কবি একরাম আলির কবিতা
*
আশ্রয়
কবি এক্রাম আলি
শামসুর রাহমান ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘দুই বাংলার প্রেমের কবিতা’ থেকে
নেওয়া।

একদিন, পাথরের ঘৃণা তুমি প্রকাশ করেছো
একদিন জলের উচ্ছ্বাসে
আমার সমস্ত কিছু ভেসে গেছে বারান্দার ঐ নিচু কোণে
ইয়ার্কি, কচুরিপানা, হাসি, শান্ত বক

তখন মধ্যরাত, গ্রামে বন্যার তাণ্ডব
ভেসে গিয়ে, সারারাত খুঁজেছি কোথায় ঘৃণা, তোমার পাথর

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শিকল পরার ছল
কবি এক্রাম আলি
উত্তম দাশ, মৃত্যুঞ্জয় সেন, পরেশ মণ্ডল সম্পাদিত কবিতা : ষাট সত্তর থেকে নেওয়া।

বছরে যতটা মদ খাওয়া যায়,  অশ্রুপাত-করা ততটা যায় না
এমন যুক্তিতে তারা ভালোবেসেছে মালাকে

যতটা চোখের জল ঝরে,  ততটা আদুরে হাওয়া বয় কি
এইরূপ সন্দেহে সে পড়েছে মানিক ব্যানার্জি

যতটা আদুরে হাওয়া বয়,  সঙ্গম ততটা করা অসম্ভব
বলে তারা খেয়েছে বিশ্বাস ক’রে গাঢ় ফিলসফি

সঙ্গমের ফুল যত ভাঙে,  দেশে সন্তানাদি তত নেই
দেখে, সে লিখেছে অগাধ কবিতাবই, ক্ষুরধার গল্পগ্রন্থমালা

সন্তানসন্ততি যত আছে,  এদেশে আশ্রয় তত কই
এই প্রশ্নে বাঙালী-পোষাক প’রে তারা গেছে রাজধানীবাসে

যতটা আশ্রয় আছে, তারচেয়ে মস্তিষ্ক তো কম নেই
এই বোধে, আশ্রয়হীনের দল ছাপিয়েছে লিটিল-পত্রিকা রাশি রাশি

আসুন, আমরা আজ এসব তামাশা দেখে করমর্দন ক’রে হাসি

.                    **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ত্রিসন্ধ্যাকাল
কবি এক্রাম আলি
উত্তম দাশ, মৃত্যুঞ্জয় সেন, পরেশ মণ্ডল সম্পাদিত কবিতা : ষাট সত্তর থেকে নেওয়া।

ছিলাম গাঁ-দেশে,  নতুন গামছা হাতে পেয়ে একদিন
শহর দেখতে বেরোলাম, কাঁধে লাল গামছা, হাতে লাঠি
আর, নবীন মাথায় চকচকে তেলের কুঞ্চন
খুবই কুন্ঠিত হয়ে বলতে চাইছিলো, ‘ওগো
আমরা বীরভূম থেকে আসছি, মন্ত্রীমশাই,
.                                    ‘পেন্নাম নেবেন’
রাজবাড়ির আড়াল দিয়েই যাচ্ছিলাম, তবু রাণীর
ছোটোমেয়ে ওপর থেকে কেন হেসে উঠল,  কেন
উড়িয়ে দিলো এতদিনের পোষা কাকাতুয়া !

পয়সা বেশী নিয়েছিলো, অথচ কল্পনা
রাত এগারোটার পর ঘরে থাকতে দেয়নি, ভালো কথা
কিন্তু বেরোবার সময় কেন আদর করলো ওরকমভাবে
কমবয়স বলে ?

এরপর আমি একটা দোতারা কিনেছিলাম
দুটো পাখি ঝগড়া করতে করতে ডানা-ঝাপটে উড়ে গেল
আমার দোতারা দুলে উঠতো, বেজে উঠত  আর
মাঝে মাঝে সংসার সাজিয়ে বলতো, ‘কই, গাও’

.                    **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কোনো-এক মহাকাব্যের ভূমিকা
কবি এক্রাম আলি
উত্তম দাশ, মৃত্যুঞ্জয় সেন, পরেশ মণ্ডল সম্পাদিত কবিতা : ষাট সত্তর থেকে নেওয়া।

তুষার পর্বত বেয়ে উঠতে উঠতে তারা প’ড়ে গেলে
শেরপাসন্তান দেবো আমরা দুজন

অক্ষরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে তারা পড়ে গেলে
উজ্জ্বল প্রতিভা দেবো আমরা দুজন

শ্রেণীসংগ্রামের দিকে তুমুল অঙ্গুলীরেখা না-এগোলে
হাত-ধরাধরি ক’রে শুয়ে পড়বো আমরা দুজন

কিন্তু, ওগো, আমাদের সপ্রতিভ লাল দমকল
নৈশবিছানা বেয়ে উঠতে উঠতে যদি প’ড়ে যাই, দুদিকে দুজন

তবে, মধ্যবর্তী সূচীশিল্প সন্দেহে, সংশয়ে
হোমারের অন্ধজ্ঞানে হা-হা ক’রে জ্ব’লে কি উঠবে না

.                    **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
একটি বাঁশির কথা
কবি এক্রাম আলি
উত্তম দাশ, মৃত্যুঞ্জয় সেন, পরেশ মণ্ডল সম্পাদিত কবিতা : ষাট সত্তর থেকে নেওয়া।


পাথরের স্তব বেয়ে গাছপালার শিরাউপশিরা বেয়ে
পাহাড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত তার সুরতরঙ্গ
দু-চারটি ভ্রমণকারী আর তীর্থযাত্রীগণ
সেই সুরের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকত মৌন

আর, পাহাড়ের ঐপারে একটি অসুরের বাঁশি
কেবলই বাজত তার হাড্ডিসার গোরুর পেছনে, মরা
ফসলের পেছনে, গর্ভবতী অসুরীর পেছনে

.                    **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর