গন্তব্যহীন পথে বহু কার্তুজ বিকেল কাটিয়ে অবশেষে সময় ফিরেছে নিজ বাসভূমে, অন্তর্বাসের অস্বস্তিকর কৃত্রিম বাঁধন খুলে রাত্রিও তখন সবে একুশের তরুণী ।
কিছুটা ফিচেল হাসি আর গদগদ খুনসুটির সাথে নীরব ভাব বিনিময় হয়ে গেলে ঠুনকো পবিত্রতার সব দোআঁশলা দাবী উপেক্ষার প্রপঞ্চক ডানায় উড়িয়ে দিয়ে মৃদু সমীরণ তখন অকুণ্ঠচিত্তে ছুঁয়ে দিল জমে থাকা পৌরুষের উত্থিত অহংকার ।
না মানে নিষেধ নয় আবার হ্যা মানে আমন্ত্রণও নয় এমন একটি মাঝামাঝি চৌখুপীতে নিঃশেষিত আমাদের একদার অসহ্য বিকেলগুলো সহসা তীব্র প্রতিবাদে ঝরে গেলো বৈরি বাতাসের উস্কানিতে ।
আজ তুমি কাকে সুন্দরের পূজনীয় প্রতিমা বলবে বল সেই আয়ত নয়নাকে যার জন্য নিবেদিত ছিল তোমার জন্ম জন্মান্তরের সব বিষণ্ণ বিকেলের হাসি ? নাকি একরাতের প্রশ্রয়ে তোমার বিছানায় নিঃশেষিত টাকিলার মদিরতা ভাগাভাগি করা এই উষ্ণ উর্বশীকে ?
অপটু চিত্রকরের হাত কেপে জন্ম নিয়েছে এক ভুল জলছবি, আমাদের ভাগ্য সমর্পণের অচ্ছেদ্য বাঁধনে গাঁথা না থেকেও সে ভুলে আমরা এসে গেছি একে অপরের হৃদয়ের কাছাকাছি, বিধিবদ্ধ দস্তাবাজের অভাবহেতু সামাজিক মঞ্জুরি কমিশনের সদয় স্বীকৃতি পায়নি সময়ের বন্দরে আলগোছে নোঙ্গর করা আমাদের স্বল্পদৈর্ঘ্য কুল গোত্রহীন সম্পর্কের নবায়ন ছাড়পত্র, অঙ্কুরিত তুমি সেই থেকে দণ্ডিত হয়ে আছো যন্ত্রণার নীল মলাটে, পরিত্যক্ত আমি আশ্রিত হয়ে আছি বাতিল ইতিহাসের সিলেবাসে, সম্পর্কের আলো আসার পথ রোধ করে দাড়িয়ে আছে সভ্যতা ।
এরপর জীবনের ষড়যন্ত্রে একদিন মানুষেরা বেমালুম ভুলে গেছে সেদিনের ফেলে আসা যৌবনের ভরা যমুনা বড় বাড়ন্ত ছিল, কালো চুলের সে কিশোরী মেঘনা আমার বাল্যের প্রেয়সী ছিল, অশুদ্ধ পৌরুষের নীল খাজুরাহ দংশনের শাপ খুবলে নিয়েছে রজঃস্বলা ষোড়শী কুশিয়ারার ভালোথাকার একলার আকাশ, আজ রুদ্রাণী পদ্মার অস্থির বুক জুড়ে শুধু কুল ভাঙনের অভিশাপ, ভালোবাসার শেষ অঙ্গীকার শুয়ে আছে বিশ্বাসের অন্তিম চাদরে, নিয়মের পাশবালিশ পারেনি রুখতে অনিবার্য পতনের বিধিলিপি ।
অষ্টাদশীর ফর্সা কাঁধে কামিজের লক্ষণরেখা ভেঙে তুমুল চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসের মত আকাশ খোঁজে বেড়িয়ে পড়া কালো ব্রেসিয়ারের দুর্বিনীত স্ট্যাপ, তরুণীর পায়ের নীচে হেটে চলে ধুলো ধূসরিত পথ তার মনের অবচেতনে ঘরের নিরাপত্তায় ফেরার তাড়া, পেছন থেকে তার হৃদয় দেখতে পায়না না গোধূলির পৌরুষ ।
বিনা নোটিশের বৃষ্টির পুরুষ স্পর্ধা নতজানু নারীর রমণীয় পক্ষপাতে ছুঁয়ে যায় তার নিজস্বতার নিগুঢ়, এ ছোঁয়াছুয়ি হয়তো প্রেম নয়, তবু এ বর্ষণ মিথ্যে নয়, যেমন মিথ্যে নয় পোশাকের নীচের নিরেট নগ্ন শরীর, মিথ্যে নয় স্নানঘরের গোপনীয়তায় সমর্পণের বিধিলিপি, তেমনি মিথ্যে নয় প্রেমহীন ব্রেসিয়ারের প্রগলভ হাতছানি।
আতস কাচের চোখ থেকে আকাশের নীল ঢেকে দেওয়া বৃষ্টির ঝুম পর্দা সরিয়ে যখন তুমি নারীসুলভ পেলব ছলনা মেখে পুরনো অতীতকে ফিরে পাবার অনাবৃত বাসনায় বহুদিন পর আবার তাকালে আমার পরিত্যক্ত পৃথিবীর মত বদলে যাওয়া পুরুষ চোখে তখন আর আগের মত দক্ষিণ মেরুর সব সাদা বরফ গলে মহাপ্লাবন এলো না নুহের পৃথিবীতে ।
কেবল একাকী রাত কান্নার মত হেসে লুটিয়ে পড়ল শরীরসর্বস্ব নারীর ক্লান্তিকর অস্তিত্বে উষ্ণতা খোঁজা বোকা মানুষটির সুখ ভাবনার উদারতায়, তবু তুমি স্বার্থের হিসেবী শকুন চোখের মোহ হটালে না আমার তোমার জন্য মৃত পাথর চোখ থেকে, সব ভুলিয়ে দেয়া মায়াবী কন্ঠে পুরনো সেই মধু ঢেলে আগের মত জানতে চাইলে "কেমন আছো ?"
তখন ভালো থাকা না থাকার মাঝের কুমারী পর্দাটা ছিনাল নারীর মত বেফাঁস দুলে উঠে বলল, প্রিয়তম, আবার দেখা হবে সহরমনে, ডানা ঝাপটানো মৃত্যুর মত বেশরম কষ্টগুলোকে ডালপালা সহ ভেসে যাওয়া শারীরিক রাতের নিজস্ব গল্প শোনাতে শোনাতে ফিরে পাওয়া গাঙ হরিণের ক্ষুধিত জীবন থেকে আমি ফিরিয়ে দিলাম স্মৃতির দংশন জর্জরিত কিছু অলীক সুখ ।
ক্ষুধিত ইচ্ছেময় পুরুষগন্ধি রাতের বুক পকেটের অনৈতিক ভাজে রাখা কামভেজা কোন শরীরময় বোধের সাথে আমার আর হয়না নির্ঘুম সহবাস ... স্পর্ধিত বিশ্বাসের উর্বশী পাখায় লোলুপ আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে ফেলেছি আমার সব সুখস্বপ্ন ... একটি ছিল কবিতা, একটি সাগর, অন্যটি তুমি, এখন আমার আর লাল বেগুনী কোন চাওয়া নেই, আমার আর নেই জোস্ন্যা প্লাবিত মধ্যবিত্ত অসুখ ।
জীবনের কিছু আঁধারঘেরা রহস্য জানতে হয়না, তবুও স্খলিত সময়ে অনন্ত আঁধারের মাঝে বিস্মৃত আত্মপরিচয় খুঁজে নিতে নিতে আমি জেনে যাই জীবনের কিছু অপ্রয়োজনীয় নির্মম সত্য, জীবনের কিছু অনাবশ্যক বিভীষিকাময় রহস্য, আজন্ম লালিত বিশ্বাসের শেষকৃত্য শেষে এখন আমার হৃদয়ে কেবলই অনল দহন, এখন আমার দুচোখে শুধুই অনিবার্য ধ্বংস, এখন আমি শুধু বিনাশ চাই মিথ্যে প্রহেলিকার, সানুনয় নিবেদন শুধু একটি মহা প্রলয় ও একটি নতুন শুভ সুচনার।
রাগ অনুরাগের স্বপ্নমেদুর রঙে অকাতর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া শাশ্বত ভালোবাসা আজ বিলাপহীন জীবন যুদ্ধে অসহায় পরাভুত হয়ে সস্তা নাগরিক বিনোদনের নির্লজ্জ কাচুলি পরে কষ্টে মুখ লুকায় সিনেমাস্কোপের বাণিজ্যিক মিথ্যাচারের আচলে ।
সময়ের চেয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ক্লান্ত মানবিক বোধের প্রাচীন ধুলিধুসর ধ্যান ধারনা আজ ক্ষতবিক্ষত হয়ে ক্রমশ বদলে যায় নব্য সময়ের গতিশীল স্বার্থপর চাহিদার সীমাহীন স্পর্ধিত উস্কানিতে ।
উসর আধুনিকতার অন্তহীন রেসকোর্সর ঘোড়দৌড়ের মাঠে খালি পায়ে পথ হেটে চলা সাদা ধবধবে অথর্ব বিবেক বুড়োকে অবলীলায় কক্ষচ্যুত করে বিপুল গৌরবহীন বিজয়ে সমাসীন হয় সমসাময়িক ঊর্ধ্বগতি বাজারদর ।
সামাজিক বন্ধন শিকলে আবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের স্থানাঙ্ক নির্ধারণে হৃদয়ের মানবিক স্থান অকস্মাৎ জবরদখল করে নেয় হিসাব নিকাশের ডিজিটাল নিক্তি ।
সবকিছুর পরেও পুরনো লাল সূর্যটা একই থেকে যায়, বরাবর আলোর বর্ণীল পসরা সাজিয়ে রাখে শর্তহীন ।
কেবল লাল সূর্যের নিচে কিছু মানুষ রয়ে যায় আলোহীন, কেবল লাল সূর্যের আলোয় কিছু মানুষ বদলায় অনুতাপহীন, সূর্যের বিপুল প্রেক্ষাপটে কিছু মানুষ কেবল নগণ্য হয়ে যায়, অনন্ত সূর্যের নিচে কিছু অন্ধকার মানুষ কেবল সূর্যের উদার আলোয় আলকিত হয় না, আত্মার অতল গহীনে জমে থাকা মৃত্যুর চেয়ে কালো আঁধার ঘোঁচে না সূর্যের অমেয় আলোয়।
মোনালিসা, তোমার করতলে আমার সকল স্বপ্নসাধ অথচ তোমায় নিয়ে কবিতা লিখে যায় নিশুতি রাত, মোনালিসা, যদি ফিরিয়ে দাও, ব্যর্থ হয়ে যাবে জীবন তবুও তোমায় নিয়ে কবিতা লেখে বুড়ো নির্মলেন্দু গুণ ।
মোনালিসা, এই চোখে তুমিই সব সৌন্দর্যের উপমা অথচ তোমাকে নীলের মায়ায় জড়ায় ঐ দূর নীলিমা, তোমার নামে ভরা কবিতার খাতা থেকে বাজারের ফর্দ তবুও তোমাকে আঁকে বজ্জাত দ্য ভিঞ্চি লিওনার্দো ।
মোনালিসা, ছিলে, আছো, থাকবে আমার সুখের স্বপন অথচ তোমার নিজস্বতায় আমার জন্য নেই কোন স্থান, মোনালিসা, তুমি আমার স্বপ্ন দেখার রঙিন আতসকাচ তবুও তোমার নামে লক্ষ পৃষ্ঠা খোঁজে পাজি গুগল সার্চ ।
মোনালিসা, তোমার জন্য আমার সকল কান্না হাসি তবুও প্রিয়তমা, বলতে পারিনা কতোটা ভালোবাসি, মোনালিসা, ভালোবাসি বলে আমি ফিরে আসি বারবার অথচ তোমার কবিতার পাতায় আজ আমি ছারখার।
মোনালিসা, তুমি ছাড়া আমার নিজস্ব ক্যানভাস বর্ণহীন তবুও তোমায় চেয়ে চেয়ে দেখে ঐ বেহায়া সূর্যের দিন, মোনালিসা, শুধু তোমার জন্য আমার সব কষ্ট জমা তবুও তোমায় আজকে না হয় করেই দিলাম ক্ষমা ।