কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় - উনবিংশ শতকের প্রসিদ্ধ কবি। তিনি জন্মগ্রহণ করেন হুগলি জেলার
গুলিটায়। পিতা কৈসাশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
কবি ঈশানচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ছিলেন এই কবির অগ্রজ।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি এ পাস করে কিছুদিন মিলিটারি অডিটর-জেনারেল অফিসে
করণিকের কাজ রেন। পরে ক্যালকাটা ট্রেনিং অযাকাডেমির প্রধাশিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৮৬১ সালে এল এল
ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি কিছুকাল কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীর পেশা গ্রহণ করেন। ১৮৬২  সালে
তিনি কয়েক মাসের জন্য মুনসেফ পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৬ সালে বি.এল. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৯০ সালে
তিনি সরকারি উকিল নিযুক্ত হন।

ডঃ শিশিরকুমার দাশ তাঁর বাংলা সাহিত্য সঙ্গী গ্রন্থে লিখেছেন, "তাঁর খ্যাতি ছিল গগনস্পর্শী। বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়
তাঁর রচনার অনুরাগী ছিলেন। । কিশোর রবীন্দ্রনাথের রচনায় তাঁর ছায়া পড়েছিল। তাঁর
জনপ্রিয়তার মূলে ছিল স্বদেশ চিন্তা ও ঊনবিংশ শতকের বাঙালীর সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের মূল্যবোধের
বলিষ্ঠ রূপায়ণ, ভাষা ও ছন্দের অনর্গলতা, কাব্যকলা অপেক্ষা কাব্যের ভাবের ও বিষয়ের মহত্ত্ব"।

তাঁর প্রথম কাব্য "চিন্তাতরঙ্গিনী" (১৮৬১)। এ ছাড়া তার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে  স্বদেশপ্রেম
বিষয়ক কাব্য "বীরবাহু" (১৮৬৪), শেক্সপিয়ারের
The Tempest অবলম্বনে "নলিনীবসন্ত" (১৮৬৮), কয়েকটি
ছোট কবিতার সংকলন "কবিতাবলী" (১৮৭০) প্রভৃতি।

হেমচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ রচনা "বৃত্রসংহার" (১৮৭৫)। এছাড়া রয়েছে "আশাকানন" (১৮৭৬), "ছায়াময়ী" (১৮৮০),
দান্তের
The Divine Comedy অনুসরণে রচিত "দশমহাবিদ্যা" (১৮৮২) ইত্যাদি। তিনি ইংরেজীতে রচনা করেন
The Life of Shrikrishna (১৮৫৭) এবং Brahmo Theism in India (১৮৬৯)।

তাঁর রচিত "ভারত সঙ্গীত" কবিতাটি ঊনবিংশ শতকের জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম। জুলাই ১৮৭২
সালের এডুকেশন গেজেট পত্রিকায় এই কবিতাটি প্রকাশিত হলে তিনি ব্রিটিশ করকারের রোশানলের মুখে
পড়েন এবং সম্পাজক ভূদেব মুখোপাধ্যায়কেও জবাবদিহি করতে হয়। এই কবিতায় স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষভাবে
ভারতবাসীকে তিনি পরাধীনতার পাশ থেকে মুক্ত হবার আহ্বান জানিয়েছিলন। তাঁর "ভারতবিলাপ",
"কালচক্র", "বীরবাহুকাব্য", "রিপন উত্সব-ভারতের নিদ্রাভঙ্গ" প্রভৃতি রচনায়ও তিনি নির্দ্বিধায় স্বদেশপ্রেম
প্রকাশ করেছেন।

তাঁর "কুলীন মহিলা বিলাপ"  কবিতাটি
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগরের বহুবিবাহরোধ আন্দোলনের সহায়ক হয়।

কবি মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায়ের "বন-প্রসূন" গ্রন্থের “বাঙ্গালীর বাবু” শীর্ষক বিদ্রুপাত্মক কবিতাটি ছিল কবি
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের “বাঙ্গালীর মেয়ে” কবিতার পালটা জবাব। ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদক
সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদকীয়তে লেখা হয় যে. . .

সকলেই জানেন, বাঙ্গালায় সাহিত্যসংগ্রামক্ষেত্রে, বাবু হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় অদ্বিতীয় মহারথী।  তাঁহার
প্রতি শরসন্ধানে সাহস করে বাঙ্গালার পুরুষ লেখকদিগের মধ্যে এমন শূর বীর কেহ নাই। তাঁহার প্রণীত
‘বাঙ্গালীর মেয়ে’ নামক কবিতার জ্বালায়, অনেক ‘বাঙ্গালীর মেয়ে’ আজিও কাতর। আজি সেই আঘাতের
প্রতিশোধের জন্য এই কাব্যবীরাঙ্গনা বদ্ধপরিকর---ধৃতাস্ত্র। হেমচন্দ্রের ঐ (বাঙ্গালীর মেয়ে) কবিতার উত্তরে
মোক্ষদায়িনী ‘বাঙ্গালির বাবু’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখিয়াছেন। কবিতাটি বড় রঙদার---লেখিকার
লিপিশক্তিপরিচায়িকা---আদ্যোপান্ত পাঠের যোগ্য। আমরা এ কবিতাটী কিছু বাদ দিয়া প্রায় সমস্ত উদ্ধৃত
করিলাম --- গ্রন্থকর্ত্রী আমাদের এ অপরাধ মার্জ্জনা করিবেন


দুটি কবিতাই আমরা এখানে তুলে দিয়েছি। বাঙালীর মেয়ে কবিতাটি আমরা তুলেছি ঠিক যেভাবে পেয়েছি
অর্থাৎ
"এ কবিতাটী কিছু বাদ দিয়া প্রায় সমস্ত উদ্ধৃত করিলাম . . ." অবস্থায়।

শেষ বয়সে কবি হেমচন্দ্র অন্ধ হয়ে যান এবং চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বহুকষ্টে দিন কাটান।

আমরা  
মিলনসাগরে  কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা  তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে
পারলেই এই প্রয়াসের সার্থকতা।



উত্স -
ডঃ শিশির কুমার দাশ, সংসদ সাহিত্য সঙ্গী ২০০৩           



কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     

এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২০০৬
কবির ছবি সহ পরিবর্ধিত সংস্করণ - ২৮.৫.২০১৬
৭টি নতুন কবিতা নিয়ে পরিবর্ধিত সংস্করণ - ৯.১.২০১৭
বৃত্রসংহার (প্রথম সর্গ) সংযোজন - ১৪.১.২০১৭
বাঙ্গালীর মেয়ে কবিতা সংযোজন - ৩০.৮.২০১৭

...