দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা |
অলকাপুরী কবি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিশেখর কালিদাস রায় সম্পাদিত "মাধুকরী" (১৯৬৩) কাব্য সংকলন থেকে নেওয়া। অট্টালিকা কত শত সাজিয়াছে তোমা মত, দেখিবে হে গিয়া অলকায় | তোমার তড়িতমালা, সেথায় ললিতবালা, তুল্য শোভে কিবা দুজনায় | তোমার গর্জন-স্বর শুনিতে কি মনোহর, সেথায় মৃদঙ্গ বাজে তায় ; তোমার অন্তরে জল প্রকাশিছে নিরমল, মণিময় ভূতল সেথায় | ইন্দ্রধনু তব দেহে, অলকার গেহে গেহে চত্রলেখা তেমনি প্রকাশ ; হর্ম্যগণ সুশোভন, উচ্চাকার আয়তন, তোমা মত ছুঁয়েছে আকাশ | আলো করি গৃহমাঝে বধূগণ কিবা সাজে--- কুসুমের অলঙ্কার গায় | সে সব পড়িলে মনে, প্রাণ কাঁদে ক্ষণে ক্ষণে কোথা ছিনু এসেছি কোথায় || পঙ্কজ তাদের করে, শিরিষ শ্রবণ ’পরে, কুরুবক খোঁপায় বিলাসে ; কপোল-চুম্বন লোভে অলকেতে কুন্দ শোভে, কদম্ব বিরাজে কেশপাশে ; সদাই ফুটিছে ফুল, গঞ্জিছে ভ্রমরকূল ঋতুর শাসন সব টুটি ; হৃদয়েতে পেয়ে সুখ, যেন হাসি হাসি মুখ কমলিনী সদা রহে ফুটি | ময়ূর যতেক সবে, মত্ত হয়ে কেকারবে সদা আছে পাখনা তুলিয়া | সদাই জ্যোত্স্নাজলে স্নান করি কুতূহলে নিশি যায় আঁধার ভুলিয়া | হর্ষ বিনা অশ্রুধারা জানে না কেমন ধারা সেথায় যাহারা করে বাস | যৌবনের নাহি শেষ, দুঃখের নাহিক লেশ, নাহি আর বিচ্ছেদ-হুতাশ | কুবের আসয় ছাড়ি’ উত্তরে আমার বাড়ি, গিয়া তুমি দেখিবে সেথায়--- সম্মুখে বাহিরদ্বার, বাহার কে দেখে তার, ইন্দ্রধনু যেন শোভা পায় | পার্শ্বে এক সরোবর, দেখা যায় মনোহর, পদ্ম সনে অলি করে ঠাট | তাহার একটি ধারে, অপরূপ দেখিবারে, পরকাশে মণি-বাঁধা ঘাট | সরসীর স্বচ্ছ জলে, ভাসি ভাসি দলে দলে, হংস হংসী ভ্রমে অবিশ্রামে | যাইতে মানস-সরে কারো না মানস সরে, আছে তারা এমনি আরামে | উঁচা ভূমি একধারে গিরি-সম দেখিবারে, নীলকান্তি শিখরে বিরাজে | সুবর্ণকদলী তরু চারিধারে শোভে চারু তোমায় তড়িত যেন সাজে | মাধবামণ্ডপ ’পরে কুরুবক শোভা করে, ফুলগন্ধে ছোটে অলিকুল | লতায়-পাতায় ঘেরা, আছয়ে সবার সেরা, দুটি গাছ---অশোক বকুল | অশোক ভাবিছে মনে পাব আমি কতক্ষণে বধূটির চরণ-আঘাত | কবে আমি পাব মিঠা মুখ-মদিরার ছিটা বকুল ভাবয়ে দিবারাত | তাহার মাঝেতে আর ময়ূরের বসিবার সোনার একটি আছে দাঁড় | শিখী যেথা কেকাভাষী, সন্ধ্যাকালে বসে আসি আনন্দেতে উঁচা করি ঘাড় | তাহারে নাচায় প্রিয়া, করতালি দিয়া দিয়া, রন রন বাজে তায় বালা | স্মরিতে সে সব কথা মরমে জনমে ব্যথা জ্বলি উঠে হৃদয়ের জ্বালা || এ সকল নিদর্শনে, চিনিবে মুহূর্ত ক্ষণে দেখে মাত্র মোর বাড়ি পানে | এবে উহা শূণ্যপ্রায়, কমল না শোভা পায় কখনো দিবস অবসানে || . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
যক্ষের আলয় কবি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সরল দে সম্পাদিত “পাঁচশো বছরের কিশোর কবিতা” (১৯৮৮) কাব্য সংকলন থেকে নেওয়া। কুবের-আলয় ছাড়ি উত্তরে আমার বাড়ি, গিয়া তুমি দেখিবে সেথায়--- সম্মুখে বাহির-দ্বার বাহার কে দেখে তার, ইন্দ্রধনু যেন শোভা পায়। পার্শ্বে এক সরোবর, দেখা যায় মনোহর পদ্ম-সনে অলি করে ঠাট। তাহার একটি ধারে অপরূপ দেখিবারে পরকাশে মণি-বাঁধা ঘাট। সরসীর স্বচ্ছ জলে ভাসি ভাসি দলে দলে হংস-হংসী ভ্রমে অবিশ্রামে। যাইতে মানস-সরে কারো না মানস সরে, আছে তারা এমনি আরামে। উঁচা ভূমি একধারে গিরিসম দেখিবারে নীলকান্তি শিখরে বিরাজে। সুবর্ণ কদলী দারু চারিধারে শোভে চারু, তোমার তড়িত যেন সাজে। মাধবী-মণ্ডপ ’পরে কুরুবক শোভা করে, ফুলগন্ধে ছুটে অলিকুল। লতায় পাতায় ঘেরা, আছয়ে সবার সেরা, দুটি গাছ অশোক বকুল। . . . তাহার মাঝেতে আর ময়ূরের বসিবার সোনার একটি আছে দাঁড়। শিখী যথা কেকাভাষী, সন্ধ্যাকালে বসে আসি, আনন্দেতে উঁচা করি ঘাড়। এ সকল নিদর্শনে চিনিবে মুহুর্তক্ষণে, দেখে মাত্র মোর বাড়ি-পানে। এবে উহা শূন্যপ্রায়, কমল না শোভা পায় কখনো দিবস অবসানে। . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
মনোরাজ্য-প্রয়াণ কবি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর সুকুমার সেন সম্পাদিত বাংলা কবিতা সমুচ্চয় সংকলন (১৯৯১) থেকে নেওয়া। স্বপ্নের কুহক। মনোরথ যাত্রা। অনেকদিনের পরে কল্পনার দর্শন প্রাপ্তি সুপ্তিতে ডুবিয়া গেল জাগরণ, সাগর সীমায় যথা অস্ত যায় জ্বলন্ত তপন। স্বপন রমণী আইল অমনি, নিঃশব্দে যেমন সন্ধ্যা করে পদার্পণ। সুকোমল চরণ-কমল দুটি ছোঁয় কি না-ছোঁয় মাটি, আঁচল ধরায় পড়ে লুটি' করে পদ্ম-ফুল করে দুল-দুল অলসিত আঁখি সম আধো-আধো ফুটি’। কবির শিয়রে গিয়া, ধীরে ধীরে বুলাইল শতদল মুখে চক্ষে নাসিকার শিরে। পরশের বশে মোহ-বন্ধ খসে অচেতন কবির চেতন আসে ফিরে। অচেতনে চেতন! ঘুমন্তে জাগা! সকলি বিচিত্র স্বপনের কাণ্ড! গোড়া নাই আগা! স্বপ্নের কৃপায় অন্ধে আঁখি পায়, ঐশ্বর্য্যে কাঁপিয়া উঠে দরিদ্র অভাগা। ছায়া-রূপা রমণী সুযোগ ভাবি কবির মনোমন্দিরে খুলি দিল রহস্যের চাবি। |
. **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
জাগো সকলে (এবে) অমৃতের অধিকারী কবি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মসঙ্গীত দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বাঙ্গালীর গান ( ১৯০৫ ) সংকলন থেকে নেওয়া। ॥ আসেয়ারি - ঝাঁপতাল॥ জাগো সকলে (এবে) অমৃতের অধিকারী। নয়ন খুলিয়া দেখো করুণানিধান, পাপতাপহারী। পুরব-অরুণ-জ্যোতি মহিমা প্রচারে, বিহগ যশ গায় তাহারই। হৃদয় কবাট কুলি দেখো রে যতনে, প্রেমময় মুরতি জন-চিত্তহারী, ডাকো রে নাথে বিমল প্রভাতে, পাইবে শান্তির বারি॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
করো তাঁর নাম গান, যত দিন রহে দেহে প্রাণ কবি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মসঙ্গীত দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বাঙ্গালীর গান ( ১৯০৫ ) সংকলন থেকে নেওয়া। ॥ ঝিঁঝিট - ঠুংরি॥ করো তাঁর নাম গান, যত দিন রহে দেহে প্রাণ। যাঁর যে মহিমা --- জ্বলন্ত জ্যোতি, জগত করে হে আলো, স্রোত বহে প্রেম পীযূষ-বারি, সকল জীব সুখকারী হে। করুণা স্মরিয়ে তনু হয় পুলকিত, বাক্যে বলিতে কি পারি, যাঁর প্রসাদে এক মুহূর্তে, সকল শোখ অপসারি হে। চেতন নিকেতন, পরশরতন, সেই নয়ন অনিমেষ, নিরঞ্জন সেই যাঁর দর্শনে নাহি বহে দুখলেশ হে॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |