কবি গোলাম মোস্তফা - জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার
শৈলকূপা থানার অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে। পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার।
তাঁরা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী-ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত।

স্কুলজীবন শুরু দামুকদিয়া গ্রামের পাঠশালায়। কিছুদিন সেখানে পড়ার পর তিনি ফাজিলপুর গ্রামের
পাঠশালাতে ভর্তি হন। দু’বছর এই পাঠশালায় পড়ার  পর তিনি ভর্তি হন শৈলকূপা হাই ইংরেজী স্কুলে।
১৯১৪ সালে এই স্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে তিনি প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিক পাশ করে, ১৯১৬ সালে তিনি
দৌলতপুর বি. এল. কলেজ থেকে আই. এ. এবং ১৯১৮ সালে কলকাতার রিপন কলেজ ( অধুনা সুরেন্দ্রনাখ
কলেজ ) থেকে বি. এ. পাশ করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রী লাভ করেন।

কবির কর্মজীবন শুরু হয় ১৯২০ সালে, ব্যারাকপুর সরকারী হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে। ১৯২৪
সালে ব্যারাকপুর হাই স্কুল থেকে তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে বদলী হন। দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতা করার
পর তিনি কলকাতা মাদ্রাসায় বদলী হন। সেখান থেকে ১৯৩৫ সালে বালিগঞ্জ সরকারী ডিমনেষ্ট্রেশন হাই স্কুলে
বদলী হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হন এবং কয়েক বছর পর ঐ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের
পদমর্যাদা লাভ করেন। এই বিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম মুসলমান প্রধান শিক্ষক। ১৯৪০ সালে তিনি বাঁকুড়া
জিলা স্কুলে বদলী হন। শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৪৬ সালে তিনি ফরিদপুর
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

কাব্যরূপে ও চিন্তায় তিনি রবীন্দ্রানুসারী।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, নজরুল ইসলাম এবং যতীন্দ্রমোহন বাগচীর সঙ্গে
তাঁর কবিতায় ভাবজগতের ঐক্য লক্ষ্য করা যায়।

তাঁর প্রকাশিত  কাব্যগ্রন্থের  মধ্যে রয়েছে  “রক্তরাগ”, “খোশরোজ”, “হাসনাহানা”, “সাহারা”, “বুলবুলিস্থান”
প্রভৃতি। তাঁর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ভাঙাবুক, রূপের নেশা প্রভৃতি। তাঁর “বিশ্বনবী” নামক রচিত হজরত
মহম্মদের জীবনী একটি বহুবন্দিত গ্রন্থ।

আরবী ও উর্দু সাহিত্য হতে তিনি বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেন। এছাড়া “ইসলাম ও কমিউনিজম”, “ইসলামে
জেহাদ”, “আমার চিন্তাধারা” প্রভৃতি তাংর উল্লেখযোগ্য রচনা।

কবি একজন সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। পাকিস্তান আন্দোলনের পটভূমিকায় তিনি বহু
ইসলামী গান ও দেশাত্মবোধক গান রচনা করেছিলেন। গজল ও মিলাদ মাহফিলের বিখ্যাত “কিয়ামবাণী”
(রসুল আহবান বাণী) রচনাতেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। আব্বাস উদ্দীন আহমেদ তাঁর অনেকগুলি গানে কণ্ঠ
দিয়েছিলেন। এছাড়া নিজেও তিনি বেশ কয়েকটি গান রেকর্ড করেছিলেন।

কবির তিন পুত্রের মধ্যে একজন বিখ্যাত পাপেট-প্রস্তুতকারক শিল্পী ও চিত্রশিল্পী মোস্তফা মোনয়ার এবং
সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তাঁর পৌত্র।

আমরা  
মিলনসাগরে  কবি গোলাম মোস্তাফার কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এই
প্রচেষ্টার সার্থকতা।   



উত্স - শিশিরকুমার দাশ, সংসদ বাংলা সাহিত্য সঙ্গী, ২০০৩।
.          সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, ১৯৭৬।
.           
উইকিপেডিয়া।       
 
 

কবি গোলাম মোস্তাফার মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।    


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     

এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২.৩.২০১৬
...