কবি গৌতম দত্তর কবিতা
*
যদি রাত সারারাত
কবি গৌতম দত্ত

যদি রাত সারারাত বৃষ্টি ঝরে যায় –
আর  বাগানে বকুল ঝরে হাওয়ায় হাওয়ায়,
তখনো তোমার প্রেমে মগ্ন হতে পারি ;
রাত আর সারারাতে সে তুমি আমারি।
                      
ঝড়ের আওয়াজে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় –
জানালার ফাঁক দিয়ে আলোর ঝলক,
তোমার মুখের ‘পর চোখ চলে যায় –
তৃপ্তির ঈশারায় বন্ধ দু-চোখ।

কত স্মৃতি কত ছবি ভীড় করে আসে –
বৃষ্টির শব্দেতে ভিজে ওঠে মন,
টুপটাপ শব্দের হিন্দোল ভাসে –
আমার দুবাহু ‘পরে তোমার জীবন।

যদি রাত সারারাত বৃষ্টি ঝরে যায় –
আর বাগানে বকুল ঘ্রাণে হাওয়ায় হাওয়ায়,
মিশে যায় সবকিছু  মিশে যায় সব –
সারারাত দু-জনের বোধ অনুভব॥

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জানিনা কেন
কবি গৌতম দত্ত

হৃদয় কেন ফুঁপিয়ে ওঠে একটু অভিমানে –
জানিনা আমি জানিনা।
বুঝতে পারিনা অনেক কিছুই ;
মনের গহনে কি ছেলেখেলা চলে।
তবুও পাল তুলতে ইচ্ছে করে,
অকূল দরিয়া-দিকে।
কেন এমন হয় ...।
জানিনা আমি জানিনা।
একটু ভালোবাসার জন্য –
পৃথিবী কে খুব ছোট মনে হয়।
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে
লাল রুমাল বাঁধতে হয় কবিকে –
তবুও কি পাওয়া যায় সব ?
জানিনা আমি জানিনা।
শহুরে সন্ধ্যায় কালবোশেখীর মেঘ
যখন বৃষ্টি ঝরায় –
ভালোলাগার আঁচে কি হৃদয় গলে ?
জানিনা আমি জানিনা।
কবিতা কি ব্যাকরণ মানে ?
গদ্য কি সুর খোঁজে ?
সবুজ ঘাস কি দুলে ওঠে ?
ভালোলাগার ঝড়ে ?
জানিনা আমি জানিনা।

শুধু জানি আমি আছি –
মেঘ আছে –
বৃষ্টি আছে –
আর আছে এক চওড়া মন।
যে মনে মরচে ধরতে পারে না কিছুতেই...
পারে না পারে না পারে না...

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মান-কথা
কবি গৌতম দত্ত

ভালবাসা মানে           মনেতে আরেক মন
ভালোলাগা মানে         নীরবে কতকি বলা;
ভালোদিন মানে         কুয়াশায় মাখা রোদ
ভালোরাত মানে         তারাদের কথা বলা।

ভালবাসা মানে           চুপি চুপি অভিমান -
ভালোলাগা মানে         হৃদয়ে হৃদয় ছোঁয়া;
ভালোকথা মানে         আপন কথার ভীড়
ভালোথাকা মানে         চুপ করে বোঝা বওয়া।

ভালবাসা মানে           রঙিন খামেতে লেখা
ভালোলাগা মানে         শুধু চোখে চোখে কথা;
ভালোবাঁচা মানে         বাজার ভর্তি থলে –
ভালোমরা মানে          হঠাৎ ই নীরবতা।

ভালবাসা মানে           নতুন রাতের ভোর -
ভালোলাগা মানে         অল্পেই খুনসুটি,
ভালোকাজ মানে         সবার’ই মন রাখা;
ভালোকিছু মানে         স্বপ্নের ভুটভুটি।

ভালবাসা মানে          ফাগুনের যত হাওয়া -
ভালোলাগা মানে         মেঘ – বৃষ্টির দিন ;
ভালবাসা মানে          বৃষ্টিতে ধোয়া পাতা -
ভালোলাগা মানে         বুকেতেই চিনচিন।
ভালবাসা মানে           আকাশেতে সোনা রোদ –
ভালোলাগা মানে         ফুলের গন্ধে ভরা;
ভালবাসা মানে          বিকেলে ভোরের ফুল-
ভালোলাগা মানে         ব্যথায় জীবন ঘেরা॥

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ক্যামেরা
কবি গৌতম দত্ত

যদি কিছুক্ষন -  উজ্জ্বল আয়নার
দিকে তাখো চোখ তবে কি
অনুভব ক’র আপনার অন্তহীন গভীরতা !
সৃষ্টির সৃজনে যা অপরূপ,
মহাকালের যাত্রায় যার পরিক্রমা আদি থেকে
অনাদির চূড়ায় চূড়ায়, তার কোনো বিরূপতা
আছে নাকি ?
নাকি, এশুধু দৈনন্দিন জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে
না পাওয়ার আদিম তিয়াসা।

বহুক্লেশে পাওয়া যায় প্রকৃতির সুধা।
যদি জীবনের ধরাবাঁধা একপাশে ঠেলে রেখে
চেয়ে দেখো চারিদিকে – দেখবে অজস্র রং
চারপাশে ভীড় করে আছে।
তা’দেরি কাছে জমা পড়ে আছে
আমাদেরি সাদা-কালো; লাল-নীল
জীবনের জটিল মিছিল আজ বাঁধা পড়ে গেছে।

তাই মাঝে মাঝে
জীবনের প্রয়োজনে -  হয়তো বা আনমনে
ক্যামেরার জান্লায় চোখ রাখি।
অসীমকে দিয়ে ফাঁকি দিই তারে বেড়ী;
যেন জানালার খড়খড়ি ফাঁক করে
দেখে নিই রণক্লান্ত সৈনিকের সন্ধ্যার অবকাশ।

মনে ভাবি, আমার এ ছবি
হৃদয়ের অস্ফুট আকাঙ্খায় কত ভাবে গান গায় !
অবশেষে হয়ে নিরূপায়
বেদনার শিহরণে পারে না চিন্তে আমায়।
দূর থেকে দূরে – আরো দূরে চলে যেতে যেতে
বাঁধা পড়ে যায়।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
একা নির্জনে
কবি গৌতম দত্ত

শুধুই চোখের ভাষা        
শুধু ক্ষণিকের চাওয়া,
মনেই কেমন জ্বালা
শরীর পুড়লো বলে-

সবুজে সবুজে ভেজা
ফাঁকা মাঠ ধানক্ষেত
একলা নিবিড় মনে
আনমনে হেঁটে চলা।

ভালোবাসা বহু দূর
একটু স্পর্শ খোঁজা –
হাত বাড়ালেই আসে
জীবন যে ভরপুর।

তবুও মনের মাঝে,
দ্বন্দের হাতছানি –
বেলা শেষ হয়ে এল,
কখন ফুরিয়ে যাবে।

কখন উঠেছে ভোর
রাতের বুকটি চিরে –
কমলায় ভরে যায়,
আমার বাগান শুধু।

তোমার হাসিতে মাখা
পরাগের রেনু ওড়ে –
স্বপ্ন মাখানো চোখ
নীরবে কি যেন বলে!

আমিও কি ছাই বুঝি ?
ঈশারার কথকতা –
সন্ধ্যে নামল বলে,
শহরের আলো জ্বলে।

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রেম শুধু
কবি গৌতম দত্ত
রচনা ১৫.১২.২০১৪

শুধু নাম ধরে কানে কানে ডাকা
নাম ধরে ডাকা শুধু কানে কানে
মনের সে ফুল আপনিই ফোটে
কবিতায় বলে “কেন এ কে জানে !”

হৃদয়ের গান কখন যে আসে –
ভীরু দুটি চোখ কি যেন কি বলে
সব কথা শুধু গান হয়ে ফেরে -
বন-ফুল ফোটে আপন খেয়ালে।

উন্মনা মন উড়ে যেতে চায় –
নাম হারা পথে মেঘে কুয়াশায়
আসমানী রং আকাশেতে ভাসে
অজানা সুরেতে বাঁশী ছলকায় ।

যে সুর উঠেছে মনের কোনায়-
সারা দিন রাত কোথা বয়ে যায়
চাঁদ ঢলে পড়ে আকাশের গায়
কত কথা শুধু বলা হয়ে যায়।

শুধু মনে আসে তোমার সে ছবি
রঙেতে রেখাতে আবছা আলোতে
মায়ায় জড়ানো কোমল সে মুখ –
কতদিন তুমি আস নি এ পথে।

নীরব নিশীথে তারা দের সাথে
উড়ে যেতে চাই তোমাতে আমাতে
দূরে বহু দূরে অজানার কূলে
ভেসে চলে যাব নতুন সে স্রোতে।

দিনের আলোতে হব একাকার
মল্লার রাগে বাজাবো সে তার –
আকাশে ফুটবে রামধনু রঙ
সন্ধ্যা ফুটবে ছড়িয়ে বাহার।

তারপরে যদি বাকি কিছু থাকে
ছড়িয়ে দেব তা আকাশে বাতাসে,
ফুল হয়ে সে তো গন্ধ বিলোবে –
এই পৃথিবীর মাটি আর ঘাসে।।

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মিলিত মিতালী
কবি গৌতম দত্ত  

কোথায় পালাবে কবিকে এড়িয়ে তুমি –
ফাগে আবীরেতে শুধু কি আগুন জ্বালো ?
দূরে দূরে থেকে যতই এড়িয়ে যাবে,
তোমার সে ছবি আরো হবে জমকালো।

হঠাত চকিতে তোমায় দেখে, এ কবি
দুই হাত মেলে তোমায় জড়াতে চায় ;
বলেছিলে তুমি আগত দিনের কথা,
আরো বলেছিলে সে দিনের সন্ধ্যায়।

বলেছিলে তুমি বসন্ত দিতে পারো,
দিতে পার তুমি ফাগুন দখিন হাওয়া
স্বপ্নে স্বপ্নে আকাশ ভরিয়ে দিয়ে
ভালোবাসা এঁকো হৃদয়ের সীমানায়।

হৃদয়-জানলা না হয় দিলাম খুলে –
দমকা হাওয়ায় না হয় ভেসেই যাবো,
স্বপ্নের ভীড়ে স্বপ্ন দেখাও যদি ;
চোখের তারায় তবু তো তোমাকে পাবো।

বেলা যদি যায়, ভাবো কেন তবে এত
পূবের আকাশে আবার ফুটবে আলো,
হৃদয়ের ভাষা হৃদয় দিয়েই বোলো,
হোক না সন্ধ্যা, হোক না আকাশ কালো।

নতুন বাঁশীতে ডেকে নিও মোরে কাছে –
বুকে এঁকে দিও প্রেমের সে আলপনা,
চুমোয় চুমোয় ভরে দিও দুটো গাল,
অলস আবেশে শুরু হবে দিন গোনা।

কি মায়ায় আজ বেধেঁছ ফুলের রঙে –
চারদিকে শুধু দেখি যে তোমার ছবি,
আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে রোদ
তারি ফাঁকে ফাঁকে অনুভবে আছে কবি।

তোমার শরীরে পাকা সে ধানের ঘ্রাণ-
চোখের পাতায় সাত সুর করে খেলা,
কবির হৃদয় হলুদের রঙে মাখা –
মনের আবেগে না হয় ভাসালে ভেলা।

ঝিকমিক করে নদীর সবুজ জল
তারি মাঝে ভাসে দুজনের ছোট তরী-
অজানার পথে হবে সে নতুন ভোর,
তারপরে দোবো প্রেমের সাগর পাড়ি।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
যদি
কবি গৌতম দত্ত  

রাত যদি হয়
ফোটার সময় –
দিন কি তবে,
পরাগ-রেণু ?

ভোরের আকাশ
পাখীর কূজন
দিন আনে কি
রাতের বেণু ?

মন যদি হয়
হঠাৎ সানাই-
বিস্মিল্লার
মন কি ভরে ?

অবাক চাওয়া
হঠাৎ যখন –
বেসুরোতেই
সুরটি ধরে।

গহন মনের
শিরায় শিরায়
প্রলয় নাচন –
তাল কি ধরে ?

রাতের কালোয়
ফুল যদি হয়
উতল নদী –
নৌকা বাওয়া !

কলসী ভরেই
জল উপচোয় –
সেই কি সবার
পরম পাওয়া ?

.      ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নতুন পঞ্চমী
কবি গৌতম দত্ত

চুম্বনে বিকশিত
সব ঠোঁট-ফুল –
বসন্ত নিয়ে এল
পলাশের দুল।

গুনগুন গুঞ্জনে
মুখরিত সব –
পৃথিবীতে এল ঐ
চুমু উৎসব।

খাজুরাহো কোনার্কে
শিল্পীর গান -
লজ্জায় মিশে যায়,
চোখে অভিমান।

ব্যাবসার পারদে -
মাপা আজকাল,
সৃষ্টির আকাশেতে
ওড়ে জঞ্জাল।

কৃষ্ণের চোখে মুখে
উদাসীন হাসি -
রাধা চায় শুনতে
সেই পোড়া বাঁশী।

চাঁদ ওঠে এখনো -
আকাশের গায়,
জোনাকির ছন্দেতে
মন ভেসে যায়।
তাজ আজো দাঁড়িয়ে -
প্রেম খুঁজে ফেরে,
আগ্রার বাতাসেতে
দিনগুলি ঘোরে।

তবে কেন, আজকে
নতুন এ ছল!
প্রেম ছিল মগ্নতা
হৃদয়ের বল।
গোপন সে ভঙ্গিমা,
গোপনেই থাক –
দুজনের মুগ্ধতা
ভাষা ফিরে পাক।

.      ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মধুমাধবী
কবি গৌতম দত্ত

বসন্ত আসে –
এই বর্তমান শহরে।
সবুজ গাছের বদলে
ঋজু ল্যাম্পপোস্টে ভর দিয়ে
এখনো দখিনা বাতাস বয়।
বসন্ত আসে।

চড়া পড়া গঙ্গার বুকে
ছোট ছোট ঢেউ,
ঝিলমিল করে রোদ।
কখনো দেখা যায়
ঊদ্ধত লাল কৃষ্ণচূড়ার ইঙ্গিত।
প্যাগোডার নীচে প্রেমিকার বুকে মুখ রেখে-
বসন্ত আসে।
স্কাইস্ক্রাপারের মাথা ছুঁয়ে বেলা পড়ে
ঘাম আর সস্তা সেন্টের গন্ধে
ভরে ওঠে নগরীর বিষাক্ত বাতাস।
হু হু করে ওঠে মন !
আর্ত চাহনীতে খুঁজে ফিরি কাকে।
তবে কি, এ হৃদয়ে
এখনো দোলা লাগে –
দখিনা হাওয়ায় ?

দোতলা বাসের ধারে বসে দেখি –
বাসন্তিকে॥

.            ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর