কবি দীপান্বিতা রায় সরকারের কবিতা
*
যুদ্ধ
কবি দীপান্বিতা রায় সরকার

গম্ভীর ওই উদ্ধত তরবারি ..
নিত্য নিত্য যার কাছে হারি,
গুপ্ত জয়ের দম্ভের তর্জনী
আজ সেখানেই বুকটি দিব পাতি।
দেখি কোন বলে বীর বলীয়ান..
কোন জয়ে নিজে রাখে?
গভীর ক্ষতের গোপন ব্যথা ,
কোন সে বর্মে ঢাকে?
আজ আঘাতের বিনিময়ে সে পার..
রাখবো হাতে সহস্র গোলাপ,
দেখি, তার হাত কাঁপে কিনা কাঁপে!
ব্যবধানে নিজেকে মাপে কিনা মাপে!
যদি সে বোঝে তার সব কিছুই ফাঁকি ..
বুকের পাশে বা পাশে গভীরে  হাত রাখি,
যদি কোন গোপন ব্যথায়
বিলাসী হয় তার আঁখি।
তবে মিলিত নেত্রে সব হোক মাখামাখি..
দৃপ্ত বিজয় ডাকিয়া আনুক যুদ্ধ যথারীতি ,
হৃদয় দিয়ে হৃদয় জয়ের মুগ্ধ বিভোর আঁখি
আজ সেখানেই মরণ যাব লিখি॥

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বাঁধন
কবি দীপান্বিতা রায় সরকার

কিসে অম্লান...
     ফিকে পিছু টান,
               কিসে ক্ষয়
                     কিসে রাখি।
কত অভিযোগ ..
     রোজ প্রতি রোজ,
                সব অভিমান
                      মাখামাখি।
কত কি সরাই..
       তবুও বড়াই
                তীর এসে
                       ঠিক বেঁধে ।
কেমনে হারাই...
        বিষন্ন সানাই,
                 মায়ার বাঁধনে
                       ঠিক বাঁধে।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আগমনী
কবি দীপান্বিতা রায় সরকার

রোদের ছটায়,
    মেঘের ভেলায়
        তোমার আগমনী ।
যুথির বনে,
      শিউলি দলে
           কোমল পরশ বুনি।
বাজিল দূরে,
    পূজোর সানাই
         মোহিত মোহিত রেশ।
শোভিত অঙ্গে,
       ঝড়িছে মাধুরী
             কুঞ্চিত ঘন কেশ।
তোমার গীতে,
      তড়িৎ স্রোতে
           মুখরিত আহ্নিক।
শুভদা সারদার
         পদ্ম চরণে,
              আলোকিত দশ দিক।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিগত
কবি দীপান্বিতা রায় সরকার

শুধু দুই হাত ধরি,
করি মিনতি ।
বিগত সময়ের
বহমান ধ্বনি ।
পুনঃ পুনঃ মূদ্রণে,
নিদারুণ খননে।
ফুটাবো মননে
অনাগত বাণী ।
শুধু করি মিনতি ,
কালের বাঁধুনী।
বারেক ফিরাও
চরিত বিন্যাসে ।
ক্ষীণতার বেসে,
মৌন মিছিলে ।
বিভাজিত ক্ষণে
স্বীয়তা রাখনি।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মধূ মরমী
কবি দীপান্বিতা রায় সরকার

আধ ভাঙা চাঁদ জাগে,
             মন ভাঙা মেঘে।
                      গহন মগন ব্যথা ..
                                 ওঠে জেগে জেগে।
তুমি কেন রেখে গেছ,
            সেই সুখ গুলি...
                       বিষে মিশে একাকার
                                  মধু মাধুরী ।
এখন উজান জুড়ে ,
           রেখে গেছ ছায়া..
                        অলীক স্বপন আছে
                                   ঘিরে তার মায়া।
আমাদের গীত শেষ,
            হৃত ফাগুনে।
                        শুকনো মালা পড়ে
                                    বিষাদের কূলে।
তবু এই সমাহারে,
            অশেষ তুমি..
                        মিশে আছো মরমে
                                     মধু মরমী।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তোমার প্রতিপক্ষ
কবি দীপান্বিতা রায় সরকার

এখন আমি থমকে আছি..
চমকে তোমার পথ,
এখন বাঁচে কিছু বিগত
বাকিটা ভবিষ্যত ।
এখন কথন জুড়েই থাকে..
গতানুগতিক মন,
ভালোবাসার শিকল ভাঙা
ধূসর সন্ধিক্ষণ।
তোমার পথে এগোই আমি..
ডুব সাঁতারে ভাসি,
জংধরা সব অচিন ব্যথা
দু -হাত দিয়ে ভাঙি।
মনের কাছেই যেতে যেত..
পথ ফুরিয়ে যায়,
সখের আরত শূন্য ভাড়ার
সুপ্ত পিপাশায় ।
আরশি এখন রোজ বিকেলে
ধূসর রঙই বোঝে ,
একেলা মন সন্ধ্যা তারায়
নিয়ন আলো খোঁজে ।
ক্রমে ক্রমে ক্রমশঃ..
বিভেদ সংক্রমিত,
রিক্ত আমি কখন যেন
তোমার প্রতিপক্ষ ॥

.          ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বাসনা বিষ...
কবি দীপান্বিতা রায় সরকার

ছিল আশ্রিত হয়ে,
             কুন্ডলী মনে।
                         অচেতন চিলেকোঠা
                                      বেদখল ঘরে।
তবুও তো পুষে রাখি,
             মন সাথে বুঝে দেখি।
                        কিছুটা ছেড়েও দেখি
                                      দেখি, সে না ছাড়ে।
দেখি সে ধীরে ধীরে বাড়ে,
             স্পৃহা থেকে স্পৃহা বরাবরে।
                        তাকে দূরে রেখে দেখি
                                       দেখি, সে না রোখে।
সে ভীতরেই বাড়ে,
              আমাকেই রাখে বধিবারে ।
                        শান দেওয়া বাসনার অসি
                                        বারে বারে ওঠে বধিবারে ।
তবুও তো বুঝে দেখি,
              নিজ সাথে যুঝে দেখি।
                        বাসনাকে যদি পারি,
                                       নিজে বধিবারে ।
নেমে যাই সন্মুখ রণে,
              ওজন সম পরিমাণে ।
                        কেউ জমি ছাড়িনি ,
                                       তিল পরিমাণে ।
দেখি কে কার কাছে হারে!
               হার হয়ে ছুঁয়ে দেখি,
                         জয় হয়ে ঘুরে দেখি
                                       দেখি, সে না ছাড়ে।

.        
           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ত্যাগী
কবি দীপান্বিতা রায় সরকার

কিছু চাইতে গিয়ে ...
ফিরতে হল যার,
বিঁধলো এসে শূন্য হাতে
অকাল উপহাস ।
কিছু চেনা জানা...
বিফল হল যার,
তার সেই খরা মাসে ,গ্রহণ হাসে
বিফল অনুতাপ ।
শূন্য দলে রুগ্ন খেয়ার মাঝে..
যে বেঁধেছে শীষ মহলের ছাঁচ ,
তার পায়ের নীচে ছড়িয়ে আছে
দুঃখ মনস্তাপ।
সে মৌনব্রতে তপস্বিনী আজ..
তার ভষ্ম গায়ে জড়ীয়ে আছে,
ব্যথার পীতবাস।
সে সর্ব ত্যাগী আজ...
শূন্য হাতেই সুর ছুঁয়েছে
জীবনের আধার ।
সে সর্ব ত্যাগী আজ।

.          ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর