কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ও ছড়া
*
সাগরে গাগর
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

যে বর্ণে লিখেছি দেড়শ বছর ধরে
হঠাৎ কেন সে বর্ণ আজ রক্ত শিশির ঝরে ?
যিনি ছিলেন ভাষার জনক জ্ঞান-বিদ্যার সাগর
হঠাৎ কেন তাঁর সাগরে ভাসছে শূন্য গাগর ?

দীনের সাগর দয়ার সাগর বিদ্যার সাগর যিনি
আমরা জানি সেই সাগরের গভীরতা কতখানি ?
যাঁর দয়াতে বাঙালি পেয়েছে বর্ণের পরিচয়
তাঁর প্রতি এই অবমাননা, বাংলার ক্ষতি নয় ?

তিনিই আমাদের শিখিয়ে গেছেন বাক্য কাহাকে বলে
তবে কেন তাঁর শিক্ষাকে আজ ফেলা হল রসাতলে ?
তাঁর দ্বারইতো শিখেছি আমরা বর্ণমালার বোধ
তাঁর ঋণ কি কখনও আমরা করতে পারিব শোধ ?

শিক্ষা নিয়েই তিনি কেবল ছিলেন নাকো ব্যস্ত
দেশ ও দশের জনকল্যাণে থেকেছেন সদা ত্রস্ত
দু-হাত ভরে লিখেছেন যিনি বাংলা বর্ণমালা
যাঁর দয়াতে  আমরা বাঙালি পেয়েছি জ্ঞানের ডালা

স্বরবর্ণ কাকে বলে ব্যাঞ্জণবর্ণ কি
তাঁরই রচিত জ্ঞানডালা থেকে আমরা পেয়েছি
তিনি হলেন শিক্ষাগুরু জনক বাংলা ভাষার
তিনি বাংলার জ্ঞানের প্রদীপ বাঙালির ভালোবাসার |

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আলোহীন কালোরাতে
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

আমি দেখেছি পথের ধারে
আজও তারা রাত্রি কাটায়
অনিদ্রায় অনাহারে

আমি দেখেছি তারা নগ্ন বদনে
.         শুয়ে আছে ফুটপাতে
শুনেছি তাদের আর্ত কান্না
.         আলোহীন কালোরাতে

দেখেছি তারা ছিন্ন বসনে
.          বসে আছে খোলা ছাদে
যেখানে তারা ক্ষুধার জ্বালায়
.          কান্নার গলা সাধে

দেখেছি তারা শীতের প্রকোপে
.          থর-থর কাঁপে
কখনো তাদের জ্বলতে দেখেছি
.         গ্রীষ্মের কড়া তাপে

অথচ তাদের চোখেতে দেখেছি
.         বাঁচার স্বপ্ন ছবি
তবে কি তাদের স্বপ্ন সফল
.         কখনও হবে না কবি ?

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মন্ত্রীমশাই
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

মন্ত্রীমশাই লোকটি ভালো
সবাই তাকে চেনেন
পাঁচ’শ টাকার জিনিস তিনি
এক’শ টাকায় কেনেন |

বছর খানেক আগেও দেখেছি
কি হাল ছিলো তার
কোনো রকমে টেনেটুনে
চালাতো সংসার |

আজকে তিনি মন্ত্রীমশাই
খান তিন-চার গাড়ি
নোকর-বাকর ষোল আনা
পাক্কা দালান বাড়ি |

তার সামনে দাঁড়ায় এমন
সাহস আছে কার ?
তিনি এখন সবার দেবতা
আমাদের সরকার |

এ সব দেখে ছেলেটাকে
বললাম, বেটা শোন
লেখা-পড়া ছেড়ে ছুঁড়ে
নেতা হ একজন |

.         ***************          
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভ্যাবাচ্যাকা
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

যেই চেপেছি পাতাল রেলে
অমনি ভ্যাবাচ্যাকা
ডাইনে-বাঁয়ে, উপর-নীচে
যায়না কিছু দেখা |

এদিক-সেদিক যেদিক তাকায়
দেখছি অবাক একি !
অন্ধকার এক গলির ভিতর
ট্রেনটা ছুটে দেখি |

দেখছি এবং ভাবছি কিন্তু
মিটছেনা আর ধন্দটা
ভাবছি গেটটা কেইবা খুলে
কেইবা করে বন্ধটা |

ভাবতে—ভাবতেই পেরিয়ে গেছি
কখনবা কে জানে
নামার কথা ছিলো এম.জী রোডে
নামলাম ময়দানে |

.         ***************          
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

আরে-আরে ভোমলা তেলি
আবার এলি জেলে ?
এই বললি চুরি করবোনা স্যার
এবার ছাড়া পেলে |

এবার তোকে দেখাবো মজা
রাখবো বারো মাস
দেখবো এবার কেমন করে
জামীন পেয়ে যাস |

ভোমলা বলে, থ্যাঙ্ক ইউ স্যার
রাখুন ভরে জেলে
চুরি করবো কিসের জ্বালায়
জেলে খাবার পেলে ?

.         ***************          
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
খ্যাতনামা
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

অ্যাংলাশ-ক্যাংলাশ- প্যাংলাশ পাণ্ডা
লেখা-পড়া ছেড়ে শুধু খেলে গুলি ডাণ্ডা
এলারাম-ফেলারাম –খেলারাম কাণ্ডা
তিনজনে গিলে খাই তিনশ’টা আণ্ডা
আমজোল-রামজোল-শামজোল সদ্দার
কেউ বলে বেইমান কেউ বলে গদ্দার
ছোটো-ছোটো কথা নিয়ে করে শুধু দরদার
চুরি করে মাছ ধরে গঙ্গা ও পদ্মার |

অম্বল-ভম্বল-কম্বল পুষ্টি
ল্যাচ্চড় –ছ্যাঁচ্চোড় এরা তিন গুষ্টি
কেউ ভালো হাত দেখে কেউ দেখে কুষ্টি
তবু এদের কারও মনে নেই সন্তুষ্টি |
আটুরাম –বাটুরাম-সাটুরাম সরকার
হাটে –বাটে ঘাস কাটে সুতো কাটে চরকায়
তক্ষুনি সে ছুটে যাই যাই যখন যার দরকার
সবাই তার আপনার কেউ নয় পর তার |

আগারাম–-ভাগারাম—মাগারাম মূর্তি
কেউ পড়ে প্যান্ট-শার্ট কেউ পরে কূর্তি
কেউ থাকে চুপচাপ কেউ করে ফূর্তি
শখ—সাধ যা কিছু দাদু করে পূর্তি |
ভিন দেশে থাকে এরা ভিন-ভিন রাজ্যে
এরা সব খ্যাতনামা নিজ-নিজ কায্যে |

.              ***************               
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
যমুনা
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

এই মেয়ে, তোর বাড়ি কোথায় ?
খোলা ছাতে |
থাকিস কোথায় ?
ফুটপাতে |

ঘুমোস কখন
মাঝরাতে
খাবার কি খাস
মাড়ে ভাতে

পাশ কোথায় ?
ডাস্টবিনে |
তোর মা কোথায় ?
ক্যান্টিনে |

তোর নাম কি ?
আমীনা |
তোর বাবা কোথায় ?
জানিনা |

ব্যাস বাবু ব্যাস
আর কিছু কমুনা
আমি এক ভারতের
স্রোতহারা যমুনা |

.              ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দেবদাসী
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

নাইনটিন নাইন্টি ফোর
মুখ দেখেছি ওর
‘মে’ মাস, তারিখ ছিলো তিন
আমার প্রেমের প্রথম দিন |
আহা কি অপরূপ রূপ
থাকতে পারিনি চুপ
তার রূপের গরিমায়
যেন জ্যোত্স্না ঝরে যায়
তার গোলাপ পাপড়ি ঠোঁটে
যেন হাসির পদ্ম ফোটে
তার পটল চেরা চোখ
আমার প্রেমের সাগরহ হোক |
তার বাঁশীর মতো নাক
আমার হৃদয় ছুঁয়ে থাক |
তার বর্ষা ঝরা চুল
আমার ভালবাসার ফুল |
ও মেয়ে তুই আয়
আমার প্রেমের বাগিচায়
সকাল-বিকাল স্নান করাবো
প্রেম ভরা জ্যোত্স্নায় |
তার মুক্তো ঝরা হাসি
আমার হৃদয় ছুঁয়ে থাক
তুই হবি ‘দেবদাসী’ আমার
আমি হব দেবদাস |

.              ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভারতবর্ষ
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

আমার ঈশ্বরের নাম ভারতবর্ষ
আমার বীর স্বরের নাম ভারতবর্ষ
আমার মা এর নাম ভারতবর্ষ
আমার ভাইএর নাম ভারতবর্ষ
ভারতবর্ষ আমার জন্মভূমি |

আমার বাবার নাম ভারতবর্ষ
আমার দাদার নাম ভারতবর্ষ
আমার প্রেমিকার নাম ভারতবর্ষ
আমার সেবিকার নাম  ভারতবর্ষ
ভারতবর্ষ তোমার তরণ চুমি |

আমার ভালোবাসার নাম ভারতবর্ষ
আমার আলো-আশার নাম ভারতবর্ষ
আমার ভক্তের নাম ভারতবর্ষ
আমার রক্তের নাম ভারতবর্ষ
ভারতবর্ষ তোমায় আমি নমি |

.              ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নারী
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

আমি নারী, সব পারি
জ্বলতে পারি জ্বালাতে পারি
চলতে পারি চালাতে পারি
রাতকে দিন দিনকে রাত করতে পারি |

আমি নারী, তোমার গর্ভধারী
কখনো পত্নী, কখনো বোন
কখনো প্রিয় বান্ধবীর মতোন
নানা ক্ষণে নানা রূপ ধরতে পারি |

আমি নারী, এ বিশ্ব সারি
ভাঙতে পারি ঠাঙতে পারি
আঘাতে-ব্যাঘাতে প্রতিঘাত করতে পারি |

আমি নারী, পরম শক্তি ধারী
আমি দুর্গা, আমি কালী
আমি চণ্ডী, শেরোবালী
কাজে, সাজে বাজীমাৎ করতে পারি |

আমি নারী, সব পারি
বাঁচতে পারি বাঁচাতে পারি
নাচতে পারি নাচাতে পারি
অন্যায়ে ধুলিস্মাত করতে পারি |

.              ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর