কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ও ছড়া
*
ফকির
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

আই
আজ তোকে গাছ করে দিই |
তোর ডালে-ডালে টেঙে দিই সমস্ত বোঝা
এই এত ভারী বোঝ,
এই এত সম্পত্তি,
আর কত কাল টানবো ?

এবার তুই সাজ,
পুরো কর অসম্পূর্ণ কাজ |
ওদেরকেও ডাক-
ওরাও ঝুলে থাক তোর ডালে |
 আর কি নিবি ?  এই শরীরটুকু ?
সেটুকুও তোর কাছে বাঁধা দিয়ে-
নিশ্চিন্তে চলে যাব পৃথিবীর অন্তরালে |

এই নে ষোলআনা |  সামাল |
যাক, রেহাই পেলুম,
আহাঃ কি আনন্দ, কি আনন্দ
আজ আমি ফকির হয়ে গেলুম ----

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তুমি আসবে বলে
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

তুমি আসবে বলে-
আকাশে-বাতাসে পূজোর গন্ধ ভাসে
তুমি আসবে বলে-
ভোরের শিশির শিউলী ঝরায় ঘাসে |

তুমি আসবে বলে-
শরৎ হাওয়া দোলা দেয় কাশে-কাশে
তুমি আসবে বলে-
উলঙ্গ শিশুটি উদীপ্ত নয়নে হাসে |

তুমি আসবে বলে-
খালে-বিলে-ঝীলে-শালুক-পদ্ম-ফোটে
তুমি আসবে বলে-
মধুকরের দল মধুর খোঁজে ছোটে |

তুমি আসবে বলে-
রিনি-মিনি-ঝিনি-রঙিন স্বপ্ব দেখে
তুমি আসবে বলে-
মনের খাতায় প্রেমের কবিতা লেখে |

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ফুটপাথ
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

শহরের আলো মেখে ঘুমোচ্ছে ফুটপাথ
অল্প দূরে সানাইয়ের সুর থেকে-
বেরিয়ে আসছে নানা স্বাদের ঘ্রাণ |
ফুটপাথে শুয়ে-শুয়ে
নিমগ্ন রাতের প্রহর শুনছি আমি
আর, ক্ষুধার সাথে লড়াই করছে আমার দুই সন্তান |

ফুটপাথ শুয়ে আছে নিদ্রাহীন চোখে
হটাৎ দেখি কিছু মাছ আর মাংসের টুকরো
লাফাতে-লাফাতে ঢুকে যাচ্ছে ডাস্টবিনে
অমনি কয়েকটা কুকুর, দুই চোখে রক্ত মেখে-
ছুরির মতো নখ আর চাকুর মতো দাঁত বের করে-
একে-অপরকে বলছে –তুই আসবিনে-তুই আসবিনে |

জেগে আছে রাত, জেগে আছে ফুটপাথ, জেগে আছি আমি
আর আমাদের ক্ষুধা পেটে আগুন জ্বেলে-
উড়ে যাচ্ছে ভাত-মুড়ি-রুটি
ঠিক তখনই-
কুকুরগুলোর সাথে লড়াই না করেই-
খাবার কেড়ে আনছে আমার ছোট্ট খোকা দুটি |

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রেমের ছবি
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

হবে
ফুটফুটে জ্যোত্স্না রাত
বইবে
শনশন-শন হাওয়া
চলবে
ঝমঝম বৃষ্টিপাত
তারপর,
কোথাও হারিয়ে যাওয়া |

গাছে-
ফুটে আছে নানা ফুল
নদী
বহে যাবে কুলকুল
রাত
হবে সুন্দর-মনোহর, তারপর ?
তুমি হবে
ফুলকলি আমার
আমি হব
মধুকর |

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নষ্ট হয়ে যাব
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

এবার মাতাল হব
মদ খাব, ডুবে যাব মহুল-হাঁড়িয়াতে
তারপর, হারিয়ে যাব
এই জ্যোত্স্না ছোঁয়া চাঁদনী রাতে |

জ্বলে—পুরে ছাই হয়ে যাব
তুই দেখবি, আমি কষ্ট পাব
বিশ্বাস কর, তোর জন্যে
আমি নষ্ট হয়ে যাব |

এই এক হাঁড়ি মহুয়ার রসে
সাঁতার কাটবো সারা রাত
লোক মুখে কত কথা শুনবি তুই
তুই হাসবি, বলবি, বজ্জাত-বজ্জাত |

তুই হাসবি, আমি কষ্ট পাব
বিশ্বাস কর, তোর জন্যে-
আমি নষ্ট হয়ে যাবো --

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বাঙলা
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

বাঙলা আমার জন্মদাত্রি
বাঙলা আমার মা
আমার মা এর রূপের-গুণের
নেইকো তুলনা |

বাঙলা আমার ভাটিয়ালী গান
মাঝি--মাল্লার সুর
বাঙলা আমার বিকেল বেলার
পড়ন্ত রোদ্দুর |

বাঙলা আমার মা-এর আঁচল
আমার পূজার ফুল
বাঙলা আমার রবীন্দ্রনাথ
বিদ্রোহী নজরুল |

বাঙলা আমার মান—সম্মান
বাঙলা আমার গান
বাঙলা আমার ভালোবাসা
বাঙলা আমার প্রাণ |

বাঙলা আমার স্বপ্ন—স্বজন
আমার প্রাণের ভাষা
বাঙলা আমার মা-এর হাসি
আমার ভালোবাসা |

বাঙলা মা-এর জনঅয যারা
জীবন করে দান
তাদের জানাই শত সহস্র
সেলাম ও প্রণাম |

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জাত-বজ্জাৎ
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

জাতের নামে বজ্জা  লোক
ধর্ম নিয়ে মরে
ওরাই এসে আগুন লাগায়
দুইটি ভাইয়ের ঘরে |

ধর্ম কি কেউ দেখেছে চোখে ?
কেমনই তার রূপ-
তবে কেন ভাই ভাইকে মারতে
কাটছে গভীর কূপ |

কখনো কি ভেবেছো কি লাভ আছে
ফল কি হবে তার ?
পরজদের হাতে কেন দিয়ে যাও-
হিংসার হাতিয়ার ?

ধর্ম কি কোথাও নিয়েছে জন্ম-
মায়ের গর্ভ থেকে ?
আমরাই সৃষ্টি করেছি ধর্ম
নিজের স্বার্থ দেখে |

তাই বলি ভাই ধর্ম ভুলে
কর্মগুলো করি
বিশ্ব মাঝে ভারত শ্রেষ্ঠ
এর নজীর তুলে ধরি |

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মৎস ধরার শখ
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

শখ হয়েছে মৎস ধরার,কিন্তূ করি কি যে-
ঠিক করেছি কঞ্চি কেটে ছিপ বানাবো নিজে
ছিপ বানিয়ে মাছ ধরতে গেলাম নদীর পাড়
সঙ্গে নিলাম কুরকুট ডিম পান্তা ভাতের চার ।

চার ছড়ালাম ছড়াক-ছড়াক ভাত ছড়ালাম ঘাটে
হটাৎ  দেখি বেশ ক’টা মাছ সেথায় সাঁতার কাটে
রুই-কাতলা-মৃগেল-ইলিশ, ট্যাংরা এবং পুঁটি
ঘাই মেরে ভাই ফরফরিয়ে করছে ছুটোছুটি ।

মুড জমিয়ে মাচায় বসে যেই ফেলেছি ছিপ
এবার দেখি ফাতনা নড়ে টিপটিপ- টিপ- টিপ
ফাতনা দেখেই বুঝে গেলাম টোপ গিলেছে মাছে
অমনি আমি ঘিচটা মেরে ছিপটা আনি কাছে

স্যারাক-স্যারাক এদিক-সেদিক মারছে সুতোয় টান
কেউ বলে ওরে লুজ ছেড়ে দে, কেউ বলে টেনে আন
কেউ বলে ওরে মাছটা খেলা লম্বা থেকে আড়ে
কেউ বলে ওরে ঝটকা মেরে তোল ব্যাটাকে পাড়ে ।
যেই  মেরেছি ঝটকা ঘ্যাচাং ছিপ নিয়েছি তুলে
ওরে বাবা! একি দেখি! সাপ আছে এক ঝুলে ।

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্যার
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

ভোমলা পালের কানটা ধরে
স্যার বললেন শোন
ছয়ের ঘরের নামতাটা তুই
আর একবার গোণ  ।

ছয়ের ঘরের নামতাটা স্যার ?
পাঠ করিনি রাতে
দেখে-দেখে বলবো কি স্যার ?
আছে ধারাপাতে ।

তার থেকে স্যার আপনি বলুন
আমি বরং শুনি –
শুনে-শুনেই মুখস্ত স্যার
করে নোব এক্ষুনি।

কি বললি,ইয়ার্কি হচ্ছে ?
ইঁচড় পাকা ছেলে
আমিও তোকে শুনিয়ে দিতাম
ধারাপাতটা পেলে ।

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মায়ের জন্য
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়
কবি একজন সৈনিক । ১৯৮৪-১৯৮৬ সালে যখন তিনি ভারত-চীন এর বর্ডারে সিকিম এর নাথুলা পাশ-এ
ছিলেন, তখন তাঁর মায়ের খবর না পেয়ে, সময় মতো মায়ের চিঠি না পাওয়ার জন্য যে কি মানসিক যন্ত্রনা
পেয়েছিলেন তা তিনি কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন পাঠক-পাঠিকাদের সামনে।


পাখিরে, ও পাখি,তুই কোথায় যাবি উড়ে ?
যা না একটু আমার গাঁয়ে, আয়না একটু ঘুরে
আজ কতো দিন পায়নি খবর গাঁয়ের
পায়নি খবর আমার সোনা মায়ের
গোপন ব্যথায় কেঁদে মরি হৃদয় ভাঙ্গা সুরে
যা না একটু আমার গাঁয়ে আয়না একটু ঘুরে।

আজ কতদিন মা’য়ের সাথে হয়নি আমার দেখা
“গুলি-কামান’এর শব্দ ভাঁজে হয়নি চিঠি লেখা
পারিস যদি বলিস গিয়ে মা’কে
তোর খোকা মা পাহাড় দেশে থাকে
তোকে ছেড়ে আছে সে মা আদিগন্ত দূরে
যা না একটু আমার গাঁয়ে আয়না একটু ঘুরে।

যা না পাখি একবার তুই আমার মায়ের কাছে
বলবি মা’কে তোর খোকা মা সুস্থ-সবল আছে
চিন্তা করতে মানা করবি মা’কে
বলবি এবার চিঠি পাবে ডাকে
মা যেন না চিন্তা করে মনের আঙ্গন কুরে
যা না একটু আমার গাঁয়ে,আয়না একটু ঘুরে।

জানিস পাখি মা’য়ের জন্য মনটা কেমন করে
ভাবছি কবে ছুটি পাব পৌঁছবো কবে ঘরে
কবে আবার মায়ের কাছে শোবো
কখন আবার মা’য়ের চরণ ছোঁবো
কবে আবার থাকবো গিয়ে মা’য়ের হৃদয় জুড়ে
যা না একটু আমার গাঁয়ে,আয়না একটু ঘুরে।

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর