কবি গৌতম দত্তর কবিতা
*
আবার বসন্ত
কবি গৌতম দত্ত

পলাশ রঙে মাতলে তুমি
সুর ছড়ালে সংগোপনে
অবুঝ হিয়া চলকে দিয়ে
মন ভরালে আপনমনে।

ফাগুন যদি আগুন জ্বালে
দিনের আলোয় থরে থরে,  
রাতের বেলা নীল আকাশে
সে তাপ কি আজ ঘুরে মরে ?

গাছের পাতা উঠল ভরে
লাল-কমলায় মিলেমিশে,
চোখের নেশা মাতাল হয়ে
ছড়িয়ে পড়ুক এক নিমেষে।

পাপড়ি ঝরা রঙিন মাটি
স্বপ্ন ছড়ায় দিক্ বিদিকে,
অলস মনেই ঝর্ণা ফোটে
ওড়না ওড়ায় সে যেন কে ?

গাছে ডালে তুফান তুলে  
রক্ত ছোটাও রকেট তালে,
কোন নেশাতে ডুবিয়ে তোলো
মরণ বাঁচন তোমার জালে।

.            ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বাংলা আমার
কবি গৌতম দত্ত

বাংলা আমার মায়ের আদর
বাংলা আমার প্রাণ
বাংলা আমার বুকের ভেতর
ধলেশ্বরীর গান।

বাংলা মানের অবন ঠাকুর
ভাটিয়ালীর সুর
বাংলা মানের পায়ের তলায়
নীলচে সমুদ্দুর।

বাংলা আমার জীবন যাপন
বাংলা আমার বুক
বাংলা আমার মেঘলা আকাশ
বাংলা আমার সুখ।

বাংলা মানেই সবুজ ধানের
আকাশ ছোঁওয়া মাঠ
বাংলা মানেই মনের কোনায়
বইছে সহজ পাঠ।

বাংলা আমার হাতের লেখায়
বাংলা আমার নেশা
বাংলা আমার কবির খাতায়
বাংলা আমার পেশা।

বাংলা মানেই ভোরের আজান
দুপুর রোদের তাপ
বাংলা মানেই তুলসী তলায়
মায়ের হাতের ছাপ।

বাংলা আমার বাউল ফকির
বাংলা আমার মাটি
বাংলা আমার লালনের সুরে
উদ্দাম পরিপাটি।

বাংলা আমার মায়ের বুকের
হাসি কান্নার পালা
বাংলা আমার বাবার ভিটের
প্রাচীন শব্দমালা।

বাংলা মানেই শরত বাবুর
খাঁড়িতে জাল পাতা
বাংলা মানেই অন্নদা’দি
প্রেমের ইতি কথা।

বাংলা মানেই পাল্কির গান
কোন এক গাঁয়ের বধূ
বাংলা মানেই চাঁ সদাগর
সাগরদাঁড়ির মধু।

বাংলা আমার রাষ্ট্রসঙ্ঘে, বাংলা ভুবন ভরা
বাংলা আমার বাংলা তোমার বাংলা হৃদয় হরা।

.               ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দোল
কবি গৌতম দত্ত

আজ ফাগুয়ায় এসো না, খেলব হোলি
গাছে গাছে আজ পলাশ দিয়েছে ডাক
নীলচে আকাশে সাদা মেঘ বলে, চলি
দুনিয়াটা আজ মাতালেই ভেসে যাক।

তোমার আমার মিলিত চোখের ভাষা
আনে ফালগুন, আনে দক্ষিনে হাওয়া
তোমার আঁচলে, আমার গোপন আশা
হলুদ রোদেতে ভরে দিক সব পাওয়া।

পিচকিরি হাতে হ’য়ে ওঠো তুমি রাধা
গত জনমের না ফোটা সে ফুল কুঁড়ি
এ জন্মে আজ পড়েছ যে তুমি বাঁধা
এস না, আমরা নতুন বাসর গড়ি।

নতুন করেই সাজাবো জীবন আজ
সাত রঙা রঙে খেলব আজকে হোলি
সিঁথির গভীরে পরাবো লালচে সাজ
সারা মুখে দোবো প্রণয়ের ফুল কলি।

আর যদি আজ, একান্তে ঠেলো দূরে
আগামী জীবনে কাঙ্খিত সাত পাক
এবার না হয় মেঠো বাউলের সুরে
কাটাব সময়, ভালবাসা, মনে থাক।

.               ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রথম প্রণয়
কবি গৌতম দত্ত

কবে যেন ফুটেছিল মনের কুসুম
মনে মনে কথা বলা, স্বপ্নেতে তুমি-
আকাশ সবুজ ছিল, মাঠ ঘাট নীল
চারদিকে রামধনু, দূরে বনভূমি।

ঈশারায় কত কথা ছিল মনে মনে
ছটফটে চোখে ছিল ফাগুনের আলো
হৃদয় ভর্তি ছিল আকন্ঠ প্রেমে
ভাবতাম কবে তুমি এ আগুন জ্বালো।

কচি পাতা ভরে যেত আমলকী ডালে
অথবা শিউলি ফুলে উঠোনের মেঝে
আবেশ ছড়িয়ে দিয়ে মাধবীলতা
গোধূলিতে লাল হয়ে উঠতোই সেজে।

প্রাণের সে আকুলতা জ্বালা হয়ে ফুটে
হতাশার আশ্লেষে উড়ে যেত রাতে
তোমার সে পথ চলা ফুল হয়ে ফুটে
ঘন মেঘে ডাক দিয়ে যেত যেন সাথে।

ঝলমলে চোখে মুখে প্রোজ্জ্বল দ্যুতি
পথে যেতে অগোচরে লজ্জিত চাওয়া
বাঁকা চোখ খেলা করে অযুত দ্বিধায়
ঠোঁট-কোনে আচমকা ফাল্গুনী হাওয়া।

তারপর সারাদিন মনে ওড়া-উড়ি
অকারণ দেয়ালা’য় কাঙ্খিত সুর
বুকের সে কোনখানে কাঙ্খিত ঢেউ
স্বপ্নের আঙিনায় উদাস দুপুর।

.               ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
গাংনানি
কবি গৌতম দত্ত
এই কবিতাটি পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাটের গাংনানী বলে একটা জায়গায় ধর্ষিতা এক বৃদ্ধা
সন্ন্যাসিনীর জন্যে লেখা ।

শুনেছি তোমরা ঈশ্বর সন্ততি
নির্মল করো আমাদের অন্যায়
পথ হারা দের তোমরাই শেষ গতি
স্থবিরতা আজ নির্দয়ে বাঙ্ময়।
কূপমন্ডুক চেতনার গাড় ছায়া
কল্পবৃক্ষে অশালীন মহামারি
রাজার দন্ডে দুর্যোধনের কায়া
মর্ত্যজগত, রক্তের কারবারী।
পৌরুষ আজ উজ্জ্বল  শিলালিপি
কষ্ঠিপাষানে দ্রবীভূত ভাস্কর
অন্ধতামসে চর্চিত দিনলিপি
মননের বোধে নিশ্চুপ স্বাক্ষর।
তিমির কূর্চ উড্ডীন নিরাকারে
নীরজ পাপড়ি, মসীকৃষ্ণ সম
কোন্দল বৃথা যাপিত জীবন তরে
পশ্চাদগামী সুন্দর, অনুপম।
পদশৃঙ্খল দাদনের ভারে বেঁধে
কত বর্ণেই শোভে, সুরত দল
রাজনীতি আজ উপমায় মরে কেঁদে
নির্বাক মন, পদলেহী সম্বল।

তবুও তো তুমি স্ত্রীরজ কালের দূরে
পাঞ্চালী যেন বৃদ্ধা প্রপিতামহী
রূপের আধার নিশ্চয় সাত সুরে
উচ্ছল আজ, পরার্থে আগ্রহী।
জারজতা আজ হিন্দোলে আশ্রিত
দিকদিগন্তে প্রভাবিত বিস্তার
মানব জনম কুহেলিকা মিশ্রিত
বঙ্গ অম্বা বর্গীতে ছারখার।।

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নন্দিন
কবি গৌতম দত্ত

নন্দিন তুমি
আবার এসো গো ফিরে।
খুব প্রয়োজন
আজকে তোমার
তুলতেই হবে
সেই ঝংকার
মহা ভারতের তীরে।
আবার এসো গো ফিরে।

উদ্ধত আজ
জাফরানী ফুল
প্রেমহীন দেশ
আবেশ আকুল
বাণিজ্য শুধু
করে চুলবুল
ফেলে তার গাঢ় ছায়া -

যক্ষের দলে
অগুন্তি মুখ
মানুষ নাম্নী
যত বুজরুক
সংখ্যাই শুধু:
হচ্ছে তুরুপ
উড্ডীন চাওয়া পাওয়া।

নন্দিন তুমি আর কত দূরে
তোমার স্বরের
সুর-ঝংকারে
বাজাও শঙ্খ
যত জোরে পারো
নন্দিন তুমি এসো দ্রুত আরো।

না-মানুষ আজ
সব জায়গায়
বিজ্ঞাপনের
আলোয় ছায়ায়-
চতুরতা আজ
বর্ণ ছড়ায়
সকলের আশে পাশে।

এসো নন্দিন
দু-বাহু ছড়ায়ে
অমোঘ তোমার
সঙ্গ জড়ায়ে
ছুঁড়ে দাও সব দূরে।
আনো আরো আলো
আনো আরো প্রাণ
তাড়াও তাড়াও
যত ব্যবধান
সব রঙ আনো আবার ফিরায়ে
আমাদের চার পাশে।
দুর্বল হাতে
আমরা ছড়াব সাদা খই উল্লাসে।।

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অনুরাগ
কবি গৌতম দত্ত

হৃদয়ের সুর যায় কি পুরোটা শোনা
নদী যদি বয় সোজাসুজি এক খাতে
নানান বর্ণে বাগানের ফোটা ফুলে
কত না ভোমর উড়ে উড়ে ছবি আঁকে।

পরাগের রেনু বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে -
পাপড়ি পাঠায় হাজারো রঙীন চিঠি
মধুলোভী যত মধুপিয়াসীর দল
ঠিক খুঁজে পায় ছন্দের পোড়ামাটি ।

অগুন্তি এই মধুপিয়াসীর ভীড়ে
ফুল কি কখনো হয়ে যায় দিশেহারা ?
তবে কেন শুধু আমাদের পথে বেড়ি ?
কত না দ্বিধায় স্বাভাবিক বোঝাপড়া !

কত যুগ আগে ছিল সে অমরাবতী
ছিল না তো কোনো সংশয়, ভীরু দাগ
আধুনিক হয়ে জীবনে এসেছে ভয়-
কখনো যদি বা পিছু ফেরে অনুরাগ।

দোলাচলে আজ ঘিরেছে মনের শব
সহজ সরল হারিয়েছে তার ভাষা
চাতুর্য আজ অকৃপণ পাখা মেলে
মনের শিরায় শিকড় গেড়েছে খাসা !

ভালোবাসা আনে মুক্তির খোলা হাওয়া
এ ভাষা বুঝতে আরো কতো দিন বাকি ?
পরিণয়নের আনন্দে কি শুধু রাত ?
দেহে আর মনে থাকবে এতই ফাঁকি ?

সে দুটি মনের আলো যদি ঠিক জ্বলে
তবে কেন শুধু মিছিমিছি আলোছায়া
যদি ভেবে নাও অনেক মনের ভিড়ে
হারিয়েই যাবে, নিজস্ব চাওয়া পাওয়া।

এতই পলকা ! আমাদের পোড়া মন ?
বিশ্বাস তবে ঠুনকো কি, সাত পাকে ?
তবে কেন শুধু প্রাণহীন পথ চলা ?
শুকোবেই নদী যদি না প্রবাহ থাকে।

ভরা মন যদি শরীরের ভাষা খোঁজে
যেমন খুঁজেছে কোনার্ক বা খাজুরাহো
সেটাই কি শুধু জীবনের মাপকাঠি ?
তবে কেন ভয় মনেতেই অহরহ।

সুরাহার পথ তবে কি শুকনো পাতা -
খুশীর আবেগে শুধু যাবে উড়ে উড়ে
মুগ্ধ আবেশে দুজনা’র দুটি চাওয়া
হারিয়েই যাবে ! সে কোন অচিনপুরে ?

পলাতকা পথ মিলবেই জেনো শেষে
হয়তো তখন মাঝরাতে ভোর হবে –
পঞ্চমী রাতে জ্যোৎস্নায় ভরা বিধু
আনবেই আলো মধু-ঋতু-উৎসবে।

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিপন্নতা
কবি গৌতম দত্ত

আমরা সবাই খুব চালাক হয়ে গেছি।
হঠাত বুঝতে শিখেছি –
আর সবাই আমার চেয়ে বোকা।

ছোট হতে ছোট
আরো ছোট হতে হতে
মাথা তুলতেই ভুলে গেছি
আজকাল।

প্রাত্যাহিকতার বাইরে আর কিছুতেই যেন
মন নেই আর।
সেই খাওয়ার পর শোওয়া
আর
শোওয়ার পর খাওয়া।
আর যদি একটু বাড়তি সময় থাকে
তাহলে সেই বাড়ীতেই –
রঙিন এল-ডি স্ক্রীনের সবকিছু
বোকার মত গিলে যাওয়া।

পাড়া গেল হারিয়ে –
সব কিছু ছড়িয়ে
ছিটিয়ে, শুধু নিজের কাছে নিজেকেই বাঁধা দেওয়া।
এ কি সময় এল কাছে ?

ভয়াবহ ভূমিকম্পে যখন হাজার হাজার মানুষ মৃত
আরো কত শত গৃহহারা-
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আজকাল আর
কোনো অভিব্যক্তিই ফোটে না।
কাগজের প্রথম পাতায় লাশের রঙীন ছবি –
যেন কত খবর পৌঁছে দিয়ে ধন্য করছে আমাদের !
সিরিয়ালে আত্মহত্যার সূত্র –
কিংবা খুন-জখমের দৃশ্যকাব্য।
সারাটা দিন ধরে চলছে...চলছে...চলছেই,
একবার, দুবার, কখনো বা বহুবারও।
বিরামহীন।
পাব্লিকের খাবার।

এড়িয়ে যাবার কত না নিত্য নতুন কৌশল, ছলাকলা।
বাসে, ট্রামে, ট্রেনে, মেট্রোয় মহিলা কিংবা বয়স্কদের সিটে বসে
জেগে জেগে ঘুম।  কি কষ্টকর !
বুকের গেঞ্জি কিংবা রুমালে বড় বড় প্রিন্ট –
ইউনিয়ন জ্যাক কিংবা স্টাচু অফ লিবার্টির ।
ভুলে যাওয়া না কি
অজ্ঞানতার অন্ধকারে চালাকি করে উচ্চকিত আস্ফালন –
“দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে...”

রাজনীতি আর সভ্য মানুষ
যেন বিপরীত দুই মেরু।
অথচ আমরা
গনতান্ত্রিক অধিকারের বোতাম টেপার জন্য
কত না উৎসুক !
বিপন্ন আমরা আমাদেরই কাছে।
তাই পাড়ায় পাড়ায় বহিরাগতের দাপুটে পদধ্বনি ।
রাজনীতি আজ পণ্য। নেতা-নেত্রীরা বিক্রেতা
আমাদের মত গনতান্ত্রিক ক্রেতাদের কাছে।
আর কত শত দোকানদার ছেয়ে ফেলেছে
বিভিন্ন সাইনবোর্ডে।
কখনো হার্মাদ, কখনো বহিরাগত
কখনো বা এন্টি-সোশ্যাল।
গন্ধ বিলোবেই ওরা...  অগুরুর।

বেলোহেরি হারিবোল –
কি প্রচন্ড উল্লাসে আমাদের মহাপ্রস্থান !
বিপন্নতা মেখে, বিপন্নতা জড়িয়ে
আমাদের পলায়ন।
কোনো এক ধূসর পেঁচার কাছে।
“অবাক পৃথিবী, অবাক করলে তুমি – জন্মেই দেখি...”
বিপন্ন মরুভূমি ।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রথম টান
কবি গৌতম দত্ত

হঠাৎ কখনো শ্রাবণের ভরা রাতে
তোমার স্মৃতিতে মন মশগুল হয়
তখন কি তুমি ঈথারের সুরে টানে
জ্বলে উঠবে কি চেয়ে মোর পরিচয় ।

সেই যে কখন তোমার আবছা ছায়া
উঁকি মেরেছিল মনের সে জানলায়
তারপর কত রাত দিন কেটে গেছে
মনের দেয়ালে এখনো কাটেনি ভয়।

এখনো হয়নি আমার সে কথা বলা
যে কথার মালা কত ভাবে গেঁথে গেছি
শংকায় ছিল আমার দুখানি ঠোঁট
তাই ভুল করে জীবন হারিয়েছি।

বুঝিনা কেন যে বয়স বেড়েই চলে
বাজারের দরে চলকায় ওঠাপড়া
মনের বয়স ফতেপুরসিক্রি’র
বুলন্দ দরজা, স্থিরতায় আছে খাড়া।

এখনো কি জানি ? তোমার সামনে এলে
ফুটবে কি আজ আমার মুখের ভাষা
পারবো কি আমি তোমার চোখের দিকে
পলক না ফেলে চাইবার, সেই আশা।

তোমার খোঁপায় এখনো জড়ালে মালা
বিগত সেদিন সুরে সুরে ঝলকায়
তোমার কপালে সিঁদূরের গোল টীপ
এখনো পারেনি কাটাতে লজ্জাভয় ।

সলাজ মুখের সেই কিশোরীর মুখ
এখনো আমায় মন ভাল করা গান
সব ছবি আজ হৃদয়েই আছে গাঁথা
আমার শিরায় বয়ে আনে কলতান।

মনে যেন ভাসে, এই তো সেদিন তুমি
ফ্রক দূরে ফেলে শাড়ীতে হঠাত রাধা
একঢাল চুলে কত না বদল হোলো
কখনো বিনুনি কখনো খোঁপায় বাঁধা।

লাল পাড় শাড়ী, স্কুলেতে যাবার পথে
কপালের চুলে বিলি কেটে দেয় হাওয়া
কখনো আলতা ঘিরেছে পায়ের সীমা-
আবার কখনো ইতিউতি চোখে চাওয়া।

তারপরে এলো স্কুল জীবনের ইতি
তোমার তখন হয়তো নবম শ্রেণী
দুজনের পথ দুইদিকে গেল ঘুরে
আমার মনেতে তোমার সে স্মৃতিখানি।

তারপর কতো ঘটনাবহুল ভীড়ে
তোমার ছবিটা মন থেকে মুছে গেল
কারণ হয়তো, জীবনের সংগ্রামে-
ভালো-লাগাটাই কত পথ পালটালো।

কিন্তু সে স্মৃতি কেন আজ তাড়া ক’রে
এতকাল পরে কেন যে উঠলে ভেসে -
হয়তো প্রথম সে দেখায় আলো ছিল
তাইতো এখন ফিরে এল ভালবেসে।

অথবা কি জানি মনের সে আয়নায়
প্রথম সে দেখার অনুভূতি চিরকাল -
নেগেটিভ হয়ে পিছনেই থেকে যায়
সিন্দুকে তাই নেচে ওঠে ঝাঁপতাল।

তুমি যে কোথায়, আছ আজ এই ক্ষণে
হয়তো পাশেই, কিংবা অনেক দূরে-
যেখানেই থাকো ভাল রেখো চারিদিক
আমায় হয়তো ভুলেছ পথের ধারে।

তবু যদি কোনো নিরালা শ্রাবণ রাতে
চকিতে কখনো সেই দিন মনে পড়ে -
আসবে কি মনে ?  অনেক বছর ধ'রে
চোখে চোখ পড়া, নির্জন সেই মোড়ে।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রথম আলো
কবি গৌতম দত্ত

ভোরের আলোয় রাঙা হ’ল পৃথিবী
পাহাড়ের চূড়ো স্বর্ণীল হয়ে মেলল তার শোভা –
সমুদ্রের ঢেউ পালটালো তার বর্ণ –
গাছ-গাছালির মগডালের সবুজ পাতায় পাতায়,
সোনালী আলোর আভা।
প্রজাপতি নতুন করে
চিনল আকাশ।
পাখীরা শুরু করল সূর্যোদয়ের প্রার্থনাগান।
চোখ মেলল মানুষ-জন যেখানে সাঙ্গ-রাত।

এবার শুরু হল দেয়া নেয়ার খেলা।
আকাশ দিল নীলের বর্ণালী।
বাতাস দিল জীবনের শ্বাস।
প্রকৃতি দিল রঙ, রূপ, গন্ধ।
উদিত সূর্যের ছটায় ভিজল প্রকৃতির দান।

রঙ বেরঙের সারেগামা’য় –
ক্ষণে ক্ষণে রূপবদলের পালায়,
পাহাড়-চূড়ো’রা স্থিরতায় মৌন।
সমুদ্রে লাগল উচ্ছাসের কল্লোল।
সবুজ পাতারা দুলে দুলে বরনে চঞ্চল।
যেটুকু পাওয়ার ছিল-
সেই সবটুকু নিয়ে –
প্রকৃতিরানী তন্দ্রিত হল আনন্দে।

আর
সেই বুড়ো প্যাঁচা রইল ঘুমিয়ে,
কালো’র অপেক্ষায়।
মেধা আর মননের আত্মশ্লাঘা
দু’পায়ে জড়িয়ে -  
থ্যাবড়ানো অশান্তির সূত্রে সুত্রে নিজেকে
গাঁথবে বলে।

“আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব”
যতটুকু সুর খুলবে গলায় সেই সুরেতেই মাতাল হব।

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর