কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ও ছড়া
*
চিৎ পট্টাং পাত
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

জানিস,আমি কুস্তি করি
এক ঘুষিতে বাঘকে মারি
ভালুক পেলে জাপটে ধরি
হাতীর সাথে মস্তি মারি ।

অবাক হয়ে পলা বলে,
আচ্ছা গুরু সিংহ পেলে ?

সিংহ পেলে ? ভারী খুশী
জোরসে মুখে মারি ঘুষি
তাঁর পরেইতো ঢুসোঢুসি চিৎ পট্টাং পাত
ব্যাস একেবারে কুপোকাত ।

সত্যি তোমার সাহস বটে গুরু,
আমারতো ভয়ে বুক করে দুরু-দুরু ।

অমনি কি সব গ্রামের লোকে
আমায় দেখে সেলাম ঠোকে ?
চোর-ডাকাতও রয়না গ্রামে
সবাই কাঁপে আমার নামে ।

মুচকি হেসে পলা বলে,
‘আচ্ছা গুরু কুকুর এলে’ ?

কুকুর এলে ? নীচে ফেলে এমন মারি লাথি
এক লাথিতেই কুকুর ব্যাটার বন্ধ জীবণ বাতি ।

যেই বলা সেই একটা কুকুর,আসলো তাদের তেড়ে
অমনি গুরু উঠলো গাছে একদম মাটি ছেড়ে ।
বলল ভাইয়া কুকুর বটে,ভীষণ বিষের জ্বালা
বাঁচবি যদি আয় উঠে পড়,নইলে ছুটে পালা ।

কামড়ে দিলে মৃত্যুরে ভাই জলাতঙ্ক রোগে
কেন বাবা কাঁচা জীবণ দিবি মা’য়ের ভোগে ?

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মা
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

মা’এর          গান
জুড়ায়           প্রাণ
মা’য়ের          মুখ
ঘোচায়         দুঃখ

মা’য়ের           চোখ
আনন্দ         লোক
মা’য়ের        হাসি
খুশীর          বাঁশী

মা’এর         ভাষা
সুখের          বাঁসা
মা’য়ের          কথা
মোছায়         ব্যথা

মা’এর           আদর
স্নেহের           চাদর
মা’এর          আঁচল
মাথার            আগল

মা’এর           আশিষ
থাকলে          তবেই
জীবন          সুখের
    হবে             হবেই  ---

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সনার ডিম
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়
(আঞ্চলিক কবিতা)

বুড়ো বললো, অ খকার মা, শুনেচ কি, অদের কালিদাস
দিল্লী থেকুন এনেচে নাকি অ্যাক জড়া রাজহাঁস
অ্যাকটা গপন কতা আমায় বলল মদন সিং
রেতের বেলায় হাঁসগুলা নাকি পাড়ে সোনার ডিম।

তাই ভাবচি আমিঅ দু’টা রাজহাঁস আনি কিনে
সনার ডিম বিক্রি করে ধনী হব দিনে-দিনে।

বুড়ি বললো, ঠিক ব-লে-চ খ-কার বাবা, আজই আ-ন দু-টা হাঁস
কাল থেকে থালে আমিঅ করব সনার ডিমের চাষ।

দিল্লী থেকে আনলো কিনে একজোড়া রাজহাঁস
খুদঘাঁটা আর আটা খাওয়ালো প্রায় দুইটি মাস

গিন্নী বলেন, ‘অ খকার বাপ, কুথায় সনার ডিম?
মিচ্ছা কথা বলেচে তুমাকে মদন মহন সিং।

কত্তা বলেন, যেমনি তুমি তেমনি আমি, মূর্খত দুই জনা
ডিমগুলা সব রাখা আছে হাঁসের পেটে জমা।

অবশেষে হাঁসটা মেরে পেটটা ফেড়ে দেখলো রতন সিং
নাড়ি-ভুঁড়িতে পেটটা ভরা কোত্থাও নাই ডিম ।

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
রস চুরি
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

কনকনে শীত,বইছে হাওয়া, তবুও ভোরে উঠে
পৌছে গেলাম আমি ও লালূ খেজুর ডাঙায় ছূটে।
আঁধার তখনও যায়নি মুছে,ঝূঝকো-ঝূঝকো ভোর
খেজুর ডাঙায় পৌছে গেলাম আমরা দু’টি চোর।

রস টেঙেছে মোহোল দাদা, ঝুলছে গাছে হাঁড়ি
অমনি লালু খেজুর গাছে উঠলো তাড়াতাড়ি
মোহল দাদা চেঁচিয়ে ওঠে ধর-ধর-মার-মার
তাদের আসার আগেই আমরা  হোলাম প্রগার পার।

পিছন-পিছন মোহল দাদাও করতে থাকে ধাওয়া
ওদের চোখে ধুলো ঝোঁকে হয়ে গেলাম হাওয়া।
একদিকেতে ছুটছে লালু আর একদিকে আমি
ছুটতে-ছুটতে এক্কেবারে খালের নীচে নামী।

ঝুঝকো ভোরে ছুটছি জোরে প্যাঁয়- প্যাঁয়- প্যাঁয় প্যাঁয়
লালু গিয়ে পড়লো সোজা কাদা- নর্দমায়।
হো-হো-হো নিচ্ছি মজা হাসছি জোরে-জোরে
হঠাৎ দেখি আমার মুখে কি যেন এক ঘোরে।

অমনি আমার ঘুম ভেঙে যাই দেখছি বিছানায়
ভোরের সূর্য রোদ ছড়িয়ে ওঠাচ্ছে আমায়।

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিষফুল
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

সেও      এক      সময়      ছিল
শিশু     মনে     জয়     ছিল
দাদু     ছিল     দিদা     ছিল
কতো      কি     সুবিধা      ছিল ।
মা’র     মুখে     গান     ছিল
গোলা     ভরা     ধান     ছিল
রাজা     ছিল     রানী     ছিল
কতো     কি     কাহিনী     ছিল ।
পিসি     ছিল     মাসি     ছিল
গাল     ভরা     হাসি     ছিল
লেখা     ছিল     পড়া     ছিল
হাতী     ছিল     ঘোড়া     ছিল ।
এক     শিশু     মন     ছিল
খুসি-----র     জীবণ     ছিল
ভাই     ছিল     বোণ     ছিল
আত্মীয়     স্বজন     ছিল ।
আজ     আর     শিশু     নেই
যিশু     নেই     বিশু     নেই
আজ     শুধু     একা -     একা
শুধু     পড়া     শুধু     লেখা ।

সময়ের     সরনীতে     শ্বাশত     শিশুকুল
ক্রমে-     ক্রমে     হয়ে     ওঠে     বিষফুল ।

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কেমন পুজো সবাই বুঝো
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

ওদের খোকা পূজো দেখে নানা রকম সাজে
আমার খোকা ব্যস্ত থাকে নানান কাজে-কাজে।
ওদের খোকা চশমা পরে ঘোরে মেলায়-মেলায়
আমার খোকা বাড়ি ফেরে সেই সন্ধ্যে বেলায়।

ওদের খোকার নতুন জামা পকেট ভর্তি টাকা
আমার খোকার ছেঁড়া গামছা কেবল বেঁচে থাকা।
সময় মতো পায়না খেতে কেবল পেটের তাড়া
কি নিয়ে ষে দেখবে পুজো অ্যা পাড়া-ষে পাড়া?

সকালে সে কাজে চলে যায় সন্ধ্যাতে ফিরে আসে
পূজোর কথা মনে নেই তার ক্ষুধার গন্ধ ভাসে।
পূজোর সময় প্যান্ডেলে যখন পটকা,বোমা ফাটে
আমার খোকা হয়তো তখন কোদালেতে মাটি কাটে।

পূজো শেষে ওরা যখন প্রসাদ কেড়ে খাই
আমার খোকার হয়তো তখন মাটি ভরা থাকে গায়।
পূজো-টুজো যাই বলো ভাই ওদের জন্য হয়
আমার মতো গরীব মায়ের খোকার জন্য নয়।

.             ***************              
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর