন, অবসাদ যাক না তবু আমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে...।
মৃত্যুতেও কত উদযাপন প্যাপিরাসের পাতার প্রথম অক্ষর শ্বাস চেপে ধরে আছে সময়কে রুদ্ধ মমি কি মুক্তি চেয়েছিল ফারাও মুকুটের শকুনের চোখে শান্তির কোন নির্যাস অথবা কেউটের ফণায় নীলনদের ছোবল স্তুপ স্তুপ রহস্য নিয়ে পাড়ি জমানো ইজিপ্ট আফ্রিকার গহন সবুজ তোমায় ছোঁয়নি সাহারার দুরন্ত আহ্বান ভাসিয়ে দিলে সিডারের নৌকোয় ওসিরিসের হাতে সমৃদ্ধির শান্ত হাতছানি মমিতে দেবত্ব, নুবিয়ান মরুভূমি বালিকণায় আজো কি কথা বলে রামসেস ..নেফেরটারি, ফিসফিসিয়ে উঠে মরুবাতাস, আবু সিম্বেল চোখ মেলে তাকিয়ে যেন পিরামিড কথা বলে সার সার মমিতে কি নিঃশ্বাস পড়ে বলে শুধু আর নয়, মিশিয়ে দাও আমাদের মৃত্যুর পর এই হাজার বছর কেন বেঁচে থাকা তৈজসপএ, সোনাদানা নিয়ে জন্মেছি কতবার, পোর্সেলিনের চোখে এবার পড়ুক ঝাপিয়ে নীলনদ .....
সমুদ্র তার প্রত্যেকটি ঢেউ এর সঙ্গে রেখে যায় ডুবে যাওয়া জাহাজের নাবিকের শেষ কথাগুলো, যদি ভুল করে সাগরপারে দাঁড়িয়ে থাকে নাবিকের জন্ম শহরের কোন অধিবাসী, ঢেউয়ের শ্বাস মেখে দেয় সমুদ্র ঐ অপরিচিতের গায়ের রোমে রোমে, নোনাজলের ক্ষয়। সমুদ্রহীন ছোটশহরের সকালে চায়ের জল ফুটতে থাকে নাবিকের ঘরে, না শুকানো আধভেজা কাপড় মেলতে থাকে নাবিকের নারী। মাঝসমুদ্রে তখন ভীষণ ঝড়, ডুবছে জাহাজ, মাস্তুল সব একাকার, লাইফবোটে নেমে যাক কেউ কেউ, নাবিক শুধু হাল ধরে থাকে, তার জন্য অপেক্ষায় বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল ...ঘন কুয়াশাসাগর, আর কোন চিহ্ন সে রেখে যেতে চায় না এই ক্রমাগত জীবনে, তবু ভেসে উঠে চোখে আলখাল্লায় মুখঢাকা কোনও জীব, ছন্দহীন সালসায় পরিযায়ী নাবিকের পাপ, বিধ্বস্ত চুরুটে গচ্ছিত থাক আবারো কোন ফ্রান্সিস ড্রেক। সী বিচ্ একলা শুয়ে থাকে, আদ্যিকালের শঙ্খবুড়ীর শ্যাওলা পড়া শরীরে হারিয়ে যাওয়া নুলিয়া ছেলের আঁশটে গন্ধ, তার কাছে শুধু দুটো শঙ্খ, একটায় কাণ পাতলে ছেলেভোলানো সমুদ্র গর্জন, অন্য টায় ডুবন্ত জাহাজের কোলাহল .....
মেয়ে এমন কোন কথা আছে? তোমার প্রতি স্বেদবিন্দুতে থাকবে শুধু বিশুদ্ধতা ভাল করে জানো তুমি তোমার ওপর দিয়ে প্রায়সময় হেঁটে যায় অন্য কোনও মেয়ে তোমার পাশে শুয়ে থাকে অন্য মন নিয়ে। তুমি ভাবছো, কালো ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে উড়াচ্ছো দিগ্বিদিক, উড়ছে ধূলো, মাখছো শরীর ভরা পাপ, "ডাস্ট লেডি " হওয়ার এতোই বুঝি সাধ? জেনে রাখো তার আগে হতে হবে কোনও দুঃসাহসিক ধ্বংস অথবা ক্যান্সার। বুকের তামাটে গর্জন খুলে রাখো আয়না সরিয়ে তোমাকে দেখো এতো অবাধ্য হলে কি চলে?
আমার শাড়িগুলো সব বেলাভূমির মত, প্রত্যাখ্যান মেলে দিয়ে ছড়িয়ে যায় আধবুড়ো জ্যোৎস্নায়। যে শাড়ি মায়ের মৃত্যুদিনে পড়েছিলাম, তাকে সরিয়ে রেখেছি না দেখা কোণে। থেমে থেমে ফুলে ফুলে উঠছে সেখানে আরেকটি মৃত্যু প্রস্তুতি। আনমনা গ্রাম পেরিয়ে যাওয়া ট্রেনের মত প্রথম দেখার শাড়িটি, ফিরে দেখি না.... কত ঢেউ দিয়েছি তাকে, এখন শ্যাওলা এসট্রে তে জমাচ্ছি স্বর্ণরেনু, শাড়ির পাড়ে ঘাপটি মেরে অম্লস্বাদ, ছুঁড়ি প্রেম। মা হওয়ার দিন যে শাড়ি পড়া ছিলাম, তাও আছে, সেখানে কিছু 'আমি 'জারিত হচ্ছে, বয়ঃসন্ধির সব রঙ্ গুলছি তাতে রক্ত, শিরা, ধমনী, তাজা হরমোন .... মেয়ের সামনে এ শাড়ি তেপান্তর হবে। তোমার দেওয়া প্রথম শাড়ি, সাত সমুদ্র তেরো নদীর বংশীবালিকা অপেক্ষা তাতে , লুকিয়ে লুকিয়ে তার গন্ধ স্নান হয় কদম, ভাসন্ত কদম হয়ে প্রতিদিন সঘন বৃষ্টিদিন আমার। একটি শাড়ি আছে, এক বিপ্লবীকে ভালোবেসেছিলাম কোনওদিন। রঙমশাল জ্বলে থাকে ঐ শাড়িতে, থেকে থেকে নিভে যায় ময়ূরকন্ঠী শরৎ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি .... কি অজস্র লজ্জাবতী গাছে ঢেকে গেছে শখের মিছিলভাঙা ভোর রাস্তা। একটি মাছরাঙা রঙের শাড়ি, পড়া হয়নি এখনো ..... দীঘির জলে ডুবন্ত দুপুর, সরু লম্বা ঠোঁটে, তুলে নিচ্ছে একটি একটি অবাধ্য মুহূর্ত, ঐ শাড়িটি পড়বো সেদিন, ছাই ছাই বিশুদ্ধ বিকেল হবো যেদিন। আমার শাড়ি, এতো মেয়েলি কথা! বলে নাকি কেউ? শুধু একটু খানি ভাদ্র দুপুর দিয়েছি ঢেলে, তাতেই আমার শাড়িবালিকারা ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে আমায়, জলে, ঘামে, প্রেমে, বিষাদে, ঋতুস্নানে, প্রতিক্ষণে আমিই কি তাদের পদ্মাবতী, সোহাগবতী, রাজকন্যেটি.....
ভাষা বালিকা....এক. কবি চিরশ্রী দেবনাথ (প্রকাশিত "পাখি সব করে রব ")
ভাষার অমিয় পাত্রে একটু 'আমি ' কয়েকটি ছোট অক্ষর ভেসে যাক এপার ওপার আমিই সেই সাঁকো, মুছে ফেলি না কখনো রক্তছাপ, কুমকুমে, হরিদ্রাভ চন্দনে গনগনে আঁচে জ্বালিয়ে রাখি আমাকে .......
ভাষা বালিকা ......দুই তোমার একটি একটি চুমুতে ভাষা আমার ডাহুক বেলা জলের তীরে ভেজা মাটির মতো নরম হয়ে মিশে থাকা ধানের শিকড়....
ভাষাবালিকা ....তিন আম্লপল্লবে একরত্তি সিঁদুরটিপ মায়ের মতো জেগে থাকে আমার কপালে যে নিঃশ্বাস ঘুমের মাঝে অজান্তে আমায় ছেড়ে চলে যায় .... সেটুকুই ভাষা আমার যাপনে যাপনে.....
ভাষাবালিকা ....চার আমার অশোকবনে ভাষা ফেলে যায় তার জানকী চরণ কাষায় বস্ত্রে আমাকে দেয় গৈরিক শুভেচ্ছা কর্ষনে কর্ষনে স্বর্ণরেণু তে যদি ভরে যায় এ থলে নাহয় কিছুদিন বন্দী রেখো দ্বিখণ্ডিত সত্ত্বায় .....
সব মেয়েরা ভীষণ সুন্দর হয় তাদের ঠোঁটে এক অদ্ভুত খরখরে বালিময়তা এক অপ্রাপ্তবয়স্ক বেলাভূমি ঢেউয়ের মত হাজার হাজার মূহূর্তের আসা যাওয়া উচ্ছ্বাস জমা হয় ঠোঁটের বাঁধে শিশির হয়ে টুপটাপ ঝরে পরে বুকজলে একটি ঢেউয়ের আস্তিনেও তখন থাকে না নারীবাদ তারপর ঝরনা নেমে আসে শরীর বেয়ে, মননে অবাধ বারিপাত মোম আস্তরনে ঢেকে যায় তাদের আঙুল, নখের ডগা গাঙচিল উড়তে থাকে নদীর বুকে, গভীর আকাশ জড়ো হয় ধীরে ধীরে তার চারপাশে মেয়েটি হতে থাকে ক্রমশ নিজস্ব... নির্ভয়া বা দামিনী বা জ্যোতির গল্প আমরা শুনে চলেছি দুই হাজার বারো থেকে এসব গল্প বহু কালের পুরনো বলতেও ইচ্ছে করে না, ভাবতেও না ধর্ষণ আবহকালের নারকীয় উল্লাস দামিনীর রক্তে ভাসানো কপোল থেকে নরম চুলের মতো সরিয়ে দিলাম সব নারকীয়তা আশ্চর্য মুখে পৃথিবীর সব প্রাপ্তি খেলে গেলো নির্ভয়ার বিনিময়ে তার বাবা টাকা পেয়েছিলেন, পঁচিশ লাখ বা আরো বেশী নির্ভয়ার ভাই একটি চাকরি সরকার আইন বানিয়ে তরিঘরি শাস্তির ব্যবস্হা ও করেছিল শুধু অনিন্দ্য কুমার পান্ডে, গোরখপুর.... দামিনীকে ভালবাসতো। ফ্রম দ্য ক্যোর অব্ দ্যা হার্ট, এটাই কি!! কোন টাকা , চিকিৎসার খরচ নেইনি নিজের জন্য মিডিয়ার সামনে বাহবা কুড়োয়নি আগুনের মতো চোখের জল তার বাকি জীবন ছেড়ে যেতে পারত, সে মুহুর্তে ...যায়নি, লড়ে গেছে, রক্তাক্ত উলঙ্গ শরীর নিয়ে চলন্ত বাসে দিল্লীর রাজপথে তীব্র শীতের রাতে সব শেষ হয়ে যাবার পর বান্ধবীকে কোলে নিয়ে একটি কাপড়ে ঢেকে হাত দিয়ে গাড়ী থামানোর চেষ্টা করেছে রাতভর সেদিন আমার দেশ কেঁদেছিলো, এমন ছেলেও আছে তার রাজপথ মহাকাব্যের হস্তিনাপুর রাজসভা কেবল সেই যাদববালক বড়ো অসহায়! অনিন্দ্য কুমার গোখলের চোখে তখন কি ছিল তার ভালোবাসার মরুঝড় সেদিন পৃথিবীর মাটি বুঝি বলেছিল, "এমন পুরুষের জন্য, বাঁজা হয়ে আছি কোটি কোটি বছর ....... আমাকে দাও বারংবার ধর্ষণের উলঙ্গ সম্মান ....