কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ও ছড়া |
মায়ার টানে কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় ( আঞ্চলিক কবিতা ) এই আঞ্চলিক কবিতাটি কবি তাঁর ‘মা’কে নিয়ে লিখেছেন। কবির চুরাশি বর্ষীয়া মা চিৎকার করে নাতি- নাতনিদের ডাকতেন, তখন তারা এসে দেখত কোথাও কিছু নেই। তারা রেগে যেত। ক'বছর আগে কবির মা পরলোক গমন করেন। তাই এখন ঠাম্মা হারা নাতি-নাতনিদের মধ্যে ঠাম্মার সেই সব মায়া মাখানো স্মৃতি মায়ের কথাতেই প্রকাশ করেছেন কবি। ঠাম্মা চেঁচান জোরে, ক্যা আছিসর্যা ঘরে – দ্যাক ছাগলে খায়ে গ্যাল সব কিছু শ্যেষ করে আবার চেঁচান ঠাম্মা, অরে অ রাম্মা-রাম্মা- কতাই গেলি হতচ্ছাড়া ? ডাকচি তবু দিসনি সাড়া যেমন তরা মুখপড়ারা তেমনি তদের বাপ-মা অরে অ রাম্মা-রাম্মা- এদিক-ওদিক তাকি, আবার ডাকেন ঠাকি- অল অ শাখী-শাখী- কতায় ম’লি গতর খাকী ? তরা সব অ্যাকগুয়ালের গরু নাকি ? অ্যাত করি ডাকাডাকি ক্যাউত অ্যাকবার বেরিয়ে শুদা কি হলগ ঠাম্মা ? অরে অ রাম্মা-রাম্মা- যাকগা কলা মরুকগা যা, যা খুশী তাই করুক গা যা, থাকলেত ভাই তরাই খাবি দশটা লয়ত পাঁচটা পাবি আমি কি আর খাতে পাব আজ লয় কাল চলে যাব আমি ক্যাবল মায়ার টানে চেঁচিয়ে করি হাম্মা-হাম্মা- অরে অ রাম্মা-রাম্মা--- . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
নদীটা কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় নদীটা জল থৈ-থৈ- নদীটা কানায়- কানায় উড়ে যায় পাখীর মতোয় ভেসে যায় ঢেউয়ের ডানায় । নদীটা শান্ত ভীষণ নদীটা ভীষণ ভালো স্রোতে সে ক্লান্ত হোলেও চোখে তার খুশীর আলো । নদীটা ভ্রান্ত হলেও জানতো সবার ভাষা বন্যায় ক্ষান্ত হলেও হতোনা সর্ব- নাশা । নদীটা বোশেখ এলে থাকে সে হাঁটু জলে সন্ধ্যায় চাদর মেলে ছুটে সে কল-কল-কল । বর্ষা জমতো বুকে হতোনা করাল গ্রাসি গরীবের সুখে দুঃখে ফোটাতো মুখে হাসি । . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
পিওন কাকু কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় সৈনিক জীবণে এই রকম অনেক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন কবি পিওন কাকু, ও পিওন কাকু,চিঠি এনেছো বুঝি ? আজ ক’দিনই তোমায় আমি করছি খোঁজাখুজি কিন্তু তুমি মস্ত পাজী, আসোইনাকো আর আগেতো তুমি খুব আসতে সপ্তাহে চারবার । এতদিন তুমি আসোনি কেন,ছুটিতে ছিলে নাকি ? আমি কিন্তু তোমার জন্য রোজ দাঁড়িয়ে থাকি মা বলে তোর পিওনকাকু, গেছে নিজের দেশে সব চিঠি তোর হাতে দেবে ওখান থেকে এসে । আজ কতোদিন হোল বাবার চিঠি পায়নি আমি কেন পায়নি,কি যে হোল,আমি কি আর জানি ! তুমি একবার যাওনা কাকু,আমার বাবার কাছে গিয়ে বলবে তোমার খুকি ভীষণ রেগে আছে । গোপন কান্নায় পিওন কাকুর দু’চোখ ভরে জলে অন্য কারো চিঠি দিয়ে পিওন কাকু বলে- ‘কে বলল,চিঠি দেয়নি ? এটাই তোমার বাবার, এ নাও খুকু,চিঠি পড়ো,কালকে দোবো আবার । ছোট্ট খুকী সে কি জানে তাঁর বাবা নেই আর ‘কারগিল যুদ্ধে’ শহীদ হয়েছেন সেই বীর সোলজার । . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
পাশ করেছে ছেলে কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় রেজাল্ট হাতে খোকাবাবু বললো মাকে এসে পাশ করেছি কিন্তু মাগো রোল নাম্বার শেষে । মা বললো,পাশ করেছিস ? ওটাই আমার চাই ফাস্ট- সেকেন্ড আর থার্ড- ফোথের কোনো দরকার নাই । মা শুধালো, অঙ্কে কত পেলি খোকা ? খোকা বললো বারো মা বললো চেষ্টা করলে পেতিস কিছু আরও । এমনিতে তোর তিনটে বছর- কাটলো ফেলে-ফেলে এবারতো লোককে বলতে পারবো পাশ করেছে ছেলে । . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
একুশ আমার মা কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে লেখা। একুশ আমার নীরব কান্না হৃদয় ভাঙা গান একুশ আমার স্বপ্ন সাজানো বুকভরা অভিমান একুশ আমার গোপন ব্যথা হৃদয়ের খোলা খাতা একুশ আমার ভাষার ঠিকানা মায়ের আঁচল পাতা । একুশ আমার ভালোবাসার স্বপ্ন দেখার দিন একুশ আমার প্রাণের দোসর শত বাঙালীর ঋণ একুশ আমার রক্তে রাঙানো উনিশ’শ বাহান্ন সাল একুশ আমার সালাম-রোফিক-জব্বর-ইকবাল । একুশ আমার বাদল মেঘে সূর্য ওঠা ভোর একুশ আমার নীরব ব্যথার ক্রান্তি আনা শোর একুশ আমার পূব আকাশে সূর্য ওঠার দিন একুশ আমার রোদ ছড়ানো হিন্দু ও মুসলিম । একুশ আমার রক্তে রাঙানো ভালোবাসার গান একুশ আমার ভাষার জন্য জীবণ করে দান । একুশ আমার বাঁচার প্রতীক নতুন আলোর আশা একুশ আমার মা’য়এর হাসি,মায়ের প্রিয় ভাষা । একুশ আমার প্রাণের তারিখ ভাইএর রক্তে লেখা একুশ আমার সোনার বাংলা সোনার স্বপ্ন দেখা একুশ আমার ‘মা’ এর ভাষা ‘একুশ আমার মা’ একুশের কথা ওগো শহীদ কখনও ভুলবোনা । তোমাদের রক্তে লেখা এই দিন একুশে ফেব্রুয়ারী আমরা কি কখনও এই শুভদিন সহজে ভুলতে পারি ? . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
রব্বি ঠাকুর হ্যা কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় (আঞ্চলিক কবিতা) রব্বি ঠাকুর হ্যা- ইকট কোথা বলি তকে আজ পুরযন্ত তোর ছোবি কৌ দিখেনাইত চখে তকে দ্যাখার জন্যে পাগল হামার গাঁয়ের লোকে এ বার কিন্তু হামার গাঁয়ে আসত্যা হব্যাক তকে। তুইত আসুস পতি বছর পুচিশা বোশাখে ঠিকানট দিয়ে যবি চিঠি পাঠাব ডাকে ই বছরট ছাড়ে দিলম আটকাবনায় তকে ই বার কিন্তু হামার গাঁয়ে আসত্যা হব্যাক তকে। উ বছরে আসবি কিন্তু- ন করিসন মোটে জনম দিবস তর করব পালন কনকী নাড়ীর গোঠে দেকবি ক্যামন খুশীর বাতাস বইচে গাঁয়ের চখে ই বার কিন্তু হামার গাঁয়ে আসত্যা হব্যাক তকে। রব্বি ঠাকুর হ্যা,অ রব্বি ঠাকুর হ্যা – . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
নন্দী বাবুর ফন্দি শোনো কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় যেই না হোল সন্ধ্যে – নন্দী বাবুর ফন্দি শুনে ভূত পড়লো ধন্দে বললো, কে-রে, একা-একাই ঘুরিস এমন সন্ধ্যায়? ফন্দি এঁটে নন্দী বলে, আমি ভুত্নির নন্দায়। ভূত বললো,জামাইবাবু, যাচ্ছ এখন কোনখানে? নন্দী বলে,যাচ্ছি ভায়া মানুষ খাবার সন্ধানে। ভূত বলল,দারুন মজা যাচ্ছি চলো সঙ্গে মানুষ খেতে পায়নি বলে ভুগছি নানা তঙ্গে। নন্দী ভাবে এই মরেছি,পড়েই গেছি ফান্দে বলল ভায়া ভূত শালাজী এসছি স্কুলের বন্ধে। কালতো আমার স্কুল খুলবে, ফিরতে হবে বাড়ি বলছি কোথায় মানুষ পাবে শোনো তাড়াতাড়ি। ঐ দেখো দূরে পোড়োবাড়ি,গ্রাম সীমানার শেষে ওখানে অনেক মানুষ পাবে নন্দী বলে হেসে। নন্দিবাবুর ফন্দি শুনে ভূত ঢুকে যেই খন্দে অমনি নন্দী বন্দী করে পালায় পাচীর ফেন্দে। চললো তারা সুড়ং পথে মানুষ খাবার গন্ধে মাঝ রাস্তায় আটকে তারা পড়লো নানা ধন্দে। বেরুতে গিয়ে দেখে তারা রাস্তাগুলোও বন্ধ ভূত-পেত্নির মধ্যে এবার চললো ভীষণ দ্বন্দ্ব। বললো, ‘উঁটা মানুষ ছিল ভূতের প্রতিদ্বন্দ্বী এবার তোমরা শুঁখিয়ে মরো ঘরে থেকে বন্দী। জানলো তারা ভূতকে মারার মানুষ অভিসন্ধি ভূতের চোখে ধুলো ঝোঁকে বাঁচলো শ্যামা নন্দী। . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
একটা ছেলে কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় একটা ছেলে রোজ সকালে কাগজ কুড়াই একটা ছেলে ফ্ল্যাটের উপর ঘুড়ি ওড়াই একটা ছেলে কোল খাদানে কয়লা খুঁড়ে একটা ছেলে আরাম করে হৃদয় জুড়ে। একটা ছেলে সকাল হলে কাজে ছোটে একটা ছেলে বেলা আটটাই ঘুমিয়ে ওঠে একটা ছেলের সময় কাটে ব্যাটে-বলে একটা ছেলের সময় কাটে চোখের জলে। একটা ছেলের রাত্রি কাটে পথে-ঘাটে একটা ছেলের রাত্রি কাটে সোনার খাটে একটা ছ্যেলে ক্ষুধার জ্বালায় কেঁদে মরে একটা ছেলে খাবার ভয়ে লুকোয় ঘরে। একটা ছেলে সহ্য করে ক্ষুধার জ্বালা একটা ছেলে ছুঁড়ে ফেলে ভাতের থালা একটা ছেলে পরের ঘরে ধুচ্ছে থালী একটা ছেলে উল্টে তাকে দিচ্ছে গালি। একটা ছেলের জীবণ কাটে দুঃখে-দুঃখে একটা ছেলের জীবণ কাটে চরম সুখে যখন ভাবি দেশের কথা লাজে হাসি তুমিই বলো ভারতবর্ষ,এরাও কি সব ভারতবাসি? . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
ভয় কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বনবন মাথা ঘুরে অঙ্কের ক্লাসে যতো সব মাথা ব্যথা ইনটু ও প্লাসে । যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ আরও কতো কি যে – ভয়ে তাই বইগুলো রেখে দিই ফ্রিজে । গ্রামারের কথা শুনে বুকে ধরে ভয় আর কি ছিলোনা কোনো অন্য বিষয় ? গ্রামার না হয়ে যদি হতো ইংলিশ পাশ মার্ক পেতামই-পেতাম ত্রিশে-ত্রিশ । বাঙলাটা হোতো যদি ইংলিশ গ্রামার তাহলেতো কোনো ভয় হতোনা আমার। . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
কুকুর ছানা কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় আমরাতো ভাই কুকুরছানা ক্ষুধায় করি ঘেউ ক্ষুধার জ্বালায় মরছি দেখেও ভাত দাও কি কেউ ? উল্টে বরং লাঠি নিয়ে মারতে আসো তেড়ে আর কতদিন আমরা তোমায় দিই বলো ভাই ছেড়ে ? এক মুঠো ভাত দাওনা খেতে উল্টে মারো বাড়ী তাই লুকিয়ে সাবাড় করি তোমার ভাতের হাঁড়ি । মাগতে গেলে তেড়ে আসো ডাণ্ডা-লাঠি নিয়ে তাইতো রেগে বাধ্য হয়ে পালায় কামড় দিয়ে । চাইনাতো ভাই ইচ্ছে করে তোমার ক্ষতি করতে কিন্তু ভায়া কে বলো চাই খেতে না পেয়ে মরতে ? তাইতো বলি,তুমিও বাঁচো আমিও বাঁচি সবাই বাঁচি ভাই মাড়-আমানি যা আছে তাই দু’ভাগ করে খাই . *************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |