কবি গণসঙ্গীতকার দিলীপ বাগচীর গান ও কবিতা
*
বেদেনী, ও বেদেনী, তোর সাপ বিষভরা সাপ
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী :  জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া | [ জলার্ক ( ত্রয়োবিংশ সংকলন )পত্রিকার  
সৌজন্যে ]

বেদেনী, ও বেদেনী, তোর সাপ বিষভরা সাপ
নাচালে নাচবে কি তোর কালো বরণ কাল নাগিণী ?
------           -------               -----            ------
তোদের ঝাঁপিতে ঐ কি ---
ওকি বিষহরার ঝি---
নাই দাঁত নাই, নাই বিষ নাগিনীর
বীণের সুরে নাচ নাচুনীর
পেটে খিদের জ্বালায়, ফণা দুলায়
নেতিয়ে পড়া কালনাগিনী
আছে কি বুকের পাটা
রাখ দাঁত গোটা গোটা
বিষে থলি ভরিয়ে দিয়ে
সুমুখ পানে যা দিকিনি ||

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঢল ঢল ইছামতী
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী :  জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া | [ জলার্ক  ( ত্রয়োবিংশ সংকলন ) পত্রিকার  
সৌজন্যে ]

ঢল ঢল ইছামতী – ( ৪ )

কেন এই চপল গতির
মাতামাতির বাঁধ বাঁধ না !
কেন এই সর্বনাশা ;
কেন এই রক্তচোষা মূর্তি তোমার
মুছে যায় সব মুছে যায়
ভেসে যায় সব ভেসে যায়
ঢেউয়েরি নাগর দোলায়
ধানের গোলায় বাদ সেধো-না !

তুমি যৌবনে রাঙ্গো
আমাদের কল্ জে ভাঙ্গো
এ কোন দেশী রীতি তোমার ?
ডুবে যায় সব ডুবে যায়
আশার প্রদীপ, তাও নিভে যায়
এলুন এঁকে নতুন ধানে
লক্ষ্মী পূজো আর হবে না ||

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমাদের একতারার এই একটি তারে
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী :  জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া | [ জলার্ক ( ত্রয়োবিংশ সংকলন ) পত্রিকার  
সৌজন্যে ]

আমাদের একতারার এই একটি তারে
বাঁধা আছে কোটি লোকের একটি চাওয়া
.                একটি পাওয়ার গান ---

সুখ চাই শান্তি চাই
মানুষের মত বাঁচতে চাই
সে সাধে বাদ সাধে যে
.               তার বিরোধী মোদের অভিযান ||

যারা লোকের মুখে অন্ন জোগায় খেটে গতর
অনাহারে কাটে যাদের সারা বছর
সেই সর্বহারার জীবনকথা গাইবো মোরা
.                বেঁধে নিয়ে তান ||

আমরা জানি---
কুসুমে সাজানো নয় শয্যাখানি----
তাই লাখো হাতে সবার সাথে
.                রুখবো সকল হাহাকারের বান ||

আমরা মজুর কিষাণ গরীব লোকের কথা বলি ---
আমরা সর্বহারার খোলা পথে এগিয়ে চলি ---
ভূখা লোকের ভূখ মেটাতে
.                কবুল করি লাখোলাখো জান ||

.               **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আলা রে! আলা, আলা, আলারে!
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী :  জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া |   ( রচনাকাল :  আগস্ট ১৯৬০ ) [ অনীক (
মে  ১৯৮২ ) – পত্রিকার  সৌজন্যে ]

আলা রে! আলা, আলা, আলারে!
হেঁই হেঁইয়া !  দাঁড় টানো মাঝি – তীর আলারে !
দিনের আলো ফোটে, আন্ধার -- দূরে গ্যালারে !

কত মুসাফির তোর নায়ে পারাপার করে,
( আর ) তুই মুসাফির মাঝি ভাইরে এ ভুখা সংসারে |
তোর পারের কড়ি মিলিল না--  পেটে জ্বালা রে !
হেঁই হেঁইয়া !  দাঁড় টানো মাঝি --- তীর আলারে !

গাঁঠে গাঁঠে কাপড় কত যায় দেশ বিদেশে,
( আর ) তোমার ঘরণীর ইজ্জত যায় বানের জলে ভেসে |
তোমার ঘামের তেলে---
.                 ধনীর ঘরে আলো জ্বলেরে !
হেঁই হেঁইয়া !  দাঁড় টানো মাঝি – তীর আলারে !

বৈঠার ঘায়ে কালা সমুন্দর পাড়ি জমাওরে |
( তোমার ) দুখের নিশাসে নাওয়ের বাদাম ভারী কর’রে !
এই দুঃখ ছাড়া --- হারাবার আর কিছুই নাহিরে !
হেঁই হেঁইয়া !  দাঁড় টানো মাঝি – তীর আলারে !
আলা রে ---
.                 পূবের সূরজ ওঠেরে !
.                 দুখের রাতি যাবে রে !
.                 নূতন দিনের আলো ফোটেরে !

.               **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মাতি তা ধিন তা ধিন নাচনে
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী : জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া |

মাতি তা ধিন তা ধিন নাচনে
নতুন দিনের কথা নতুন করে
.                আজি শোনাব জনে জনে ||

মরা সাগর বুকে আমরা জোয়ার আনি
ঝড় বিদ্যুৎ কালাপানি আমরা কি ভয় মানি
ভয় হারা হৃদয় ভরাই গানে গানে ||

আমাদের নাচে ধানের ক্ষেতে যে ঢেউ লাগে
আমাদের গানে কল মিল কারখানা জাগে
সবাই মিলে এসো আজ এই জাগরণে  ||

আমরা আজান হাঁকি সূর্যি ওঠার আগে
মোরগ হয়ে ডাকি এই দুনিয়া জাগে
আর কতকাল রইবে বাঁধা হাজার বাঁধনে ||

.               **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
যারা শৃংখল ভেঙে দেশ করবে স্বাধীন
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী :  জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া | [ জলার্ক ( ত্রয়োবিংশ সংকলন ) পত্রিকার  
সৌজন্যে ]

যারা শৃংখল ভেঙে দেশ করবে স্বাধীন
যারা বুকের রক্ত ঢেলে শুধছে রে ঋণ
তারা কেন আজ অন্ধকারায় বসে
.                বন্ধ ঘরের মাঝে গুণছে রে দিন
না না মানবো না, আর মানবো না,  মোরা মানবো না
হানবো হাতের শেষ হাতিয়ার, মিছে বসে
.                                  আর কাঁদবো না ||

ডাকে বিগত শতাব্দীর সিপাহী সেনা
ডাকে ক্ষুদিরামের রাঙা রক্ত কণা
বিদ্রোহী চট্টল হাতছানি দেয়
.                ডাকে কায়ুর শহীদ ডাকে তেলেঙ্গানা
না না শুনবো না,  আর শুনবো না,  মোরা শুনবো না
অহিংস শকুনির হিংস্র নখর, কাটবো মোরা
.                                   আর শুনবো না ||

ঐ ভূখা কৃষকের পাশে লড়ছে যারা
আর মজুরের দাবী নিয়ে রুখছে যারা
দেশদ্রোহীর  টিকা তাদের ললাটে দিয়ে
.               মুনাফা লুটছে যত মুখোশ পরা
না না ভুলবো না, আর ভুলবো না, মোরা ভুলবো না
ভন্ড প্রেমের ছদ্ম মুখোশ খুলবো মোরা
.                                  আর ভুলবো না ||

না না মানবো না,  আর মানবো না,  মোরা মানবো না
হানবো হাতের শেষ হাতিয়া,  মিছে বসে
.                                   আর কাঁদবো না ||

.               **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
( ও ) নকশাল নকশাল নকশালবাড়ীর মা
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী :  জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া |  রচনা – ২৫ মে ১৯৬৭   [ ‘স্বরলিপি
সহকারে গণসংগীতের সংকলন’  ( ন—১৭ ) এর সৌজন্যে ]

নিশান্তিকা গণসঙ্গীত গোষ্ঠি প্রকাশিত সি.ডি. "তরাইয়ের গান" থেকে গানটি শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .     


( ও ) নকশাল নকশাল নকশালবাড়ীর মা
ও মা তোর বুগত্ অক্ত ঝরে
তর খুনত্ আঙ্গা নিশান লইয়া
বাংলার চাষী জয়রধ্বনি করে |

ও মা রে----
জমি চাছেন ফসল চাছেন তোমার আধিয়ারে
গুলি মারিয়ার শিক্ষা দিছেন
যুক্তফন্ টর দরদী সরকারে |

ও মা রে----
তর বুগত খুনত শিক্ষা পাছি
হামরা দ্যাশের চাষী
হাত বদলাইলে বদলায় নারে
হামরার গলার ফাঁসী মা রে |

( ও ) নকশাল নকশাল নকশালবাড়ীর মা
ও মা তর বুগত্ অক্ত ঝরে
সেই অক্ত হইতে জন্ম নিবে
জঙ্গল সাঁওতাল বাংলার ঘরে ঘরে ||

.               **************************  
.                                                                                সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হিমালয়ের সোনাগলা জলের ছোঁয়ায় ফসল দোলে
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী :  জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া | [ স্বরলিপি সহকারে গণসংগীতের সংকলন  
( হ—১০৯ ) – এর সৌজন্যে ]

নিশান্তিকা গণসঙ্গীত গোষ্ঠি প্রকাশিত সি.ডি. "তরাইয়ের গান" থেকে গানটি শুনুন এখানে
ক্লিক করে . . .     

হিমালয়ের সোনাগলা জলের ছোঁয়ায় ফসল দোলে
আষাঢ় শাওন আসে রে,
ধানের ফুলের বাসে রে,

আমার মনের আশা রে,
আমার সোনার বাসা রে---
তরাইয়ের ধান তুলবে আধিয়া রে |
ধানের গান গাইবে ঘরে ঘরে ||

হো হো ( ২ ) হোইরে ! হো হো (২ )  হোই !
নাগিনী নিশাস লাগে ধানে রে !
লালা ঝরে গিরির নয়ানে রে !
আঁকা বাঁকা সড়ক ধরিয়া ওরা আসে রে !
ওরা মারিবারে চাহে ধনে প্রাণে রে !!

ধান না দিম,  মান না দিম,  দিম্ হাঁসুয়ার ঘা !
তীরের ফলাত লোভখান মিটাম্ ! দূর হাটিয়া যা !
তর পুলিশ লয়্যা যা ! তর মন্ত্রী লয়্যা যা !
হামার মাটি, হামার ফসল, হামার লাল নিশান রে
লাঠির আগা্ ত মাটিখান্  নিম্ ভাঙ্গিন্ গদিখান রে |

হিমালয়ের চূড়ায় চূড়ায় রোদের ছোঁয়ায় মানিক জ্বলে |
.                রক্ত রাঙ্গা চুনী রে,
.                 মুক্ত দিনের মণি রে,
.                 ডায়না নদীর জলে রে,
.                 হোয়াংহো ঢেউ তোলে রে !
.                 তরাইয়ের গান দুনিয়ার ঘরে ঘরে !

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমাদের ভোট দিবি কি দিবি না
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী : জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া |  [ শ্রী সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘ধ্রুবপদ’
সংকলন গ্রন্থ ( ১৯৯৯ ) – এর সৌজন্যে ]

আমাদের ভোট দিবি কি দিবি না---
আমরা যোক্তা ফন্টের কোঁত্কা চার জনা ||
আমি কমুনিষ্টি বাম ভাইরে,
আমার বাংলা কংগেছ নাম,
আমার ‘গান্ধী-লেনিন ভাই ভাই’ রব,
আর আমি হলাম দল কানা ||

লড়াই মোরা করবু জানিস্ ঠিক |
এবার ভোটে জিতে বেঁদে নি চাদ্দিক !
আমরা হব লতুন মাঝি
ফুটু লৈকো  ( ফুটো নৌকো ) লতুন হবে না ||

আমরা করবু দখল পুলিশ-মেলেটারী,
ঐ ভোটে জিতে কোট আর কাচারী,
ত্যাখুন জনযুদ্ধ করবে পুলিশ---
জনগণ আর লাগবে না !!!

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
যেমন কচু, আলু, আর আদা মিশে হল ‘কচ্চাল্লাদা’
কথা ও সুর : দিলীপ বাগচী
শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সংকলিত ও সম্পাদিত এক আসাধারণ সাধারণ মানুষ
দিলীপ বাগচী :  জীবন ও সৃষ্টি থেকে নেওয়া | [ শ্রী সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘ধ্রুবপদ’
সংকলন গ্রন্থ ( ১৯৯৯ )– এর সৌজন্যে ]

যেমন কচু, আলু, আর আদা মিশে হল ‘কচ্চাল্লাদা’
তেমনি সাড়ে পনেরো পাট্টি মিশে যুক্তফ্রন্টি দাদা---
ছা ড়া ড়া  ভোট দিয়ে যা !
আমাদের ভোট দিয়ে যা !
চোদ্দ পাট্টি প্রথমে এক সাথে ছিলাম বাঁধা,
এক ভেঙ্গে দুটি হ’ল, পনেরো হলাম সিধা,
( ফের ) আর একটিও ভাঙ্গার সুরে ধরছে গলা সাধা---
( তাই ) সাড়ে পনেরো পাট্টি মিশে যুক্তফ্রন্টি দাদা
চলে আয় ভোট দিয়ে যা !!
মোদের যুক্তফ্রন্টের বাজারে ভাই পাবে সবরকম,
খদ্দর থেকে গোহত্যা বন্ধ, লড়াই নরম গরম ---
কোনটা চাই তোমাদের ?
কোন্ টা চাই বলো, তার সাথে দেবো আমলা, পুলিশ, প্যায়দা !!

.                      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর