কবি গিরীন্দ্রশেখর বসু - নয় ভাইবোনের সর্বকনিষ্ঠ। পিতা চন্দ্রশেখর বসু ও মাতা লক্ষ্মীমণি দেবী।
চন্দ্রশেখর বসু ছিলেন দারভাঙ্গা রাজার ম্যানেজার। তাঁদের আদি নিবাস ছিল নদীয়া জেলার উলা গ্রামে।
দ্বারভাঙ্গায় তাঁর শৈশবকাল কাটে। তিনি রাজশেখর বসু তাঁর মেজদা ছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইন্দুমতী
দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁদের দুই কন্যা।

স্কুলের পরে তিনি প্রথমে রসায়ণ নিয়ে পড়েন কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে। পরে ১৯১০ সালে কলকাতার
মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারিতে স্নাতক হন।  যোগব্যায়াম,  ঈন্দ্রজাল ও সম্মোহনী বিদ্যায় তাঁর আগ্রহ
ছিল। তিনি নাকি এই সম্মোহনী বিদ্যা তাঁর চিকিত্সক এবং মনোবৈজ্ঞানিক জীবনে মাঝে মাঝো প্রয়োগও
করেছেন।

ডাক্তারী পড়তে পড়তেই তিনি মনস্তত্ত্ব নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য শুরু হওয়া সাইকোলজি বিভাগে
পড়া শুরু করেন। দু বছরে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। তাঁর গবেষণার থিসিস ছিল
“Concept of Repression”
(১৯২১) যাতে তিনি ইউরোপের সিগমণ্ড ফ্রয়েডের ভাবনার সঙ্গে হিন্দু দর্শন ও ভাবনার মেলবন্ধন  
ঘটিয়েছিলেন। তিনি এই বিষয়ে ভিয়েনাতে ফ্রয়েডের সঙ্গে পত্রালাপও করেছিলেন। ফ্রয়েড খুব খুশি  
হয়েছিলেন এই জেনে যে তাঁর চিন্তাভাবনা সুদূর এশিয়াতেও পৌঁছে গেছে। ফ্রয়েডের কথাতেই গিরীন্দ্রশেখর
তাঁর প্রতিষ্ঠান “ইণ্ডিয়ান সাইকো-অ্যানালিটিক সোসাইটি”-র হয়ে ইন্টারন্যাশনাল সাইকোঅ্যানালিটিক
সোসাইটির আর্নেস্ট জোনস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সেই বিশ্ব-সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেন।

গিরীন্দ্রশেখরই ছিলেন প্রথম বাঙালী তথা ভারতীয় মনোবৈজ্ঞানিক। উত্তর কলকাতার পার্সিবাগান লেন-এর
বসতবাটিতেই ভারতবর্ষে প্রথম “ইণ্ডিয়ান সাইকো-অ্যানালিটিক সোসাইটি” তিনিই স্থাপন করেন। এই
বাড়িটিই গিরীন্দ্রশেখরের মেজদা রাজশেখর বসুর (পরশুরাম) বিরিঞ্চিবাবা গল্পের ১৮ নং হালসিবাগান লেন
এর বাড়ি! সেইখানে গিরীন্দ্রশেখর একটি ক্লাব করেছিলেন, যার নাম রাজশেখরের দেওয়া ‘উৎকেন্দ্রিক
সমিতি’। এই ‘উৎকেন্দ্রিক সমিতি’র সদস্য ছিলেন জলধর সেন, দাদাঠাকুর, পরিমল গোস্বামী, চারুচন্দ্র
ভট্টাচার্য, শরৎচন্দ্র পন্ডিত ( পরশুরামের ছবিগুলি যাঁর আঁকা ), যতীন্দ্রনাথ, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, হারীতকৃষ্ণ
দেব, রাজশেখর বসু, বড়দা শশিশেখর বসু প্রমুখরা।

বাংলাভাষায় মনোঃবিশ্লেষনের ওপর প্রথম গ্রন্থ “স্বপ্ন” (১৯২৮) গিরীন্দ্রশেখরের লেখা।

১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে অধ্যাপক গিরীন্দ্রশেখর বসুর তত্ত্বাবধানে, রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও  
হাসপাতালে ( আর.জি.কর হাসপাতাল, পুরনো নাম কারমাইকেল কলেজ হাসপাতাল ), এশিয়ার প্রথম  
সাধারণ হাসপাতাল মনোরোগ বিভাগ হিসেবে মনোরোগ বিভাগের বহির্বিভাগ চালু হয়। ইন্ডিয়ান  
অ্যাসোসিয়েশন অব মেন্টাল হাইজিনের কলকাতা অধ্যায়ের পক্ষ থেকে প্রথমে সরকার দ্বারা পরিচালিত
কলকাতা  মেডিক্যাল  কলেজে  এই  পরিষেবা চালু করার জন্য বাংলা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়া
হয়। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে সরকারের তরফ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিললেও পরে সরকার পিছিয়ে আসে।
এই পরিস্থিতে ঐ সংগঠন কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষকে সাধারণ হাসপাতাল মনোরোগ
বিভাগ হিসেবে মনোরোগ বিভাগের বহির্বিভাগ চালু করতে রাজী করাতে সমর্থ হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ  
আসবাবপত্র ও বিনামূল্যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করলেও ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব মেন্টাল হাইজিন  
সংগঠনের কলকাতা অধ্যায় ঐ পরিষেবার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে। পরিষেবা ১লা মে চালু হলেও  
প্রথম রুগী নথিভুক্ত হয় ২রা মে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি নানান বিষয়ে লিখতেন। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর একটি অসামান্য বই হল  
“লালকালো” (১৯৫০)। বর্তমানে, পাঠ পাবলিশার্স দ্বারা প্রকাশিত এই “লাল কালো” ই-বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
সেই ই-বইটি সংগ্রহের জন্য
এখানে ক্লিক্ করুন

লিখে গিয়েছিলেন বাংলাভাষায় পুরাণের আলোচনা "পৌরাণিকী" যা তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ১৯৫৬
সালে।

আমরা
মিলনসাগরে  কবি গিরীন্দ্রশেখর বসুর কবিতা, তাঁর ১২৭তম জন্মদিন ইংরেজী নিউ ইয়ারের দিনে,
তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এই প্রচেষ্টার সার্থকতা।



উত্স - অমিতাভ প্রহরাজ, কালিমাটি অনলাইন  
.            
উইকিপেডিয়া রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল  
.            
এই সময়     
.            
en.wikipedia.org      
.            
লাল কালো - Lal Kalo(Bengali): Bengali Children's Classic - Now in eBook    



কবি গিরীন্দ্রশেখর বসুর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন




আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতা প্রথম প্রকাশ - ০১.০১.২০১৬

...